#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৩৪
#লিখনীঃ #মনা_হোসাইন
-“আপনি জানেন আপনার মাথায় যে সমস্যা আছে..?
আদি শুনেও না শোনার ভান করে উত্তর দিল না। তবে আদিবাও থেমে নেই নিজমনে আদিকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। আদি তাতে কোন পাত্তা না দিয়ে আদিবাকে টানতে টানতে নিয়ে বাসায় নিয়ে ফিরল।বাসায় ঢুকেই আদিবা আবারো চেঁচিয়ে উঠল,
-“কখন থেকে এত কথা বলে যাচ্ছি আপনার কানে যাচ্ছে না?
-“যাবে না কেন? তুই বলছিস আমিও শুনছি কিন্তু উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না..
-“উত্তর তো দিতেই হবে আপনি বিয়েটা ভেঙে দিলেন কেন?
-“ভদ্র বাড়ির মেয়েরা রেস্টুরেন্টে বউ দেখাতে যায় না।
-“বিদেশ ফিরত শিক্ষিত একজন ছেলের কাছ থেকে এমনটা আশা করা যায় না। যুগ পাল্টেছে এখন এভাবেই বিয়ে হয়।
-“আমাদের বাড়িতে হবে না চুপচাপ নিজের ঘরে যা…
-“সরাসরি বলুন না আপনার হিংসা হচ্ছে জেলাস ফিল করছেন।
-” তোর বিয়ে হবে জন্যে আমি জেলাস ফিল করব কেন? সাদিয়া কি তোর চেয়ে খারাপ দেখতে..?আমি মুখে যা বলছি মনেও তাই তোর বিয়ে ভেঙে দেয়ার উদ্দেশ্যে নয় বরং বাড়ির সম্মান বাঁচাতে এমন টা করেছি।
আদির কথায় আদিবার মন খারাপ হল তাই আর কথা না বাড়াতে চাইল না। আদি আবার বলল,
-“তোর যেহেতু বিয়ে করার এতই ইচ্ছে হয়েছে তখন সভ্য নম্র ভদ্রভাবে বিয়ে কর। ম্যাট্রিমনি থেকে আজ বিয়ে করবি কাল দেখবি ছেলে আগেই ৩ টা বিয়ে করে বসে আছে। বড় ভাই হয়ে এটা তো মেনে নিতে পারি না।
-“তারমানে আপনি এখনো বলবেন আমায় বিয়ে করতে চান? (মনে মনে) নাকি আপনি সত্যিই আমায় বিয়ে করতে চান। এই যে ভালবাসা এই পুরোটাই অভিনয় আপনি আসলে আমায় ভালবাসেন না? ভালই যদি বাসবেন এখনো কেন বলছেন না? নাহ আমাকে জানতেই হবে আপনার মনে আমি সত্যিই আছি নাকি নেই?
আদিবা কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। সারাদিনে আর আদির সাথে দেখা হয় নি আদিবার। কারন আদি নিজের ঘর থেকে সারাদিন বের হয়নি আশ্চর্য বিষয় আদি আজ একবারো আদিবাকে ডাকে নি। আদির হুট করে বদলে যাওয়াটা আদিবা ভাল লাগল না। অজানা কারনেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। যাইহোক প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে আদি প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় কফি খায়।এবার অন্তত আদিবাকে ডাকবে সে আশায় আগেই কফি বানিয়ে রেখে দিল।
সন্ধ্যা ৬ টা হবে আদি নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে আসল। আদিবা কফির মগ হাতে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াতেই আদি আদিবাকে দেখেও না দেখার ভান করে ফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখে বলল সাদিয়া আমাকে কফি দিয়ে যা তো,…
আদিবা অবাক হয়ে বলল,
-“প্রতিদিন তো আমি কফি দেই…
-“আর দিতে হবে না এখন থেকে আমার সব কাজ সাদিয়াই করবে।যাইহোক তোকে একটু পর দেখতে আসবে রেডি হয়ে নে…
আদিবা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
-“দেখতে আসবে মানে..?
