বেস্টু পর্ব-০৬

0
1960

#বেস্টু
#পর্ব_০৬
#Ariyana_Nur

ফুপিমার বাসায় সেই কখন থেকে ফুপিমার পিছে পিছে ঘুরঘুর করছি কিন্তু মনে হচ্ছে ফুপিমা আমাকে দেখছেই না।আচ্ছা আমি কি ভেনিস হয়ে গেছি🤔যে ফুপিমা আমায় দেখছে না।অনেকক্ষন ঘুরার পর যখন কাজ হলোনা তখন আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম….

এভাবে কাজ হবে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে হবে। আমি ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে হাত পা ছরিয়ে কাদতে লাগলাম।
ফুপিমা আমার কাছে এসে অস্থির হয়ে আমাকে জিগ্গেস করলেন…..

—কি হয়েছে মা??এভাবে কান্না করছিস কেন??

আমি ফুপিমাকে অভিমান করে বললাম….

—এখন আদর দেখাতে হবে না সেই কখন থেকে পিছে পিছে ঘুর ঘুর করছি।তুমি তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছ না।

—আর তুই যে এতোদিন আমার সাথে রাগ করে কথা বলিসনি তখন???

—তোমরা কাজই করেছিলে রাগ করার তাই করেছি।আচ্ছা বাদ দাও এখন বলো তোমার শরীর কেমন???ভাইয়া বলল তুমি নাকি ঔষধ ঠিক মত খাওনা??হুম…

এবার ফুপিমা অভিমান করে বলল…

—আমার মা তো এতোদিন আমার খবর নেয়নি অভিমান করেছিল তাই।এখন আমার মার অভিমান শেষ আমার টাও শেষ।

আমি ফুপিমার কথা শুনে মুচকি হেসে তাকে জরিয়ে ধরলাম।

_____________________________

আহাদ ওর রুমের এক কোনায় মনমরা হয়ে বসে আছে।কোন কিছুই তার ভালো লাগছে না।একটু আগে ওর সৎ মা ফোন করে জানিয়েছে ওর বোনের সে এক বয়ষ্ক লোকের সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন।

আহাদ এর মা মারা যাবার পর থেকেই ও শহরে ওদের এক আত্মীয়র বাসায় থাকে।গ্রামে ওর বড় বোন ওর সৎ মার সাথে থাকে।আর ওর বাবা বাহিরে থাকে।প্রতি মাসে মাসে খরচের টাকা ওর বাবা পাঠিয়ে দেয়।সৎ মা সব সময় ওর বোনের উপর অত‍্যচার করে।আর ওর বোন সব মুখ বুজে সয‍্য করে।বাবাকে জানালে বাড়িতে আরো অশান্তি হবে যা ও চায় না।আর ওর বাবাও সব জেনেও না জানার অভিনয় করে।আহাদ প্রতিবাদ করতে চাইলে ওর বোন ওকে বাধা দেয়।কেননা তাতে অরো অশান্তি বাড়বে কমবে না।

কিন্তু এখন নিজের চোখের সামনে বড় বোনের জীবন ধংস হয়ে যাবে তা ও সয‍্য করতে পারবে না।আহাদ আনমনে বলতে লাগলো….
—আমিই একমাএ ভাই যে নিজের বোনের জন‍্য কিছু করতে পারছি না।আমার মত এমন অপদার্থ ভাই থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।

________________________

মাঠের এক কোনে বসে আছি আমরা তিন জন।কিন্তু কারো মুখেই কোন কথা নেই।নিরবতা ভেংগে আহাদ বলল….

—সব তো তোদের বললাম।এখন আমার হাতে কিছু করার নেই।আমি আজ বাড়ি যাচ্ছি ।যদি কিছু করতে পারি।

আমি আহাদকে বললাম….
—ঐ আপুর বিয়ে আপু আমাকে দাওয়াত দিল না কেন???

আমার কথা শুনে ওরা দুজন চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।আমি আবার বলতে লাগলাম…
—মনু তোর ফোনটা দে তো আমি আপুর সাথে কথা বলব।এই বলে ওর থেকে ফোন নিয়ে আপুর নাম্বার খুজতে লাগলাম।

তাহিয়া রাগি গলায় বলল…
—ঐ তাড়ছিরা ছেরি!!!তুই কি পাগল ছাগল হইছস??তোর জম্বের বিয়া আমি খাওয়াইয়া দিমু।

আমি ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে আপুর নাম্বারে কল দিলাম। ১ম বার রিং হওয়ার পর কেটে গেল।২য় বার দুবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ হলো।ওপাস থেকে আওয়াজ এলো….

— আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছিস ভাই???

আমি সালামের জবাব দিয়ে বললাম…
—আপু আমি তোমার গাধা ভাই না।

আমার কথা শুনে আপু মিষ্টি শুরে বলল…
—তা আমার এই বোনের আমার কথা কিভাবে মনে পরলো??

