#বেপরোয়া_ভালবাসা
পর্বঃ০৪+৫
মনা হোসাইন
আমি ডাকছি কিন্তু ভাইয়ার সাড়াশব্দ নেই হঠাৎ ভাইয়া ২ হাত বাড়িয়ে হ্যাচকা টানে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল…
-কি করছো ভাইয়া ছাড়ো…
-তোকে মানা করেছিলাম না? তবুও আসলি কেন?
-ভাইয়া আমি তোমাকে খাবার টা দিতে এসেছিলাম ছাড়ো প্লিজ কেউ দেখলে খারাপ ভাব্বে ছাড়ো…
আদর ভাইয়া আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
– এত বড় কবে হলি…?? এইটুকুখানী মেয়ে খারাপ ভালর কি বুঝিস তুই? আর আমি কি তোর সাথে খারপ কিছু করছি? চুপচাপ শুয়ে থাক।
এর আগে আমি অনেকবার ভাইয়ার সাথে ঘুমিয়েছি কিন্তু কেন জানি না আজ কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে কিন্তু ভাইয়া নিজের সিধান্তে অটল ছাড়বে না মানে ছাড়বেই না।চোখ বন্ধ করে নির্জীব প্রানীর মত আমাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে একটু নড়লোও না পর্যন্ত পুরো ৫ মিনিট পর ছাড়ল।
আমাকে ছেড়ে উঠে বসল,আমিও তাড়াতাড়ি উঠে নিজেকে সামলনে নিলাম।
-ভাইয়া আমি তাহলে যাই…
বিরক্ত নিয়ে জবাব দিল,
-তাহলে এসেছিল কেন…???
-খাবার টা দিতে
-“আমি কী বলেছিলাম আমি খাব…?
-“রাতে না খেয়ে থাকতে নেই শরীর খারাপ করে তাই দিতে এসেছিলাম।
-শুধু দিলেই হবে? খায়িয়ে দিবে কে শুনি?
-ম মমানে…??
-বাংলাতেই তো বল্লাম। না বুঝার মত করে তো বলি নি।
-“আমি খায়িয়ে দিব? তাই বলছো..?
-“দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি.
-ভাইয়া… এসব তুমি কি বলছো কেউ দেখলে…??
-সেটা আমি বুঝব তোর তো বুঝার দরকার নেই আর আজকে সিরিয়ালের লাস্ট এপিসোড। ১ ঘন্টার এপিসোডের কেবল ৫ মিনিট গিয়েছে বাকি ৫৫ মিনিটে খাওয়া সহ আরও অনেক কিছু ঘটতে পারে। যদি অন্য কিছু ঘটাতে না চাস তাহলে চুপচাপ যা বলছি তাই কর তানাহলে আমি কি কি করব ভাল করেই জানিস। আর হ্যা এই ৫৫ মিনিটে কেউ উপড়ে আসা তো দূর টিভির রুম থেকেও বের হবে না তাই তোকে বাঁচানোর কোন অপশন নেই।
ভাইয়ার কথায় বেশ অবাক হলাম।কি চায় ভাইয়া?আমার কাছে?এমন অদ্ভুত আচারন করে কেন? ওকি আমাকে খারাপ নজরে দেখে?
-কিরে কি ভাবছিস ?
কথা ঘোরানোর জন্য তাড়াতাড়ি বল্লাম,
-তুমি সিরিয়াল দেখো ভাইয়া…??
-হা হা হা আমি সিরিয়াল দেখব কেন? আমি জানতাম আজ সিরিয়ালের শেষ এপিসোড আর আমি সেই সুযোগটাই খুঁজছিলাম যাইহোক তুই অযথা সময় নষ্ট করছিস সামনে থেকে সর ওয়াশরুমে যাব। বাই দ্যা ওয়ে যদি পালানোর চেষ্টা করিস ধরে এনে মেরে ঠ্যাং ভেঙে দিব। বলে ভাইয়া চলে গেল।
-ভাইয়ার আচারনের আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না ও সুযোগ খুঁজছিল মানে কি?তারমানে ইচ্ছে করেই খেতে যায়নি যাতে আমি খাবার নিয়ে আসি?