-“আমার পরিচিত এক সিনিয়র ভাই পাত্রী খুঁজছে আমি তোর কথা বলায় বললেন দেখতে আসবেন…
-“আ আ আপনি…??
-“আমতা আমতা করার মানে কি?
-“আপনি সত্যিই আমার বিয়ে দিতে চান..?
-“অবশ্যই তোর বিয়ে নাহলে তো আমাদের টাও হবে না।তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোকে বিয়ে দিতে হবে এখন এত কথা না বলে রেডি হ গিয়ে।
আদিবা যাচ্ছে না দেখে আদি জুই কে ডেকে বলল,
-“ওকে একটু সাজিয়ে দে তো জুই। শাড়ির দরকার নেই জামা পরে মাথায় ওরনা দিলেই হবে।
-“সাজিয়ে দিব বলতে বুঝিনি ভাইয়া…
-“পাত্রী দেখতে আসছে তাই সাজিয়ে দিবি।
-“কিন্তু ভাইয়া
আদি জুইকে কথা শেষ করতে দিল না অযথাই ধমকে বলে উঠল,
-“তোরা সবাই দেখছি বেয়াদব হয়ে গিয়েছিস…এক কথা আমি দুবার বলিনা।এক্ষনি আদিবাকে নিয়ে যা তানাহলে আজ সবার কপালে দুঃখ আছে।
আদিবা কিছু বলার সুযোগ পেল না।আদি কি করতে চাইছে আদিবা বুঝলো না। জুই তাকে সাজাতে সাজাতেই আদির কন্ঠ ভেসে আসল,
-জুই পাত্র পক্ষ এসেছে।
আদিবা কিছুই বুঝতে পারছে না কিন্তু নিচে এসে দেখল জমজমাট অবস্থা টেবিল ভর্তি নাশতা ফলমূল। একপাশে বসে আছে আদিসহ বাড়ির বড়রা অন্যপাশে ২ জন অপরিচিত ছেলে এবং একজন ভদ্রমহিলা।আদিবাকে জুই নিয়ে আসতেই আদি উঠে গিয়ে আদিবাকে এগিয়ে আনল নিজের পাশের সোফায় বসিয়ে বলতে শুরু করল,
-“নিজের বোন বলে বলছি না। আদিবা যে শুধু দেখতে সুন্দরী তা কিন্তু না ওর আচার ব্যবহারো খুব ভাল। সারাদিন বকা দিলেও টু শব্দ করে না।রান্না বান্না বাসার কাজ সব পারে।
আদি আজ হটাৎ আদিবার প্রশংসা করছে ব্যাপারে কারোরি হজম হল না একে অপরের মুখ দেখা দেখি করছিল ঠিক তখনী আদি বলে উঠল,
-“আশা করছি ওকে আপনাদের ভাল লেগেছে।ভাইয়া আপনি চাইলে আদিবার সাথে পারসনালি কথা বলতে পারেন। বিয়ের আগে দুজনের মাঝে ভাল বন্ডিং হওয়া জরুরী।আদিবা উনাকে নিয়ে তোর ঘরে যা. আদিবা এবারেও কিছু বলতে পারল না। আদি জোর করে আদিবাকে উপড়ে পাঠিয়ে দিল।আদিবা আদির এমন ব্যবহারের কারন খুঁজে পেল না আদিকে সে একটু জেলাস ফিল করাতে চেয়েছিল কিন্তু আদি যে সত্যি সত্যি বিয়ের আয়োজব করে বসবে কে জানত। আদিবা কিছু বলছে না দেখে পাশের ছেলেটি বলল,
-“আমি আশিক,আপনার কথা আদি যতটা বলেছিল আপনি তার চেয়েও অনেক বেশি সুন্দরী..আমার এই বিয়েতে কোন অমত নেই। আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে? আদিবা উত্তর দিতে পারল না চোখ জলে ভরে আসল। আদিবা মাথা নিচু করে জবাব দিল,
-“ক্ষমা করবেন আমি এই বিয়ে করতে পারব না।আমি অন্য একজনকে ভালবাসি…
বলেই আদিবা কেঁদে দিল আর দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
।
।
।
চলবে..!
