বেলী ফুলের সুবাস পর্ব-০৯

0
318

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :৯
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

-আপনি যে এরকম কেউকে সাহায্য করেন তা তো কোনো দিন বলেন নাই?

-সব কিছু কি বলতে হয় নাকি? কিছু কাজ করতে হয় নিজেকে গোপন রেখে। এতে আত্ম তৃপ্তি লাভ হয়।
বলেই ড্রাইভিং করতে লাগলো সুবাস।

যাক লোকটা অতটাও খারাপ না যতটা বেলী ভেবেছিল। এতো একটা গম্ভীর নয়। গম্ভীর মানুষটার মাঝেই একটা সুন্দর মনের মানুষের বসবাস তাহলে।এই প্রথম লোকটার জন্য অন্য রকম অনুভুতি কাজ করছে বেলীর। এই অনুভূতির নাম কি? এটা কি তবে নাম না জানা অনুভুতি নাকি এই অনুভূতির নাম অন্য কিছু?কথা গুলো আনমনে ভাবতে লাগলো বেলী।

আজ বেলীর রেজাল্ট দিবে।সকাল থেকে মন টা দুর দুর করছে বেলীর।সব পরীক্ষা ভালো দিলেও আইসিটি একদম ভালো হয় নি।পাস আসবে কি না তাও সন্দেহ। কাল সারারাত ঘুম হয় নি বেলীর এই টেনশনে।নিজ ঘরে একনাগাড়ে পায়চারি করছে বেলী।আজ তার কপালে কি আছে কে জানে।

-এভাবে টেনশন করলে কি তোর সব সমস্যায় সমাধান হবে নাকি ? আল্লাহর কাছে দোয়া কর ভালো কিছু হবে
বেলীকে বললো সামিয়া।
-তুই তো ভালো পরীক্ষা দিয়েছিস তোর তো কোনো টেনশন নাই রে বইন আমার তো পাস ফেইল নিয়া টানাটানি।
-টেনশন ফ্রী থাক ভালো কিছুই হইবো

তখন রূমে প্রবেশ করলো সুবাস।সুবাস কে দেখে দুজনেই ঢোক গিললো।

-আমাদের রেজাল্ট পেয়েছো ভাইয়া
-হুম।তুই পেয়েছি এ+ আর বেলী পেয়েছে
বলেই চুপ করলো সুবাস
-বেলী কি পেয়েছে ভাইয়া ?
বেলীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো।সে মনে হয় ফেইল করেছে।
-বেলী পাশ করেছে ৪.৫০ পেয়েছে।
বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো সুবাস।

বেলীকে আর কে পায় ।খুশি তে নাচতে শুরু করলো।অতিরিক্ত খুশিতে সুবাস কে জড়িয়ে ধরলো বেলী।কয়েক সেকেন্ড পর মস্তিষ্ক নড়ে উঠলো।

-থাক আমি যাই আমি আবার কারো রোমান্সে বাধা হতে হতে চাই না ।
বলেই মেকি হেসে চলে গেলো সামিয়া।

সুবাস কে ছেড়ে চলে আসতেই নিলে সুবাস বেলীর দু হাতে কোমর জড়িয়ে ধরলো।
কানের কাছে ফিসফিস করে বললো
-অভিনন্দন বউ জান।অনেক অনেক অভিন্দন তোমাকে আমার একমাত্র বউ।

বেলী ঢোক গিলে সুবাসের দিকে তাকালো। সুবাস বেলীর কপালে চুমু খেল।বেলীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ খেলে গেল।দু চোখ বন্ধ করে নিলো।সুবাস বেলীকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো।বেলী যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এক লোকের স্পর্শে এলে কি যেনো হয়ে যায় বেলীর।নিতে পারে না।।কেমন যেনো যেনো সব কিছু তাল গোল পাকিয়ে যায়।নতুন নতুন অনুভূতির নারা দেয়।কি আছে এই লোকের স্পর্শে? কে জানে?

রাতের খাবার খেতে বসেছে সকলে।মনিরা বেগম আর রাজিয়া বেগম খাবার গুলো এগিয়ে দিচ্ছেন।রিতা বেগম বেলীকে মাছ বেছে দিচ্ছেন।বিলকিস বেগম রুটি খাচ্ছেন।আমজাদ হোসেন কথা বলছে তার ছোট বোন মিতা বেগমের সাথে।বেশ হাসি খুশি ভাবে কথা বলছেন।কথা শেষে আমজাদ হোসেন বলেন

-এখন তো বালীর আর সামিয়ার পরীক্ষার রেজাল্ট ও দিয়ে দিয়েছে। আর মিতাও বলছিলো যে তাদের বাসা থেকে ঘুরে আসতে আমাদের সবাইকে।
-সব ঠিক কিন্তু ভাইজান মিহিরের তো পরীক্ষা
বললেন রাজিয়া বেগম।

-আরে আম্মু পরীক্ষা তরীক্ষা বাদ আগে ঘুরাঘুরি
খাবার খেতে খেতে বলল মিহির
-এই মিহিরের পরীক্ষা হইলে ওর যাওয়া লাগবে না আমরা যাবো (সামিয়া)
-তুই চুপ থাক আপু।আমি যাবো।

-যে যেদিকে যাক না কেনো বেলী কোথাও যাবে না।ভার্সিটি এডমিশন জন্য ভালো ভাবে পড়তে হবে।কোনো হেঁয়ালি করা যাবে না। আর আমিও যেতে পারবো না অফিসে ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে।
খাবার শেষ করে হাত মুছতে মুছতে বললো সুবাস

