দম বন্ধ ভালোবাসা পর্ব-০১

0
6507

#দম_বন্ধ_ভালোবাসা
#Mst_Liza
#পার্ট_০১

ক্লাস রুমে এক পা উঁচু করে কান ধরে দাড়িয়ে আছি।সকলের দৃস্টি আমার দিকে।লজ্জায় আমি শেষ আজ।এমন লজ্জার সম্মুখীন এর আগে কখনো হয়নি আমি।বাঁকা চোখে খেয়াল করছি মুখ টিপে হাসছে সকলে।আমার ফ্রেন্ডগুলো সব বদের হাড্ডি।সকলে মিলে মজা নিলাম।শাস্তি পাচ্ছি এখন শুধু আমি।আমাকে কান ধরতে দেখেও ওরা হাসছে।একবার ক্লাস রুম থেকে স্যার বের হোক একটা একটা করে সবকটাকে শায়েস্তা করবো।এইরে স্যার এদিকেই আসছে।হাতে স্টিলের স্কেল।আমাকে কি উনি মারবেন নাকি? মাম্মাম..কান্না করবো আমি।আমার ভয় শেষ না হতেই সামনে রাখা টেবিলটাতে এসে স্কেলের আঘাত করলেন।একটা শব্দে জোড়ে মাম্মাম বলে কেঁদে উঠলাম আমি।আমার কান্না শুনতে পেয়ে উনি এগিয়ে আসলেন। নাক বরাবর স্কেলটা উঁচু করে ধরে বললেন,

—এই মেয়ে থামো।একটু টু শব্দ করলে এই স্কেলের বাঢ়ি তোমার অন্য পায়ের উপরে পরবে।

ভয়ে আমার গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে।একটা ঢোক গিলে আমি কান ছেড়ে দিয়ে পা নামিয়ে পেছনে সরতে সরতে বললাম,

—আমার ভুল হয়েছে আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দিন আর কখনো এমনটা করবো না স্যার।ওইযে দেখছেন আমার ফ্রেন্ডগুলো ওরা সকলে মিলে বলেছিলো তাই করেছি।আমি তো নিষ্পাপ একটা মেয়ে।বিশ্বাস করুন স্যার।এর আগে কখনো এমনটা করিনি।ওদের কথায় বাধ্য হয়ে করলাম এবার।ওরা আমাকে দিয়ে করিয়ে সকলে মিলে মজা নিচ্ছে।ওদেরকে কিছু বলুন।

স্যারের মুখটা দেখে বুঝলাম রাগে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে।আমাকে কি করবে নিজেও বুঝতে পারছেন না।ঘার বাকিয়ে স্কেল উঁচু করে বললেন,

—কে কে এই মেয়েটার ফ্রেন্ড তারা সকলে দাড়াও।আজ সবাইকে শাস্তি দেবো আমি।

স্যারের কথায় সকলের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।কেউ দাড়ানোর সাহশ পাচ্ছে না।আমি বললাম,

—স্যার এই ক্লাসের সবাই আমার ফ্রেন্ড।সবার কথায় এমনটা করেছি আমি।

স্যার একটা ধমক দিয়ে বললেন,

—ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে? তুমি জানো আজ পর্যন্ত আমি কখনো কোনো মেয়ের হাতও ধরিনি।লাইফে কখনো কোনো মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে মিশি নি।আর তোমার মতো একটা ফাজিল মেয়ে ক্লাসে ঢুকতেই আমার গালে কিস…ছিঃ। কি শাস্তি দেবো তোমায় তাই বলো?