#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৩৫
#লিখনীঃ মনা হোসাইন
আদিবার বিয়ে ভেঙে গিয়েছে। পাত্রপক্ষ বলেছে আদিবাকে পছন্দ হয় নি। তবে এর পিছনে যে আদিবার হাত ছিল সেটা বলে নি কারন আদিবা পাত্র মানে আশিককে অনুরোধ করেছিল সে যেন সবাইকে বলে আদিবাকে তার পছন্দ হয় নি। সবাই কে তার ভালবাসার কথা যেন না জানায়।
আশিক মানবিক কারনে আদিবার অনুরোধ রেখেছে সে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে কিন্তু কারন জানায় নি কাউকে।
আদিবার বিয়ে ভেঙে গেলেও তার মন বেজায় খারাপ। আদি কি করে তার বিয়ের আয়োজন করতে পারল? তারমানে সে আদিবাকে সত্যিই আর পছন্দ করে না? ভালবাসে না? সে নিজের মন থেকে আদিবাকে একেবারেই বের করে দিয়েছে? হ্যা তাই হবে তানাহলে আর যাইহোক আদিবাকে সেজে গুছে অন্য ছেলের সামনে বসতে দিত না। মিথ্যে অভিনয়ের জন্য হলেও দিত না। আদি বরাবরই রগচটা আদিবার দিকে কেউ তাকাবে সেটা মানতে পারে না অথচ আজ নিজেই একা ঘরে একটা ছেলের সাথে পাঠিয়ে দিল? আদির হটাৎ পরিবর্তন আদিবার মনে দাগ কাটল। সেও নিজেকে পরিবর্তন করার সিধান্ত নিয়েছে। আদির সাথে কথা বলা তো দূর,মুখ দেখাদেখিও বন্ধ করে দিয়েছে…নিজের ঘর থেকে একেবারেই বের হচ্ছে না আদিবা।
আদিবা দরজা বন্ধ করে নিজের ঘরে শুয়ে ছিল হটাৎ দরজায় কেউ কড়া নাড়ল ।আদিবার ধারনা এটা আদির কাজ তাই সাড়া দেয়ার প্রয়োজন মনে করল না। আবারো ঠকঠক শব্দ ভেসে আসল। সাথে আদিবার মায়ের গলা।
-“আদিবা দরজাটা একবার খোল তো…
আদিবা বিরক্ত হলেও মায়ের গলার আওয়াজ শুনে এগিয়ে গিয়ে দরজা খোলল সাথে সাথে দরজা বন্ধও করে দিতেও চেয়েছিল কিন্তু আদি সেটা হতে দিল না আগেই হাত দিয়ে আটকে ধরল।
-“কি চাই? আপনারা এখানে কি করছেন? সরুন দরজাটা লক করব।
-“ন্যাকামি দেখার সময় আমার নেই। ভাবিস না তোর ঢং দেখতে এসেছি কাকিয়া নিয়ে এসেছে তাই এসেছি।
আদিবা কিছু বলতে যাবে তার আগে তার মা বলে উঠলেন,
-“আদি ঠিকি বলছে ভিতরে চল তোর সাথে কিছু কথা আছে।
আদিবা আপত্তি করতে চেয়েছিল কিন্তু আদি তার আপত্তি কিংবা সম্মতির জন্য অপেক্ষা করল না আদিবাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে টেবিলের পাশ থেকে চেয়ার টেনে বসল। আদিবার মা আর সাদিয়াও তার পিছু পিছু এসে বিছানায় বসেছে। আদিবা একরাশ বিরক্তি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়াল। বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন করল,
-“মা,আমার সাথে তোমাদের কি এমন দরকার বলতো? যে সবাই দলেবলে এসেছো?
