বেপরোয়া ভালবাসা পর্ব-২৫+২৬+২৭

0
427

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পার্টঃ২৫
#লেখনীঃ #মনা_হোসাইন

আদি কী করে এত খামখেয়ালি আচারন করে আদিবার মাথায় ঢুকে না। সে কি জানত না আদিবা কেন বাসা ছেড়ে এসেছে? তারপরেও কেন এখানে আসল? আদিবা কটমট করে তাকাল আদির দিকে।আদি চুইংগাম চিবাতে চিবাতে বলল,

-“কি সমস্যা..? এভাবে তাকিয়ে থাকার কারন কী?

-“আপনি এখানে এসেছেন কেন সত্যিটা বলেন তো..

-“অপেক্ষা কর। উত্তর নিজেই পেয়ে যাবি আচ্ছা আদিবা একটা কথা বল তুই আমার উপড় রাগ করে আছিস কেন? আমি বাসা ছেড়ে যাওয়ার সময় কি সবাইকে বলে গিয়েছিলাম তোর উপড় অ*ত্যা*চার করতে?

-“আমি কখন বলেছি আমি আপনার উপড় রাগ করেছি?আমি কারো উপড় রাগ করিনা। সব দোষ আমার কপালের।

-“ঠিক বলেছিস তোর কপাল সত্যিই খুব খারাপ তুই ভালবাসা পেতে জানিস না।যাইহোক এখন প্যাচাল পারা বন্ধ করে খাবার নিয়ে আয় যা…

-“আপনার কি মনে হয় আমি ম্যাজিক জানি..?এখানে আমি খাবার কোথায় পাব?

-“বারে তেজ দেখিয়ে নিজের বাড়িতে আসলি এখন তো এই বাড়ির মালিক তুই। তোর বাড়িতে বড় ভাই বেড়াতে এসেছে তুই তাকে না খায়িয়ে রাখবি?

-“আমি কী বড় ভাইকে আসতে বলেছিলাম?

-“খালি বাড়িতে যুবতী মেয়ে কি করছে খেয়াল রাখতে হবে না? আফটার অল বড় ভাই বলে কথা।বোন অঘ’টন ঘটিয়ে বংশের নাম ডুবাক সেটা তো হতে দেওয়া যায় না তাই না?

-“একটু আগে না বললেন আমি দেখতে খারাপ,পড়াশোনা জানি না বয়স ২৫। আমার দিকে কোন ছেলে তাকিয়েও দেখবে না তাহলে অঘটন ঘটাব কী করে?

-“ইসস তুই সত্যিই যদি দেখতে খারাপ হতি কত ভাল হত। আফসোস দু’ধে আলতা গায়ের রং,ঘন পাপড়িতে ঢাকা কাজল কালো চোখ কোমড় সমান চুল।তোর দিকে তাকালে মনে হয় আদর্শ বউয়ের ফুল প্যাকেজ। তাছাড়া আমার নিজেরেই তো ২৫ হয় নি তোর হবে কি করে?তোর বয়স ২১ বছর ১ মাস ১৭ দিন।জানিস ছোট থেকে প্রতিদিন তোর বয়স গুনা আমার রুটিন ছিল। এক একদিন করে গুণতাম কবে তোর ১৮ হবে ইচ্ছে ছিল তোর ১৮ হলেই তোকে বিয়ে করব সেই উদ্দেশ্যেই গুনতাম এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।কবে তোর বয়স কত হয় আমি বলতে পারি।

-“আপনি একটু চুপ করবেন?

-“তখন তিরস্কার করলাম সহ্য হল না এখন প্রশংসা করছি সেটাও সহ্য হচ্ছে না? আসলে সত্যিটা কি জানিস তখন যা বলেছিলাম সেটাও মিথ্যা ছিল এখন যা যা বললাম সেগুলোও মিথ্যে। সত্যি বলতে তোর দিকে তাকালে আমার প্রথমেই যে ইচ্ছেটা হয় সেটা হল থাপ্পড় দিয়ে গাল দুটো যদি লাল করে দিতে পারতাম ।জানিস আদিবা তোকে একদিন হাত পা বেঁ’ধে ইচ্ছেমত মা*রার খুব ইচ্ছে আমার।

-“আপনার মত সাইকোর কাছ থেকে এর বেশি কি আশা করা যায়..? এসবেই ইচ্ছে হবে আপনার।

আদিত্য হটাৎ দৃঢ় গলায় প্রশ্ন করল,
-“আদিবা সত্যি করে বলতো তোর ভয় করছে না..

আদির প্রশ্নে ভ্রু কুচকে এল আদিবার। কি বলতে চাইছে আদিত্য বুঝার চেষ্টায় প্রশ্ন করল,

-” ভয় করবে কেন?

-“তুই তোম আমায় ভাল করে চিনিস অনুমান করতো আমি এখানে কেন এসেছি..?

আদির গলার আওয়াজ হটাৎেই ভারী হয়ে আসছে সে সিরিয়ায়া মোডে কথা বলছে কথার ধরন দেখে আদিবার মনেও খটকা লাগল।সত্যিই তো এত অপ’মানের পরে আদিত্য এখানে কেন আসল?

-“ক ক ক কেন এসেছেন…?

আদিবার কথা আটকে আসছে। আদিবার ভাংগা ভাংগা প্রশ্ন শুনে আদি হা হা করে হেসে উঠল। অন্ধকার রাতে জনশুন্য নির্জন বাড়িতে এই হাসি বড়ই অদ্ভুত শুনাল।

কারন ছাড়াই আদিবার কলিজা কেঁপে উঠল। হাত পা যেন কাঁ’পছে মনে হচ্ছে।আদিত্য হাসি থামিয়ে আবারো সিরি’য়াস মোডে প্রশ্ন করল

-“আদিবা তোর জীবনের শেষ ইচ্ছে কী..?

প্রশ্নটা শুনে আদিবার গলা শুকিয়ে উঠল। আদি নিজের ব্যাকপ্যাক থেকে ছোট আকারের চকচকে ছু’ড়িটা বের করে তাতে হাত বুলাতে বুলাতে প্রশ্নটা করছে।সে ছু’ড়িতে মনোনিবেশ রেখেই বলল,

-“কি রে বল শেষ ইচ্ছে কী..?

-“আ আ আ আমার শেষ ইচ্ছে আমি বাঁচতে চাই…

বলেই আদিবা উলটো ঘুরে দৌড় দিল। আদিত্য কিছুটা বিচলিত হয়ে তাকাল। এই মেয়ে কি পা*গ*ল হয়ে গিয়েছে? অমবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে কোথায় যাচ্ছে তাও চারদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।আদি মুখ তুলে তাকাতেই বাইরে ধপাস করে কিছু পড়ার শব্দ হল সাথে আদিবার গলা….