আমি গলা ছেড়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,

—প্লিজ স্যার আমি বুঝতে পারিনি।এবারের মতোন আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন।পরেরবার করলে শাস্তি দিয়েন।ওদের সকলের কথায় এমনটা করেছি আমি।আপনার মতোন ইয়াং একটা ছেলে যে আমাদের নতুন স্যার হবে সেটা বুঝিনি আমি।আর আপনার যদি সত্যি মনে হয় আমাকে শাস্তি দেবেন তাহলে ওদের সবাইকেও শাস্তি দেন।সকলের ভুলের শাস্তি আমি একা কেন পাবো? ওদের তো শিক্ষা হবে না আমি শাস্তি পেলে।

আমার কথা শুনে এবার সকলের গলার আওয়াজ বাজলো।সকলের মধ্য থেকে প্রিয়া দাড়িয়ে বলে উঠলো,

—ফুল তুই নিজের বেয়াদবির শাস্তি আমাদের কেন দিতে চাচ্ছিস? আমরা কিছু জানি না স্যার আপনি ফুলকেই শাস্তি দিন।আমরা নির্দোশ।কি প্রমাণ আছে ফুলের কাছে আমরা ফুলকে এটা করতে বলেছি? আর বললেও করবে কেন? ফুল কি ছোট বাচ্চা? এখনো ফিডার খাই? কি বলিস সবাই?

প্রিয়া শাকচুন্নির সাথে সকলে মিলে মাথা ঝাঁকালো।সকলে বললো,

—হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক কথা।ঠিক কথা।

স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে আচমকা হা হয়ে আছে আমার দিকে তাকিয়ে। চোখের পলক যেন পরছেই না।আমি ভয়ে চুপসে গেলাম।উনার চোখের ভাষাতো আমি বুঝছি না।হুট করে স্যার বলে উঠলেন,

—তোমার নাম ফুল?

আমি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললাম। স্যারের ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি ফুটে উঠলো।মুখে হাত রেখে উল্টো ঘুরে কিছু একটা ভেবে পুনরায় আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললেন,

—যাও এবারের মতোন ক্ষমা করে দিলাম।

কথাটা শুনে আমি এতো খুশি হলাম বলে বোঝাতে পারবো না।মনে হচ্ছে যেন ঈদের চাঁদ দেখেছি।স্যারকে ধন্যবাদ আর ছরি বলে লাফাতে লাফাতে নিজের সিটে এসে বসলাম। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে প্রিয়াকে এক ধাক্কা আর মিনিকে একটা খোঁচা দিয়ে বললাম,

—সব কটাকে দেখে নেবো।এই তোরা আমার ফ্রেন্ড?

ওরা আস্তে করে মাথাটা একটু কাত করে এক হাত দিয়ে নিজের কান টেনে ধরে বললো,

—ছরি।

স্যার সামনে থেকে সাইলেন্টস বলে উঠলেই আমরা সকলে নড়ে চড়ে সোজা হয়ে বসলাম।আজ স্যারের প্রথম ক্লাস তাই সকলের পরিচয় নিচ্ছে। প্রথমে নিজের পরিচয়ও দিলো।স্যার বললো,

—আমার ডাক নাম হৃদ। তোমরা আমাকে ডা. হৃদ স্যার বলেই ডেকো।সারা জীবন শুনেছি মেডিকেলের স্টুডেন্টরা ভদ্র হয়।আমরা যখন স্টুডেন্ট ছিলাম তখন স্যারদের দেখে ভয়ে কাঁপতে থাকতাম আর তোমাদের দেখে যা বুঝলাম ভাবছি তোমাদের ক্লাসটা আমি নিবো কিনা।যাই হোক আজ যখন এসেছি সকলের সাথে পরিচিত হয়ে যায়। পরের ক্লাস গুলো নিবো কিনা ভেবে অন্য স্যারদের সাথে আলোচনা করে জানাবো।অন্য কোনো ব্যাচের সাথে ক্লাস এক্স চেঞ্জ করে নিবো।

স্যারের কথাটা শুনে পাশ থেকে প্রিয়া বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

—এতো ইয়াং আর হ্যানসাম একটা স্যার আমাদের ক্লাস নেবে না?