আমি কাদো কাদো হয়ে বললাম….
—নিধি আপু তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে???আর আমি তোমার সাথে রাগ করেছি তুমি আমাকে দাওয়াত দেওনি তাই।

আপু আমার কথা শুনে চুপ করে রইলেন কিছু বললেন না।

আমি আপুর সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।

ওরা দুজন আমার দিকে চোখ বড় বড় করে করে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি ওদের এক চোখ টিপ দিয়ে বললাম…
—ওলে জানু মনু তোমরা মুখ বন্ধ কর।তা না হলে মশা ঢুকে যাবে।

_______________________________

নিধি বউ সেজে মেহমানদের সামনে বসে আছে।বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে।একটু পরেই বিয়ে পরানো হবে।হঠাৎ একজন মহিলা এসে বলতে লাগলো….

—রহিমা (নিধির সৎ মা)এসব কি???তুমি আমার বউ মা কে এভাবে সাজিয়ে এখানে বসিয়ে রেখেছ কেন???

রহিমা মহিলাটাকে ভালো ভাবে দেখে নিল।তারপর বলল…
—কে আপনি???আমার নাম জানলেন কেমনে??আর কে আপনের বউ মা??

মহিলাটি এবার রাগি গলায় বলল….
—মানলাম তোমারদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে।তুমি তোমার মেয়ের জামাই এর কাছে একটা বড় এল এ ডি টিভি চেয়েছ তা দেই নি বলে তুমি সব সম্পর্ক শেষ করে দিবে??ওর আরেক জায়গায় বিয়ে দিবে??

মহিলার কথা শুনে সবাই কানা কানি করছে।আর রহিমা এবার রাগে চিৎকার করে বলল….
—কি যা তা শুরু করছেন আপনি???ওর কবে বিয়ে হলো??আর আমিতো আপনাকে চিনিই না??

মহিলাটি এবার কাদো কাদো হয়ে বলল….
—দেখ তুমি মিথ্যে কথা কেন বলছ??কেন তুমি এমন করছো??তুমিই তো ওদের বিয়ে দিলে??

আর বউমা তুমি মা কে ভালোবাসো ভালো কথা তাই বলে এমন একটা সিধান্তে তুমি রাজি হয়ে গেলে।আমাদের কথা ভাবলেনা।আরে আমাদের কথা না হয় বাদি দিলাম আমার ছেলেটার কথা তো ভাববে।আরে তার কথাও না হয় বাদ দিমাম কিন্তু তোমার ঐ পাগল মেয়েটার কথা তো একবার ভাববে।

নিধি হা করে তাকিয়ে রইলো বলছে কি এই মহিলা??নিধি একা একাই ভাবতে লাগলো আমার আবার বিয়ে হলো কখন??আবার নাকি একটা মেয়েও আছে??আমি সপ্ন দেখছি না তো??নিধি নিজেকে নিজেই চিমটি কাটলো।নিজের হাতে ব‍্যথা অনুভব করে বুঝতে পারলো সপ্ন দেখছে না।নিধি যে কিছু বলবে তা ও বলতে পারছে না।ভয়ে ওর হাত পা কাপছে।

একজন লোক এগিয়ে এসে বলল….
—আপনি যে বলছেন ও আপনার পূত্র বধু তার কি প্রমান আছে??আমরা কেন আপনার কথা বিশ্বাস করব??

মহিলাটি মুচকি হেসে বলল….
—আপনার মাথায় তো অনেক বুদ্ধি।এবার একটা বিষয় চিন্তা করে দেখুন, এতো সুন্দর একটা মেয়েকে এমন আংকেল টাইপ মানুষের সাথে কেন বিয়ে দিচ্ছে??মেয়ের মধ্যে যদি কোন খুতই না থাকতো তাহলে কি এমন একজনের সাথে এতো সুন্দর একটা মেয়ের বিয়ে দেয়??

মহিলার কথা শুনে সবাই আবার কানাকানি করতে লাগলো।

হঠাৎ করেই একজন ছেলে এসে নিধিকে জরিয়ে ধরে বলল…

—প্লিজ নিধু আমার সাথে আর অভিমান করে থেকো না।আমি তোমাকে ছাড়া বচতে পারবো না।আমি আজই আমার শাশুড়ি মা কে টিভি কিনে দিব।দরকার পরলে টিভির শোরুম কিনে দিব।তার পরেও অন‍্য জায়গায় বিয়ে করো না।প্লিজ আর রাগ করে থেকো না।

নিধি এদিকে পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে।লোকটাকে যে সরাবে সেই শক্তিটুকুও পাচ্ছেনা।নিধি মনে মনে ভাবছে এই পাগলগুলো কোন পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এল??

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃস্টিতে দেখবেন।🤔নিধির বিয়েটা কার সাথে হবে??আর ঐ ভদ্র মহিলাটি কে??)