আদি দীর্ঘশ্বাস ফেলল,
-“হয়ে গেল…এই নাকি বড় হয়েছে..

আদি ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই সামনে আদিবাকে দেখতে পেল। সারা শরীরে কাঁদা মাখা।

-“দৌড়াদৌড়ির শখ মিটে থাকলে ঘরে আসুন।

আদিবা গোবেচারা মুখ করে জবাব দিল,
-“ভাইয়া ব্যাথা পেয়েছি।

আদি এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
-“কমনসেন্স জিনিস টা তোর না থাকলেও আমার আছে। পড়ে গেছিস মানে ব্যাথা পেয়েছিস এটাই স্বাভাবিক কিন্তু ভিজতে চাইছিলাম না তাই যেতে বলেছিলাম যাইহোক উঠ ..
বলে আদি এগিয়ে এসে আদিবাকে কোলে নিল আদিবাও আদির গলা জড়য়ে ধরল।আকাশ কেঁপে বর্ষন শুরু হল আদিবা আদির মুখের পানে তাকিয়ে আছে।
-“এই মানুষটা এত রহস্যময়ী কেন? কখন কি করে, কেন করে এর হিসেব কোনদিনি মিলাতে পারেনি আদিবা।একটু সহজ সরল হলে কি হয়?

আদি সামনের দিকে হাঁটতে বলল,
-“আচ্ছা আদিবা মানুষ হিসেবে আমি তোর কাছে কত পার্সেন্ট ভাল আর কত পার্সেন্ট খারাপ?

-“মানে..?

-“আমি কি সারাজীবন তোকে শাসনেই করেছি ভালবাসিনি কখনো..?

আদিবা চোখ নামিয়ে নিল উত্তর দিতে পারল না।আদিবাকে চুপ থাকতে দেখে বলল
-“তোর এমন কোন ইচ্ছে আছে যেটা তুই আমাকে জানিয়েছিস অথচ পূরন হয় নি?

-“ভাইয়া…

আদি এবারেও আদিবার দিকে তাকায় নি সামনের দিকে তাকিয়ে খুব সাবধানে হাঁটছে কারন উঠুনটা বড্ড পিচ্ছিল। ঘরে ঢুকে আদিবাকে নামিয়ে দিয়ে চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে এগিয়ে গিয়ে ব্যাগ খুলে টিশার্ট বের করে একটা বিছানায় রাখল।একটা নিজে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল ওয়াশরুমে গিয়ে অকারনে অজ্ঞান হয়ে যা চাচ্ছি না তাই তুই এখানেই চেঞ্জ করে নে।

আদি কিছুক্ষন পর চেঞ্জ করে এসে দেখল আদিবা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।আদি কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে বলল

-“ঘটনা কী…?সং এর মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

আদিবা উত্তর দিল না।আদিত্য আবারো বলল
-“চেঞ্জ করে দিতে হবে..?

অন্যসময় হলে এমন কথার জন্য আদিবা রাগী চোখে তাকাত কিন্তু এখন যে স্থীর চোখে তাকিয়ে আছে,

-“ভাইয়া আপনি আমায় মে*রে ফেলবেন তাই না?

আদিত্য আদিবার কথায় বেশ বড়সর ধাক্কা খেল অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,

-“হটাৎ এমন মনে হওয়ার কারন কী?

-“বাসা ছেড়ে এসেছি মানে আপনাকে ছেড়ে চলে এসেছি।আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব মানে আপনাকেও আমাকে ছাড়া থাকতে হবে। আপনার যেহেতু আমাকে ছাড়াই থাকতে হবে তাহলে আমাকে বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ…মে*রে ফেলবেন তাই না?সে জন্যেই এসেছেন।

-“বাহ আদিবা তুই তো দেখছি অসম্ভব রকমের জ্ঞানী হয়ে গেছিস। তা বুদ্ধিগুলো কার কাছ থেকে ধার নিয়েছিস বল তো…?

-“ভুল কিছু বলেছি..? ওই ছু’ড়িটা আমার জন্যই এনেছেন তাই না?

আদিবার কথায় আদি অবাকের উপড় অবাক হচ্ছে..সে বিছানার উপড় ছু’ড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

-“হ্যা তোর জন্যই এনেছি কিন্তু তোকে কা*টার জন্য আনি নি তুই সারাদিন কিছু খাসনি তাই কিছু ফল এনেছিলাম।

আদিবার মাথায় বোধহয় এই সহজ কথাগুলোও ঢুকে নি সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

-“আদিবা এতবছরেও তোর মাথায় এতটুকুও বুদ্ধি হয় নি? ইডিয়েট গেলি এখান থেকে? বুঝেছি তুই যাবি না দাঁড়া আমি চেঞ্জ করে দিচ্ছি।

বলে আদি এগিয়ে আসতে চাইল সাথে সাথে আদিবা টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটল।

-“একবার পড়ে শখ মিটেনি হারামী লাইট টা নিয়ে যা…

আদিবা তাড়াতাড়ি আদির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল ড্রেস চেঞ্জ করে যখন ফিরে আসছিল ফোন হাতে নিতেই ফোনের ওয়াল পেপারে চোখ আটকে গেল আদিবার। স্ক্রিনে জ্বল জ্বল করছে আদিত্য আর আদিবার ছোট বেলার একটা ছবি। মুহূর্তেই আদিবা সেদিনটায় ফিরে গেল। সেদিন স্কুল থেকে ফিরার সময় আদিবা এক্সিডেন্ট করতে নিয়েছিল আদিবাকে বাঁচাতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিল আদিত্য। আদিবা সেদিন সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে এসেছিল আর আদি তাকে শান্তনা দিতে দিতে। আদিবা ওয়ালপেপারে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে তখনই বাইরে থেকে আদির গ’লা ভেসে গেল।

-“রাতটা কি বাথরুমেই থেকে যাবি..?আমার তাতে কোন অসুবিধে নেই দরজা টা লক করে দিচ্ছি দাঁড়া।

আদিবা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসল এসে দেখল আদিত্যের মনযোগ দিয়ে আপেল কাটছে…আদিবা
এসে তার পাশে শান্ত হয়ে বসল।আদিবা বসতেই আদিত্য ব্যাস্ত গলায় বলল,

-“আদিবা দরজাটা বন্ধ করে দে তো বৃষ্টির পানি ঢুকছে…

আদিবা গেলনা সে আদির দিকে তাকিয়ে আছে…
আদিবার দিকে চোখ যেতেই আদিত্যও থমকে তাকাল।

-“কি হয়েছে আদিবা কাঁদছিস কেন? বেশি ব্যাথা পেয়েছিস? দেখি কোথায় পেয়েছিস? আদিবা উত্তর দিল না নিশব্দে তার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।

আদি সামনে থেকে ফল গুলো সরিয়ে দুহাত বাড়িয়ে আদিবাকে জড়িয়ে নিল আদিবা এবার হাওমাও করে কেঁদে উঠল।আদিত্যের ভিতরটাও যেন হা হা করে উঠল নিজের অজান্তেই আদিবার মাথায় হাত রাখল,

-“মনের মাঝে এত অভিমান জমিয়ে রেখেছিস..?এতই অন্যায় করে ফেলেছি? এভাবে আমায় শাস্তি দিস না আদিবা। তোর এই শা’স্তি সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।

আদিবা উত্তর দিতে পারল না আদির বুকে মুখ লুকাল। আদি মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-“কাঁদিস না কান্না থামা দেখি তাকা আমার দিকে একটু কিছু খেয়ে নে..

