#বোনু
#সিজন_০২
#Part_14
#Writer_NOVA
মিহু অনেকখন ধরে টেবিলের নিচে বসে আছে। টেবিলের নিচ থেকে ও দুটো ছেলেকে চলে যেতে দেখলো।ও ভাবলো রাজ চলে গেছে। কিন্তু নিবরাজ এখনো ওদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।রাজকে দেখে বাকি সবার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। ওরা ভয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মিহু টেবিলের নিচ থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বের হলো।
মিহুঃ যাক বাবা বাঁচা গেল। নেংটি ইঁদুর ও নিবরাজ চিলি মসলা বিদায় হয়েছে। এবার শান্তিতে খাবার গিলা যাবে।
তখনি আভা মিহুকে কনুই দিয়ে খোঁচা মারলো।মিহু এখনো ওর সামনে থাকা রাজকে দেখেনি।
মিহুঃ ঐ ছেমরি খোঁচা মারস কে?
আভাঃ সামনে তাকা।(নিচুস্বরে)
মিহুঃ সামনে কি দেখমু?
আফরাঃ একবার তাকা তাইলে বুঝবি।
মিহু সামনে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।নিবরাজ,আইজান ও তার দল ওদের টেবিলের সামনে দুই হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে কিছু সময় পর তারা মাঠে কাবাডি খেলতে নামবে।
নিবরাজঃ কি বললে তুমি আমাকে?
মিহুঃ আআআআমমমি কককিছছছছু বববববললি নি। (আমতা আমতা করে)
নিবরাজঃ আমি নিবরাজ গুঁড়া মসলা?
মিহুঃ নিবরাজ গুঁড়া মসলা নাতো নিবরাজ চিলি মসলা 😁।
নিবরাজঃ কি বললে আবার বলো?
(সামনে এগুতে এগুতে)
মিহুঃ কই কিছু বলেনি তো?(ভয়ে)
তারপর নিবরাজকে ক্রশ করে পালাতে গেলেই নিবরাজ হাত ধরে ফেললো।
নিবরাজঃ কোথায় যাচ্ছো?
মিহুঃ বাড়িতে🥺।
নিবরাজঃ এখানে বসো।
মিহুঃ না আপনি মারবেন থুরি বকবেন। আমি
বসবো না।
মিহুর কান্ড দেখে রাজের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসলে চলবে না।মুখ টিপে হাসি আটকিয়ে বললো।
নিবরাজঃ আমায় রাগিও না, বসো এখানে।
মিহুঃ বসছি তো। হাত ছাড়েন।
নিবরাজঃ উহু,তুমি পালাবে।
মিহু চুপচাপ চেয়ারে বসলো।তারপর রাজের হাতে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলো। রাজ হাত ছাড়তেই উল্টো দিকে দৌড়। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা এমন করলো কেন?
মিহুঃ ধূর এই বেডার লিগা খাইতেও পারলাম না।
রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে উঁকি মারলো মিহু।তারপর চিৎকার করে সায়েমকে বললো।
মিহুঃ ঐ সায়েইমম্মা আমার খাবারগুলো পার্সেল
করে পাঠিয়ে দিস।
সায়েমঃ পারুম না।এই জায়গায় বইয়া খাইয়া যা।
মিহুঃ কথা কম কইস।নাইলে হসপিটালে ভর্তি করমু।রাতে আমার খাওন যেনো পাই।
নিবরাজ মিহুর দিকে তাকাতেই মিহু দৌড়ে পালালো।
মিহুঃ বাপ—রে🥶!! আমার খবর আছে। আমি আর কি করমু। কামড় দেওয়া ছাড়া কোন উপায়
আছিলো না।
মিহু চলে গেলে রাজ মুচকি হাসলো। সত্যি পাগলী একটা।তা না হলে এত বড় একটা মেয়ে কাউকে কামড় দেয়।রাজ যত চায় মিহুর কাছ থেকে দূরে যেতে ততই যেনো আরো কাছে চলে আসে।The tim of rainbow -এর বাকি সবার মুখ শুকিয়ে গেছে ভয়ে।মিহুতো পালালো এবার ওদের কি হবে? সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজ তার বন্ধুদের নিয়ে চলে গেল।
রুশানঃ আমার না NK আর হিরকে নিয়া খোটকা লাগতাছে।
আভাঃ আমারও।
সায়েমঃ যেই ছেলে কারো সাথে কথা বলে না, কোন মেয়ের দিকে তাকায় না।সে হিরের সাথে নিজ থেকে কথা বলতে আসে।
আফরাঃ আমার মনে হয় রাজ ভাইয়া হিরকে
পছন্দ করে।
কিরনঃ হইতে পারে।আমার কাছে তাই মনে হয়।
রিমঃ যেই ছেলের গায়ে কেউ ফুলের টোকা দিতে পারে না, তারে হির কামড় দিলো।আর সে কিছু বললো না। এমনকি রাগলোও না।
আভাঃ রাগ তো দূরে থাক।রাজ ভাইতো মুচকি হাসতেছিলো।
রুশানঃ আমি সিউর NK হিরকে লাভ করে।
আফরাঃ তোর এতো সিউর হইতে হইবো না। যদি তোর সিউর ভুল হয় তাহলে NK তোর জীবনের গ্যারান্টিই আনসিউর করে দিবো।
রুশানঃ 😤😤
☘️☘️☘️
Scotland…….