আমার ভাবনার ছেদ পড়ল ভাইয়ার ভিজা টাওয়ালের ছোঁয়ায়।ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে এসে টাওয়াল টা আমার উপড় ছুড়ে ফেলেছে।
অবাক চোখে তাকালাম,
-মাঝে মাঝে কি নিয়ে এত ভাবতে বসিস দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়।
বলেই ভাইয়া এসে আমার গাঁ ঘেষে বসে পড়ল। তারপর ফোন বের করে টিপতে টিপতে বলল,
-“নে শুরু কর…
আমি কোন জবাব দিলাম না..
-এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ইডিয়েট?
যাগ গে নে শুরু কর…
জানি না কেন নিজের অজান্তেই প্রশ্ন করে বসলাম,
-ভাইয়া তুমি নিজের হাতে খাচ্ছ না কেন? তোমার হাতে কি ব্যাথা…??
ভাইয়া একটু থমকে গিয়ে আমার দিকে তাকাল তারপর ছোট একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল,
-হুম ব্যাথা খুব ব্যাথা তবে হাতে নয় বুকে…
আমি তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালাম,
-কি বলছো আগে বলো নি কেন তোমার শরীর খারাপ? এই জন্যই সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়েছিলে তাই না?
আমি এখনী কাকিমনি কে ডেকে আনছি দাঁড়াও।
বলে আমি যখন উঠে দাঁড়ালাম তখনী ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিল।
-কি হল ভাইয়া আমাকে আটকালে কেন তোমাকে ওষুধ দিতে হবে না?
– তোর বয়স কত রে?
-এটা আবার কেমন প্রশ্ন…?কখন কি প্রশ্ন করতে হয় সেটাও জানো না?
-জানব না কেন ভাল করেই জানি।
-তাহলে এখন এমন প্রশ্নের কারন কি?
-জেনে বুঝেই প্রশ্ন করেছি।
আচ্ছা তুই বড় হোস না কেন?
-আমি ছোট কে বলল ক্লাস নাইনে পড়ি ভাইয়া আমি মোটেও ছোট না।
-আমিও সেটাই বলতে চাইছি, ক্লাস ফাইবে পড়া বাচ্চারাও এখন তোর চেয়ে বেশি বুঝে…শুধু তুই এই একটা মাথা মোটা …
-আজব তো তোমার অসুখ করেছে ওষুধ দিব এতে মাথা মোটার কি হল?
-এটা কোন অসুখ তুই যদি বুঝতি তাহলে অসুখ থাকত না…যাক গে নে খাওয়া শুরু কর তাড়াতাড়ি,শুধু শুধু সময় নষ্ট করিস না।
-আগে কাকিমনিকে বলে আসি তোমার শরীর খারাপ।
-চুপ একটাও কথা বলবি না চুপচাপ বসে খাওয়া।
(ধমক দিয়ে)
-কথায় কথায় এত বকো কেন?
-তাহলে কি মারতে হবে?
উপায় না পেয়ে আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি খাওয়াতে শুরু করলাম।ভাইয়া ফোন টিপতে টিপতে খাচ্ছে,
খেতে খেতে আবার প্রশ্ন করল,
-ভর্তির কি হল? মা কি বলল?
এই প্রশ্নের জবাব দিতে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে কারন কাকিমনি নিষেধ করেছেন ভাইয়ার স্কুলে পড়তে তাই জবাব দিতে পারছি না।
-কি রে বল ভর্তির ব্যবস্থা করতে পেরেছিস?
-ভাইয়া বলছিলাম তুমি একবার কাকিমনি কে বলো না তাহলেই আর কেউ আপত্তি করবে না। তুমার কথা ত বাসার সবাই শুনে…
-আমি বলব কেন? আমার যাকে বলার তাকে ত বলেছিই…আর তার সেটা শুনতে হবে নাহলে একটা মার ও মাটিতে পড়বে না। আমার কথা সবাই কেন শুনে জানিস? কারন আমি কখনো উল্টাপাল্টা কথা বলে না তাই সবাই শুনে বুঝেছিস?