আদিবা মুখ তুলতে চাইল না আদির টিশার্ট আঁখড়ে ধরল।আদি আর কিছু বলল না বেশ কিছুক্ষন আদি বুঝতে পারল আদিবা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গিয়েছে তাই সে আদিবাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ল যদিও এর আগে সে আদিবার সাথে ঘুমানোর জন্য আদিবাকে বাধ্য করত কিন্তু আজ নিজে থেকেই আলাদা ঘুমাল।




সকাল হতে না হতেই পানিএ ঝটকায় ঘুম ভাংগল।
আদিবা ধরফরিয়ে উঠে বসল,

-“ক ক কী হয়েছে ভাইয়া..?

-“ছেলে মেয়ে হওয়ার মত সম্পর্কে এখনো জড়ায়নি তো..

-“আপনার মুখে কিছু আটকায় না? আমি কি বাচ্চা হওয়ার কথা বলেছি..?

-“তোর সাহস তো কম না নবাবজাদির মত ঘুমিয়েছিস আবার মুখে মুখে তর্কও করছিস।

-“এভাবে কথা বলছেন কেন?

-“রাত থেকে না খায়িয়ে রেখেছিস আবার এখন ভাব নিচ্ছিস? ভালয় ভালয় রান্না কর গিয়ে…

-“এখানে রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই.

-“কে বলল নেই? ওই যে বাইরে রান্না ঘর আছে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গিয়ে রান্না করবি। তাছাড়া এখন তুই বাজারেও যাবি ঘরে তো কিছুই নেই।

-“মানে কী আমি যাব কেন?

-“কারন তুই জেদ দেখিয়ে এখানে এসেছিস..আমি আসতে চাইনি..

-“তাইবলে ঘরে জলজ্যান্ত একটা ছেলে থাকতে আমক বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাজারে যাব?

-“হ্যা যাবি বকবক না করে তাড়াতাড়ি উঠ ঘরের অবস্থাও খারাপ ১০ মিনিটের মধ্যে ঘর গুছিয়ে বাজারে যাবি তারপর রান্না করবি। গ্রামে থাকার কত মজা যদি তোকে হাড়েহাড়ে না বুঝাতে পারি আমার নাম আদি না।

-“আমি বাজারেও যাব না রান্নাও করব না আপনার দরকার হলে আপনি করে যান আমি না খেয়ে থাকতে পারি।

-“তুই খাবি কি খাবিনা সেটা তোর ব্যাপার কিন্তু আমি আর কিছুক্ষনের মধ্যে খাবার না পেলে তোর কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।আমার গাঁ ঘিন ঘিন করছে এমন স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকা আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না।

-“তাহলে চলে যান আপনাকে থাকতে বলেছে কে…

-“খুব বার বেড়েছিস না ভাল খুব ভাল। আমার যদি এমন অপরিষ্কার ঘরে থাকতে হয় তাহলে ওই যে ডোবা দেখছিস তোকে সেখান থেকে চু’বিয়ে আনব।

-“জল্লাদ একটা করছি পরিষ্কার আপনি সেই ফাঁকে বাজার গিয়ে বাজার করে আনুন..

-“তুই ভাবলি কি করে আমি বাজারে যাব?

-“তাহলে কি আমি যাব।

-“হ্যা তুই যাবি..

-“আমি বাজারে গেলে কি হবে বলুন তো…?

-“কি হবে..?

-“বাজারের লোকগুলো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে আর বলবে চোধুরী বাড়ির মেয়ে বাজার করতে এসেছে তখন আপনার মানসম্মানের কি হবে? যান যান লক্ষি ছেলের মত বাজারটা করে আনুন কথা দিচ্ছি আপনি বাজার করে আনলে আমিও মজা করে রান্না করে আপনাকে খাওয়াব…

আদি বাঁকা হেসে বলল,
-“মনে থাকে যেন…খায়িয়ে দিবি বলেছিস…



চলবে..

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পার্টঃ২৬
#লেখনীঃ মনা হোসাইন

(এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোন স্থান,কাল কিংবা চরিত্রের মিল নেই সবটাই কাল্পনিক। গল্পের কোন কাহিনি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন না)

আদির কাছে ছাতা নেই ফলে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে যেতে হবে এই একটা ব্যাপার আদিবাকে স্বস্তি দিচ্ছে। তার পক্ষে আদিকে শায়েস্তা করা সম্ভব না তাই এই বৃষ্টিতে ভিজে যদি আদির একটু শিক্ষা হয় সেটা ভেবেই খুশি খুশি লাগছে..

আদিবা হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে এগুলোই ভাবছিল হটাৎ করে তার ধ্যান ভেঙে দিয়ে কানের কাছে কেউ ফিসফিস করে বলে উঠল,

-“বৃষ্টিতে ভিজে যদি আমার জ্বর আসে, সেবা যত্ন কিন্তু তাকেও করতে হবে যে এখন বদদোয়া দিচ্ছে…

আদির কথায় আদিবা কটমটিয়ে তাকাল,
-“আমি কি বলেছি আমি বদদোয়া দিচ্ছি?

-“তোর মত ডায়নীবুড়ি এর চেয়ে বেশি কি আর করবে যাইহোক এসে যেন দেখি ঘরটা পুরো ঝকঝক করছে।

বলে আদি ভিজতে ভিজতেই চলে গেল। আদিবাও ঘর গোছানোর কাজে লেগে পড়ল।

-“ধুর এই মেঘলা দিন স্যাঁত স্যাঁতে পরিবেশ কার ভাল লাগে? একা একা এসেছিলাম একটু শান্তির জন্য,তা না এসে জুটেছেন একজন। ইচ্ছে করছে বনবাসে চলে যাই। বলতেই মন উত্তর দিল তুই জাহান্নামে গেলেও এই আদি নামক প্রানীটি তোর পিছু নিবে। তাই চেষ্টা বাদ দিল আদিবা।