-“আ আ আ আসলে মানে আদি বলছিল….
শাহানা বেগমকে থামিয়ে দিয়ে আদি বলে উঠল,
-“কাকিয়া তুমি আমতা আমতা করছো কেন? যাইহোক তোমার কিছু বলতে হবে না যা বলার আমি বলছি…আদিবা রেডি হ বাইরে যেতে হবে।
আদিবা ভ্রু কুচকে তাকাল আদির দিকে..
-“কি ব্যাপার বাইরে কেন?
-“তুই চাচার, বড় মেয়ে তাই তোর কিছু দায়িত্ব আছে সেগুলো পালন করার জন্য।
-“যা বলার সরাসরি বলুন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলা আমার ভাল লাগে না।
-“ছোট চাচা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অনেক বছর হয়। বাবার শরীরো তেমন ভাল না তাই অফিসে অফিসে দৌড় ঝাঁপ করা তার পক্ষে সম্ভব না। আমি এবার বিদেশে গেলে কবে ফিরব জানি না তাই কাকিয়া চাচ্ছিল ছোট চাচার সম্পত্তির বন্টন টা করে ফেলতে।
-“মানে..?
-“মানে বিয়ের পরে কে কেমন আচারন করবে বলা যায় না তাই ঝামেলা হওয়ার আগেই কাকিয়ার অংশ কাকিয়াকে আর সাদিয়ার অংশ সাদিয়াকে বুঝিয়ে দিতে চাই।
আদির কথায় ভীষন অবাক হচ্ছে আদিবা।সময় কি মানুষকে এতটাই বদলে দিতে পারে..? আদিবা যেন কথা বলার ভাষায় হারিয়ে ফেলেছে।
-“কি হল এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন..?
-“আ আ আপনার মনে হচ্ছে আমি বিয়ের পর সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা করব?
-“এত ইমোশনাল হওয়ার মত কিছু তো বলিনি..কেঁদে দিচ্ছিস কেন?
-” আমি তো একবারো বলেনি আমার সম্পত্তি লাগবে? আপনাদের যার যা নেওয়ার নিয়ে নিন।
-“মুখে মুখে এমন সবাই বলে। যাইহোক তোকে ঠকানোর কোন ইচ্ছে আমাদের নেই রেডি হয়ে নে রেস্ট্রি অফিসে যেতে হবে কিছু সই আর ছবি লাগবে।
-“আমার ভাগের দরকার নেই আপনারা পুরোটাই নিয়ে নিন।
-“তোর ভাগ না লাগলেও তোর বিয়ের জন্য টাকার দরকার আর টাকার জন্য সম্পত্তি দরকার। তাছাড়া তুই মুখে বললে তো আর সম্পত্তি নেয়া যাবে না আগে সবার ভাগের টা সবাই বুঝে পাক তারপর তোর টা তুই যাকে খুশি দিয়ে দিস।
নিচে অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি আয়…বলে আদি চলে গেল। আদিবার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না খুব কান্না পাচ্ছে তার। সে ছল ছল চোখে তাকাল মায়ের দিকে,
-“এসবের কি খুব দরকার ছিল মা..? আমাকে এভাবে আলাদা না করলেও পারতে..হতে পারে আমি কম শিক্ষিত নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব না তাই বলে বিয়ের পর সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা করব..?
-“আদিবা,এসব আমাদের সিধান্ত না আদি চাইছে..
-“আদি,আদি,আদি সবকিছুতে আদি।আমাদের সব সিধান্ত ভাইয়া কেন নিবে..? কেন মা… তোমরা সবসময় কেন ওর কথাকেই গুরুত্ব দাও?
-“এই বিষয়ে আপত্তি জানানোর সুযোগ আমাদের নেই আদিবা। তোদের নিজের ভাই মানে আমার ছেলে সন্তান নেই। সেই হিসেবে আদি তোর বাবার সম্পত্তির ভাগ পায়। ও যদি ওর ভাগ নিতে চায় আমরা মানা করি কী করে..?