স্কটল্যান্ডের সেই বিশাল বড় বাড়িতে ভাঙচুর করছে ধূসর চোখের ছেলেটি।পুরো বাড়ির জিনিস তছনছ। এখনও ঝড় চলছে।ওকে থামানো তো দূরে থাক ওর সামনে যেতেও ভয় পাচ্ছে সবাই। সব সার্ভেন্টরা ভয়ো দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কে জানে?কখন আবার তাদের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়।বাড়ির সামনের গেইটে একটা লাল রঙের গাড়ি থামলো।গাড়ি থেকে নেমে ছুটে এসে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো আরেকটি ছেলে।
নাম অন্তু চৌধুরী। বয়স ২৩ বছর।অন্তর চৌধুরীর ছোট ছেলে।আবির চৌধুরীর ভাতিজা। অন্তর ও আবির চৌধুরী দুই ভাই।অন্তর চৌধুরীর দুই ছেলে। বড় ছেলে ধূসর চোখের মালিক। আর ছোট অন্তু।
অন্তুঃ ভাই করছিস কি?পাগল হয়ে গেছিস।
—-হ্যাঁ,আমি পাগল হয়ে গেছি।
অন্তুঃ শান্ত হো ভাই।
—- কি করে শান্ত হবো?বল,কি করে শান্ত হবো? আজ ১০ দিন হলো আমাদের চাচাতো ভাই রিকি মারা গেছে। অথচ কেউ কিছু বলতে পারে না। কে ওকে মারলো,কে তুলে নিয়ে গেল? কেউ বলতে পারছে না। এতো ঠান্ডা মাথায় কে ওকে খুন করলো? কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।কিভাবে সম্ভব?
অন্তুঃ রিকিকে তোর দেশে পাঠানো উচিত হয়নি।ওকে যদি দেশে না পাঠাতি তাহলে আজ এই ঘটনা
ঘটতো না।
—- যারা রিকিকে মেরেছে তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না। ওরা জানে না কার সাথে লরতে এসেছে।ওদেরসব কয়টাকে ফ্যামেলী সহ উপরে শিফট করে দিবো।
অন্তুঃ ভাই,শুনেছি রিকি গিয়ে মিহুর সাথে ঝামেলা করেছে। রিকির মৃত্যুর সাথে মিহুর কোন হাত নেই তো।আমার ওকে সন্দেহ হচ্ছে।
—- নাহ, হির এই কাজ করেনি। হির মার্ডারের মধ্যে নেই। কাজটা অন্য কেউ করেছে। আর খুব ঠান্ডা মাথায়।খুন খুব চালাক।যার কারণে কোন চিহ্ন রাখেনি।
অন্তুর মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইল কানে দিয়ে তার ভাইকে বললো।
অন্তুঃ ভাই, চাচ্চু কল করেছে। তোর সাথে কথা বলবে।
অন্তু তার ভাইকে মোবাইলটা দিলো।
আবিরঃ হ্যালো।
— হ্যাঁ, চাচ্চু বলো।কিছু পেলে?রিকিকে কারা মেরেছে? একবার নামটা বলো। তার অস্তিত্ব আমি ধূলোর সাথে মিশিয়ে দিবো।
আবিরঃ কোন কিছু পাইনি।ওকে দেশে পাঠিয়ে সবচেয়ে বড় ভুল করেছিস তুই? যে বা যারা মেরেছে তারা পূর্ব প্ল্যান করেই মেরেছে আমার ছেলেটাকে।আমার মনে হচ্ছে আমাদের পুরাতন শত্রু।
— তুমি আমাকে কলেজের ঘটনাটা খুলে বলো তো।
আবির চৌধুরী সেদিন কলেজের ঘটনা খুলে বললো।
—এই ঐশিকটা কে?