ঘর গুছাতে বেশ সময় লাগছে। আদির চোদ্দগুষ্টি শুদ্ধ বকা দিতে দিতে আদিবা ঘর গুছিয়ে শেষ করার ঠিক আগ মূহুর্তে বাইরে থেকে আদির কন্ঠ ভেসে আসল। তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না বৃষ্টিতে ভেজা নিয়ে তার কোন আপত্তি আছে বরং বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে আসছে সে। তার হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে তিনি সিনেমার নায়ক আর এখানে সিনেমার শুটিং চলছে। এই ছেলের শ*রী*রে এত ঢং কোথা থেকে আসে আদিবার মাথায় ঢুকল না। তবে দেখতে মন্দ লাগছে না। ফুল স্লিভ সাদা শার্টের সাথে কালো থ্রীকোয়ার্টার। কিছু চুল এলোমেলো হয়ে কপালের উপড় ছড়িয়ে আছে। আদির বরাবর লম্বা চুল পছন্দ। প্রায়ই তার চুল, কপাল ছাড়িয়ে চোখের উপড় এসে পড়ত তবুও কাটতে চাইত না। এখনো হয়ত সে অভ্যাস যায় নি। পিছনের দিকে চুল ছোট করে কাটা থাকলেও সামনের দিকে কিছুটা বড়। চোখের উপড় না পড়লেও ভ্রুয়ের উপড় ছড়িয়ে আছে। চুল থেকে টুপটুপ পানি পড়ছে।আদিবা অবাক নয়নে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বাস্তবে ফিরল আর দেখল আদি খালি হাতে ফিরেছে ।আদিকে খালি হাতে দেখে আদিবার মেজাজ বিগড়ে গেল।আদি গুন গুন করতে ঘরে ঢুকে বলল,

-“আদিবা টাওয়াল টা দে তো…

আদিবা চরম বিরক্তি নিয়ে আদিত্যের দিকে এগিয়ে আসল। আদিবা রেগে গেছে আদি কি সেটা বুঝল নাকি বুঝল না আদিবার বোধগম্য হল না।(আদিবা এগিয়ে যেতেই আদি বলল,
-“সমস্যা কী..?

আদিবা উল্টে প্রশ্ন করল,
-“আপনাকে কী সিনেমার শুটিং করতে বাজারে পাঠিয়েছিলাম?বাজার কোথায়?

আদির ভাবলেশহীনভাবে উত্তর দিল,
-“আমি শুটিং করছিলাম তোকে কে বলল?

-“নিজেই দেখলাম গান গাইতে গাইতে আসলেন।এমন একটা ভাব যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যাক্তি।

-“দুঃখে থাকার মত কোন কারন তো দেখতে পাচ্ছিনা..তার উপড় আজ তোর কপালে যে শনি লিখা আছে সেটা ভেবেই মন ভরে উঠছে।

-“আমার কপালে শনি জন্মের আগে থেকেই লিখা ছিল তানাহলে আপনার বোন হয়ে জন্মাই..

-“বোন হতে এত আফসোস থাকলে সম্পর্ক বদলের রাস্তা তো আছেই বদলে ফেল।

-“বাজে কথা রেখে বলেন বাজার কোথায়..?হিরোগিরি দেখাতে তো বাজারে পাঠাইনি তাই না?

-“তোর মত এমন একটা পুচকি মেয়ের কথায় আদিত্য চৌধুরী বাজারের ব্যাগ হাতে হাঁটবে এটা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব বাস্তবে না।

-” হাহ…আমার মত কোন মেয়ের কথাতেই সারাজীবন চলতে হবে বুঝেছেন। সারাজীবন তো আর বিয়ে না করে থাকতে পারবেন না। তখন আপনার বউ প্রতিদিন আপনাকে দিয়ে বাজার করাবে.যাইহোক ভালই হয়েছে বাজার করেন নি তারমানে আমাকে রান্না করতে হবে না…

-“ঠিক বলেছিস তেমন কিছু রান্না করার প্রয়োজন নেই বুঝেছিস? শুধু ভুনা খিচুড়ির গরুর ঝাল মাংস,মুরগীর পাতলা ঝোল। সাথে গরম ভাত আর ইলিশ পাতুরি,চিংড়ির মালাইকারি,রুই মাছের মুড়োঘন্ট,ভাজা চপ,পাতলা ডাল সাথে একটু সাদা সবজি,পায়েশ আর আচাড় এইটুকু করলেই হবে…
কাবাব রোস্ট পোলাও এসবের দরকার নেই কি বলিস?

আদির কথায় আদিবা ভ্রু কুচকে তাকাল…
-“এসবের মানে কী…?

-“জীবনে প্রথমবার বাজারে পাঠালি খালি হাতে ফিরে আসব..? ভ্যানে বাজার পাঠিয়েছি এখনী চলে আসবে। আসলে আমার হাতে বাজারের ব্যাগ মানায় না তাছাড়া এত কিছু আনতেও পারতাম না।

-“কি কি বাজার করেছেন আপনি?

-“সেটা ত কিছুক্ষন পরেই দেখতে পাবি।
আমাকে বাজারে পাঠানোর মজা এবার হাড়ে হাড়ে বুঝবি। কি কি পদ বলেছি মনে আছে তো..?

আদিবা কিছু বলার আগেই ভ্যান ওয়ালা দরজার সামনে হাজির আদি টাওয়ালে মাথা মুছতে মুছতে এগিয়ে গিয়ে গিয়ে বলল সব নামিয়ে রাখতে।
বাজারের ধরন দেখে আদিবার ভিমড়ি খাওয়ার যোগার…ভ্যানওয়ালা সব নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।

আদি ঘরে যেতে যেতে বলল,
-“আদিবা… নাও তোমার বাজার চলে এসেছে রান্না শুরু করে দাও আমি চেঞ্জ করে আসছি…

আদি চলে যেতে চাইতেই আদিবা বলে উঠল
-“আপনি কী জানতেন না বাড়িতে যে ফ্রিজ নেই..?এতগুলো বাজার করলেন কোন বুদ্ধিতে?

-“আরে ফ্রিজ দিয়ে কি হবে? তুই কী শোনিস নি আমি কী কী রান্না করতে বলেছি…না শুনলেও সমস্যা নেই এখানে যা যা আছে সবি আজ তোকে রান্না করতে হবে তাই ফ্রিজ নিয়ে টেনশন করার দরকার নেই।

-“আপনার মাথা ঠিক আছে? এতগুলো কে খাবে..?

-“এলাকার লোকজন…আমি সবাইকে দাওয়াত করে এসেছি।

-“মানে কী..? হটাৎ লোকজনকে দাওয়াত খাওয়ানোর কথা আসল কোথা থেকে..?

-“তার কইফত কী তোকে দিতে হবে..?

-“অবশ্যই দিতে হবে আমি তো এতকিছু রান্না করব না।

-“তুই করবি তোর ঘাড় করবে…

-“আপনার মনে হয় এতগুলো রান্না করা আমার একার পক্ষে করা সম্ভব?

