ব্ল্যাকমেইলার চাচাতো বোন যখন বউ পর্ব-১০

0
1887

গল্প: ব্ল্যাকমেইলার চাচাতো বোন যখন বউ

লেখক: মেহেদি ইমরান
পর্ব:১০

অপাশ থেকে:আপনি আমাদের কোম্পানিতে সিলেক্ট হয়েছেন কালকে কিছু দরকারি কাগজ নিয়ে আসবেন তা মেসেজে জানানো হয়েছে

এই বলেই ফোনটা কেটে দিলো আচ্ছা আমি যদি এই কথা যেয়ে নিধিকে বলি তাহলে সে অনেক খুশি হবে।আর দেরি করলে চলবে না তাই রেডি হয়ে চলে গেলাম নিধির স্কুলের উদ্যেশে আর কি কি করবো তা ভাবতাছি।

তবে এমন কিছু দেখবো আশা করি নাই।স্কুলে যাওয়ার আগে একটা বাজার দিয়ে যেতে হয় সেখানে দেখলাম নিধি একটা ছেলের সাথে যাইতাছে এটা দেখে আমার মাথা ঠিক নাই কারন ছেলেটা কে আমি কখনো আর দেখি নাই আর নিধির আত্মীয়ও না।

তারমানে নিধি এ ছেলের সাথে কিছু চলছে।এজন্যই নিধি আমাকে ইগনোর করে ।আমি তাদের পিছু নিলাম দেখি ওরা কি করে।কিছুক্ষন পর তারা রেস্টুরেন্টে ডুকলো আর কফি অর্ডার করলো।ছেলেটি বার বার নিধির হাত ধরতাছে ।আর তো বসে থাকা যায় না। ঠাসসস করে দিলাম একটা নাক বরাবর ঘুসি।গর গর করে রক্ত পরছে।ঠাসসস ঠাসসসস কি ভাবছেন ছেলেটা আমাকে মারছে আরে না আমাকে আমার কিউট বউ টা মারছে ।

নিধি:ওই‌‌ তুই ওকে মারলি কেন

আমি:আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কথা বের হচ্ছে না।

নিধি: ওই‌ তোকে কি বলছি উত্তর দে

সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে রইছে ।

ছেলেটি: আচ্ছা নিধি এই বখাটে টা কে

নিধি:এই বখাটে টা আমার চাচাতো ভাই

নিধির কাছে চাচাতো ভাই নাম টা শুনে বুকটা কেঁপে উঠলো।এই আমি কাকে ভালোবাসে ছিলাম যে কিনা নিজের স্বামীর পরিচয় গোপন করে।

ছেলেটি : চলো তো এদের আবার কোনো বিশ্বাস নেই কি না কি করে ফেলে।

তারপর নিধির হাত ধরে চলে যায় । নিধি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো জানি না কেন তবে আর জানারও দরকার নাই।আমি রাত করে বাড়ি ফিরতাছি হাতে সিগারেট পকেটে সিগারেটের প্যাকেট।যতো মানুষই বেঈমানি করে কিন্ত সিগারেটের ধোয়া কখনো বেঈমানী করে না।

রুমে এসে সিগারেট টানতাছি আর ভাবতাছি নিধিকে তো কোন অংশে কম ভালোবাসি নি তাহলে কেন এমন করতাছে এসব ভাবনার মাঝে আম্মু এসে খাবারের জন্য বলে গেছে।

তাই ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম খাবার খেতে ।খাবার সময় নিধি বার বার আমার দিকে তাকাইছিলো আমি দেখেও না দেখার ভান করে আছি হালকা কিছু খেয়ে উঠে চলে গেলাম ছাদে।

ছাদে যেয়েই সিগারেট ধরাই টানতাছি মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিছে তখনি পিছন থেকে কে জানি জরাইয়া ধরছে ,আমার বুঝতে‌ আর বাকি রইলো না যে এটা নিধি..

আমি: নিধি ছাড় আমাকে

আমি: আমি তোকে ছাড়তে বলছি নিধি…

নিধি: না আমি ছাড়বো না আগে বল‌‌ আমাকে মাফ করেছিস।

আমি:কিসের জন্য মাফ চাইতেছিস আমি তো‌ কিছুই জানি না

নিধি:বিকালে যে তোকে থাপ্পর দিলাম সেটার জন্য

আমি:আরে আমি কিছু মনে করি নাই

আমাকে ছেড়ে দিয়ে সামনে এসে বললো..