আবিরঃ মেহরুনের মামাতো ভাই। এবং পুলিশের একজন বড় অফিসার।
—- তুমি আমাকে এই ছেলের সব ডিটেইলস দিবে।আর ওকে নজরে রাখবে।হঠাৎ করে এই ছেলে কোথা থেকে উদয় হলো।
অাবিরঃ কিন্তু ঘটনার সময় ঐশিক খুলনায় ছিলো। তাছাড়া ওর কোন কিছুই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে না। তোর ড্যাড ও আমি অনেক খোঁজ লাগিয়েছি।কিন্তু কোথাও কোন খোটকা লাগেনি।
—- তুমি বেশি কথা বলো না। আমি যা বলেছি তাই করো।(রেগে)
আবিরঃ ঠিক আছে আমি সব পাঠিয়ে দিবো।
— ভালো থেকো। আর ড্যাডের খেয়াল রেখো।
কলটা কেটে দিলো ধূসর চোখের ছেলেটি। চোখ মুখে তার একরাশ চিন্তা।
অন্তুঃ ভাই, কোন খবর পেলি?
— পাইনি, তবে খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো।তুই তৈরি হয়ে নে।আগামীকাল সকালে তুই বিডি তে যাবি।
অন্তুঃ কেন?
— রিকির খুনীদের ধরতে হবে।তবে সাবধানে থাকবি।আমাদের শত্রু খুব ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড়। সেটা মনে রাখিস।
অন্তুঃ আমার ভয় করছে।আমি বাংলাদেশে গেলে যদি আমারও রিকির মতো অবস্থা হয়।
— কিছু হবে না তোর।আমি কিছু হতে দিবো না। আমি টিকেট কেটে ফেলেছি।তুই সবকিছু গুছিয়ে নে।খানদের কলেজে আগে যাবি।
অন্তুঃ কেন?
— ঐ কলেজ থেকে হয়তোবা কোন ক্লু পেয়ে গেলি।বারবার বলে দিচ্ছি বি কেয়ারফুল।তুই চিন্তা করিস না তোর বড় ভাই তোর কিছু হতে দিবে না।
অন্তুঃ ঠিক আছে ভাই। আমি কালই যাচ্ছি বিডিতে।
ধূসর চোখের ছেলেটি জিহানকে কল দিলো।
—- হ্যালো জিহান।
জিহানঃ ইয়েস বস বলুন।
— আগামীকাল আমার ছোট ভাই দেশে আসছে।তুমি ওকে নিতে এয়ারপোর্ট চলে এসো।আমার একমাত্র ভাইয়ের যদি কিছু হয় তাহলে তোমরা কবরে চলে যাবে।কথাটা মাথায় রাখো।(রেগে)
জিহানঃ কোন চিন্তা করবেন না বস।আপনার ভাইয়ের গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দিবল না।
— ওকে বাই।
জিহান মোবাইল থেকে কলটা কেটে একটা বাঁকা হাসি দিলো।
জিহানঃ আপনি কোন চিন্তা করবেন না মিস্টার……. চৌধুরী। আমরা আপনার ভাইয়ের গায়ে সত্যি একটা আঁচড়ও লাগতে দিবো না।এতো আদর যত্ন করবো যে আপনার ভাই জীবনেও এই দেশ থেকে ফিরবে না।
☘️☘️☘️
এক দিন পর…..
কলেজ….