-‘উনি এতটা নীচে নামতে পারলেন..?এতই টাকার প্রয়োজন উনার?
-” এই নিয়ে কথা বাড়াস না আদিবা। আজ হোক কাল হোক সম্পত্তির ভাগ হবেই এখন তুই আপত্তি করলে তোর চাচা ভাব্বেন আমরা লোভি আদির ভাগ দিতে চাচ্ছি না…
আদিবা আর কিছু বলল না মনে একরাশ অভিমান নিয়ে বাধ্য হয়েই রেডি হয়ে নিল।আদিবা নিচে আসতেই আদি উঠে দাঁড়াল। আদির বাবা বললেন
-“সব কাগজ পত্র নিয়েছিস..?
আদিবা বলল,
-“কোন কাগজ চাচা..?
-“তোর,সাদিয়ার,তোর মায়ের আইডি কার্ড?ছবিও লাগবে…
-“আমি তো কিছুই নেই নি। ভাইয়া কিছু বলেন নি।যাইহোক ভাইয়া আপনি একটু দাঁড়ান আমি কাগজগুলো নিয়ে আসিছি।
সাথে সাথে আদি বলে উঠল
-“লাগবে না। কাগজ পত্রের প্রয়োজন নেই তুই গেলেই হবে…আয়।
বলেই আদি আদিবার হাত ধরে হাঁটতে লাগল।
পিছন থেকে আহমেদ সাহেব বলে উঠলেন
-“সবকিছুতে বাড়াবাড়ি ভাল না আদি। কাগজ ছাড়া কি করে হবে…?আর আদিবা একা গিয়ে কী করবে সাদিয়াকেও যেতে হবে..আরে দাঁড়া।
আদি তার বাবার কথায় পাত্তা দিল না আদিবাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। বাইরে এসে আদিবা এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে বলল
-“কি শুরু করেছেন? চাচা কি বলছে শুনতে পান নি?
-“পেয়েছি কিন্তু আজ সম্পত্তি ভাগাভাগি হচ্ছে না তুই শুধু বন্টন নামার জন্য আবেদন করতে যাচ্ছিস তাই অন্য কাউকে যেতে হবে না।তুই চাচার বড় সন্তান তুই হলেই চলবে।
আদি আদিবাকে আর কিছু বলার সুযোগ দেয় নি।আদিবার প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নেই তাই আদি যা যা করতে বলেছে তাই করছে। তাছাড়া আদি যদি তাকে ঠকিয়ে সব সম্পত্তি নিয়ে নেয় তাতেও তার আপত্তি নেই তাই যেখানে সাইন করতে বলেছে সেখানেই করেছে পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করে নি। সাইন করার পর আদিবার ছবি তোলা হয়েছে। সব শেষে আদি আদিবাকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলে নিজে এগিয়ে গিয়ে কিছু কাগজ পত্র জমা দিচ্ছিল কিন্তু কাগজগুলো দেয়ার পর আদি নিজের ওয়ালেট থেকে কিছু একটা বের করে সামনে বসে থাকা অফিসারকে দেখাল যা দেখে আদিবার ভ্রু কুচকে এল। কিন্তু আদিকে প্রশ্ন করার সাহস হয়ে উঠল না।সবার সামনে সিনক্রিয়েট করাটাও উচিত হবে না তাছাড়ে সে এই ব্যাপারটায় পুরোপুরি সিওর না তাই বাসায় ফিরেই নিজের ঘরে ছুটে গেল। আর আলমারিতে চোখ বুলিয়ে অবাক হল। আলমারিতে তার সার্টিফেকেট আইডি কার্ড কোন কিছুই নেই কিন্তু আদিবার স্পষ্ট মনে আছে সে তার গুরুত্বপূর্ণ কাগজগুলো এখানেই রেখেছিল। আর আলমারির চাবিও সবসময় তার নিজের কাছেই থাকে তাহলে কাগজ গুলো গেল কোথায়? তাহলে কি তার সন্দেহ ঠিক আদির ওয়ালেটে যে আইডিটা ছিল সেটা তার..? আদিবা আর কিছু ভাবতে পারল না সোজা আদির ঘরে চলে গেল। আদি সবে বাইরে থেকে ফিরেছে তাই ফ্রেশ হয়ে এসে শার্ট চেঞ্জ করছিল আদিবাকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে আদি কিছুটা বিচলিত হল। তাড়াতাড়ি টিশার্ট টা পরে নিল।
-“কী হয়েছে? কিছু বলবি..?