-এটা যদি উল্টাপাল্টা ব্যাপার হয় তাহলে আমাকে দিয়ে কেন বলাতে হবে? ভাইয়া এমন কেন নিজের ইচ্ছে গুলো আমার উপড় চাপিয়ে দেয় কিন্তু সব এমনভাবে করে যেন কেউ তাকে কোন দোষ দিতে না পারে। (মনে মনে)
– এই যে ভাবনার রানী,ভাবনার বক্সটা বন্ধ করে খাবার টা কি দিবেন নাকি হাতে কামড় বসাব?
তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে আমতা আমতা করে বল্লাম,
-ভাইয়া বলছিলাম কি আমি আপুর স্কুলে পড়লে হয় না…?
আমি এটা বলার সাথে সাথে ঘরের পরিবেশটা পুরো বদলে গেল ভাইয়া হাত থেকে খাবারের প্লেট টা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়াল লক্ষ করলাম আমি কিছু বুঝার আগেই ভাইয়া রেগে আগুন হয়ে গিয়েছে। ভাইয়া হাত মুষ্টি করে দাঁতে দাঁত চেপে মৃদু শব্দে কাকিমনিকে ডাকতে লাগল। সে চিৎকার না করলেও আমি বেশ বুঝতে পারছি ভাইয়া প্রচন্ড রেগে গিয়েছে,কিন্তু তার কারন টা কি বুঝলাম না।
-মা এই মা আমার রুমে এসো ত একবার..
ভাইয়াকে আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে বল্লাম,
-কি হয়েছে ভাইয়া কাকিমনিকে ডাকছ কেন আমাকে বলো না আমি করে দিচ্ছি..
ভাইয়া অগ্নিদৃষ্টিতে একবার তাকাল কিন্তু কিছু বলল না।
ভাইয়ার ডাক আর ভাংচুরের শব্দে কাকিমনি,আমার মা সহ সবাই ছুটে আসল।এসে প্লেট আর খাবার মেঝেতে দেখে সবাই অবাক হল। কাকিমনি এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলেন,
-কি ব্যাপার জয় কি হয়েছে?
ভাইয়া শান্তগলায় বলল,
-মা আজ আমি নিচে খেতে যাই নি কেন?
কাকিমনি অবাক হলেও স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিল,
-তুই ঘুমিয়ে গিয়েছিলি তাই..
এবার ভাইয়া চিৎকার করে বলে উঠল,
-তাহলে এই মেয়েটার সাহস হল কি করে আমার ঘুম ভাংগানোর?
ভাইয়ার চিৎকারে ঘরের সবাই কেঁপে উঠেছে বিশেষ করে আমি।
কাকিমনি ভাইয়াকে শান্ত করার জন্য বলল,
-না মানে বাবা, না খেয়ে ঘুমালে শরীর খারাপ করত তাই আর কি…
-থামো মা আমি বাচ্চা নই যে বুঝব না কখন কি খেতে হবে আর কখন খেতে হবে না। সবসময় বলো আমি নাকি আদিবার সাথে বেশি বেশি করি কিন্তু কখনো ওর ভুলগুলো দেখ না। ওর বয়সী মেয়েরা কত পটু আর ওর মাথায় গোবর ছাড়া কিছুই নেই। ওকে বলে দাও ভবিষ্যতে আমার কথা না শুনলে ওর কি অবস্থা হবে আমি নিজেই জানি না।
এবার ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
-“এই বাসায় থাকতে হলে মানুষের মত চলতে হবে আমার কথা মানতে হবে বুঝেছিস তুই?এমন অগোছালো ছন্নছাড়া পশুর মত চলা যাবে না যদি আমার কথা না শুনিস তোর সাথে কি ঘটবে সেটা নিশ্চুই বুঝতে পারছিস…
ভাইয়ার হটাৎ সুর বদলানো টা আমার সহ্য হল না চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়তে লাগল,
আমাকে কাঁদিয়ে ভাইয়া হয়ত শান্তি পেয়েছে,তাই হটাৎই সব রাগ থামিয়ে দিয়ে বরফ জমা হয়ে গেল,
অসহায় ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকাল।