খান কলেজে আজ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন কলেজ থেকে ছেলেরা তাতে অংশগ্রহণ করতে এসেছে। নিবরাজ ক্রিকেট খেলা অনেক পছন্দ করে। তাই প্রতিবছর নবীন বরণের পরে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করে।মিহু কলেজে ঢুকেই অবাক।চারিদিকে মানুষে গমগম করছে। কেমন একটা উৎসব উৎসব ভাব।মাঠটাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। মিহু ওর টিমের কাছে গেলো।
মিহুঃ ঘটনা কি রে? চারিদিকে এত মানুষ কেন?মাঠটাকে এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কেন?কার বিয়ে আজকে?নেংটি ইদুর নাকি নিবরাজ চিলি মসলার।
সায়েমঃ ধূর,ছেমরি। কি কস এসব?
মিহুঃ তাহলে এতকিছু কে?
আফরাঃ কয়েক দিন পর কলেজে এসেছিস।জানবি কি করে?
আভাঃ আজকে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আছে।
মিহুঃ ও এই খবর?
রিমঃ জ্বী এই খবর।তুই তো কত কিছু ভেবে ফেললি।
রুশানঃ কে কে খেলবো রে?
আফরাঃ তুই, আমি,আভা,হির,সায়েম,রিম আর কিরন।
রুশানঃ মজা করোস।
আফরাঃ ঐ ছেমড়া তোর সাথে মজা করুম কে?তুই কি আমার বেয়াই লাগোস।
রুশানঃ 😡
সায়েমঃ শুনছি NK নাকি খেলবো।তুই খেলবি না।
মিহুঃ রাজ ভাইয়া খেলবো সেটা আমার সাথে কিসের জোড়া?
রিমঃ তোর সাথে কিসের জোড়া সেটা তুই জানিস না।
মিহুঃ সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
সায়েমঃ মাম্মা, ভাবে লাভ নাই।টাকায় সব।তাই ভাব নিও না।
কিরনঃ ছোট বেলায় খাইছি সুজি একটু হলেও কিছু বুঝি।
মিহুঃ কি বোঝাতে চাইছিস তোরা?
আভাঃ NK তোমায় পছন্দ করে হির বাবু।
মিহুঃ করলে করতে পারে।সেটা আমাকে না জিজ্ঞেস করে ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।যত্তসব ফাউল পেচাল।এর জন্য আমার সাথে ঘুরিয়ে-প্যাচিয়ে কথা বলছিলি। আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলি তোরা।যা তোদের সাথে আর থাকবোই না।
মিহু কপট রাগ দেখানোর ভান করে উঠে চলে গেল। নিবরাজ ও তার নিজের ব্যাপারটা মিহু ওর বন্ধুদের এখন জানাতে চাচ্ছে না।তাই মিথ্যে রাগের অভিনয় ছাড়া অন্য কোন উপায় তার ছিলো না।
রুশানঃ হির, শোন। যাইস না কোথাও।
রিমঃ কোথায় যাচ্ছিস?
আফরাঃ যাহ বাবা চলে গেল।
সায়েমঃ সবসময় বেশি বাড়াবাড়ি না করলে হয় না তোদের?
কিরনঃ আমরা বাড়াবাড়ি করি আর তুমি?তুমি তো দুধের ধোয়া তুলসী পাতা।
আভাঃ এখানে পেঁচাল না পেরে, দেখ ও কোথায় গেলো?
মিহু হাঁটতে হাঁটতে গেইটের সামনে চলে এসেছে। তখনি গেইট দিয়ে একটা কালো কালার গাড়ি ঢুকলো।গাড়িটা ওর সামনে এসে থামলো।গাড়ি থেকে একটা ছেলে বের হলো।
#চলবে
#বোনু
#সিজন_০২
#Part_15
#Writer_NOVA
গাড়িটা সোজা মিহুর সামনে থামলো।গাড়ি থেকে একটা ছেলে বের হলো।ছেলেটা দেখতে খুব ফর্সা।কালো জিন্স,শার্ট, ও কালো সু।চুলের রংটা হালকা লালচে।চোখে কালো সানগ্লাস। ফর্সা শরীরে কালো রংটা বেশ মানিয়েছে।কিছু মেয়েরা বেহায়ার মতো হা করে তাকিয়ে আছে। কিছু মেয়েদের একটাই দোষ কোন হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে হা করে গিলবে।গাড়ি থেকে নেমে মিহুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।
অন্তুঃ হাই,আমি অন্তু চৌধুরী।
মিহুঃ তো আমি কি করবো?ঢোল বাজিয়ে সবাইকে বলবো আপনি অন্তু চৌধুরী। আমি কি আপনাকে আপনার বায়োডাটা দিতে বলেছি।(বিরক্তির সুরে)
অন্তুঃ কেন পরিচয় হতে পারি না?