আদিবা উত্তর দিল না সে এদিক ওদিক কিছু একটা খুঁজছে।
আদি আদিবার গতিবিধি বুঝার চেষ্টা করল আর বুঝেও গেল হয়ত । আদি নিজের ওয়ালেটের উপড় নজর দিল সাথে সাথে আদিবাও সেদিকে এগিয়ে গেল কিন্তু সফল হতে পারল না আদি তার আগেই ওয়ালেট টা নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে। আদিবা বেশ রুক্ষ কন্ঠে বলল,
-“আমি আপনার ওয়ালেট টা একটু দেখতে পারি..?
আদির সোজাসাপটা জবাব,
-“নাহ..!
-“নাহ কেন? দিন বলছি…
-“আমি জানি কেন নিতে চাচ্ছিস..আইডি কার্ডটা দেখার জন্য তাই তো ? দেখার কিছু নেই ওটা তোরেই আইডি।ফটো কপি জমা দেয়ার পর রিয়েল কপি দেখিয়ে কর্ফাম করতে হয় সেজন্যেই দেখিয়েছিলাম।
-“আপনি আইডি দিয়ে কি করছেন সেটা পরের বিষয়। আগে বলুন আপনি আমার আইডি নিলেন কি করে?
আদি বাঁকা হাসল উত্তর দিল না।
আদিবা রাগে তেঁতে উঠল,
-“আমি জানতাম আপনি কোন কারন ছাড়া আমাকে নিজের ঘরে থাকতে দিবেন নি। কিন্তু কেন দিয়েছিলেন কারন টা খুঁজে পাচ্ছিলাম না এখন বুঝলাম।
-“যাক দেরিতে হলেও বুঝেছিস তো..এই অনেক।
-” চুরের মত আমার আলমারিতে হাত দিয়েছেন কেন..
-“আদি কখন কি করে তার কইফত কাউকে দেয় না।আর চুরের মত নয় অধিকার আছে বলেই হাত দিয়েছি।
-“কিসের অধিকার?
-“এই বাসাটা তোর না আমার। তাই এ বাসার সবকিছুর উপড় আমার অধিকার আছে এমনকি তোর উপড়েও।
-“আপনি আমার কাগজ পত্র দিয়ে কী করবেন।
-“তেমন কিছু না সম্পত্তির ব্যাপারে একটু দরকার ছিল তাই নিয়েছিলাম।
-“আমার কাগজ আমাকে ফিরত দিন।
-“কাজ শেষ হয়নি শেষ হলে দিয়ে দিব।
-“আপনি সীমা পেরিয়ে যাচ্ছেন…
আদি উত্তর দিতে যাবে তার আগেই জুই আসল ঘরে..
-“ভাইয়া নিচে একজন ভদ্রলোক আর দুজন মেয়ে এসেছে তোমার খোঁজ করছে।
-“ওহ গড আংকেল চলে এসেছে… আদিবা যা তো একটু ভাল মন্দ নাশতার ব্যবস্থা কর। আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন গেস্ট এসেছে।বলে আদি হন্তদন্ত হয়ে নিচে চলে গেল।
আদিবা কিছু বলার সুযোগ পেল না কিন্তু আদি কি করতে চাইছে আদিবার জানতে ইচ্ছে করছে তাই আদির গেস্টের অযুহাতকে পাত্তা না দিয়ে নিজেও নিচে যেতে চাইল কিন্তু সিঁড়িতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল কারন আদি গেস্টের অযুহাত দেয় নি সে সত্যিই গেস্টদের নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। আদি রীতিমতো দৌড়ে গিয়ে ভদ্রলোকটিকে জড়িয়ে ধরল লোকটিও যে আদিকে বুকে জড়িয়ে বেশ সন্তুষ্ট হয়েছেন বুঝা যাচ্ছে। পাশের মেয়ে দুটির মুখেও হাসি..
