ভালোবাসতে চাই পর্ব-০৪

0
652

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ৪
#ফারজানা_আক্তার

রিক্তা মুখ তুলে তাকাতেই দেখে সামনে কোনো মানুষ নেই। ও একটা পিলারের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। নিজের উপরই হাসি আসছে এই মুহুর্তে তার।

রিক্তা ঘুরে পুরো বাড়ি দেখে শেষ করলো, এবার ছাঁদে যাওয়ার পালা। ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো রিক্তা।



রিক্তা ছাঁদের এক কোণে গিয়ে ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ছাঁদে অনেক ধরণের ফুল গাছও আছে কিন্তু ছাঁদের ডানপাশের সূর্যমুখী ফুল গাছটা মন কেড়ে নিলো রিক্তার। কারণ রিক্তা সূর্যমুখী ফুল বেশ পছন্দ করে। সে ধীর পায়ে ফুল গাছটার দিকে এগুতে থাকলো।
ফুলগাছের একদম কাছে গিয়ে ফুলের দিকে হাত বাড়াতেই কেউ বলে উঠলো

~আমার ফুল গাছের দিকে হাত বাড়ানো তো দূরের কথা নজরও দিবেনা।

রিক্তা হকচকিয়ে পেঁছনে তাকাতেই দেখে কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে আছে শিশির। রিক্তা তো ✂ দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।

~সরো সামনে থেকে, গাছের অতিরিক্ত পাতা পরিস্কার করতে হবে।
শক্ত গলায় বলল শিশির।

রিক্তা মিটমিট করে চোখ খুলে সেখান থেকে সরে অন্যপাশে দাঁড়িয়ে যায়। শিশির কাজ করতেছে আর রিক্তা এক নজরে দর্শন করতেছে।

শিশির রিক্তার দিকে না তাকিয়েই বলে “এখন কি গিলে খাবে নাকি আমায়?

~ইচ্ছে তো করছে,
আনমনা হয়ে বলে রিক্তা।

~তবে চলো এখনই মারাত্মক কিছু হয়ে যাক।
রিক্তার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে শিশির।

রিক্তা বেশ লজ্জা পাই।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে হুট করে বলে উঠে আমাকে একটা ফুল দিন, আমার খুব ভালো লাগে সূর্যমুখী ফুল।

~নাহ, দেওয়া যাবেনা এই ফুল তোমায়।
~কেন?
~কারণ তুমি যদি আমার গাছের ফুল নিয়ে তোমার ex কে দিয়ে দাও।

রিক্তা অবাক হয়, প্রথমে বুঝতেই পারেনি শিশির কথার ভাজ।

~Ex, কিসের Ex?

~ওই যে তোমার আসিক, যাকে তুমি ভালোবাসো।
~ও ex কেমনে হলো।
~যেমনে আমি বর্তমান হয়েছি,
চোখ টিপ মেরে বলে শিশির।

রিক্তা ভেংচি কেটে সেখান থেকে চলে যেতে নিলে শিশির ডাক দেয় আর বলে মাটির বস্তা থেকে কিছু মাটি আনতে

~কেন?
~নতুন গাছ লাগাবো।
~ এখানে তো দেখি সব আছে।
~ হ্যাঁ সব আছে শুধু মাটি নেই, যাও নিয়ে আসো।

হুঁ কোথাকার রাজা সাহেব যেন, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হুকুম করবে আর আমি শুনবো সব,
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে রিক্তা।

~কি হলো যাও
ভ্রু কুঁচকে বলে শিশির।
~উঁহু পারবোনা আমি। আমি কাজের লোক নয়, সার্ভেন্টদের কে ডাকুন আপনি।
শাড়ির আঁচল ঘুরাতে ঘুরাতে বলে রিক্তা।

~এতো ভুলোক্কর কেন তুমি?
~মানে?
চোখ বড় করে বলে রিক্তা।

~ মানে সকালেই তো বলেছিলাম পার্সোনাল কাজের লোক লাগবে বলেই বিয়ে করেছি তোমায়।
বাঁকা হেসে বলে শিশির।

~বয়েই গেছে আমার আপনার পার্সোনাল কাজের লোক হতে,,
মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে রিক্তা।
~আমার না খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে বউ।
~ফ্রীজে থাকলে গিয়ে খেয়ে নিন।
~গাধী বউ, আমার যে সকালের সেই মিষ্টিটা খেতে ইচ্ছে করছে,
চোখ টিপ মেরে বাঁকা হেসে বলে শিশির।

রিক্তা ঢোক গিলে, আর আমতা আমতা করে বলে “আ আমি আনছি তো মাটি, আনছি।
ভয়ে ভয়ে বলে রিক্তা।
রিক্তা শাড়ীর আঁচল কোমরে গুঁজে নেই, খোলা চুলগুলো কোঁপা করে নেই হাত দিয়ে পেঁছিয়ে কারণ ছাঁদে তো কাকরা পাবেনা।
শিশির রিক্তার কান্ড দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।



এই নিন মাটি, উফ কি গরম ঘেমে একাকার আমি।
মাটিগুলো নিচে রেখে হাতের উল্টো পিট দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মুছতে মুছতে বলে রিক্তা।

শিশির মাথা তুলে রিক্তার দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়, সে হাসতে হাসতে পেট ধরে বসে পরেছে সেখানে।