-আমি যাবো।বড় চাচ্চু আমি যাবো।
মন খারাপ করে বললো বেলী
-এক কথা বার বার বলতে ভালো লাগে না আমার।
বলেই রূমে চলে গেলো সুবাস।

রাত বাজে ১২ টা বেলী এখনো সামিয়ার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আজ এখানেই ঘুমাবে।ওই বদ লোকের কাছে যাবে না। আর এদিকে সুবাসের ও ঘুম আসছে না।কথায় গেলো এই মেয়ে এত লেট তো করে না।না পেরে সামিয়া রূমে গিয়ে দেখলো দুজন আড্ডা দিচ্ছে
-তুই এত রাতে আমার বউ কে তোর কাছে রেখে আড্ডা দিচ্ছিস কেনো ?
সামিয়ার উদ্দেশ্যে বললো সুবাস
-তোমার বউ আমার কাছে এসেছে আড্ডা দিতে।আমি তাকে নিজের কাছে রাখি নি।তোমার বউ নিজে আমার কাছে এসেছে আড্ডা দিতে।
সুবাসের দিকে তাকিয়ে বললো সামিয়া।
-সামিয়া তোর ভাইকে বল দে এখান থেকে চলে যেতে।আমি তার সাথে যাবো না।আমি এখানে ঘুমাবো।
– ঘাড় তেরামি না করে ভালোই ভালোই রূমে চলো
বেলীর দিকে এগোতে এগোতে বললো সুবাস।
– আমি যাবো না মানে যাব না।
মুখ কুচকে বললো বেলী
-তুমি না গেলে অন্য উপায় আছে আমার কাছে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য

বলেই বেলীকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো সুবাস।বেলী দু হাতে ইচ্ছা মতো সুবাস কে কিল ঘুষি দিতে লাগলো।রূমে এসে বেলীকে বেডে শুয়ে দিয়ে দুম করে দরজা লাগিয়ে দিল। সুবাস বেলীর দিকে এগিয়ে গেলো

-কি আপনি পেয়েছেন টা কি হুম?সব সময় আপনি বাড়াবাড়ি করেন।এত প্রবলেম কেনো আপনার?আমি যেখানে মন চায় সেখানে যাবো আপনার তাতে কি ?

-আমারইতো সব।শুনো কন্যা তোমার ভালোর জন্য বলেছি।ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যেদিক মন চায় সেদিক যেও।তখন কিছু বলবো না,কন্যা।
বেলীর কোমর জড়িয়ে বলল সুবাস

-আপনার কথা মতো হবে নাকি সব।আমার লাইফ টা জাস্ট হেল করে দিচ্ছেন। কেনো আমার লাইফে সব ডিসিশন আপনি নিবেন? এই আপনার জন্যই সবাই আমাকে ধরে বেঁধে আপনার সাথে বিয়ে দিলো।আপনের মতো মানুষ আমি আমার লাইফ দেখি নাই।আমার সুখ শান্তি সব কেড়ে নিয়েছেন।সব সময় আমার উপর হুকুম দেন। আপনি কি আমার লাইফে একটু শান্তিতে চলতে দিবেন না ? একটু নিজের মন মতো চলতে দিবেন না ? আই জাস্ট নীড স্পেস এন্ড পিস । আই জাস্ট…….

বেলীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেলীর পাতলা গোলাপী ঠোটের ভাঁজে নিজের ঠোঁট গুজে দিলো সুবাস।এক হাতে বেলীর কোমর উচু করে জড়িয়ে ধরলো।অন্য হাত বেলীর গাল হয়ে গলার পিছে চুলের মাঝে দুলিয়ে দিলো।বেলীকে চুপ করানোর জন্য হলেও এই প্রথম কোনো নারীর ঠোটের স্বাদ যেনো পুরুষালি দেহে নতুন নতুন শিহরণ খেলে যাচ্ছে।যেনো মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টি।রন্ধ্রে রন্ধ্রে নতুন অনুভুতি ছেয়ে গেলো।নারীর ছোঁয়ায় মন মাতাল হয়ে যাচ্ছে।প্রথমে ঠোটের ছোঁয়া গুলো নরম হলেও আস্তে আস্তে তীব্র থেকে তীব্র হতে লাগলো।বেলীর আর সহ্য করতে না পেরে দু হাতে সুবাসের চুল গুলো খামচে ধরলো। পুরুষালি ঠোটের তীব্র ছোয়া আর হাতের অবাধ্য স্পর্শ না নিতে পারে বেলী ছুটো ছুটি করতে লাগলো।বেশ কিছুক্ষণ পর সুবাসের হুশ ফিরে এলো।ছেড়ে দিলো বেলীকে।বেলী হাপাতে লাগলো।

-নেক্সট টাইম বেশি কথা বললে কিন্তু এর চেয়ে খারাপ কিছু হয়ে যাবে। আর মাথায় এটা ভালো ভাবে সেট করো যে তোমার সব কিছুতে যেহুতু আমার অধিকার তাই তোমার ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার।বায় দা ওয়ে টেস্টে টা কিন্তু মন্দ নয়।
-আপনার কি লাজ লজ্জা কিছু নেই নাকি?
-লাজ লজ্জা থাকলে আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুখ দেখা লাগবে না
-অসভ্য ব্যক্তি!
– এখনো কোনো অসভ্যতামি করি নি।সো অসভ্য বলা যাবে না ,কন্যা।তুমি চাইলে আমি একটু অসভ্যতামি করতে পারি।করব কি ?
-আপনার সাথে কথা বলাই বেকার
– তো কথা না বলে অন্য কিছু করো।ভালো লাগবে।
বলেই বাকা হাসলো সুবাস।

চলবে………?