বেস্টু পর্ব-০৫

0
1983

#বেস্টু
#পর্ব_০৫
#Ariyana_Nur

সামনের মানুষটি দেখে আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম।কেননা তাকে জোকারের চেয়ে কোন অংশে কম লাগছে না।পুরো মুখে সরি স্টিকার আর গলার মধ্যে সরি সাইনবোর্ড লাগালো।আমার সামনে এসে কান ধরে দাঁড়িয়ে বলল…

—সরি বুড়ি আর কখনো তোকে না জানিয়ে কিছু করবো না।এবারের মত মাফ করে দে আমায়।

(যারা বলেছিলেন আরহাম তাদের জন‍্য আধা বালতি সমবেদনা।)

আমি নিহাদ ভাইয়ার ফেস আর কথা বলার ধরন দেখে হু হা করে হাসতে লাগলাম।আর বললাম….

—তুই ভাইয়া কোন সারর্কাস থেকে পালিয়ে এসেছিস।তোকেতো পুরো জোকারের মত দেখাচ্ছে।এই বলে আমি আবার হাসতে লাগলাম।

ভাইয়া আমার মাথায় একটা গাট্টা দিয়ে বলল…

—তোর এই হাসির জন‍্যই তো এই জোকার সাজলাম।তোর জন‍্য তো জোকার কেন আরো অনেক কিছু সাজতে পারি।তার পরেও প্লিজ আর আমার সাথে রাগ করে থাকিস না।

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার চোখ ছলছল করছে।আমি তো কখনই ওর সাথে রাগ করে থাকতে পারি না।এবার যে কি ভাবে এতো দিন রাগ করে ছিলাম আল্লাহয় জানে। আমি ভাইয়াকে বললাম….

—উম…তোকে আমি মাফ করে দিব যদি তুই আমায় তোর এই নতুন গাড়ি দিয়ে ঘুরাতে নিয়ে যাস।আর আমাকে অনেক অনেক অনেকগুলো চকলেট কিনে দিতে হবে সাথে ললিপপও।

ভাইয়া সাথে সাথেই বললেন….

—আজ আমি তোর সব শর্ত মানতে রাজি।চল…

ভাইয়া আমায় হাত ধরে গাড়িতে উঠাতে নিলেই আমি বললাম…

—আরে দাড়া আমি আমার জানুরে ফোন দিয়ে আসতে বলি।আমার জানুরে ছাড়াতো আমি কোথাও ঘুরতে যাই না।

ভাইয়াকে দাড় করিয়ে আমি এক সাইডে গিয়ে তাহিয়াকে ফোন দিলাম।দু বার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ হলো।ওপাস থেকে হ‍্যালো বলার সাথে সাথেই বললাম….

—তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে থাক আমরা এখন ঘুরতে যাব।

তাহিয়া ঘুম জরানো কন্ঠে বলল….

—বেবি আমার না পেট ব‍্যথা করছে।আমি যাবনা তুই যা।

আমি চিন্তিত কন্ঠে বললাম…

—জানু তুই ঠিক আছিস???ঔষধ খেয়েছিস???

—আরে বেবি থাম এতো হাইপার হতে হবে না।সামান‍্য ব‍্যথা করছে।আর আমি ঔষধ খেয়েছি।তুই যা ঘুরতে…

—আমি কখনো তোকে ছাড়া একা ঘুরতে যাই।যে এখন যাব।তুই ঠিক হওয়ার পরেই আমরা একসাথে ঘুরতে যাব।

ও হাসতে হাসতে বলল….
—আমি মরে গেলে তখন কি আমায় কবর থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবি।

ওর মুখে মরার কথা শুনে আমার মাথা সাথে সাথেই গরম হয়ে গেলো।আমি রাগি গলায় বললাম….

—আরেক দিন মরার কথা বললে আমিই তোকে মেরে ফেলবো।আর কাল তুই রেডি থাকিস আমি তোকে চাটনি বানাবো ।এই বলে ওকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোন রেখে দিলাম।

আমরা সবাই জানি দুনিয়ার জীবন আমাদের ক্ষনস্থায়ী।যার যতদিন হায়াত আছে সে ততোদিন বাচবে। মৃত্যুর স্বাদ আমাদের সবারই গ্রহন করতে হবে।তার পরেও কারো মুখে মৃত্যুর কথা শুনলেই মনের মধ্যে কেমন ভয় কাজ করে।আর যদি সে হয় প্রিয় মানুষ তখনতো কোন কথাই নাই।

আমি নিজেকে সামলিয়ে বড় করে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে ভাইয়াকে গিয়ে বললাম….

—ভাইয়া আজ আমায় শুধু চকলেট কিনে দে।আর আমরা আন‍্য দিন ঘুরতে যাবো।

ভাইয়া আমাকে বলল…

—কেন কি হয়েছে??তোর কি শরীর অসুস্থ লাগছে???

—আরে আমি ঠিক আছি জানুর শরীর অসুস্থ তাই ও যেতে পারবে না।আর আমি তো ওকে ছাড়া যাবো না।তাই প্লিজ…
রাগ করিস না।

ভাইয়া মুচকি হেসে বলল…

–ঠিক আছে। চল তোকে চকলেট কিনে দেই।

আমি মুচকি হেসে বললাম…

—চলো….

এতক্ষন আরহাম ফোনের মাধ‍্যমে সব কথা শুনছিল।নিহাদ আরহামকে লাইনে রেখেই এতক্ষন মানহার সাথে কথা বলছিল।আরহাম মানহার মুখে জানু শুনে রাগে লুচির মত ফুলছে।আর একা একাই বিরবির করছে…
—ওর সাহস কত বড় আমার বউ হয়ে আরেক জনকে জানু বলছে।ঐ ছেলেকে পেলে আমি ওর চেহারার নকশাই বদলিয়ে দিব।তার আগে ওর ব‍্যবস্থা করতে হবে।আর শালা নিহাদও কিছু বলল না।দুটোকেই আমি দেখে নিব।

আহাদ একা একা আনমনে রাস্তা দিয়ে হাটছে।মাথার মধ্যে তার হাজারো চিন্তা।সব সময় হাসি খুশি থাকা ছেলেটার মনেও যে,এতো কস্ট লুকিয়ে আছে তা কেউ বুঝতেও পারবে না।

আসলেই কি যারা সব সময় মুখের মধ্যে বড় একটা হাসি ঝুলিয়ে রাখে তাদের মনে কি হাজারো কস্ট লুকিয়ে থাকে???🤔🤔

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)