নিধি:সত্যি তো তুই আমাকে মাফ করে দিয়েছিস..

আমি:হুম সত্য

নিধি: আচ্ছা তাহলে সিগারেট টা ফেলে ‌দে

আমি:সিগারেট কেন ফেলবো

নিধি: কারন তুই আমাকে বলেছিস তুই সিগারেট খাবি না

আমি: আমি বখাটে তাই আমি খাই

নিধি:তুই আবার আগের কথা উঠাইতাছোস কেন।আগের সবকিছুর জন্য সরি মাফ করে দে।

আমি:আচ্ছা যা দিলাম‌ এবার যা ডিস্টার্ব করিস না।

নিধি:তারমানে তুই সিগারেট ফেলবি না

আমি: না ফেলবো না।

নিধি: আমি কিন্ত এখন বড় আব্বুকে বলে দিবো

আমি:দেখ নিধি চাচাতো বোন আছিস বোন থাক এর থেকে বেশি কিছু হবার চেস্টা করিস না

নিধি: চাচাতো বোন মানে আমি তোর বউ হই‌ বউ

আমি: কি বউ তাও আবার তুই।কই তখন তো দেখলাম না তুই আমাকে আমার বউ‌ বলে পরিচয় দিতে বলেই সিগারেটে দিলাম টান

নিধি: আমাদের বিবাহের কথা স্কুলের কেউ জানে না তাই আমি তোকে চাচাতো ভাই বলছিলাম।

আমি: ও হ্যা ছেলেটা তোর বয়ফ্রেন্ড ছিলো সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ভয়ে আমাকে ভাই বলে পরিচয় দিলি।

নিধি: ছেলেটা আমার স্কুলের হেডস্যার আমার বয়ফ্রেন্ড না

আমি: আমার থেকে তোর হেডস্যার বড়

নিধি: মানে সে কেন বড় হবে

আমি:তাহলে আমি যখন ঘুরতে যেতে বলতাম তখন ব্যাস্ততা বেড়া যায় আর হেডস্যার বললে তোর সময়ের অভাব থাকে না

নিধি:আজ স্যারের বার্থডে তাই কফি খাওয়ার জন্য বললো আর মানা করতে পারি নাই।এই জন্য তুই আমার সাথে এমন করবি।

নিধি আমার হাতের সিগারেট টা ফেলে দিয়ে ।আমার মাথা টা ধরে নিধির কপালের সাথে আমার কপাল ঠেকিয়ে চোখে চোখ রেখে

নিধি: ইমরান বিশ্বাস কর আমার কারো সাথে কোন সম্পর্ক নাই এই চোখের দিকে তাকিয়ে বল এই চোখ কি কখনো ধোকা দিতে পারে

আমি:তাহলে এতোদিনের ইগনোর আমি কি হিসাবে নিবো..

নিধি: তুই যাতে মনে করিস আমি চাকরি পেয়ে চেন্জ হয়ে গেছি তারপর তুই যাতে চাকরি খুজা শুরু করিস মন প্রাণ দিয়ে কিন্ত তুই এতে ভেবে বসলি আমি অন্যকারো সাথে রিলেশনে গেছি।

আমি: তো কি ভাববো যে আমাকে অনেক ভালোবাসতো সে যদি হঠাৎ করে ভালোবাসা বন্ধ করে দেয় তাহলে তো আমি ভাবতেই পারি সে অন্যকারো হয়ে গেছে ।

চোখের জল মুছে চলে আসলাম।নিধিকে‌ আর কিছু বলতে দিলাম না।হয়তো তার সামনে কান্না ধরে রাখতে পারতাম না।

আমি তাকে এখনি মেনে নিতাম কিন্ত সে সামান্য চাকরির জন্য আমাকে এভাবে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করলো।

রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম যাতে নিধি আসতে না পারে।কিছুক্ষন পরে দরজায় টোক পড়লো বুঝতে পারলাম কেউ এসেছে

