বেড়ী পর্ব-০৩

0
2180

#বেড়ী পর্বঃ৩
#লেখায়ঃপ্রজাপতি(Nosrat Monisha)

বদনাম এমন একটা শব্দ যা সত্যি না মিথ্যা তার ধার ধারে না। কেউ যখন বদনাম হয় মানুষ সেই সংবাদ গোগ্রাসে গিলে। খবরটা যাচাইয়েরও প্রয়োজন মনে করে না। আর ঘটনাটা যদি কোন মেয়ের সাথে হয় তাহলেতো বাতাসের আগে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে।
আমরা সাধারণ জনগণও বড় অদ্ভুত কারও নামে কোন কুৎসা বের হলে মিনিটে তা ভাইরাল করে দেই। সেই ব্যক্তি, তার পরিবার এমনকি তার জন্ম পরিচয় তোলে কথা বলি। কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়ের কথা এই যে, সেই ছেলে বা মেয়ে যখন নির্দোষ প্রমাণ হয় তখন এই আমরাই সেই গল্পটা এড়িয়ে যাই বা পড়তে ততটা আনন্দ পাই না। তাই ঐ ব্যক্তির বদনাম এত সহজে ঘুচে যায় না, যত সহজে সে বদনাম রটে যায়।
কেউ একবারও এটা ভাবে না ঐ ছেলে বা মেয়েটা যদি অন্যায়টা না করে থাকে তখন?
আসলে সেই চিন্তা কারও মাথায়ই আসে না যে খবরটা ভুল কিংবা কেউ শত্রুতা করে ছড়াতে পারে।
এমন মিথ্যা অপবাদ যখন কারও উপর দেওয়া হয় বিশেষত কোন মেয়ের উপর তখন সেই মেয়ে নিজেকে দঃখ-কষ্ট আর অপমানের বেড়ীতে আবদ্ধ করে ফেলে কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়৷ কিন্তু আদৃতা তেমন কিছু করে নি। সে লড়াই করতে চেয়েছে। আফসোস হলো এ লড়াইয়ে সে কাউকে পাশে পায় নি, না নিজের স্বামী, না মা-বাবা।

সকাল সকাল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নিজের বড় মেয়ের উপর রাগ দেখাচ্ছে শফিকুল ইসলাম।
-রাতে যখন এলাম তুই ঘুমিয়ে ছিলি। এখন স্পষ্ট করে বল তুই চাইছিসটা কি?
বারণ করা সত্ত্বেও কি মনে করে তুই হৃদিতার সাথে যোগাযোগ করেছিস?
বাবার এমন প্রশ্নে বেশ অবাক হয় আদৃতা।

-আব্বু, এখানে মনে করার কি আছে? বিয়ের পর মাত্র একবার হৃদিতাকে দেখেছি খুব দেখতে মন চাইছিলো তাই দেখা করেছি।

-নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখো। তোমার এই মনমানির জন্য আজ হৃদিতার সংসার ভাঙতে বসেছিলো। তোমার জন্য ঘরে বাইরে মুখ দেখাতে পারি না। কি চাও হৃদিতাও তোমার মতো স্বামী-সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ি এসে আমার উপর বোঝা হয়ে বসে থাকুক?

-বাবা আমি ইচ্ছে করে স্বামী-সংসার ছেড়ে আসি নি। ঐ বাড়ির মানুষের কটুকথা আর স্বামীর অবিশ্বাসের জন্য ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।

-তো তুমি কি ভেবেছো? এত বড় একটা খবরের পর তারা তোমায় মাথায় তুলে নাচবে? শোন এসব বলে লাভ নেই দোষ তোমার। একটা কথা মনে রেখো আমার বাড়িতে আছো তাই আমার কথা মেনে চলবে।

-আব্বু আমি ভেবেছিলাম এটা আমারও বাড়ি। তাই নিজের অসময়ে চলে এসেছি। কিন্তু তোমার যদি আমাকে বোঝা মনে হয় তাহলে বলো আমি চলে যাবো।

