বেস্টু পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
4121

#বেস্টু
#শেষ_পর্ব
#Ariyana_Nur

৫বছর পর……
মানুষের জীবন পরিবর্তনশীল।সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনে অনেক কিছুই পালটিয়ে যায়।সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন অনেক কিছুই পায়।শুধু পায় না হারিয়ে ফেলা সেই অতীত।

দেয়ালে টানানো একটা ছবির ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে আছি।ছবিটা আমাদের কলেজ লাইফের।যেখানে আমরা তিনজন কাধে হাত রেখে বসে আছি।ছবিটা দেখতে দেখতে আমার চোখে পানি চলে আসলো।আর পিছনের সেই খুনশুটি দুষ্টুমি গুলো মনে হতে লাগলো।

হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।আমাকে কাদতে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল….
—ঠাটিয়ে দিব এক।এখন আবার কাদছো কেন।তোমাকে না বলেছি আমার সামনে কান্না করবে না।

আমি কান্নারত অবস্থায় মুচকি হেসে বললাম….
—আমি তোমার সামনে কান্না করছিলাম না।তুমিই আমার সামনে এসেছো।

তিনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল…
—সে যাই হোক।তা মেডাম কান্না কেন করছিলেন???

—এমনেই।আচ্ছা ওরা কখন আসবে।আর সব ঠিক মত রেডি করেছ তো।যদি সব ঠিকমত না পাই তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে।

—আরে বাহ্ কি সুন্দর থ্রেড দিচ্ছে আমাকে।তুমি ভুলে গেছো আমি কে???

—জ্বী না মশাই আমি ভুলি নি।আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন আমি কে???সমস‍্যা নাই আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি আমি হচ্ছি শিকদার বাড়ির একমাএ পুএবধু মিঃ খচ্চর থুক্কু মিসেস শিকদার মানহা খান।(ভাব নিয়ে)

—বাহ্ বাহ্ খান শিকদার দোনটাই লাগাবে।শুধু শুধু কি আর ঘাস ফড়িং বলি।

—তুমি আবার আমাকে ঘাস ফরিং বললে তোমাকে তো আমি…..

আপনাদের এই টম এন্ড জেরি লড়াই শেষ হলে আমি কি আসতে পারি।

সামনে তাকিয়ে দেখি আহাদ দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।
আমি ওকে দেখে ন‍্যকা কান্না করে বললাম….

—দেখ কেমন খচ্চর এর সাথে আমাকে বিয়ে দিয়েছিস।সরাদিন আমার সাথে লেগে থাকে।

আহাদ আমার মাথায় গাট্টা মেরে বলল….
—ঢং বাদদে।আমার সহজ সরল ভাইটারে যে তুই জ্বালাইয়া ভাজা ভাজা করতাছোস তা কি আমি জানি না।

আমি ওর পিঠে কতগুলো তাল ফালিয়ে বললাম….
—কুত্তা,হারামী তুই জীবনেও মানুষ হবি না।দেখিস এইবার আর আমার ননদরে তোর কাছে দিতাছি না।হুহ….

—ঐ তোর ননদ এখন আমার বউ।শুধু শুধু ভয় দেখাইয়া লাভ নাই।

—আমরা যদি না করি তাহলে তুই সারাদিন কানলেও সুমু তর সাথে যাইবোনা।

পিছন থেকে কথাটা বলে তাহিয়া সামনে আসলো।আমি তাহিয়াকে দেখে দৌড়ে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলাম।নিহাদ ভাইয়া পিছন থেকে বলল…

—দেখ আরহাম দেখ এমন একটা ভাব করতাছে মনে হয় কতো বছর পর দেখা হইছে।হুহ দুদিন আগেও কিন্তু ওদের দেখা হইছে।

তাহিয়া ভেংচি কেটে বলল….
—হিংশুটে তোমার বন্ধু তো সামনেই আছে।যাও তাকে জরিয়ে ধর না করলো কে।

—তোমাদের মত তো আমরা আর কুয়ারা করি না।

তাহিয়া রাগি চোখে তাকিয়ে বলল….
—আমরা কুয়ারা করি।দাড়াও আজ বাসায় যেয়ে নেই।

তাহিয়ার কথা সুনে ভাইয়া চুপসে গেলো।আর ভাইয়ার চুপসে যাওয়া মুখ দেখে আমরা হাসতে লাগলাম।