~এই যে টুনির জামাই, আপনার বউ কি পালিয়ে গেছে? এভাবে কুটকুট করে হাসতেছেন কেন?
ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায় শিশির। সে দাঁড়িয়ে বলে কুটকুট কি?আর বউ পালালে কোন পুরুষটা এভাবে হাসে?
~কুটকুট কি আপনি জানেন না?
বোকার মতো ফেস করে বলে রিক্তা।
~যে শব্দের কোনো অর্থ নেই সেটা জানবো কিভাবে?
শক্ত গলায় বলে শিশির।
~আমি নিচে যাচ্ছি, গোসল করতে হবে।
~সকালে তো দেখলাম গোসল করেছো। আর এভাবে যাবে নিচে? কেউ দেখলে জুকার বলবে তোমায়।

রিক্তা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে এই কেন জোকার বলবে?
~তোমার মুখে মাটি লেগে আছে,
এটা বলেই মুখ চেপে হাসতে লাগলো শিশির।

রিক্তা রাগ করে নিচে চলে যেতে নিলে শিশির ডাক দেয়।

~এই টুনি..
~কে টুনি?
চোখ বড় বড় করে বলে রিক্তা।
~কে আবার?তুমিই তো টুনি।
~দেখুন
~এখনো তো দেখালে না।
~অসভ্য

ও টুনির মা তোমার টুনি কিছুই দেখালো না..
গানের সুর ধরেছে শিশির।
রিক্তা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দৌড়ে এসে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে রিক্তার গায়ে লেগে থাকা সব কাঁদা মাটি শিশিরের গায়েও লাগিয়ে দিলো।

শিশির রীতিমতো অবাক, এ কেমন জল্লাদি বউ।
শিশির রিক্তার দুই বাহু চেপে ধরে তাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দাঁড় করাই। রিক্তা আবারও শিশিরের দুই গাল ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে শিশিরের কপালেও লাগিয়ে দেয় মাটি। হাত থেকে মুখেও মাটি লেগে কেমন বিশ্রী হয়ে আছে মুখটা।

ইতিমধ্যেই খুঁচা খুঁচা দাঁড়িতে মাটি ঢুকে চুলকানি শুরু হয়ে গেছে শিশিরের।
~কি পাগলামি করছো এসব?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে শিশির।

রিক্তা কিছু না বলেই শিশিরের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। এই কাঁদামাটিতেও মুখটা অদ্ভুত মায়াবী রিক্তার কাছে।
শিশির ধাক্কা দিয়ে রিক্তাকে দূরে সরিয়ে দিতেই রিক্তার ঘোর কাটে। এতক্ষণ কেমন যেন এক ঘোরের মধ্যে ছিলো রিক্তা।
রিক্তা হাত দিয়ে যতই নিজের মুখের মাটিগুলো মুছতে চাই ততই আরো লেপ্টে যায়।
শিশির গাছে দেওয়ার জন্য পানি এনেছে যা রিক্তার নজরে পড়েনি।

শিশির বিরক্তি ভাব নিয়ে একনজর তাকায় রিক্তার দিকে। তারপর পাশে রাখা বালতির পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে নেয়।

রিক্তা তাকিয়ে আছে হা হয়ে।
ইস্ কি বোকা আমি, এতক্ষণ এই পানি খেয়ালই করলাম না। যায় আমি মুখটা ধুয়ে নি তারপর নিচে যাবো।
এটা বলেই রিক্তা পানির বালতির দিকে পা বাড়াতেই শিশির রিক্তার হাত ধরে ফেলে আর বাকা হেসে বলে না সোনাবউ তোমার তো এখন মুখ ধুয়া চলবেনা, তোমার তো আরো অনেক কাজ বাকি আছে।

~ক কি কাজ?
কিছুটা থেমে থেমে বলে রিক্তা।

চিন্তায় পরে গেলো রিক্তা, কি জানি আবার কি কাজ করায়, ছাঁদে রোদও চলে আসছে এখন, রোদের তাপে পুড়ে যাবে মনে হচ্ছে রিক্তার।

শিশির রিক্তার উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে আছে রিক্তার চোখের দিকে। এই দুই চোখে যেন নেশা আছে, তাকালে আর চোখ ফেরাতেই ইচ্ছে করছেনা।

শিশির কে আনমনা হয়ে থাকতে দেখে রিক্তা পালানোর বুদ্ধি করলো, যেই রিক্তা দৌড় লাগাবে হাতে হালকা টান অনুভব করলো। কারণ শিশির আনমনা হয়ে থাকলেও হাত কিন্তু বেশ শক্ত করে ধরে রেখেছে।

~প্লিজ যেতে দিন আমায়, কেউ দেখে ফেলবে এইভাবে।
করুণসুরে বলে রিক্তা
~দেখুক। বলছিনা অনেক কাজ বাকি আছে তোমার।
কিছুটা রেগে বলে শিশির।
~কি কাজ বলুন,আর যেতে দিন।
ফটফট করে বলে দিলো রিক্তা।

শিশির বাঁকা হেসে বলে এত সহজে তো যেতে দিবোনা। শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে।

ভয়ে রিক্তার বুকটা কেঁপে উঠলো, না জানি কি অদ্ভুত শাস্তি দেয় আবার এই বজ্জাতটা_____

#চলবে।