-“তোর পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব,রাতের বেলা তেজ দেখিয়ে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসা সম্ভব। আমাকে থাপ্পড় মারা সম্ভব। তাহলে এগুলো সম্ভব হবে না কেন?

আদিবা মুখ কালো করে বলল,
-“খামখেয়ালি বন্ধ করুন আমি এসব রান্না করতে পারব না….

শেষ শব্দটা উচ্চারনের আগেই বিকট শব্দে আত্না কেঁপে উঠল আদিবার। তাকিয়ে দেখল আদিত্য সামনে থাকা ড্রেসিং টেবিলের কাচ টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে সাথে ফুলদানিটাও আদিবার বুঝতে সময় লাগল না যে আদি রাগে ফুলদানিটা ছুড়ে মেরেছে। আদিবা অবাক চোখে তাকাতেই দেখলে মুহূর্তেই আদির মায়াবী মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠছে।

আদি চোখ সরু করে বলল,
-“পারব না,হবে না,করব না শব্দ গুলো আমার সামনে বলবি না শুনতে ভাল লাগে না…

-“আ আ আপনি গ্লাস টা ভেঙে ফেললেন কেন..?

-“তুই মুখ কালো করে কথা বলছিলি দেখতে খারাপ লাগছিল। যে আয়নায় তাকালে মেজাজ খারাপ হবে সেটা রাখার দরকার কী? যদিও দোষটা আয়নার ছিল না..

আদির উত্তর শুনে আদিবার কথা আটকে গেল…
কি বলবে বুঝতে পারছে না।

-“আর কিছু বলবি..?

আদিবা মাথা নিচু করে নিল কারন আদির রাগের পরিমান এতক্ষনে তার বুঝা শেষ। এখন কিছু বললে গায়ে হাত তুলবে তাই বাধ্য হয়ে এগিয়ে গেল… সাথে সাথে পিছন থেকে আদিত্য বলে উঠল।

-“দাঁড়া ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?

-“আ আ আ…আমি

-“আমি বাঘ কিংবা ভাল্লুক নই তাছাড়া আমতা আমতা করার মত কিছু ঘটেনি। যা বলতে চাস স্পষ্ট ভাষায় বল…

-“ক ক কিছু না আমি কাচ গুলো পরিষ্কার করে রান্না করতে যাচ্ছি।

-“লাগবে না তুই কাচ পরিষ্কার করতে পারবি না। হাতে লেগে যাবে। তুই রান্নার জোগাড় কর গিয়ে যা..

-“কিন্তু সারা ঘরে তো কাঁচ পড়ে…

আদিবাকে কথা শেষ করার সুযোগ দিল না চোখ পাঁকিয়ে তাকাল আদি।আদিবা কথা বাড়াল না..
পিছন ঘুরে যেতে চাইল পিছন থেকে আদি বলে উঠল,

-“হাত কেটে যাওয়া,পুড়ে যাওয়ার মত অঘটন যেন না ঘটে. কোনভাবেই যেন আজ কোন অঘটন না ঘটে। ধীরে ধীরে রান্না করবি তাড়াহুড়ো করার কোন প্রয়োজন নেই।

আদিবা মাথা নেড়ে গিয়ে বাজার নিয়ে বসল সেই ফাঁকে আদিও চেঞ্জ করতে চলে গেল।

আদিবা কা-টা-কুটি করতে করতে আদি এসে ঘরের কাচ পরিষ্কার করতে শুরু করল। দৃশ্য টা দেখে আদিবা অবাক হল। আদি কাঁচ গুলো সরিয়ে রেখে বিছানায় ফোন নিয়ে বসে পড়ল। বারান্দায় বৃষ্টির ছাঁট আসছিল বলে আদিবা ঘরে বসেই কাটাকুটি করছে।আদি ফোনের দিকে মনযোগ দিলেও মাঝে মাঝেই মুখ তুলে আদিবাকে দেখছে..আদিবা ভয় পেয়েছে তাই মন দিয়ে কাজ করছে।

হটাৎ আদি বলে উঠল,
-“তারপর আদিবা গ্রামে এসে তোর কেমন লাগছে বল?

-“মানে..?

-“এই যে রান্না করা ঘর গোছানো সব মিলে এখানে এসে ভুল করেছিস মনে হচ্ছে না?

-“নাহ! কিসের ভুল আমার কোন অসুবিধে হচ্ছে না..

-“তাই নাকি? তা তুই কি জানিস এখানে মিক্সার নেই সব মসলা তোকে বাঁটাবাটি করতে হবে..?তারপর রান্নাঘরে গিয়ে ভিজে ভিজে রান্না করতে হবে…

কথাগুলো শুনে আদিবা অসহায় চোখে তাকাল কিন্তু আদি পাত্তা না দিয়ে বলল,
-“এখনো সময় আছে স্বীকার কর বাসা থেকে বেরিয়ে এসে ভুল করেছিস।

আদিবা উত্তর দিল না।

-“জেদ টা একেবারে ছোটবেলার মতই আছে এই জেদের জন্যই তুই মার খেতি।

-“আপনিও আগের মতই আছেন…

-“নাহ আমি অনেক কন্ট্রোল করতে শিখেছি নাহলে আজ আয়নার বদলে কারোর হাত পা ভাংগত…

আদিবা প্রসঙ্গ টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল,
-“আমি রান্না করতে পারব আপনি চুপচাপ বসে থাকুন।

-“করত ত হবেই। ধর তোর শ্বশুড়বাড়িতে যদি অনেক লোক থাকে তখন কী করবি?এখন থেকে অভ্যাস করে নে।

-“অনেক লোক থাকলেও সমস্যা নেই আপনার মত কেউ না থাকলেই চলবে।

আদিবার কথা শুনে আদিত্য হা হা করে হেসে উঠল
-“কেন আমি আবার কি করেছি? আজ তো তোকে একটাও বাজে কথা বলি নি মারিও নি।

আদিবা কিছু না বলে রান্না ঘরে চলে গেল। বৃষ্টি কমেছে কিন্তু সবগুলো জিনিস রান্না ঘরে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে।আদিবা কয়কবার যাওয়া আসা করে হাঁফিয়ে উঠল,আদির দিকে তাকিয়ে অসহায় ভংগিতে বলল,

-“আপনি কী মানুষ?

-“অন্য কিছু মনে হওয়ার কারন কী..?

-” আমি একা একা কষ্ট করছি আর আপনি বসে বসে মজা দেখছেন..?

-“এছাড়া আমার আর কী করার আছে..?

-“রান্না নাই পারলেন জিনিসগুলো নিতে একটু হেল্প তো করতে পারেন।

-“আগে বলবি না? আগে বল্লেই হেল্প করতাম বলেই আদি নেমে এসে আদিবাকে কোলে তুলে নিল।

-“ক ক কী করছেন?

