বেড়ী পর্ব-১+২

0
3388

#বেড়ী পর্বঃ১
#লেখায়ঃপ্রজাপতি (Nosrat Monisha)

-ঘরের বউয়ের এতো লেখাপড়ার দরকার নেই। একজনরে লাই দিয়ে আমার শিক্ষা হয়েছে। আজ আমার বড় ছেলে আমার কাছে নাই। আবারও এত বড় ভুল করার মতো বেআক্কল আমি না। কলেজ-ফলেজ যাওন লাগবো না। বিয়া করাইছি সংসার সামলানোর জন্য পড়ালেখা করানোর জন্য না।

বিয়ের এক মাসের মধ্যে শ্বশুরের ঝাঁঝালো গলায় কথাগুলো শুনতে হলো হৃদিতাকে। অথচ এই ব্যক্তিটিই তাকে দেখতে গিয়ে হৃদিতার বাবার হাত ধরে কথা বলেছিলো,
-আরে বেয়াই আজ থেকে আপনার মেয়ে আমার। সে যতদূর পড়তে চায় পড়বে। আমার কি টাকা পয়সার কমতি আছে নাকি? বাড়ির অন্য দুই বউ যেমন পড়ছে আমার মেয়ে যেমন পড়তেছে হৃদিতাও পড়বে।

হৃদিতার শ্বাশুড়ি নিজের স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করে,
-আহা এমন করে বলছো কেন? পড়লে সংসার সামলানো যায় না এটা তোমাকে কে বলেছে? মুমুর কথাই ধরো না।

নিজের স্ত্রীর মুখে এমন বোকা বোকা কথা শুনে খানিকটা রেগে যায় মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা সারোয়ার আহমেদ।
-শোন মুমুর সাথে ওর তুলনা দিবে না। কোথায় আমার বন্ধুর মেয়ে আর কোথায় এই মেয়েটা।

-তোমার সাথে কথা বলে পারা যাবে না। ঠিক আছে কলেজ নাহয় না গেলো অন্তত পরীক্ষাটা দেক।

-আরে পরীক্ষা দিয়ে কি হবে?

-শোন, আমার অত শিক্ষিত আর বড় চাকুরিজীবী ছেলের বউ খালি মেট্রিক পাশ। না না এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না। তাছাড়া বাড়িতে অন্য দুই বউ এত শিক্ষিত। কেউ যদি কেনভাবে জানতে পারে, আমরা বাড়ির ছোট বউকে পড়তে দেই নি তবে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে ছি ছি! পড়ে যাবে।

স্ত্রীর এই কথায় যুক্তি খুঁজে পেলো সরোয়ার।
-ঠিক আছে তুমি যখন এতো করে বলছো। তবে শুধু পরীক্ষা দিবে এছাড়া কলেজে যেতে পারবেব না।

শ্বশুরের এমন বদলে যাওয়া রূপ দেখে কান্নার বদলে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো হৃদিতার মুখ থেকে। তবুও শান্তি পরীক্ষা দিতে পারবে এই জন্য অনেকটা খুশি মনে শ্বশুরের ঘর থেকে বের হয়ে আসে হৃদিতা।

শ্বশুর বাড়ির কারও কোন কথার প্রতিবাদ করতে পারবে না হৃদিতা এমনকি বাবার বাড়িতে ফোন করে জানিয়েও লাভ হবে না। কেননা তার পায়ের নিচের মাটিটা আর পাঁচটা মেয়ের মতো এখন শক্ত নেই।

ঘরে গিয়ে দরজা লাগাতেই
ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে হৃদিতার স্বামী নির্ঝর বলে,
-বাবা কি বললো?

খানিকটা শুকনো মুখে হৃদিতা বলে,
-ক্লাস করতে যেতে পারবো না। শুধু পরীক্ষা দিতে পারবো।

নির্ঝরের কাছে খবরটা হতাশার। তাই সেও মুখটা একটু শুকনো করে বলে,
-অ। তা পরীক্ষা কবে?