আদিবা কিছুটা কৌতুহলী চোখে জুই এর দিকে তাকাল সাথে সাথে জুই বলল,
-“আমি চিনি না এরা কারা।
-“ভাইয়াকে এর আগে এত আন্তরিক হতে দেখিনি কখনো…
-“আমিও দেখিনি।
আদি লোকটিকে বসতে বলে মেয়ে দুটির সাথেও কুশল বিনিময় করল। তারপর ব্যাস্ত পায়ে উপড়ে আসতে নিল আদিবা জুই কে সিঁড়িতে দেখে আদি একবার নিচের দিকে দেখে বলল
-“আদিবা দয়া করে আমার মান সম্মান নিয়ে আজকে খেলিস না…তুই যদি রান্না না করতে পারিস করার দরকার নেই। নিজের ঘরে চলে যা।
বলে বাবা মায়ের ঘরের দিকে চলে গেল। এই দুই রমনী কে যার জন্য আদির এত ব্যস্ততা আদিবাকে জানতেই হবে তাই সেও আদির পিছন পিছন গেল।
ঘরে ঢুকে দেখল আদি তার বাবাকে টাকা দিচ্ছে।
-“বাবা বাজারের সবচেয়ে বড় মাছটা নিয়ে আসবে সাথে চিংড়ি গরুর মাংস। মা ঘন দুধের পায়েশ করো ত..আসলে আমার আগেই বলা উচিত ছিল কিন্তু আদিবাকে নিয়ে বের হতে গিয়ে মাথা থেকে একদম বের হয়ে গিয়েছিল।এই মেয়েটা সবসময় এত প্যারা দেয়। যাইহোক কাকিয়াকে নিয়ে একটু সামলে নাও প্লিজ।
অরিন অরিন কোথায় তুই…বলতে বলতে আদি অরিনের ঘরে চলে গেল। আদিবাকে সে যেন কোন পাত্তাই দিল৷ আদির এমন ব্যাস্ততা দেখে মোটামুটি সবাই অবাক হয়েছে। আদিবা ঘর থেকে বের হতেই দেখল আদি অরিনকে বলছে।
-“সাবধান একটাও বাড়তি কথা বলবি না ঠিক আছে..?জেসমিন আর সিনথিয়াকে নিয়ে বাগানে ঘুরতে যা।
অরিন সন্দেহজনক চোখে আদিবার দিকে একবার তাকিয়ে আদির সাথে নিচে যেতে তাকাল।
জুই আবারো তার মুখ খোলল,
-“আদিবাপু ঘটনা কি বলতো ভাইয়া কি এখন সাদিয়াকে বাদ দিয়ে এই ম্যামসাহেব দের বিয়ে করবে নাকি..
আদিবা চোখ গরম করে তাকাল জুইয়ের দিকে।
-“যাক বাবা আমি কি করলাম যা দেখছি আমার এমনই মনে হচ্ছে..তাই তো বললাম।
।
।
।
চলবে…!!!