মিহুঃ নাহ।আমি কোন জব অফার নিয়ে বসিনি যে আপনার আমার সাথে পরিচয় হতে হবে।
অন্তুঃ অন্ততপক্ষে হাতটা তো মেলাও।
মিহুঃ সরি,আমি যার তার হাত ধরি না।আর যার হাত ধরি তাকে জীবনেও ছাড়ি না।কোথা থেকে যে এসব লোক উঠে আসে।কে জানি ওয়াসরুম থেকে এসে হাত ধুয়েছে কি না।ওয়াক ছিঃ (ভাব নিয়ে)
অন্তুঃ ইন্টারেস্টিং!!!!
শেষের দুই লাইনের কথাটা বিরবির করে বলায় অন্তু শুনতে পায়নি।মিহুর অন্তুর সাথে কথা বলতে একটুও ভালো লাগছে না। ছেলেটার চাহনি মোটেও ভালো নয়।নজরটা বাজে।খুব বাজেভাবে ওর দিকে তাকাচ্ছে। মিহু ভালোমতো ওড়নাটা ঠিক করে নিলো।
মিহুঃ সামনে থেকে সরুন।
অন্তুঃ তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।খুশি খুশি লাগছে মনটা।
মিহুঃ আপনি সরলে আমিও খুশি হতাম।(বিরক্ত হয়ে)
অন্তুঃ নিশ্চয়ই।
মিহু অন্তুর সামনে থেকে চলে এলো।ওর কাছ থেকে সরে বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছারলো।
মিহুঃ যত্তসব আজাইরা লোক।খাটাশ একটা। চেহারাটা সুন্দর চরিত্র নয়।বারবার কিরকমভাবে বাজে নজরে তাকাচ্ছিলো।যদি কোন বদমাশি করতে সবার সামনে আজ ওর মাথা ফাটাতাম।
অন্তু মিহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
অন্তুঃ ভাই তো সেই একটা মেয়ে চয়েজ করেছে। এটা যদি ভাইয়ের না হতো তাহলে এতক্ষণে নিজের বেড পার্টনার বানিয়ে ফেলতাম।১ ঘন্টা নিজের হলেও চলতো।আমার আবার ১ ঘন্টার বেশি কোন মেয়েকে রুচিতে ধরে না।শুধু ভাইয়ের জিনিস বলে ছেড়ে দিলাম।ওহ নো, কি ভাবছি আমি?ভাই যদি আমার এসব কথা শুনতো তাহলে আমার ঘাড় থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে যেতো।অন্তু তুই যে কাজ করতে এসেছিস তাই কর।পৃথিবীতে তো আরো মেয়ে আছে তাই না।ঐ মেয়ে তোর না হলেও চলবে।
অন্তু গাড়ি নিয়ে আবার ব্যাক করলো।আজ কলেজে মিহুর সাথে দেখা করতে এসেছিলো।ও যাওয়ার পর অন্য একটা গাড়ির পেছন থেকে রিশিক বের হলো।
রিশিকঃ কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। এই চার বছরে একটুও বদলালি না।পাপ কাজ করতে করতে এমন হয়ে গেছে তোদের কাছে মনে হয় তোরা যা করিস তাই ঠিক।বাজে নজর দেওয়া এখনো যায়নি তোর।আবার আমাদের কলিজার টুকরো বোনুর দিকে নজর দিতে চেয়েছিস।বলতে হবে দাবার চালটা খুব ভালো ভাবেই চেলেছি।যার কারণে রাজার মন্ত্রী নিজে এসে ধরা দিলো।চার বছর ধরে অপেক্ষা করছি তোর জন্য। এবার অপেক্ষার পালা শেষ। মিস্টার অন্তু চৌধুরীর বড় ভাই, এবার তোকেও বুঝাবো প্রিয়জন হারানোর কষ্ট কাকে বলে।
রিশিক কথাটা বলে বাঁকা হাসলো।তারপর বাইক নিয়ে চলে গেল। ও কোথায় থাকে,কি করে,কিভাবে চলে কেউ বলতে পারে না। হঠাৎ করে উদয় হয় বার হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যায়।কয়েক বছর বিদেশে ছিলো।কিছু মাস হলো দেশে ফিরেছে। কিন্তু ওর খবর বাড়ির কেউ জানে না।
☘️☘️☘️
বেশ কিছু দিন পর……….