ভাইয়ার আচারনে এতক্ষনে সবাই অবাক হয়েছে তবে সবচেয়ে বেশি অবাক আমার মা হয়েছে। কারন মা দুপুরের ঘটনা জানে না। আজ সন্ধ্যা বেলায় আমাদের এখানে এসেছে। আমি ইচ্ছে করেই মাকে কিছু বলিনি। মা এসব দেখে বলল,
-ভাবি আমার মনে হয় আদিবার এখানে থাকাটা ঠিক হবে না আসলে আমি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম কিছু একটা ঘটেছে কিন্তু আপনাদের বিব্রত করতে চাইনি তাই প্রশ্ন করিনি।
মায়ের কথায় কাকিমা লজ্জা পেলেন তাড়াতাড়ি বললেন,
-“শাহানা তুমি অযথা চিন্তা করছো তেমন কিছু হয় নি আসলে আদি বুঝতে পারে নি।
-” ভাবী তুমি আমার মেয়েদের নিজের মেয়ের মতই আগলে রাখ এই নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু আদিবা একটু দুষ্ট প্রকৃতির মেয়ে। গ্রামে ত সারাদিন ছুটাছুটি করত তাই এখানে মানিয়ে নিতে পারছে না ও এখানে থাকলে সমস্যা হবে তারচেয়ে আমি বরং ওকে নিয়ে যাই সাদিয়া এখানে থাকুক।
মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই ভাইয়া বলে উঠল,
-” চাচীম্মা তুমি কি বুঝাতে চাইছো..মা তোমার মেয়েদের আদর করেন আর আমি তোমার মেয়ের উপড় অত্যা*চার করি ..??
-“ছিঃ ছিঃ বাবা কি বলছিস আমি এভাবে বলতে চাই নি।
-“তুমি কি বললে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল আমি আদিবার বড় ভাই। আদিবার সাহস হয় কি করে বড় ভাইয়ের মুখে মুখে কথা বলার? আর তুমিই না কি করে ওকে লায় দিচ্ছো
.? কি করে বললে ওকে নিয়ে যাওয়ার কথা? ওহ দরদ উতলে পড়ছে তাই না? বানিয়েছো তো একটা জংগলি। ও যে এমন বোকা প্রকৃতির তাতে তোমার তো কিছু আসে যায় না লোকে যা বলার আমাদের বলবে।বলবে বাবা নেই বলে মেয়েটা মানুষ হয় নি। তোমরা এভাবে লায় দিলে মানুষ হবে কি করে? ছুটাছুটি করা খুব ভাল কাজ বুঝি? কেমন এলোমেলো চুল,ড্রেস আপের কোন ছিড়িছাদ নেই, কারো সাথে সুন্দর ভাষায় ঠিকমতো কথাও বলতে পর্যন্ত পারে না।
ভাইয়াকে থামানোর জন্য কাকিমা বলল,
-“হয়েছে ওকে তোর মানুষ করার দায়িত্ব নিতে হবে না। যেমন আছে বেশ আছে।
-“তাই নাকি? তুমি ওর মার্কসিট দেখেছো? গোল্লা পেয়েছে গোল্লা বুঝেছো? আমি ওর বড় ভাই আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি এতে কারোর কিছু বলার নেই এমনকি চাচীম্মারো না। আদিবা গ্রামে যাবে না। আর স্কুল ও বদলাবে না। ও আমার স্কুলেই পড়বে আমার সাথে যাবে আমার সাথে আসবে আর বাসাতেও মানুষের মত করে থাকবে গাইয়া ভুতের মত না।
ভাইয়ার কথায় মাথা চাপড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিভাবে এত অপমান করতে পারছে? গ্রামে তো সবাই এমনভাবেই থাকে তাই বলে এভাবে অপমান করতে হবে? না এই গন্ডারের কাছে আমি থাকব না কিছুতেই না। কিন্তু ও যেভাবে বলল মা আমাকে কিছুতেই নিয়ে যাবে না তবে শেষ একটা চেষ্টা করতেই হবে,
-আমি শতকরা ৭০% নাম্বার পেয়েছি ভাইয়া এর চেয়ে ভাল রেজাল্ট আমার দরকার নেই আর আমি যেমন আছি তেমনেই ভাল বুঝেছো আমি চলে যাব….