-“তুই তো বললি হেল্প করে দিতে তাই নিয়ে যাচ্ছি যদি আমার হেল্প চাস এভাবেই হেল্প করব প্রতিটা জিনিস তুই নিয়ে যাবি, আর আমি তোকে।

-“আমি এমন হেল্প চাইনি কথায় কথা গাঁয়ে হাত দেওয়া কেমন স্বভাব? লোকে দেখলে কি ভাব্বে? ছাড়ুন বলছি।

-“ছেড়ে দিব..?

-“অবশ্যই ছাড়ুন বলছি অসভ্যতা করবেন না…

কথাটা শুনে কোন সংকেত ছাড়াই আদি আদিবাকে ছেড়ে দিল..আদিবা নিচে পড়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকাল তাৎক্ষনিক ঘটনায় ব্রেইন ব্যাথার পরিমান পরিমাপ করতে পারে নি তাই আদিবা চিৎকার দেওয়ার সুযোগ পায়নি।

আদিবাকে নিচে ফেলে দিয়ে আদি হন হন করস ঘরে চলে গেল। নাহ আদিবা ব্যাথা তেমন পায়নি তবে কাঁদায় পড়ে সারা শরীর মাখামাখি অবস্থা..আদি কয়েকবার ড্রেস বদলে নিতে বললেও আদিবা ড্রেস চেঞ্জ করল না। কাঁদা ধুয়ে নিয়ে ভেজা কাপড়েই রান্না করছে…মসলা বাটা সবজি কাটা সব করতে করতে হাফিয়ে উঠেছে আদিবা।
আদি আদিবার কান্ড দেখছে কিছু বলছে না। এত দুনিয়ার কাজ করে আদিবার প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা বেশ কষ্ট করে সবগুলো রান্না শেষ করে আদিবা ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল…ভীষন কষ্ট হয়েছে।আদিত্য কোন কারন ছাড়া তাকে দিয়ে এতগুলো কাজ করিয়েছে ভেবেই খারাপ লাগছে। তবে কী আদির মনে তার জন্য কোন মায়া নেই? যে মানুষটা তাকে এতটা পরিশ্রম করাতে পারে সে আর যাইহোক তাকে ভালবাসতে পারে না। আদিবা কেঁদে কেঁদে নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করছে।

বেশঅনেক্ষন ধরে আদিবা ওয়াশরুমে বসে আছে দেখে আদি দরজার সামনে গিয়ে গলা ছাড়ল,
-“সু*সা*ইড করার সুব্যাবস্থা এখানে নেই তাই ঢং বাদ দিয়ে বাইরে আয়…

আদিবা উত্তর দিল না..

-“১ থেকে ৩ গুনব যদি বের না হোস তোর কপালে আজ যে কি আছে আদিবা ভাবতেও পারছিস না..দরজা খোল।

আদিবা তাড়াতাড়ি চোখ মুখে পানি দিয়ে বের হল…আদি নিজের আরও এক সেট কাপড় এগিয়ে দিয়ে বলল,

-“আসার সময় কাপড়গুলোন অন্তত আনা উচিত ছিল।যাইহোক কান্নাকাটির দরকার ছিল না। এইটুকু শাস্তি তোর প্রাপ্য ছিল আমি শুধু বুঝাতে চেয়েছিলাম গ্রামের জীবনটা তোর জন্য না।

-“এখানে থাকতে আমার কোন কষ্ট হত না কিন্তু একদিনে এতগুলো রান্নার সত্যিই কী কোন দরকার ছিল…?

আদি অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তুই আমায় বিয়ে করতে চাস সেটা এভাবে প্রমাণ না করে বাসায় বললেই তো পারিস..

-“মানে..?কিসব আবল তাবল বলছেন? আমি কখন বললাম আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই..?

-” গ্রামের বাড়িতে হুট করে দুটো ছেলে মেয়ে এসে একসাথে থাকার মানে তুই বুঝিস আদিবা..?

আদিবা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
-” মানে…কী বলতে চাইছেন?

-“গ্রামে কেউই আমায় চিনে না তোর সাথে আমার কী সম্পর্ক সেটা কেউ জানে না.যখন কেউ আমাদের একসাথে দেখবে কি ভাব্বে?

-“কী ভাব্বে..?

-“তুই ছোট বাচ্চা না আমি কী বুঝাতে চাইছি তুই বুঝেছিস।

-“একজনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে যার পুরো শরীরে নিজের দখলদারির প্রমাণ এঁকে দিয়েছেন এখন তার সম্মানের কথা ভাবছেন? অদ্ভুত লাগছে শুনতে..

-“আমি মিথ্যে বলি না আর তোকে আমি ভাল চোখে দেখিও না আর সেজন্যেই ভয় পাচ্ছি কিন্তু আমাকে নিয়ে যে যাই বলুক আমি চাই না কেউ একটা বারের জন্য বলুক আদিবা কোন ছেলের সাথে….

আদিবা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল আদির দিকে..

-“কাল রাতে আমরা এসেছি তাই হয়ত কেউ খেয়াল করেনি কিন্তু আজ কেউ না কেউ নিশ্চুই দেখবে তাই আগেই সবাইকে বাড়িতে আসতে বলে দিয়েছি। কেউ তোকে নিয়ে কিছু বলার আগে আমি সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই তুই আমার কে হোস….

আদিবা আদির চোখে চোখে তাকিয়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করল,

-“কে হই আমি আপনার….?



চলবে…

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ২৭
#লেখনীঃ মনা হোসাইন

-“কে হই আমি আপনার..?

আদিবার মুখে প্রশ্নটা শুনে খানিক স্থীর নয়নে তাকিয়ে রইল আদি। এই উত্তর হয়ত মুখে দেওয়া যায় না তাই তো সে বলতে পারছে না।

আসলে এই সম্পর্কের কী নাম দেওয়া যায় আদির জানা নেউ… প্রেমিকা শব্দটা বড্ড গোলমেলে এই সম্পর্কের কোন ভিত্তি নেই যেকোন সময় বিচ্ছেদ ঘটতে পারে..তাই এই নাম বাদ। তবে কী বউ? নাহ সেও তো ছেড়ে যেতে পারে…তাহলে কি নাম দেওয়া যায় আত্মা..? না তাও দেওয়া যাবে না মরে গেলে আত্মা ছেড়ে চলে যায় আদিবার তো আদিকে ছেড়ে যাবার অনুমতি নেই। সে কখনো আদিকে ছেড়ে যাবে না কোন কারনেই যাবে না।

-‘কী হল বলুন আমি আপনার কে হই?