কে ওখানে টোকা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে কিন্ত নাক টানার শব্দ পাচ্ছি মানে নিধি কাদছে এটা ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেপে উঠলো।

মন চাচ্ছে নিধি কে এখনি বুকে জরাইয়া ধরি।নিধি কিছুক্ষন কেদেঁ চলে‌ গেলো‌ । আমি বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি কিন্ত ঘুম আসছে না।

কোনো রকমে রাত পার করে সকালে উঠে কাগজ পএ নিয়ে রওনা দিলাম অফিসে।নিধি সকালে উঠে আমার রুমে এসে আমাকে না পেয়ে আম্মুর কাছে যেয়ে বলে

নিধি: বড় আম্মু ইমরানকে দেখছি না যে

আম্মু:ইমরান তো সকাল সকাল কাগজ নিয়ে‌‌ বের হলো দেখলাম।

নিধি: ওহ আমি বড় আম্মুর কাছ থেকে এসে ভাবতাছি ইমরান চাকরির জন্য সকাল সকাল‌ বের হয়ে গেলো রাতে ইমরানকে চাকরির কথা টা না বললে ইমরান এমন করতো না

নিধি জানে না আমি যে চাকরি পালছি তাই‌সে ভাবতাছে আমি চাকরির জন্য বের হয়েছি।নিধি স্কুলে যায় না মন খারাপ করে শুয়ে আছে রুমে দরজা লাগিয়ে‌ না খেয়ে।

নিধির আম্মু খাওয়ার জন্য ডাকছে কিন্ত‌ নিধি খেতে যায় না।আমার আজকে প্রথম দিন তাই বেশি কাজ নাই সবার সাথে পরিচয় হলাম।

আর নিজের কাজ বুঝে নিলাম।অফিস থেকে আসতে আসতে মাগরিবের আযান দিয়ে দিছে।বাড়িতে এসে দরজায় বেল বাজানোর সাথে সাথে আম্মু দরজা খুলে‌ দিল।

আম্মু: কিরে সারাদিন কোথায় ছিলি,

আমি:অফিসে

আম্মু: তাই বলে ফোনটা বন্ধ রাখবি

আমি: আরে প্রথম অফিস করবো তাই যদি কেউ ডিস্টার্ব না করে সেজন্য মোবাইল বন্ধ রাখছি।

আম্মু:তোর আর নিধির মধ্যে কোনো ঝগড়া হলে তা তাড়াতাড়ি মিটিয়ে নে ,মেয়েটা সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছে দরজা টাও বন্ধ করে রাখছে

আমি: কি নিধি সকাল থেকে না খেয়ে রইছে

আম্মু:হুম আর আমি যেন নিধিকে রাতে খাবার টেবিলে পাই সেটা তুই কেমনে আনবি তোর ব্যাপার না পরলে আজকের জন্য তোর খাওয়া বন্ধ।

এই বলেই আম্মু চলে গেলো আমি ফ্রেশ না হয়ে চলে গেলাম নিধির রুমের সামনে নিধি সারাদিন না খেয়ে আছে এটা শুনে বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো।আমি দরজায় টোকা দিলাম।

নিধি:আমি খাবো না বলেছি তারপরেও কেন ডাকতে আসো

আমি:নিধি আমি ইমরান

তখনি দরজা খুলে দিলো আমিতো নিধির দিকে তাকিয়ে অবাক কারন নিধির চুলগুলো এলোমেলো।চুলের সেই সজিবতা নেই একদম শুকনো।আর কান্না করতে করতে মুখের অবস্থা বেহাল করে ফেলছে।

আমি: আপনি সারাদিন না খেয়ে রইছেন কেন

নিধি আমার কাছ থেকে আপনি ডাক শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইছে হয়তো সে এটা আশা করে নাই প্রিয় মানুষের কাছে আপনি ডাক শুনা…

আমি আবার বলা শুরু করলাম।নাকি আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে যার কারনে আপনি খাবার খাচ্ছেন না।এটা বলে মনে হয় ভুনল করছি নিধি বসা থেকে উঠে সোজা আমার কলার ধরছে।আমিতো ভয়ে শেষ নিধি এখন আমাকে কি করবে।..

চলবে………