কথা শেষ করার আগেই ভাইয়া হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-অনেক বলেছিস আর না।রাত টা অনেক লম্বা আগে রাত টা পার হোক তারপর দেখা যাবে সকালে কে যায় আর কে থাকে। বলেই হন হন করে সেখান থেকে চলে গেল।
বুঝতে পারলাম রাতে আমার কপালে দুঃখ আছে তারই ইংগিত দিয়ে গেল।
ভাইয়া চলে যাওয়ার পর কাকিমনি মাকে বলল,
-শাহানা কিছু মনে করোনা আসলে বেশি আদরে ছেলেটা উছন্নে গিয়েছে কারো কথা শুনে না।
-কি বলছো ভাবি জয় উছন্নে যাবে কেন ওর মত ছেলে লাখে একটা হয় নিজের বোনের কথা এত কে ভাবে বলোতো জয় যা যা বলল সবি ঠিক বলেছে আদিবার বদলানো দরকার…আমিও ত চাই আমার মেয়ে ফিটফাট পরিপাটি হোক।ও এখানে থাকলে সব ভাল হবে দেখে নিও।
এখানে থাকলে আমার যে কি হবে সেটা শুধু আমিই জানি বন্ধ ঘরে ওর রুপটা যে কি সেটা তো কেবল আমি জানি
আদিবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আদিবাকে আদিত্যদের বাসাতেই থাকতে হল আর স্কুলও বদলাতে পারল না। আদিত্যের নজরদারি থেকে মুক্তি মিলল না তার। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎ একদিন,
রাত ১০ টা,কিন্তু আদিবার বাসায় ফিরার নাম নেই। আদিবা কখনো রাতে বাইরে থাকা তো দূর স্কুলের ছাড়া সে বাসার বাইরে পর্যন্ত যায় না। স্কুলেও যায় আদির সাথে মোটকথা আদিবা একা একা কোথাও যায় না তাই বাসার সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সময় যত বাড়ছে ততই উদ্বেগ বাড়ছে কিন্তু কেউ পুলিশে কম্পিলিন করতে পারছে না কারন সবার ধারনা এর পিছনে আদির হাত আছে। জেনেশুনে নিজের ছেলের বিপদ কেই বা ডেকে আনতে চায়। আদিত্যের বাবা মা সহ আদিবার মা এবার আদিত্যের রুমে গেলেন। আদিত্যের বাবা কড়া গলায় বললেন,
-“৫ মিনিট সময় দিচ্ছি এর মধ্যে আদিবাকে ফিরিয়ে আনবি তানাহলে আজ আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।
বাবার কথা শুনে আদি গা ছাড়া ভাব নিয়ে জবাব দিল,
-“আমি কি করে ফিরিয়ে আনব? আমি জানি নাকি ও কোথায়?
-“আমাদেরকে কী তর এতটাই বোকা মনে হয়..? আদিবা হারিয়ে যাবে আর তুই শান্ত মনে বাসায় বসে থাকবি এটাও বিশ্বাস করতে হবে..?তুই যদি না জানতি আদিবা কোথায় তাহলে এতক্ষনে সারা শহর মাথায় করে ফেলতি। (আদিত্যের মা)
-“এমনভাবে বলছো যেন আদিবা আমার প্রেয়সী তার জন্য আমাকে দেওয়ানা হয়ে যেতে হবে।
-“নাহ আমি সে কথা বলি নি তুই যে পরিমাণ উশৃংখল তোকে না বলে বাইরে যাওয়ার অপরাধে তুই আদিবাকে আকাশ পাতাল খুঁজে নিয়ে আসতি আর তারপর শাস্তি দিতি সেটা আমরা সবাই জানি।
-“মা তুমি আজকাল একটু বেশি কথা বলো. আমি জানি না আদিবা কোথায়।আর এত চিন্তা করার কি আছে? সময় হলে নিজেই ফিরে আসবে। তোমরা এখন আমার রুম থেকে যাও কাল আমার এক্সাম আছে পড়তে হবে।
-“আমরা কিন্তু পুলিশে যাব..
