ভালোবাসতে চাই পর্ব-০৫

0
669

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ৫
#ফারজানা_আক্তার

আরে এতো আস্তে হলে কি হয়, হাত চালু করো আর কাজ দ্রুত শেষ করো।
কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বলে শিশির।

রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তারউপর এই অসহ্য রোদ, কাপড়টাও মাথায় থাকছেনা। বেশ বিরক্তি ভাব নিয়ে রিক্তা বলে ধুর ছাই পারবোনা আমি আর।

~না পারলে কি হয় বলো, দ্রুত গাছটা লাগাও আর ফুটো এখান থেকে।
~দেখুন বেশি বাড়াবাড়ি করতেছেন কিন্তু, আমি জীবনেও এসব করিনি।
~তো এখন থেকে করবে

অনেক কষ্টে টবে গাছটা রোপন করলো রিক্তা, আর শিশির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে।

~পা পানি খাবো
হাঁপিয়ে বলে রিক্তা।
~একটা গাছ লাগিয়েই এতো ক্লান্ত? আমার গুলুমুলু বেবির মা হবে কিভাবে তবে?
~বাহ্ স্বপ্ন তো দেখি আকাশ সমান, যান এত্তগুলা গফদের কাছে গিয়েই এই আবদার করেন, হুঁ
চোখ রাঙিয়ে বলে রিক্তা।
~নাহ, পার্সোনাল কাজের লোক বুঝোনা তুমি?ওরা আমায় ভালোবাসবে শুধু আর তুমি চাহিদা মেটাবে।।
কথাটি বলেই চাপা হাসে শিশির। শিশির জানে রিক্তা এখন রেগে যাবে। তবুও একটু জ্বালানোর জন্য বলল এসব, মেয়েটাকে রাগাতে খুব ভালো লাগে। রাগলে একদম গালগুলো টমেটোর মতো হয়ে যায়।

রিক্তা রাগ করে হাতে লেগে থাকা মাটিগুলো ঝেড়ে শিশিরের গায়ে মেরে চলে যায় এক দৌড়ে নিচে। শিশির মুচকি হাসে। কেন জানি একটা ভালো লাগা কাজ করছে মেয়েটার উপর।



রিক্তা সিড়ি দিয়ে নামতেই আফিয়া বেগমের সামনে পরলো। আফিয়া বেগম চোখ বড় বড় করে তাকাতেই রিক্তা কাঁচুমাচু শুরু করে দেয়। কপালে,গালে,কপালে, চুলে, দুই হাতে, শাড়িতে, পায়েও লেগে আছে মাটি,যেন মাটি দিয়ে গোসল সেরে আসছে মাত্র। রিক্তা বেশ লজ্জা পাচ্ছে।

~কি গো রিক্তা মা, তোমার এই অবস্থা কিভাবে হলো?
শাশুড়ির কথায় রিক্তা কি বলবে বুঝতে না পেরে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

শিশির সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে তোমার বউমা ছাঁদে মাটি দিয়ে খেলনাপাতি খেলছিলো এতক্ষণ, দেখো আমি ভিডিও করেছি।
রিক্তা রাগান্বিত চোখে তাকালো শিশিরের দিকে, শিশির চোখ টিপ মারতেই চোখ ঘুরিয়ে নেই রিক্তা।

~এমা তোর গায়েও তো মাটি লেগে আছে?
শিশিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন আফিয়া বেগম।
~বাদ দাও আমার কথা, এই দেখো তোমার বউমা ছাঁদে কিভাবে খেলেছে।
মোবাইলটা মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে শিশির।

আফিয়া বেগম হাত বাড়ানোর আগেই ছুঁ মেরে রিক্তা ফোনটা নিয়ে নেই আর আমতা আমতা করে বলে আসলে মা তেমন কিছুনা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি, বলেই শিশিরের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যায় রুমের দিকে।

শিশির মুচকি হাসে। আফিয়া বেগম ছেলের কান্ড দেখে অবাক।



রিক্তা ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই শিশির এসে রিক্তার হাত ধরে ফেলে, রিক্তা এক টানে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে সবসময় এমন না করলে কি হয়না?
~নাহ হয়না, তোমার ৩/৪ ঘন্টা তো লেগেই যাবে ততক্ষণে আমি ৫০বার করতে পারবো গোসল। সো আগে আমি যাবো।
আঙুল নাচিয়ে নাচিয়ে বলে শিশির।
~দেখুন
দাঁত চেপে বলে রিক্তা।
~দেখালে না তো কিছুই।

রিক্তা বিরক্ত হয়।
ও টুনির মা তোমার টুনি কিছু দেখাইনা.. সুর তুলে শিশির।
~অসভ্য
~অসভ্যতামির কিছুই তো করলাম না এখনো বউ।
দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বলে উঠলো শিশির।
~দেখুন আমার অসস্থি লাগছে, আগে আমাকে যেতে দিন।
~নাহ আগে আমি
এটা বলেই ফ্রুত করে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে শিশির।
রিক্তা রাগে ফুঁসতে থাকে। কী, কী মনে করে নিজেকে এই বদমেজাজী লোকটা, মামার বাড়ির আবদার পাইছে, যখন যা ইচ্ছে হয় তাই করবে, আমিও কম না, আঁটকায় দিয়েছি দরজা, আজকে ওখানেই কাটাতে হবে সারাদিন। আমি তো গেলাম