সকলে একসাথে বলে উঠলো,

—না না স্যার আপনাকেই আমাদের ক্লাস নিতে হবে। আপনি অনেক ভালো। প্লিজ স্যার এমন বলবেন না।

হৃদ স্যার মাথাটা কাত করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আমিও সকলের সাথে বললাম,

—হ্যাঁ হ্যাঁ থাকুন না।আপনি অনেক ভালো স্যার।অনেক দয়ালু।আপনার মনটা বিশাল বড়।নইলে তো আমাকে ক্ষমা করতেন না।

কথাটা বলতেই স্যার চোখদুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো।অমনি ঘন্টা বেজে উঠলো।বুঝতে পারলাম ক্লাস টাইম শেষ।কিন্তু হৃদ স্যার তো আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।আমার বেঞ্চের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,

—বাইরে এসো।আমি কতটা দয়ালু তোমাকে আজ বোঝাবো।

আমার মুখটা ভয়ে চুপসে গেলো।মিনিকে বলল,

—ওকে বের হতে দেও।আমি ওকে আমার চেম্বারে নিয়ে গিয়ে শাস্তি দিবো।এখন তোমাদের অন্য ক্লাস টিচার চলে আসবে।তাই এখানে কিছু বলবো না।

শাস্তির কথা শুনে আমি আবার ভয়ে চুপসে আছি।বেঞ্চ থেকে বের হয়ে স্যারের কথা মতোন পিছনে পিছনে ধীরে ধীরে হাটছি।কি বলবো বুঝতে পারছি না।কিভাবে বাঁচবো এবার।স্যার অনেকটা সামনে চলে গেছে।সিঁড়িতে আসতেই স্যার পেছনে ঘুরে দেখলো আমি অনেকটা পেছনে।এগিয়ে এসে স্যার বলল,

—এতো আস্তে কেন হাঁটছ?

আমি মুখটা মলিন করে বললাম,

—আমার ভুল হয়ে গেছে স্যার।বুঝতে পারিনি আমি।প্লিজ ক্ষমা করে দিন।

স্যার মাথা ঝাকিয়ে বুকে হাত বেঁধে বলল,

—তোমাকে আমি আর কতবার ক্ষমা করবো?

আমি হাত জোড় করে বললাম,

—সেটাই তো।সত্যি আমার ওভাবে আবার বলা উচিৎ ছিলো না।আপনি তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে।আমি আপনাকে খুশি করতে মুখে যা এসেছে বলে ফেলেছি।শুধু শব্দগুলো ভুল ছিলো।মানেটা কিন্তু প্রশংসা ছিলো আমার দিক থেকে।কিন্তু আপনি বুঝবেন না।প্লিজ স্যার আর একটা সুযোগ দিন। আমি বুঝতে পারি নি আপনি ওভাবে বললে রেগে যাবেন।

আমি স্যারের মুখের দিকে তাকালাম।স্যার নিশ্চুপ হয়ে আছে।আরও কিছু বলতে নিলাম।আমার মুখ খোলার আগেই আচমকা আমাকে ঘুরিয়ে স্যার দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। আমার হাতদুটো শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,

—তুমি ফুল?

আমি ভয়ে চোখদুটো বন্ধ করে রেখেছি। কি হবে আজ আমার জানি না। হালকা মাথাটা কাত করে বললাম,

—হ্যাঁ কিন্তু আমি….

আমার হাত ছেড়ে দিয়ে কোমড়ে হাত গুজে টেনে ধরলেন উনি।আমি কেঁপে উঠতে কিছু বলার আগে আমার ঠোঁটে নিজের আঙুল চেপে রাখলো।উনি আমার এতো কাছে যে উনার নিঃশ্বাস গুলো আমার বুকে পরছে।উনি ধীরে ধীরে আমার ঠোঁটের দিকে আগাচ্ছে আর আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

চলবে,,,,