-প্রি-টেস্ট একমাস পর।

-হুম।

হৃদিতা গুটি গুটি পায়ে বিছানার কোণে বসলো।
নির্ঝর চোখ ল্যাপটপে ফিরিয়ে নিলো।

হৃদিতা একটু ভয়ার্ত গলায় বলে,
-পরীক্ষার আগে একবার কলেজে যেতে পারলে ভালো হতো। অন্তত ক্লাসের নোটগুলো পেতাম।

হৃদিতার এই একটা জিনিস নির্ঝরের পছন্দ না, সব কথা শেষ হওয়ার পর আবার কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান। তাই বিরক্ত হয়ে বলে,
-বিয়ের আগে যথেষ্ট ক্লাস করেছো। আর তুমি বাবার সিদ্ধান্তের উপর কথা বলার সাহস কি করে পাচ্ছো? তাছাড়া আমিতো এটাই ভেবে পাই না যে উনি তোমাকে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি কি করে দেয়? সত্যি বুড়ো বয়সে ভিমরতিতে পেয়েছে। নাহলে এতকিছু ঘটার পরও। ধুর মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।

নির্ঝর রাগে ল্যাপটপটা বন্ধ করে শুয়ে বললো,
-শোন লাইটটা নিভিয়ে দাও। আর হ্যাঁ কোন ক্লাসের দরকার নেই। কিন্তু একটা কথা মাথায় রেখো পরীক্ষা শুরু হলে এখান থেকে রিক্সা করে যাবে আবার সোজা বাড়ি আসবে। এর বাইরে কোনকিছু যেন না দেখি।

হৃদিতা ভেবেছিলো শ্বশুর কলেজে যেতে অনুমতি দেয় নি তাই নির্ঝরের মন খারাপ হয়েছে তাই সাহস করে স্বামীকে নোটের কথা বলেছে। কিন্তু এখন সবটা বুঝতে পেরে হৃদিতার নিজের বোকা বোকা চিন্তা উপর রাগ হচ্ছে।
হৃদিতা লাইটটা বন্ধ করে দেয়।

তারপর ঘরের বাকি কাজগুলো সেরে এসে নির্ঝরের পাশে শুয়ে পড়ে। আর ভাবতে লাগে,
-আল্লাহ মানুষ কত সহজে বদলে যায়। একজনের করা অপরাধের দায় অন্যজনের ঘাড়ে চাপায়। আল্লাহ এ কোন বেড়ী আমার পায়ে তুমি পড়ালে? কেন পড়ালে? আমি তো কারও কোন ক্ষতি করি নি।
হৃদিতার দু’চোখের অশ্রুতে বালিশ ভিজে যায় কিন্তু পাশে নির্ঝর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে।

#বেড়ী পর্বঃ২
#লেখায়ঃপ্রজাপতি(Nosrat Monisha)

গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে হৃদিতার পেটে লাথি মারে নির্ঝর।
নির্ঝরের প্রশ্নের উত্তরে দিতে গিয়ে হৃদিতা “আপু ছিলো” শব্দ দুটো উচ্চারণ করতেই এই পরিণতি। ঘটনাটা এতটাই আচমকা ঘটে যে হৃদিতা বুঝতেই পারে না কি হলো।
অতিরিক্ত আঘাত পেলে মানুষ চিৎকার করতে পারে না হৃদিতাও পারে নি। পেটে ধরে বিছানার উপর পড়ে যায়।
দুধে-ভাতে যে মেয়েকে মা-বাবা বড় করেছে যার সাথে কখনো কেউ গলা উঁচিয়ে কথা বলে নি এমন আঘাত সে সহ্য করতে পারবে না সেটাই স্বাভাবিক।

এতে থেমে নেই নির্ঝর। সে হৃদিতার চুলের মুঠি টেনে ধরে বলে,
-রেস্টুরেন্টে বসে কফি খাওয়ার শখ? তোর পেট থেকে আজ সব কফি লাত্থি মেরে বের করবো।

এবার পুরো ঘটনা বুঝতে পারে হৃদিতা। দোষতো তারই।

নির্ঝরের চোখ থেকে আগুন ঠুকরে বের হচ্ছে। সে হৃদিতাকে জোরে দুটো থাপ্পড় দিয়ে হাতে গাল চেপে ধরে। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-বল কি করে যোগাযোগ করলি? তোকে বাবা বারণ করেছিলো না?

হৃদিতা হিচকি তুলে কাঁদছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে তোতলাতে তোতলাতে বলে,
-স..সকালে আ..আপু ফ..ফোন

ফোন শব্দটা শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে নির্ঝর।
-সব দোষ তোর ফোনের। তোকে ফোন ব্যবহার করতে দেওয়াটা আমার ভুল। দাঁড়া..
বলে নির্ঝর হৃদিতার ফোনটা নিয়ে প্রথমে আছাড় দিলো পরে পা দিয়ে আঘাত করে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিলো।

এরপর রাগে গজগজ করে বের হয়ে ড্রইং রুমে সোফাতে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসলো।


কিছুক্ষণ পর নাকে গরম কফির গন্ধ অনুভব করে চোখ খুলতেই একটা হাসিমাখা মুখ দেখতে পেলো। আর কেউ না নির্ঝরের মেজ ভাবি মুমু কফির মগটা বাড়িয়ে ধরেছে।
আমরা সুন্দরী বলতে যা বুঝি টানা টানা চোখ দুধে-আলতা রঙ ভালো উচ্চতা সব কিছুরই অধিকারী মুমু।

-নাও কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাবে। তা কি ব্যাপার কিছু বলেছে?