আদির ধ্যান ভাংগল। ভ্রুদ্বয়ের সংকোচিত করে জবাব দিল,
-“কঠিন প্রশ্ন ভেবে চিন্তে উত্তর দিতে হবে। এমন জটিল প্রশ্নের উত্তর হুটহাট দেওয়া যায় না।

আদিবা জানত আদি এমন কিছুই বলবে তাই গাঁয়ে মাখল না সে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ল।
-“ভালবাসি বলতে এতই সংকোচ আপনার? এটা কেমন ভালবাসা যা মুখ ফুটে বলা যায় না?



দেখতে দেখতে বেলা গড়িয়ে গেল। সন্ধ্যা হতেই বাড়িতে একে একে মানুষজনের আগমন শুরু হল আদিবার ভীষন রকমের অসহ্য লাগছে. এসবের কী সত্যিই কোন দরকার ছিল? কে কি বলল কি ভাবল তাতে কি যায় আসে? আদির সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি..

আদিবা বাধ্য হয়েই খাবারের ব্যবস্থা করল। খাওয়া দাওয়ার পর আদি সবাইকে বলল সে অনেকদিন পর দেশে এসেছে তাই গ্রামে ঘুরতে এসেছে। রান্না বান্না আর তার দেখাশোনার জন্য আদিবাকে সাথে নিয়ে এসেছে। আদির কথা শুনে আদিবার গাঁ জ্বলে গেল। কিন্তু কিছু বলার সুযোগ পেল না। খাবারের পর সবাই চলে যেতে আদি এসে বলল,

-“যাক সব মিটে গেছে এবার আমাকে খেতে দে…

আদিবা খাবার দিয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে গিয়ে উলটো ঘুরে এখন আর কিছু করতে পারব সোফায় শুয়ে পড়ল। রাগের কারন আদির অজানা তাই প্রশ্ন করল,

-‘ঘটনা কী…?

-“খেয়ে খাবারগুলো গুছিয়ে রাখবেন।আমি আর কিছু করতে পারব না। একবছরের কাজ একদিনেই করিয়ে দিয়েছেন তাই এখন আর একটাও কাজ দিবেন না আমাকে।

-“তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু বাজারে যাওয়ার সময় কি কথা দিয়েছিলি মনে আছে?

-“মনে থাকবে না কেন? বলেছিলাম রান্না করে খাওয়াব তো রান্না কি করিনি?খেয়ে উদ্ধার করুন

-“তা ত খবাই

বলই আদি উঠি এসে আদিবার হাত ধরব হ্যাচকা টানে তুলে দিল।

-“কী করছেন ছাড়ুন বলছি…

-“কথার খেলাপ একদম মেনে নিতে পারি না তাই মার খাওয়ার আগে উঠে চুপচাপ খেতে বস।

-“আমি খাব কি খাবনা তার কইফত আপনাকে দিতে হবে ?

-“তুই কিন্তু বেশি বাড় বেড়ে গেছিস আদিবা কথায় কথায় তর্ক করিস।

-“তাহলে আমার সাথে কথা না বললেই তো হয়।

-“ঠিক আছে কথা বলব না কিন্তু এখন খেয়ে নে।

-“খাব না বল্লাম তো..

-“ঠিক আছে খাস না কিন্তু আমাকে খায়িয়ে দিবি বলেছিলি খায়িয়ে দে।

কথাটা শুনে আদিবা চোখ বড় বড় করে তাকাল
-“খায়িয়ে দিব মানে কী? আপনি কি ছোট বাচ্চা যে খায়িয়ে দিতে হবে?

-“দিবি নাকি মার খাবি সেটা তো তোর সিধান্ত…

-“আপনি সবকিছুতে এত বাড়াবাড়ি…

কথাটা শেষ করার আগেই আদি বিছানার উপড় থেকে খাবার গুলো ছুড়ে ফেলে দিল।

আদিবা হতভম্ব হয়ে গেল।
-“কী করলেন এটা…?

-“কিছু না।

-“আপনি খাবারগুলো ফেললেন কেন?

-“জানি না যাইহোক বাদ দে রেডি হয়ে নে…

-“মানে..?

-“মানে আমরা ফিরে যাচ্ছি…

-“ফিরে যাব মানে? ফিরে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম নাকি?

-“তো সারাজীবন এখানে থাকবি ভেবে এসেছিলি..?
এক থেকে তিন গুনব এর মধ্যে চেঞ্জ করে আসবি আর একটাও বাড়তি কথা বলবি না।

-“আমি যাব না। খবরদার আমাকে জোর করবেন না।

কে শুনে কার কথা আদি এগিয়ে এসে আদিবার কোন কথাই শুনল না টানটানতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

-“এসব কি করছেন? এভাবে কোথায় যাচ্ছেন আরে ছাড়ুন..

আদির কানে কিছুই ঢুকল না। সে একহাতে নিজের ব্যাগ অন্য হাতে আদিবাকে শক্ত করে ধরে নিয়ে হাঁটতে লাগল। স্টেশনে এসে চোখ পাকিয়ে বলল

-“লোকজনের সামনে একটু এদিক থেকে ওদিক করবি ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দিব।

সময়মত ট্রেন চলে আসল আদি টিকিট কেটে আনল আদিবাকে জানলার সাইডে বসিয়ে দিয়ে বাইরের দিকের সিটে নিজে বসল। ট্রেন চলতে শুরু করেছে আদির মুখে কথা নেই। চোখ মুখ কালো করে বসে আছে আদিবাও কিছু বলতে পারছে না ট্রেন একটা স্টেশন ক্রস করার পর ট্রেনের ক্যান্টিনের লোক এসে বলল,

-“স্যার আপনাদের কিছু দিব..?

আদি আদিবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
-“একটা প্লেটার দিন আর এককাপ কফি।

ওয়েটার খাবার দিয়ে যেতেই আদি প্লেট টা হাতে নিয়ে আদিবার হাতে ধরিয়ে দিল আর নিজে কফির কাপে চুমুক দিল। আদিবা এখনো আদির দিকে তাকিয়ে আছে। আদি বিষয় টা লক্ষ্য করে বলল

-“খেতে ইচ্ছে না করলে জানলা খোলা আছে ফেলে দিতে পারিস।আর ওদিকে দরজাও আছে লাফাতে চাইলে লাফাতে পারিস।

আদিবা বুঝতে পারল আদির মেজাজ বেশিই খারাপ হয়ে আছে। যদিও আদিবা রেগে ছিল কিন্তু আদি এত শখ করে বাজার এনে কিছুই খেতে পারল না ব্যাপারটা তার খারাপ লাগছে। তার জন্য আদি সারারাত না খেয়ে থাকবে এটা হতে পারে না। সে প্লেট থেকে একটু খাবার নিয়ে আদির দিকে এগিয়ে দিল। আদি ব্যাপারটা ইগনোর করে বলল,

-“আমার খিদে নেই..