শেশের কথাটি জোরে বলাই শিশিরের কানে বারী খেয়েছে একটুখানি কথাটি, শিশির দ্রুত শাওয়ার বন্ধ করে দরজা খুলতে গিয়ে দেখে সত্যিই রিক্তা দরজা আঁটকিয়ে চলে গেছে। এবার কিন্তু ভীষণ রাগ হচ্ছে শিশিরের, সে নিজেই জানেনা এখান থেকে একবার বের হলে রিক্তার কি অবস্থা করবে।



রিক্তা অন্যরুমে গিয়ে প্রায় আধঘন্টা সময় নিয়ে শাওয়ার নিলো। শাওয়ার নিয়ে নিজের রুমে এসে ভেজা কাপড়গুলো শুকাতে বারান্দায় চলে গেলো, কাপড় রোদে দিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে গুনগুন করে গান গাইতেছে।
ওহে শ্যাম তেমারে আমি নয়নে নয়নে রাখিবো,
অন্যকাউরে না আমি চাইতে দিব।।।

শিশির শুনতে পাই রিক্তা গানের সুর ধরেছে সেটা, মহারাণী আসছে এতক্ষণে গোসল শেষ করে। রিক্তা ওই রিক্তা দরজা খুলো বলছি, ভালো হবেনা কিন্তু।
দরোজায় থাবর দিতে দিতে বলে শিশির।

রিক্তা ভয় পাচ্ছে খুব, পরবর্তী ওর সাথে কি হবে সেটা তো সে চিন্তায় করেনি, কি হবে এখন? আমি কোথায় পালাবো? ভেজা চুল না মুছে রুমে পায়চারি করতে লাগলো রিক্তা।

এইদিকে গোসল সেরে টাওয়াল পরে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে শিশির।

অনেকক্ষণ রুমে হাঁটাহাটি করার পর রিক্তার মাথায় বুদ্ধি এলো সে আস্তে করে দরজার খিল খুলে দিয়েই দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাবে।
বাঁকা হাসে রিক্তা।

সে পা টিপে টিপে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে আস্তে করে খিল খুলতে নিলেও শিশির বুঝে যায় যে দরজা খোলা হচ্ছে, কারণ শিশির দরজার সাথে চিপকে দাঁড়িয়ে ছিলো।

খিল খোলে রিক্তা পালাতে যাবে তখনই শিশির ওর হাত টান দিয়ে ধরে ফেলে। কেঁপে উঠে রিক্তা। বেশ ঠান্ডা হয়ে আছে শিশিরের হাত। শিশির একটান দিয়ে রিক্তাকে দেওয়ালের সাথে চিপকে ধরে। রিক্তার ভেজা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের উপর পরে আছে আর ছোট ছোট চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে। গোলাপি অধরগুলো কাঁপছে রিক্তার।

শিশির রাগ ভুলে যেন এক মুগ্ধতায় ডুব দিলো, অসাধারণ চাহনি।
রিক্তা বেশ নড়াচড়া করতেছে কিন্তু কিছুতেই সে ছুটতে পারতেছে না।
শিশির নিজের অজান্তেই এক হাত রিক্তার কোমরে রাখে, কেঁপে উঠে রিক্তা।

~প্লীজ ছাড়ুন
কিছুটা থেমে থেমে বলে রিক্তা।
~হুসসস কোনো কথা নয়
এটা বলেই শিশির অন্য হাত দিয়ে রিক্তার মুখে পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে খুব যত্ন সহকারে।

~আ আমি চিৎকার করবো কিন্তু।
থেমে থেমে বলে রিক্তা।
~করো
স্পষ্ট বলে দেয় শিশির।
~সত্যি সত্যি চিল্লাবো কিন্তু
চোখ বড় বড় করে বলে রিক্তা।
~চিল্লাও।
যেন এক ঘোরের মধ্যে আছে শিশির।

শিশির ধীরে ধীরে রিক্তার ঠোঁটের খুব কাছেই নিজের ঠোঁট নিয়ে যাচ্ছে, রিক্তার ঠোঁটের নিচের তিলটা যেন মাতাল করে দিচ্ছে শিশিরকে।
শিশির রিক্তার ঠোঁটে ঠোঁট মিলাতে যাবে তখনই শিশিরের ফোনে কল আসে, শিশির রিক্তাকে ছেড়ে ফোন হাতে নিতেই রিক্তা এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
রুম থেকে বের হয়েই জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগে রিক্তা।

শিশির ফোন হাতে নিয়েই অবাক, এতো গুলো বছর পরে ওর কল কেন? তবে কি ও সেদিন…
আর কিছু ভাবতে পারছেনা শিশির।

#চলবে।