-“যাও মানা করেছে কে..?
-“পুলিশের কাছে গেলে প্রথম তোর নামটাই বলবো.
-“এমনভাবে কথা বলছো যেন আমি একজন কিডন্যাপার ওকে কিডন্যাপ করেছি। মা ফালতু কথা বাদ দিয়ে যাও তো এখান থেকে আমার আর ভালো লাগছে না এসব।
আদিত্য সবাইকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। সবার নির্ঘুম একটা রাত কাটাল সারারাতেও আদিবা বাসায় ফিরেনি।ভোরবেলা বাসার কাজের মহিলা দৌড়াতে দোড়তে বাসার ছাদ থেকে নিচে নেমে আসল।
-“খালুজন জলদি ছাদে চলেন আদিবা আফামনি ওখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
কথাটা শুনামাত্র সবাই ছুটল ছাদের দিকে। ছাদে গিয়ে সবার চোখ চরকগাছ সত্যিই আদিবা পড়ে আছে। হাত পা বাঁধা, মুখেও টেপ লাগানো। আদিবার মা নিচে বসে আদিবার মাথা কোলে নিয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলেন। আদিত্যের বাবা তাড়াতাড়ি আদিবাকে ঘরে নিয়ে এসে চোখে মুখে পানি দিলেন। কিছুক্ষন পর আদিবার জ্ঞান ফিরল কিন্তু তার চোখ মুখে ভয়ের ছাপ। সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে হাঁওমাও করে কাঁদতে শুরু করল।
আদিবা শান্ত করার জন্য আদির বাবা বললেন
-“তোর এই অবস্থা কে করেছে আদিবা…? একবার শুধু বল তারপর আমি তার কি অবস্থা করি শুধু দেখবি (আদিত্যের বাবা কড়া গলায় বললেন)
আদিবা কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল
-” ভ ভ ভ ভাইয়া…!!!
কথাটা শুনামাত্র ক্ষেপে গেলেন আদির বাবা।
-“আদিত্যের এত সাহস আজ ওর একদিন কী আমার একদিন.
তিনি রাগে ছটফট করতে করতে ছুটে গেলেন আদিত্যের ঘরে। আদি ঘুমাচ্ছিল আহমেদ সাহেব তাকে ঘুম থেকে জাগার সুযোগ না দিয়ে নিজের বেল্ট দিয়ে মারতে শুরু করলেন আদি কিছু বুঝে উঠার আগেই কয়েকটা আঘাত পড়ল তার পিঠে।
আদি উঠে বুঝার চেষ্টা করতে লাগল কি হয়েছে।
কিন্তু তাকে কোন সুযোগ দেয়া হল না আহমেদ সাহেব আদিকে টেনে নিচে নিয়ে আসলেন তারপর সর্বোচ্চ শক্তিতে মারতে শুরু করলেন। সেখানে সবাই উপস্থিত থাকলেও আজ কেউ বাঁধা দিল না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আদিত্য নিজেও বাঁধা দিচ্ছে না তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে যেন আগে থেকেই জানত তাকে এভাবে মারা হবে তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে মার খাচ্ছে।
আহমেদ সাহেব মারতে মারতে হাঁফিয়ে উঠলেন আদিকে ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলেন,
-“তোর মত ছেলে জন্ম দেওয়াটাই আমাদের অন্যায় হয়েছে। এমন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল ছিল।
আদিত্যের বাবাকে শান্ত করার জন্য তার মা আর আদিবার মা এগিয়ে আসলেন।
-“ভাইজান আপনি শান্ত হোন এমন উত্তেজিত হলে আপনার শরীর খারাপ হবে।
-“শাহানা ঠিকি বলেছে তুমি শান্ত হও।(আদিত্যের মা)