সুমু আমাদের সামনে এসে বলল….
—এখনো কি গল্প করবে নাকি নিচে আসবে।সবাই কিন্তু এসে গেছে।আর ভাবি তুমি…মামুনি তোমার রুমে একটা ড্রেস রেখেছে তোমাকে ওটা পরে নিচে যেতে বলেছে।

আমি মুচকি হেসে বললাম…
—ঠিক আছে।তোমরা নিচে যাও আমি আসছি।

কি ভাবছেন🤔কিসের থেকে কি হয়ে হয়ে গেল।তাহলে চলেন ৫বছর আগে একটু ঘুরে আসি।
আমি জ্ঞান হারানোর একটু পর তাহিয়াও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।আমাদের এমন অজ্ঞান হতে দেখে ডাঃ জিগ্গেস করলো আমাদের কি হয়েছে।তখন উপস্থিত একজন বলল যে,আপনি না বললেন পেসেন্টের অবস্থা খারাপ তা শুনেন এমন হয়েছে।তখন ডাঃ অবাক হয়ে বলল….
—আমি কখন বললাম এমন।

—তাহলে আপনি পেশেন্টের কথা জিগ্যেস করায় অই এম সরি কেন বললেন।

—আরে আমি আপনাদের বলি নি।আমি আমাদের নার্সকে এ কথা বলেছি।যাই হোক আপনাদের পেশেন্ট আল্লাহ্ এর রহমতে ভালো আছে।মাথায় বেশি চোট পায় নি।টেক কেয়ার।

আমার জ্ঞান ফিরতেই আমি পাগলামি শুরু করে দেই।তারপর অনেক কষ্টে সবাই মিলে আমাকে ঠান্ডা করে।আহাদের জ্ঞান ফিরার পর সবাই মনে করে আমি কান্না কাটি করবো।সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি আহাদের সামনে গিয়ে বলি….

—মরার খুব সখ না তোর।তুই একবার সুস্থ হ দেখিস তোর কি অবস্থা করি।তোর হাত পা ভেঙ্গে আমি যদি তোরে চৌরাস্তার মোরে না বসাইছি দেখিস তুই।

আহাদ কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে সেদিন শুধু মুচকি হেসেছিল।

সেদিনের কথা মনে পরলে আজও ভয়ে কেপে উঠি।বন্ধুত্বের জন‍্য যে কেউ নিজের জীবনের ঝুকি নিতে পারে তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল।

ও আপনাদের কে তো জানাতে ভুলেই গেছি আমার আর তাহিয়ার ৩বছর পূর্বে বিয়ে হয়ে গেছে।আমার বিয়ের ১৫দিন পর ওদের বিয়ে হয়েছে।আর আহাদ আর সুমুর বিয়ের ৬মাস চলছে।আজ বাসায় ছোট করে গেট টু গেদারের আয়োজন করা হয়েছে।যাতে সবাই মিলে এক সাথে সময় কাটাতে পারি।

এতোদিনে অনেক কিছু পাল্টে গেছে শুধু পাল্টায় নি আমাদের বন্ধুত্ব।হয়তো আগের মত এক সাথে বেশি করে কেউ সময় কাটাতে পারি না।তারপরেও যতটুকু কাটাই তাতে আমাদের খুনশুটি লেগেই থাকে।আল্লাহ এর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে,তিনি আমার জীবনে দুজন এমন বন্ধু দিয়েছেন।যারা আমাকে বড় বোন আর বড় ভাইয়ের মত স্নেহ করে।আমাকে এগিয়ে যাওয়ার পথে উৎসাহিত করে।
দোয়া করবেন আমাদের বন্ধুত্ব যেন সব সময় অটল থাকে।কোন বাধা বিপত্তি যেন আমাদের বন্ধুত্বের গাট খুলতে না পারে।

__________________সমাপ্ত__________________

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।জানিনা গল্পটা আপনাদের কেমন লেগেছে।আপনাদের মনে কতটুকু জায়গা করে নিতে পেরেছে।শেষে শুধু একটা কথাই বলব থাকার মত একটা বন্ধু থাকলেই যথেষ্ট হাজারটার দরকার হয় না।যাই হোক সবাই ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন এই দোয়াই করি।আর আপনারাও আমার জন‍্য দোয়া করবেন।আল্লাহ হাফেজ)