কফিটা নিয়ে বিরক্তমুখে নির্ঝর বলে,
-কি আর বলবে? বলার মতো কি আছে তুমি তো জানোই সব।

মুমু নির্ঝরের পাশে বসে বলে,
-প্রথমত আমার একটা নাম আছে, ভাবী ভাবী করবে না। আর বলার মতো কিছু নেই মানে? তুমি জিজ্ঞেস করেছো বাবার বারণ সত্ত্বেও সে কেন গিয়েছিলো বোনের সাথে দেখা করতে?

কফি মগে চুমুক দিতে দিতে নির্ঝর বলে,
-না করি নি।

-ওয়েট ওয়েট! তাহলে কি করেছো এতক্ষণ?

-কিছু না।

-সত্যি বলতে আমি না তোমাকে বুঝতে পারি, না তোমার বউকে৷ আরে তাদের বাড়ির এত বড় একটা কেচ্ছা জানার পরও বাবা তাকে ফেরত না পাঠিয়ে মেনে নিয়েছে। তোমার বউ উনার এই সামান্য কথাটা রাখতে পারলো না?

-প্লিজ আর বলো না। আমি আর নিতে পারছি না৷ মাথা গরম হয়ে গেলে ওকে আবার মারবো।

হৃদিতা মার খেয়েছে কথাটা শুনে মনের মধ্যে একটা পুলক আসে মুমুর। কিন্তু সেটাকে চাপিয়ে সে মিছে নাটক করে বলে,
-Are you serious? তুমি হৃদিতাকে মেরেছো।
আমি তোমাকে ব্যাপারটা বউ পেটানোর জন্য বলি নি। নাহ আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে কিছু বলা।

-আরে না তোমার কোন দোষ নেই। তুমি বাবার বাড়ি যাবে বলে বের হয়েছিলে তখন তোমার চোখে পড়লো হৃদিতা তার বোনের সাথে বসে কফি খাচ্ছে। আমি ঘটনাটা জানি কি না সেটা জানার জন্য আমাকে ফোন করলে। তুমিতো আর জানতে না আমি এমন রিএক্ট করবো। ভুলটা আমার, বুঝতে পারছি কিন্তু মাথা ঠিক ছিলো না। বাবা এতো বার নিষেধ করা সত্ত্বেও ঐ মহিলার সাথে সে দেখা করলো। আর তুমি ভেবো না
বেশি মারি নি।

-যতই হোক তার গায়ে হাত তোলা উচিত হয় নি। তার উপর তোমার নতুন বিয়ে। তোমার যদি ওর উপর কোন কমপ্লেইন থাক তবে ওর মা-বাবাকে ডেকে কথা বলো। তাছাড়া তোমার বউ অনেক সরল মেয়ে । আমি সিওর বেচারি বোনের কান্না শুনে গলে গেছে।

হৃদিতাকে মারাটা ন্যায় না অন্যায় সেটা বিচার না করে; তার মা-বাবাকে জানাতে হবে কথাটা নির্ঝরের মাথায় ঘুরতে লাগলো।

তাই সে অনতিবিলম্বে শ্বশুর বাড়িতে ফোন করে শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে তলব করলো।


হৃদিতার বাবার বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি ঢাকার দু’প্রান্তে। তাই বিকেলেই হৃদিতার মা-বাবা মেয়ের বাড়ি চলে আসে।
হৃদিতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মা-বাবা আসছে শুনে অনেক কষ্টে বরফ ঘষে গাল থেকে থাপ্পড়ের দাগ তুলেছে।

হৃদিতার তার বড় বোনের সাথে দেখা করতে গেছে তা শুনে তার মা-বাবা মাথা নিচু করে রইলো।
সরোয়ার আহমেদ কথা না পেঁচিয়ে বলে,
-বেয়াই বাড়ির কেলেঙ্কারি গোপন রেখে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তাও আপনার মেয়েকে মেনে নিয়েছি। আপনার বড় মেয়ে আমাদের আত্মীয় এ কথা জানতে পারলে কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না। আমি বার বার আপনার মেয়েকে না করার পরও সে আজ এই ঐ খারাপ চরিত্রের মেয়ের সাথে দেখা করতে গেলো। এভাবে তো চলে না।