অন্তু গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিল। সারাদিন কোথায় কোথায় জানি যায়।আর রাতে বারে কিংবা মেয়ে নিয়ে পরে থাকে।রিকি ও অন্তুর প্রচুর বাজে নেশা আছে।তার মধ্যে একটা হলো মেয়ে। রিকিকে তো কেউ টপকাই দিছে।এবার এটার কি হবে আল্লাহ জানে?চরিত্রহীন একটা।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে।অন্তু মনের সুখে ড্রাইভ করছে।বক্সে গান বাজছে।রাস্তাটা খুব শুনশান ও নিরব।হঠাৎ দেখলো সামনে কেউ একজন গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বোরখা পরা একটা মেয়ে।
মেয়েটিঃ প্লিজ প্লিজ গাড়ি থামান।আমি খুব বিপদে পরেছি।
অন্তুঃ সন্ধ্যা বেলায় এই মেয়ে বিপদে পরেছে।আমার রাতটা বোধহয় ভালোই কাটবে।আমিতো মনে মনে শিকার খুঁজছিলাম।আর শিকার আমার কাছে নিজ থেকে ধরা দিলো।
মনে মনে কথাগুলো বলে শয়তানি হাসি দিলো।
মেয়েটিঃ এই যে শুনছেন।আমার গাড়িটা ডিস্টার্ব দিচ্ছে, একটু দেখবেন প্লিজ। এভাবেই রাত হয়ে আসছে।রাস্তায় বাজে লোকদের অভাব নেই। তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে পারলে বাঁচি।
অন্তুঃ চিন্তা করবেন না ম্যাম।আমি দেখছি।
মুখে টেডি স্মাইল রেখে গাড়ি থেকে বের হলো অন্তু।মেয়েটার গাড়ির সামনে গেল।মেয়েটাও পিছু পিছু এলো।অন্তু ইঞ্জিন দেখতে লাগলো।আর কিছুক্ষণ পর পর বাজেভাবে মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে। বোরখা পরা,সাথে হিজাব বাঁধা। চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। পায়ে কেডস পরা দেখে কিছুটা খোটকা লাগলো অন্তুর।বোরখার সাথে কেডস পরে নাকি।পরে খেয়াল হলো ও দেশে এসে অনেক মেয়েকে বোরখার সাথে কেডস দেখছে।তবে চোখ দুটো আর কন্ঠটা কেমন জানি মনে হলো চেনা চেনা।মেয়েটা কিরকম চেনা চেনা লাগছে।
অন্তুঃ ইঞ্জিনতো ঠিক করে দিলাম।কিন্তু ওকে তো বলা যাবে না। যে করেই হোক এই মেয়েকে আমার ফাঁদে ফেলতেই হবে। (মনে মনে)
মেয়েটিঃ কি ব্যাপার কি হয়েছে?
অন্তুঃ গাড়ি এখন ঠিক হবে না। গ্যারেজে নিতে হবে।
মেয়েটিঃ কী বলছেন আপনি?এখন আমি বাড়ি যাবো কি করে?রাত হয়ে গেলো।
অন্তুঃ আপনার যদি অমত না থাকে আমার সাথে যেতে পারেন।আপনাকে আমি বাড়ি দিয়ে আসবো।
(এমনভাবে দিয়ে আসবো জীবনে কোন দিনও রাতে একা বের হতে ভয় পাবে।)
শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে কথাগুলো বললো অন্তু।
মেয়েটিঃ কিন্তু —-
অন্তুঃ কোন কিন্তু নয় চলুন।
মেয়েটিঃ ঠিক আছে চলুন।
অন্তু আগে আগে চললো গাড়ির দিকে।গাড়ির দরজা খুলে পেছনে ঘোরার আগেই কেউ ওকে শক্ত কিছু দিয়ে জোরে বারি দিলো।অন্তু মাথা ধরে সেন্সলেস হয়ে পরে গেল।অন্তু পরে যেতেই মেয়েটি পেছন ফিরে কাউকে ডাকলো।
মেয়েটিঃ চলে এসো তোমারা।আমার কাজ শেষ। এবার তোমারা তোমাদের কাজ শুরু করো।
☘️☘️☘️
পেছন থেকে ৭-৮ টি ছেলে বের হয়ে আসলো।অন্তুকে হাত,পা,মুখ বেঁধে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে এলো এক গোডাউনে।অন্তুর যখন জ্ঞান ফিরলো নিজেকে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় পায়।মাথা ঝিমঝিম করছে।
জোরে চিৎকার করে আশেপাশে ডাকতে লাগলো।
অন্তুঃ Help,help. Please help me. Please কেউ আমাকে বাঁচাও। কে কোথায় আছো?খোলো আমায়।
অন্তু সামনের অন্ধকারে চারটা মানুষের ছায়া দেখতে পেলো।আস্তে আস্তে ওর সামনে এলো।
অন্তুঃ তোমরা কারা?আমাকে আটকে রেখেছো কেন?
তাদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠল—–
আমরা তোর খুব পরিচিত।কারণ আমরা তোর পুরাতন শত্রু।অনেক সাধনার পর খুঁজে পেলাম তোকে।
অন্তুঃ আমি কি করেছি তোমাদের? ছেড়ে দেও বলছি আমায়।কাপুরুষের মতো আড়ালে দাঁড়িয়ে কথা বলছো কেন?সাহস থাকলে সামনে এসো।
চারটা ছায়া থেকে একজন বলে উঠলো—
কাকে কাপুরষ বলছিস তুই? আমাদের কে?হা হা হা ৪ বছর ধরে স্কটল্যান্ডে পালিয়ে আছিস তুই। আর কাপুরুষ বলছিস আমাদের। হাউ ফানি ইয়াং ম্যান।তুই ভেবেছিস আমরা সব ভুলে গেছি।কিছুতেই না।
অন্তুঃ সামনে এসো।(ভয়ে ভয়ে)
চারজন এবার আলোতে এলো।ওদের মধ্যে সেই বোরখা পরা মেয়েটাও আছে। বাকি তিনজন ছেলে।ছেলে তিনজনের গায়ে কালো শার্ট,প্যান্ট ও বড় কালো ব্লেজার। মেয়েটা এখনো বোরখা পরেই আছে। মেয়েটা সামনে এসে বোরখা খুলে গলায় ওড়না প্যাচালো।
অন্তুঃ মমমমমিহহহহহু তুমি?(অবাক হয়ে)
মিহুঃ ইয়েস মিস্টার অন্তু চৌধুরী। আমি মেহরুন মির্জা।
অন্তুঃ ওরা কারা?
মিহুঃ ও ওদের তো আপনি চিনবেন না।তাই পরিচয় করে দিচ্ছি। আমার বড় ভাইয়ু ঐশিক,ছোট ভাইয়ু রিশিক,আমার ভাইয়ু মেহরাব।
অন্তুঃ আমি তোমাদের কি করেছি?
ঐশিকঃ কি করছিস তুই জানিস না?আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছিস।তোকে তো আমি—
ঐশিক গান বের করলো।মিহু এসে হাত ধরে ফেললো।
মিহুঃ না ভাইয়া,ওকে রিকির মতো কপালে সোজা শুট করলে চলবে না। ওকে তিলে তিলে শেষ করবো।যে কষ্ট ৪ টা বছর ধরে আমাদের তিলে তিলে শেষ করেছে সেই কষ্ট দিয়ে ওকে মারবো।
রিশিকঃ হ্যাঁ ভাইয়া।হির বোনু ঠিক বলেছে।
মিহুঃ ওকে গুম করে দেও ভাইয়া।
অন্তুঃ তোমরা রিকিকে মেরেছো?(ভয় ভয়ে)
ঐশিকঃ আমরা নই শুধু আমি মেরেছি। সোজা কপাল বরাবর শুট।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
অন্তুঃ আমি কি করেছি তোমাদের? রিকিই বা কি করপছিলো?কেন মারলে ওকে?