#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৩৬
লিখনীঃ মনা হোসাইন
যদিও বাসার কেউ এই আত্মীয়দের চিনে না কিন্তু আপ্যায়নের কোন কমতি করা যাবে না কারন আদির কড়া আদেশ সবাই যেন গেস্টদের সাথে ভাল আচারন করে।
আদির কথামত রান্নাবান্না করা হয়েছে আদিবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে কাজ করতে হচ্ছে।খাওয়া দাওয়া শেষে আদি সবাইকে নিয়ে বসার ঘরে বসল আদির বাবা মাও আছে। আদি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল তার সাথে আংকেলের ভাল সম্পর্ক তিনি তাকে ছেলের মতই স্নেহ করেন।কথার মাঝখানে আদি আদিবাকে ডাকল।
আদি কিছুটা বিরক্তি নিয়েই এগিয়ে আসল।
আদি সাইড হয়ে আদিবাকে বলল,
-“বস আদিবা…
আদিবা আপত্তি করল না এসে বসল।
-“আংকেল মেয়ে পছন্দ হয়েছে? এটাই আদিবা যার কথা ফোনে বলেছিলাম
আদির কথায় সবাই হা হয়ে তাকাল। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকট বলল,
-“তোমার পছন্দই আমার পছন্দ…
-“তাহলে আংটি টা পরিয়ে দাও।
আদির কথায় আদিবা পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেল সাথে তার পরিবারের সবাইও। আদির বাবা বলে উঠলেন,
-“এসবের মানে কি আদি..?
-“মানে আবার কি? আমার হাতে সময় নেই বাবা তাই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমার অফিস এতদিনে লাটে উঠে গিয়েছে । আদিবার বিয়ে না হলে আমার বিয়েটাও তো হবে না তাই না?
-“তাই বলে এমন একজনের সাথে বিয়ে? উনি ওর বাবার বয়সী,..
-“তোমাদের মেয়েও খুব গুণবতী না। ছেলেরা পছন্দ করে না তাই এই সিধান্ত নিয়েছি।যাইহোক আংকেল আংটিটা পরাও তো বলেই আদি আদিবার হাত টেনে ধরল লোকটি আদিবার হাতে আংটি পরিয়ে দিলেন আদিবা কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল চোখ বেয়ে দুফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল। চোখেফ জল লুকাতে আদিবা ছুটে নিজের ঘরে চলে গেল।
-“আংকেল বিয়ের তারিখ ঠিক করে জানিয়ে দিব কেমন৷ সামনের সপ্তাহেই বিয়ে।
লোকটি আদির হ্যাতে হ্যা মিলিয়ে বিদায় নিলেন। লোকটি বিদায় হতেই ঘরে তুলকালাম শুরু হল।আদির বাবা প্রচন্ড ক্ষেপেছেন
-“তুই কি শুরু করেছিস আদি..? তুই যা বলবি তাই হবে..? আদিবার ব্যাপারে তুই এত বড় সিধান্ত নিতে পারিস না।
-“কেন পারিনা? আমি যা করছি ওর ভালর জন্যই করছি।
-“ওর ভাল তোকে বুঝতে হবে না। ও কেন এমন একটা বিয়ে করবে..?
-“কারন ওর জন্য আমার জীবন টা আটকে আছে।
-“আমি বেঁচে থাকতে এই বিয়ে হতে পারে না।আমি হতে দিব না
-“কিন্তু বাবা কেন হতে পারে না? বিশ্বাস করো এই বিয়ে হলে আদিবা রাজরানী হয়ে থাকবে..
-“এটা কোনভাবেই সম্ভব না আদিবা কিছুতেই এই বিয়েতে রাজি হবে না।
-“আমি রাজি
পিছন থেকে আদিবা শক্ত কন্ঠে বলে উঠল আদির কথা শুনে আদিসহ বাকিরা সবাই ঘুরে তাকাল আদি বলল,
-“কি বললি?
-“যা শুনেছেন ঠিকি শুনেছেন আমি এই বিয়ে করতে রাজি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের আয়োজন করুন। পৃথিবী উল্টে গেলেও আমি এই বিয়ে করব।
-“পরে মত পাল্টাবি না তো..?
-” নাহ এই বন্দী খাঁচায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে এবার আমি মুক্তি চাই।এবার আমি আপনাদেরো মুক্তি দিব নিজেও মুক্ত হব…অনেক খেলেছেন আমাকে নিয়ে আর না।
।
।
।
চলবে…!!!