-“একটু খান…

-“বল্লাম তোন খিদে নেই।

বলে আদি সিট থেকে উঠে দরজার সামনে চলে গেল। আদিবা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আদি কফির কাপে হাতে দরজার বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে…
-“এত জেদ..? কি এমন বলেছিল আদিবা? এইটুকুর জন্য এত রাগ দেখাতে হবে..? নাহ এমন মেন্টাল প্রেসার আর নেয়া যাচ্ছে না।

আদিবা তাকিয়ে থাকতে থাকতে আদি তার দিকে তাকাল। চোখে চোখ পড়তেই আদি খাবার খাওয়ার জন্য ইশারা করল। আদিবা আদিকে আর রাগাতে চায় না তাই খেতে শুরু করল। আদিবার খাওয়া শেষ হলে আদি এসে নিজের সিটে বসল..

-“আর কিছু খাবি..?

আদিবা মাথা নাড়ল।

-“তাহলে এখন ঘুমা…

-“ভ ভ ভাইয়া…

-“হুম

-” আ আ আ আ আমাকে…

আদিবা আমতা আমতা করছে দেখে আদি চোখ মেলে তাকাল…
-“কী সমস্যা ভয় পাচ্ছিস কেন?আমি কি তোকে মেরেছি নাকি? যা বলার সোজাসাপটা বল।

-“ভ ভ ভাইয়া আমাকে কিছু টাকা দিবেন?

আদি কিছুটা অবাক হলেও কোন আপত্তি করল না।
-“কত টাকা..?

-“পা পা পাঁচ হা হা হাজারের মত..

আদিবা হটাৎ টাকা দিয়ে কি করবে আদি বুঝতে পারল না কিন্তু প্রশ্ন করলে হয়ত আদিবা টাকাটা নিতে সংকোচবোধ করবে। তাই প্রশ্ন না করে ওয়ালেট টা আদিবার হাতে দিল আদি। আদিবা ওয়ালেট খুলে দেখল বেশ ভালই টাকা আছে…
সে ভয় ভয় চোখে আদির দিকে তাকাল আদি আদিবাকে অভয় দিয়ে বলল,

-“কিছু বলবি..?

-“আর একটু বেশি টাকা নিলে কী আপনি রাগ করবেন..?

আদি আদিবার মুখের দিকে তাকাল ভয়ে মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে। কথা বলতে গিয়ে আমতা আমতা করছে দেখে আদির মায়া হল।ঝটপট উত্তর দিল

-” যত খুশি নিয়ে নে প্রশ্ন করতে হবে না ..কিন্তু তুই হটাৎ টাকা দিয়ে কি করবি..?

আদিবা উত্তর না দিয়ে ওয়ালেট থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে নিল। টাকা নিয়ে ওয়ালেট টা আদিকে ফিরত দিয়ে নিজের টাকা রাখার জন্য এদিক ওদিক কিছু খুঁজল।কিন্তু কিছু না পেয়ে বলল,

-“ভাইয়া আমি তো কোন ব্যাগ আনিনি আপনার ব্যাগে টাকাটা রাখি?

আদি,আদিবার কান্ডে অবাক হচ্ছে ঠিকি কিন্তু কিছু বলছে না কারন সে ইতিমধ্যে আদিবার সাথে যথেষ্ট খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে তাছাড়া আদিবা কখনো তার কাছে কিছু চায় না।কখনো এত সাবলিল ভাবে কথাও বলে না আজ সংকোচ ছাড়াই বলছে…তাই আদিত্য বাড়তি প্রশ্ন করল না।আদিবাকে আশ্বস্ত করে বলল।

-“আচ্ছা আমার কাছে দে এখন আমার কাছে থাকুক বাসায় গিয়ে যত লাগে নিয়ে নিস।

-“নাহ… আপনার কাছে রাখতে হবে না। কাপড়ের ব্যাগে রাখি?

-“আচ্ছা বেশ রাখ…

আদির বলতেই আদিবা হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা নিয়ে টাকাগুলো রেখে ব্যাগটা নিজের কোলের উপড়
রেখে দিল। এত যত্ন করে রেখেছে যেন অনেক মূল্যবান কিছু। আদি আদিবার এমন করার কোন কারন খুঁজে পেল না। সময় যেতে লাগল
আদিবার ঘুম পাচ্ছে সে কিছুক্ষন জেগে থাকার চেষ্টা করে ব্যার্থ হল। চোখ আর মানছে না এবার ঘুমাতে হবে। আদিবা ইচ্ছে করেই আদির কাঁধে মাথা রাখল।সাথে সাথে আদি চমকে উঠল। আদিবা বুঝতে পারল আদি হয়ত এর জন্য প্রস্তুত ছিল না তাই তাড়াতাড়ি উঠে যেতে চাইল কিন্তু আদি তাকে টেনে এনে আবার নিজের কাঁধে শুয়িয়ে দিল তারপর নিচু হয়ে বসল যাতে আদিবার শুতে অসুবিধে না হয়।



আনুমানিক ভোর ৫ টার দিকে ট্রেন এসে স্টেশনে থামল। চারদিকে এখনো আলো ছড়ায় নি। সময়টা আলো আঁধারের সন্ধিক্ষন। আদিবা ঘুমাচ্ছে দেখে আদি ডাকল না। সবাই নেমে গিয়েছে শুধু আদি আর আদিবা সিটে বসে আছে। আদিবা আদির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত আদিবাকে দেখতে বড়ই শুভ্র লাগছে।আদিবা আদির শার্ট আঁখড়ে ধরে আছে। সে নিজেকে পুরোপুরি আদির উপড় এলিয়ে দিয়ে নিশ্চন্তে ঘুমোচ্ছে। গোলাপি ঠোঁট দুটো একটু একটু কেঁপে উঠছে। চুলগুলি উড়ে এসে বারবার আদির মুখে পড়ছে আদির ইচ্ছে করছে আলতো করে একবার চুল গুলো ঠিক করে দিতে কিন্তু পারছে কই? আজ হটাৎ কেমন যেন জড়তা এসে ভীড় জমিয়েছে আদির মাঝে যা এর আগে কখনো হয়নি।

আদিবার দিকে তাকাতেই বুকের বাঁ পাশে ঢিপঢিপ করে উঠছে। হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিময় ঠান্ডা পরিবেশেও কপালে ঘাম জমছে। হাত দুটি কাঁপছে,গলা শুকিয়ে উঠছে আদি কাঁপা কাঁপা হাতে কপালের ঘাম মুছে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

সে নিজেই বুঝতে পারছে না তার সাথে এমন হচ্ছে কেন? সেতো আরও আগেই আদিবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তার সাথে কতকিছু করে ফেলেছে কিন্তু এমন অনুভূতি তো কখনো হইনি। তবে কী একেই ভালবাসা বলে? জোর করে যা পাওয়া যায় সেটা ভালবাসা নয়..?



চলবে…!!!