মিহুঃ ভুলে গেছিস।ওহ মাই আল্লাহ!!! আমি কি বোকা?তোর তো ভুলে যাওয়ারি কথা।কিন্তু আমরা গত চারবছর ধরে সব জমিয়ে রেখেছি।
মেহরাবঃ ভাইয়া ওকে এমন জায়গায় লুকাবি যাতে ওর ভাই আকাশ-পাতাল এক করলেও ওকে
খুঁজে না পায়।
রিশিক অন্তুকে চার বছর আগে ঘটে যাওয়া খুলে বললো। অন্তু এবার বুঝে গেছে কেন ওকে ধরে এনেছে। রিকিও কেন মারা গেছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। ঐশিক কতগুলো গার্ডকে ডাকলো।
ঐশিকঃ এটাকে নিয়ে যাও।এমন জায়গায় লুকিয়ে ফেলো যাতে কোন কাকপক্ষী টের না পায়।আর প্রতিদিন ওর ডোজ বাড়িয়ে দিবে।খেতে দিবে না। মাঝে মাঝে আমরাও আসবো আর অনেক আদর-যত্ন করে আসবো।
মিহুঃ ওয়েট ভাইয়া।আমার একটা কাজ আছে।
রিশিকঃ কি কাজ?
মিহু স্টিক হাতে নিয়ে এলোপাতাড়ি অন্তুকে মারতে লাগলো।অনেকক্ষণ মারার পর অন্তু যখন সেন্সলেস হয়ে গেলো তখন ছেড়ে দিলো।
মিহুঃ এবার নিয়ে যাও।ওকে তিলে তিলে শেষ করবে।মৃত্যুর যন্ত্রণার স্বাদ ওকে বুঝিয়ে দেবে।বিশ্বাসঘাতক, বৈঈমান। তোর জন্য ভালোবাসার প্রতি আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।
গার্ডরা অন্তুকে নিয়ে গেল।মিহু ঐশিককে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।ওর চোখের পানি যেনো বাঁধ মানছে না।মেহরাব,ঐশিক,রিশিক তিনজনের চোখে পানি। সবার চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে রয়েছে।
☘️☘️☘️
Scotland…….
অনেকক্ষণ ধরে ধূসর চোখের ছেলেটি তার ভাই অন্তুকে কলে ট্রাই করছে।কিন্তু মোবাইল বন্ধ বলছে।তখনি ওর মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসে।
“You have lost your only little brother.” ম্যাসেজটা দেখে পুরো স্তব্ধ হয়ে যায় ছেলেটি।কিন্তু সে এটা বিশ্বাস করে না।তাই জিহানকে কল করে।
—-হ্যালো জিহান।আমার ভাই কোথায়?(ভয়ে ভয়ে)
জিহানঃ কেন বস? উনি তো বাড়িতে।গত দুই দিন ধরে অন্তুর সাথে আমার কোন কথা হয় না।আমি উনার সাথে থাকতে চেয়েছি কিন্তু উনি আমাকে জোর করে বাহির করে দিয়েছে। আজ বিকেলে নাকি কোথায় যাওয়ার ছিলো।
—- ওর মোবাইল বন্ধ বলছে।
জিহানঃ হয়তো মোবাইল বন্ধ করে ঘুমোচ্ছে।
ধূসর চোখের ছেলেটি তার মোবাইলে আসা ম্যাসেজটির কথা বললো জিহানকে।
জিহানঃ তাহলে তো বস রিকির মতো কেউ আপনার ভাইকে—-
— না না কিছুতেই না।তুমি যেভাবে পারো আমার ভাইকে খুঁজে বের করো।(রেগে)
জিহানঃ ঠিক আছে বস।আমি লোক লাগাচ্ছি।আপনার ভাইকে খুঁজে বের করার জন্য।
জিহান কল কেটে দিলো। অন্যদিকে ধূসর চোখের ছেলেটি সারা বাড়ি লণ্ডভণ্ড করে ফেলেছে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ভাংচুর করছে।
জিহানঃ মিস্টার চৌধুরী। সবে তো মাত্র শুরু। আরো কতকিছু দেখবেন।(বাঁকা হেসে)
অন্তুর ভাই সারা রাত জেগে অনেক খোঁজ-খবর নিলো ভাইয়ের।কিন্তু কোথাও অন্তুর একটা খবরও পেলো না।এভাবে একের পর এক দিন যেতে লাগলো।কিন্তু অন্তুর কোন খোঁজ মিললো না।অন্তুর বাবা ও ভাই হন্যি হয়ে খুঁজছে ওকে।কিন্তু আদোও কি মিলবে অন্তুর দেখা বা কোন খবর।
#চলবে