-“কোন পাপে এমন ছেলে জন্ম দিয়েছিলাম বলতে পারো রুবিনা? ইচ্ছে করছে মেরে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেই।
-“ভাইজান আদিত্য ছেলে হিসেবে খারাপ নয় সমস্যাটা হচ্ছে ও আদিবাকে সহ্য করতে পারে না আর আদিবাও অনেক উল্টা পাল্টা কাজ করব তাই আমি বলি কী আদিবাকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাই। তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না।দয়া করে আপনারা আমাকে আর বাঁধা দিবেন না।
-“প্রশ্নই উঠে না আদিবা কোথাও যাবে না। কারো যদি যেতে হয় আদি যাবে। এই বাসায় ওর আর কোন জায়গা নেই।এই কুলা**ঙ্গার বেরিয়ে যা…
আদিত্য এবারেও কোন জবাব দিল না শুধু রক্তবর্ণ চোখে আদিবার দিকে একবার তাকাল। আদিবা ভীত হরিণীর মত চুপসে গেল।
-“ভাইজান আমি রাগের মাথায় কিছু বলছি না।আপনার নিজের সংসার আছে তারউপড় আমাদের সংসারটাও আপনাকেই দেখতে হয় এতকিছুর পর চারজনকে ভাল স্কুলে পড়ানো অনেক টাকার ব্যাপার তাই আমি ভাবছি আদিবার বিয়ে দিয়ে দিব।
কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই সম্ভিত হয়ে গেল।আদিত্যের মা অবাক কন্ঠে বললেন,
-“তুমি কী পাগল হয়ে গেছ শাহানা..? কিসব বলছো..?
-“আমি যা বলছি ভেবেই বলছি ভাবী আদিবার বিয়ের বয়স না হলেও ও আর ছোট নেই। আগের দিনে মেয়েদের এই বয়সেই বিয়ে হত। তাছাড়া গ্রামে এখনো হয়। এখানে আসার আগে চেয়ারম্যানের ছেলে ওকে পছন্দ করে প্রস্তাব দিয়েছিল।ভাবছি গ্রামে গিয়ে কথাটা এগুবো।
-“কিন্তু…
-“কোন কিন্তু না মেয়েদের এত পড়াশোনার দরকার কী? এত পড়ে কী হবে?বিয়ের পর জামাই পড়ালে পড়বে না পড়ালে সংসার করবে।
আদি এতক্ষন কিছু না বললেও শরীরের আঘাতগুলো ক্রমেই যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠছে। জায়গায় জায়গায় র*ক্ত নীলচে রং ধারন করছে।
হটাৎ করেই সে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিচে বসে সশব্দে কেঁদে উঠল।উপস্থিত সবাই চরম অবাক হল কারন আদিকে কেউ কখনো কাঁদতে দেখেনি যত যাই হয়ে যাক সে কাঁদে না। এই বয়সী কোন ছেলেই সহজে কাঁদে না তারমানে কী আঘাতগুলো অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আদির মা নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না ছুটে গেলেন ছেলের কাছে। হাজার হোক একমাত্র ছেলে বলে কথা।
-“বাবা বেশি ব্যাথা করছে…? হাসপাতালে যাবি.?
আদি কোন উত্তর দিল না চোখ মুছে নিজের মাকে একবার জড়িয়ে ধরল তারপর উঠে বাসার মেইন দরজার দিকে হাঁটা দিল। পিছন থেকে তার মা বলে উঠলেন,
-“কোথায় যাচ্ছিস..??
আদি উত্তর দিল না। আদির বাবা বলে উঠলেন আদিখ্যেতা বন্ধ করো রুবিনা এইটুকু ওর পাওনা ভুলে যেও না ও কী করেছে। বেরিয়ে যা এখনী..
আদি আস্তে আস্তে দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেল…
।
চলবে