কোন মা-বাবার সামনে যখন তার মেয়ের চরিত্রের দিকে কেউ আঙুল তোলে সেই মা-বাবার কতটা কষ্ট হয় তা শুধু তারাই বলতে পারে।
কিন্তু এসব শুনে শুনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে মার্জিয়া আক্তার আর শফিকুল ইসলাম। গত কয়েক মাস যাবত বড় মেয়ের চরিত্র নিয়ে এত কথা শুনেছে যে এখন আর কথা গায়ে লাগে না।

শফিকুল ইসলাম হাতজোড় করে বলে,
-বেয়াই আমি কোন মুখে আপনার কাছে মাফ চাইবো জানি না। কথা গোপন করে বিয়ে দিয়ে আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন হৃদিতা ভালো মেয়ে আমার মনে হয় আদৃতা কোনভাবে ফুসলে ওর সাথে দেখা করেছে।

-বেয়াই তাকে কেউ ফুসলাবে হৃদিতা তো আর বাচ্চা না। তার বিয়ে হয়ে গেছে। আপনি আপনার বড় মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখলে রাখুন, আমি কিচ্ছু বলবো ন। কিন্তু আমার বাড়ির বউ যেন আর কোনদিন ঐ মেয়ের সাথে দেখা না করে। নিজের দুই মেয়েকেই ভাল করে বুঝিয়ে দিন।

-জ্বি।


শফিকুল ইসলাম মেয়েকে বোঝাচ্ছে।
মার্জিয়ার পাশে চুপচাপ তার হাত ধরে হৃদিতা ঘরে বসে আছে হৃদিতা।

-তোমরা দুই বোন মিলে আমাকে মেরে ফেলো। বুড়ো বয়সে এসব দেখতে হচ্ছে। তোমার বোন পুলিশ কেস করে দুনিয়ার মানুষকে নিজের কুকর্মের কথা বলে ছড়াচ্ছে। এতসবের পর কোথায় নিজের স্বামীর হাত-পা ধরে পড়ে থাকবে, না সে এখন লড়াই করবে। তাই আমার বাড়িতে এসে উঠেছে। নিজের মেয়ে তাই তাড়িয়েও দিতে পারি না। আচ্ছা তুমি এতো ভালো শ্বশুর বাড়ি পেয়ে যেচে ঝামেলা ডেকে আনছো। কি দরকার ছিলো আদৃতার সাথে দেখা করার?

-আব্বু আপু অনেক দিন ফোন দিচ্ছিলো কিছু বলবে বলে। তাই আজ..

মার্জিয়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-কি বলবে তোমার বোন তার কোন কিছু বলার মুখ আছে?

-আম্মু আপু বলছিলো পুলিশ ঐ ছেলেটাকে খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলবে।

শফিকুল ইসলাম রেগে যায়।
-তাতে কি হবে? আমাদের সম্মান ফেরত আসবে? শেন তোমার বোন নিজের সম্মান নিজে খুয়িয়েছে।
এখন ঘরে বসে আমার মান-ইজ্জত নষ্ট করছে।
তুমি যাতে সেই সুযোগ না পাও তাই তোমার বিয়ে দিয়েছি। তাই বলে দিচ্ছি তুমি যদি ভেবে থাকো শ্বশুর বাড়ি এসে এসব ঝামেলা করে বাবার বাড়ি ফেরত যাবে আমি সেটা হতে দিবো না। যেকোন মূল্য তোমার এ বাড়িতে থাকতে হবে। আর যেন কোন কমপ্লেইন না পাই। চলো মার্জিয়া।

-তুমি যাও, বেয়াইয়ের কাছ থেকে বিদায় নাও। আমি আসছি।

মার্জিয়া নিজের মেয়ের গালে হাত ধরে বলে,
-নির্ঝর তোমাকে মেরেছে?

মায়ের কাছে সন্তানের ব্যাথ্যা গোপন থাকে না।
হৃদিতা কোন কথা না বলে মা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
মার্জিয়া মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
-এসব ছোটখাটো ব্যাপার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হয়েই থাকে। এসব মানিয়ে চলতে হয়। শোন স্বামীর সম্মান রক্ষা তোমাকেই করতে হবে তাই চার দেয়ালের ঘটনা বাইরে কাউকে বলো না। তাছাড়া অন্যায়টাও তো তোমারই৷ এরকম ভুল আর করবে না। শ্বশুর বাড়ির সবার মন যুগিয়ে চলবে। আর ধৈর্য্য ধরো। শোন নিয়মিত নামায পড়বে তাহলেই সব ঠিক থাকবে।