-তোমার এই বেশি বুঝার জন্য আজ আমাদের সবার এই দুর্দশা। আর খুব বলছো চলে যাবে আমিও শুনি কোথায় যাবে।

-আব্বু আমি চাকরি করি কোথাও না কোথাও একটা ঘর ভাড়া পেয়ে যাবো।

-আচ্ছা বাসা ভাড়া নিবে?যে দুর্নাম ছড়িয়েছে কোন ভদ্রলোক তোমাকে বাসা ভাড়া দিবে না। আরে এটা আমাদের নিজেদের ফ্ল্যাট না হলে কবেই এলাকা ছেড়ে দিতে হতো।
শোন আদৃতা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি হৃদিতার থেকে দূরে থাকবে কোন প্রকার যোগাযোগ করবে না। যদি করো তবে আমি কি করবো নিজেও জানি না। অনেক জ্বালিয়েছো এবার একটু শান্তি দাও।

আদৃতা কিছু বললো না। চুপচাপ মাথা নিচু করে ঘরে চলে যায়।

মার্জিয়া মেয়ের চলে যাওয়া দেখে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে,
-এভাবে না বলে একটু নরম করে কথা বললেও পারতে।

-যেভাবেই বলি অন্তত ওর সাথে কথাতো বলি। তোমার মতো তো না যে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছি। তাছাড়া ভালো করে বললে সে শুনতো না।
বলে শফিকুল ইসলাম গটগট করে ঘরে চলে গেলো।


সকাল থেকে শ্বাশুড়ি হৃদিতাকে কোন কাজে হাত লাগাতে দিচ্ছে না। উনি রাগ করেছে।
হৃদিতা অনেক চেষ্টা করছ,
-মা আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দিন আর এমন হবে না।

-না বউমা ভুল আমার হয়েছে এতকিছু জেনে তোমাকে বিশ্বাস করা। আরে যার বোন এমন সে ভালো কি করে হবে? যাও তো আমাকে আর বিরক্ত করো না।

হৃদিতা চলে যায় না চুপচাপ এককোনায় দাঁড়িয়ে থাকে। আর পুরোনো কথা ভাবতে থাকে,
কিছু মাস আগেও সব ঠিক ছিলো৷ আদৃতা নতুন চাকরি শুরু করে। চারদিকে আত্মীয়রা বলতো, মেয়ে হলে আদৃতার মতো হওয়া চাই। হৃদিতাকে সবাই বোনের মতো হওয়ার পরামর্শ দিতো। একটা মেয়ে সংসার আর চাকরি সমানতালে সামলাচ্ছে কত গুণ।
কিন্তু সব কিছু বদলে যায় একটা ভিডিও ক্লিপে। আদৃতা হাজার বার বলেছে ভিডিওটা তার না কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে নি। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আদৃতা পুলিশের সাহায্য এতে হিতে বিপরীত হয়। আগে যারা জানতো না তারাও জেনে যায়। আদৃতার এত বদনাম হয় যে স্বামী সংসার ছাড়তে হয়। তার মা-বাবা ভয় পায় ছোট মেয়ের বিয়ে হবে না। তাই একপ্রকার তাড়াহুড়ো করে আর আদৃতার কথা গোপন রেখে হৃদিতার বিয়ে হয়।
কিন্তু এসব কথা চাপা থাকে না তাই বিয়ের একসপ্তাহের মধ্যে নির্ঝরের পরিবার সব জেনে যায়। যেহেতু আদৃতা তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয় তাই হৃদিতার সেখানে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

হৃদিতার ধ্যান ভেঙে যায় শ্বাশুড়ির ধাক্কায়
-মন কোথায় তোমার? নির্ঝর কখন থেকে চেঁচিয়ে ডাকছে তোমাকে।

ডাক দেওয়া মাত্রই হৃদিতাকে সামনে চাই নির্ঝরের নাহলে তুলকালাম ঘটে যায় বাড়িতে। একরকম দৌড়ে তাই ঘরের দিকে যায় হৃদিতা।
-চলবে?