ভালোবাসতে চাই পর্ব-০৩

0
711

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ৩
#ফারজানা_আক্তার

শিশির একটানে রিক্তাকে নিজের বাহুডুরে আবদ্ধ করে নেই, রিক্তা ছটপট করছে কিন্তু কিছুতেই শিশিরের শক্তির সাথে পেরে উঠছেনা। শিশির আরো শক্ত করে ধরে রিক্তাকে, এক হাতে কোমর জড়িয়ে অন্য হাতে ওর দুই হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। হাতে বেশ ব্যাথা পাচ্ছে রিক্তা।

~দে দেখুন, ভালো হবেনা কিন্তু, ছা ছাড়ুন আময়,
কিছুটা থেমে থেমে বলে রিক্তা।

~কেনো ছাড়বো? অধিকার আছে আমার।
কানে কানে ফিসফিস করে বলে।
~আ আমি চিৎকার করবো কিন্তু।
~এটা ছাড়া আর কি পারো?

রিক্তা চুপ হয়ে যায়

~কোন গফ এর কথা বলছো যেন তুমি?
রিক্তাকে ছেড়ে দিয়ে শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে শিশির।
~আমি এমনিই দুষ্টুমি করে বলেছিলাম।
মাথা নিচু করে বলে রিক্তা।

শিশির হাসে আর বলে আমার কিন্তু অনেক গফ আছে কিন্তু তুমি কার কথা বলতেছো বুঝলাম না আমি,
চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলে শিশির।

রিক্তার চোখ রসগোল্লার মতো গোল গোল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখনই টপকে নিচে পরে যাবে।কথাটি শুনে বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে রিক্তা “সত্যিই কি এত্তোগুলা গফ আছে আপনার? ছলছল চোখে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে।

শিশির আয়না থেকে মুখ ঘুরিয়ে বলে “তো মিথ্যা বলবো কেন?

~তো আমাকে কেন বিয়ে করেছেন,
রাগান্বিত স্বরে বলে।
~আমার একটা পার্সনাল কাজের লোক লাগবে তাই,
শিশির মুখ টিপে হাসে, খেয়াল করেনি রিক্তা।

শিশির সোফায় বসে পায়ে জুতা পরতে পরতে আঁড়চোখে তাকায় রিক্তার দিকে। রোবট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিক্তা। শিশির বেশ মজা পাচ্ছে।

এই বিয়েই তো মানো না তবে আমার গফ এর কথা শুনে রোবট হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তোমার তো খুশি হওয়ার কথা।
নিচের দিক থেকে মাথা তুলে বলে শিশির। কিছু বলেনা রিক্তা, শুধু একনজর শিশিরের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় চলে যায়।



শিশির নিচে আসতেই আফিয়া বেগম জানতে চাই সে কোথায় যাচ্ছে। শিশির অফিসে যাচ্ছে বলতেই রেগে যান আফিয়া বেগম। কারণ বিয়ের জন্য এক মাসের ছুটি দিয়েছে শিশিরকে তার বাবা নুরুল ইসলাম।

~আজ বিকালে বউমাকে নিয়ে ওদের বাসায় যাবি, আর আজ রাত টা ওখানেই থাকবি,
কর্কশ কন্ঠে বলে আফিয়া বেগম।

~কিন্তু মা।
~কোনো কিন্তু না, যাবি মানে যাবি। এই একমাস অফিসের ধারেকাছেও যাবিনা তুই।
কথাগুলো বলেই হনহনিয়ে হেটে নিজের রুমের দিকে চলে যায় আফিয়া বেগম।

শিশির কিছুক্ষণ মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থেকে আবার নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
ধুর ভাল্লাগে না কিছু, বিয়ে করে যেন জেলখানায় বন্ধি হলাম।
সিড়ি দিয়ে উপড়ে উঠছে আর এসব বিড়বিড় করছে।



রিক্তা বারান্দায় গ্রীল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আজ আকাশটা ভীষণ মেঘলা। থেমে থেমে আছে মেঘগুলো। ঝিরিঝিরি বাতাসে গায়ের লোম কাড়া হয়ে যাচ্ছে।
বিয়ের পর স্বামীর সাথে বৈধ প্রেম করবো, এই স্বপ্ন দেখা কি আমার খুব বড় অপরাধ? তবে কেন উনার জীবনে এতো মেয়ের চলাচল। এই নীল পাড়ের লাল শাড়িটা তো আমি উনাকেই মুগ্ধ করতে পরেছি, কোনো পরপুরুষের জন্য নয়। তবে কেন আমার দুষ্টুমিকে উনি সত্যি করে দিলেন। আমি তো চেয়েছিলাম ধীরে ধীরে উনাকে আমার মায়ায় বন্ধি করতে তবে কেন উনি আমার ইচ্ছেগুলোর ডানা কেটে আকাশ থেকে মাটিতে ফেলে দিলেন??

কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিক্তা। মনটা ভীষণভাবে ভেঙ্গে গেছে রিক্তার।



হঠাৎ কিছু একটার আওয়াজ শুনে রুমের দিকে পা বাড়ায়, রুমে গিয়ে দেখে আয়নার সামনে রাখা টুলটা পরে আছে ফ্লোরে, শিশির মাথায় হাত দিয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে আছে।

রিক্তা শিশিরকে দেখে রুম থেকে চলে যাচ্ছিলো , রিক্তা দরজা অব্দি যেথেই শিশির ওর দিকে না তাকিয়েই বলে “আর এক পা-ও সামনে এগুবে না। রিক্তা থেমে যায়। রিক্তা শিশিরের দিকে ঘুরে দেখে শিশিরের চোখ লাল হয়ে আছে বেশ। ভরকে যায় রিক্তা।

শিশির বসা থেকে উঠে রিক্তার দিকে পা বাড়াতেই রিক্তা ভয় পেয়ে যায় কারণ পেঁছনে দেওয়াল আর সামনে শিশির। শিশির ধীরে ধীরে রিক্তার খুব কাছে চলে যায়, দুজনের নিঃশ্বাস যেন মিশে যাচ্ছে, রিক্তা কেঁপে কেঁপে উঠছে বারবার। রিক্তা কিছু বুঝে উঠার আগেই শিশির রিক্তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। রিক্তা বেশ নড়াচড়া করতেছে কিন্তু শিশির পাত্তা দিচ্ছে না, নিজের কাজে ব্যাস্ত সে। প্রায় ১০মিনিট পর শিশির রিক্তাকে ছেড়ে দিয়ে তাকায় রিক্তার চোখের দিকে। রিক্তার চোখে পানি চিকচিক করছে। চোখ এড়ালোনা শিশিরের।

~সরি বলবোনা, কারণ এটা আমার অধিকার,,
রিক্তার দুগালে হাত রেখে বলে শিশির।

রিক্তা চুপ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

শিশির বিছানায় গিয়ে পা নিচে রেখে খাটে শুয়ে পরে মাথার নিচে দুহাত রেখে চোখ বন্ধ করে।

~আপনার এত্তগুলা গফ থাকতে আমার কাছে আসেন কেন?
অভিমানের সুরে বলে রিক্তা।

~কারণ তোমার ঠোঁটের স্বাদ ওদের ঠোঁটে নেই গো বউ,,,
চোখ খুলে চাপা হেসে বলে শিশির।

~ছি মারাত্মক লুচ্চা আপনি।
~সত্যি বলছি বউ, তোমার ঠোঁটে যাদু আছে বারবার আমায় টানে কাছে।

রিক্তা কিছু না বলে ঠোঁট উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

~ভালোবাসো কাউকে?
শোয়া থেকে উঠতে উঠতে বলে শিশির।

রিক্তা চিন্তায় পরে যায়, কি বলবে বুঝতে পারছেনা। রিক্তা মিথ্যা বলতে চাইনা তবুও বলে “হ্যাঁ ভালোবাসি আমি কেউ একজন কে।

শিশির হ্যাঁ শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। রিক্তার মুখে হ্যাঁ শুনে মাথায় রক্ত উঠে যায় শিশিরের।

~তো এখানে কি করছো?যাও আমার সামনে থেকে।
~উঁহু যাবোনা।
~যাও বলছি
পরে থাকা টুলটা লাত্থি মেরে চিৎকার করে বলে উঠে শিশির।

ভরকে যায় রিক্তা, এক দৌড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। কিন্তু এখন যাবে কোথায়? আগে অনেকবার আসা হলেও ঘুরে দেখা হয়নি বাসাটা।
থাক,একা একাই ঘুরে দেখি আমি।
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে…….
গানটা গাইতে গাইতে এদিক সেদিক তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটে।



এই কারণেই বাসর রাতে এমন আচরণ করেছে রিক্তা, যদি অন্য কাউকে ভালোবেসেই থাকে তবে আমার জীবন কেন নষ্ট করছে সে? ও বিয়েটা না করে পালিয়েও তো যেতে পারতো। শুধু শুধু ভিলেন বানিয়ে আমাকেই কেন মাঝখানে টেনে আনলো? ছেড়ে দিবোনা তোমায় রিক্তা ইসলাম, আমার অধিকার আমি ঠিক আদায় করে নিবো।
এসব ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বের হয়ে যায় শিশির।



রিক্তা অন্যমনস্ক হয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁঠতে হাঁটতে টাস করে ধাক্কা খেয়ে ফ্লোরে পরে যায়।
আহ্আআআআহ্ আমার কোমর ভেঙ্গে গেলোরেএএএএএ, ওই কোন বান্দর রে, চোখ কি হাতে নিয়ে হাঁটিস নাকি? কচ্ছপ কোথাকার,,
কথাটি বলেই সামনে তাকাতেই দেখে____

#চলবে।