হৃদিতার মা-বাবা চলে গেলে আবার সব স্বভাবিক গতিতে চলতে থাকে। এমনকি রাতে নির্ঝর আর হৃদিতার মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাও।

সব স্বাভাবিকের মধ্যে এটাও স্বাভাবিক যে নির্ঝর হৃদিতার কাছে মাফ চায় নি। রাতে হৃদিতার ঘুমন্ত মুখটা দেখে নির্ঝরের একবার মনে হয় হৃদিতাকে সরি বলা উচিত কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে পড়ে হৃদিতা অন্যায় করেছে। তাই সে শাসন করেছে ভুলতো কিছু করে নি। তাছাড়া ভালবেসে একটা ব্যাথার ওষুধও খাইয়ে দিয়েছে। আর কি করবে?


নিরবের চেহারার দিকে তাকিয়ে একটা বিতৃষ্ণা কাজ করছে মুমুর মনে।
কথাবার্তা, চলা-ফেরা, পোশাক-আশাক এসবে নিরব নির্ঝরের নখের যোগ্যও না। তাছাড়া বয়সের পার্থক্যটাও মুমুর কাছে বেশি লাগে।
এই চার বছরে সে অনেক চেষ্টা করছে নিরবকে ভালবাসার। কিন্তু একই বাড়িতে নির্ঝরকে দেখে সেটা পেরে উঠে নি। তার আজও মনে হয় ভাগ্য সহায় হলে সে নির্ঝরের স্ত্রী হতো।

মুমুর বাবা মিজানুল হক আর সরোয়ার ছোটবেলার বন্ধু ঢাকাতেই। কাছাকাছি নিবাস তাদের । তাই মুমু আর নির্ঝর ছোট থেকেই একে অপরকে চেনে।
ভালবাসা কি সেই বোঝ হবার পর থেকে মুমু নির্ঝরকে পছন্দ করলেও নির্ঝরকে কখনো সেটা বলতে পারে নি।
মুমু তখন ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে নির্ঝর। অনেক পরিশ্রম করে মুমু সেখানে নির্ঝরের ডিপার্টমেন্টে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পায়। ধীরে ধীরে সে নির্ঝরের ঘনিষ্ট হতে থাকে। সব মুমুর পরিকল্পনা মতো হচ্ছিলো। মুমু সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছিলো নির্ঝরকে প্রপোজ করার।
কিন্তু মুমুর সব আশা ভেঙে যায় এক বৃহস্পতিবারে যেদিন নিরব আর মুমুর বিয়ে হয়।
সকালে তার বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে সবাই ভয় পেয়ে যায়। মুমুর বাবা নিজের অসুস্থতার দোহাই দিয়ে মেয়েকে বিয়েতে রাজি করায়। আর ভাগ্যের পরিহাসে নির্ঝর মুমুর দেবর হয়ে যায়।

মুমু ভেবেছিলো এটা ভাগ্যের পরিহাস কিন্তু বিয়ের দিন রাতেই জানতে পারে সবটা তার বাবা আর শ্বশুরের প্ল্যান। নিজেদের বন্ধুত্বকে আত্মীয়তায় পরিণত করতে অসুস্থতার অভিনয় করে মেয়ের বিয়েটা দেয় মিজানুল হক। আর নিরবের কোন পছন্দ ছিলো না তাই সে বিয়েতে অমত করে নি। পড়ালেখার দোহাই দিয়ে মুমু যাতে বিয়েতে না করতে না পারে তাই অসুস্থতার নাটক।

আজও পু্রনো দিনগুলোতে মুমুর চোখে ভাসে। প্রায়ই রাত জেগে নিরবের চেহারা দেখে সে এগুলোই ভাবে। এমন না তার স্বামী দেখতে খারাপ কিন্তু সে তো আর নির্ঝর না।

হঠাৎ করেই মুমুর চোখ জ্বলে উঠে বিছানার চাদরে শক্ত মুঠ করে মনে মনে বলে,
-আমার জীবনটা তোমরা শেষ করে দিয়েছো। আমি তোমাদের ভালো থাকতে দেবো না।

-চলবে?

বিঃদ্রঃ আর এটা কেউ বলবেন না মেয়েদের উপর নির্যাতন বন্ধ হয়ে গেছে। নির্যাতন সহ্য করে শ্বশুর বাড়ির মাটি কামড়ে অনেক মেয়েরা এখনও পড়ে আছে।
এমন অনেক মহিলাও আছে যে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও অন্যের সংসার ভাঙতে চায়৷