ভালোবাসতে চাই পর্ব-০৬

0
636

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ৬
#ফারজানা_আক্তার

সাতপাঁচ ভেবে শিশির কল রিসিভ করলো, ওপাশ থেকে ভেসে আসলো এক মেয়েলি কন্ঠ, ধুপ করে উঠলো শিশিরের বুকটা,

~কে? প্রশ্ন করে শিশির।
~তোর বউ এর সতীন,
এক মিনিট দেরি হয়নি আর শিশিরের চিনতে, এটা যে তার বেস্ট ফ্রেন্ড নিলি, সেই ছোটবেলা থেকেই তাদের বন্ধুত্ব।
~আরে তুই, ভয় পায়ে দিলি, তোর এই নাম্বার কেন?
অবাক কন্ঠে বলে শিশির।
~ হ্যাঁ রে, সিমটা কিনে আমিও ভীষণ অবাক হয়েছি, কিন্তু এটা নতুন সিম, মাঝখানে কয়েকটা অক্ষর এর পার্থক্য আছে।
~ওর কালোছায়া আর পরতে দিবোনা আমার জীবনে।
~হ্যাঁ ও আর কখনই আসুক তা আমরা কেউই চাইনা। তারপর বল, বউ কেমন?

শিশির মাথা চুলকায়,আর বলে “ডাইনি একটা” ওপাশ থেকে নিলি কুটকুট করে হাসতে হাসতে শেষ।

কল কেটে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো শিশির। নাহ এতো বছর পর ও কিছুতেই আসবেনা আর, তবে কেন? নাহ আর ভাবতে পারছিনা আমি, এক কাপ কফি হলে মন্দ হতোনা।



রিক্তা সিড়ি দিয়ে উঠতে যাবে তখনই দেখলো শিশির নামছে, রিক্তা থেমে যায়। শিশির রিক্তাকে দেখতে পেয়ে বলে “এক কাপ কফি হবে?
রিক্তা অবাক হলো, কারণ শিশির খুব নরম স্বরে কথাটি বলেছে, রিক্তার মনে হয়েছিলো এখনই শিশির তার উপর সমস্ত রাগ ঝারবে কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি।

~কিসের কফি এই অসময়ে, ভাত খেতে ডাকতে আসছিলাম, আসুন।
বলেই রিক্তা শিশিরের হাত ধরে টেনে ডাইনিংয়ে নিয়ে গেলো। আফিয়া বেগম আগে থেকেই বসা ছিলো ডাইনিংয়ে, মুচকি হাসলেন আফিয়া বেগম।

~মা আমি ভাত খাবোনা।
মন খারাপ করে বলে শিশির।
~কেন রে বাবা?শরীর খারাপ করছে নাকি?
~না আম্মু, এমনি
~তবে বস বউমার পাশে,
রিক্তা লাজুক হাসে,, শিশির চুপচাপ বসে পরে।

~মা আব্বু আসবেনা দুপুরের খাবার খেতে?
মুচকি হেসে শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করে রিক্তা।
~নাহ মা, তোমার আব্বুর জন্য ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি খাবার।

খাওয়া শেষে আফিয়া বেগম বলেন “শিশির বাহিরে যাসনা, কিছুক্ষণ পর শ্বশুর বাড়িতে যেতে হবে, আর রিক্তা মা তুমি আমার সাথে আসো।

রিক্তা বাধ্য মেয়ের মতো শ্বাশুড়ির পেঁছন পেঁছন যেতে লাগলো।
শিশির রুমে চলে যায়। মন খারাপ হয়ে গেছে, সেই চেনা নাম্বার টা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে তার।



আফিয়া বেগম কাবাড খুলে একটা লাল কয়েরি পাড়ের গোল্ডেন রংয়ের শাড়ী বের করে রিক্তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ” রিক্তা মা আজ এই শাড়ী পরে তুমি বাবার বাড়িতে যাবে, তোমাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার পরই এই শাড়িটা কিনেছিলাম আমি তোমার জন্য।
রিক্তা হাত বাড়িয়ে শাড়ীটা নিলো, খুশীতে আত্মহারা রিক্তা, শ্বাশুড়ীর এতো ভালোবাসা দেখে চোখের কোণে জল চিকচিক করছে রিক্তার। কপাল করে শ্বাশুড়ি পেয়েছে বটে।



রুমে এসে দেখে শিশির কোথাও নেই, শাড়ীটা খাটের ওপর রেখে বারান্দার দিকে পা বাড়ায় রিক্তা। বারান্দায় পা রাখতেই দেখে শিশির ইজিচেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। রিক্তা পা টিপে টিপে শিশিরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হালকা একটা কাশি দেয়। শিশির চোখ খুলে না, এবার রিক্তা আরেকটু জোরে কাশি দেয়, এবারো শিশিরের কোনো সাড়াশব্দ নেই।
মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে, এই সুযোগে আমি তৈরি হয়ে আসি।
এটা বলেই রিক্তা তৈরি হতে যায়।

উনি তো ঘুমাচ্ছে, আমি রুমেই কাপড় টা চেঞ্জ করে ফেলি।
এটা বলেই রিক্তা খাটের ওপর থেকে শাড়ীটা নিলো পরার জন্য। ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে শাড়ী পরতে যাবে ঠিক তখনই শিশিরের আগমন হয় রুমে, কিন্তু শিশির রিক্তার পেঁছনে থাকায় সে খেয়াল করেনি।
শিশির বারান্দার দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসে।
রিক্তা আপন মনে গুনগুন করতে করতে শাড়ী পরতেছে।

অনিন্দ্য লাগে শাড়ীতে তোমায়,
মুগ্ধ দৃষ্টিতে আনমনা হয়ে বলে শিশির।

হঠাৎ এমন কথার শব্দে সে পেঁছনে তাকাতেই অবাক। ততক্ষণে শাড়ী পরা শেষ রিক্তার।
আ আপনি?
কিছুটা থুথলিয়ে বলে রিক্তা।

শিশির ধীরে ধীরে রিক্তার খুব কাছে এসে কোপা করা চুলখুলো খুলে দিয়ে বলে “খোলা চুলে বেশ লাগে তোমায়।

রিক্তা আমতা আমতা করে বলে ” আপনি কখন জেগেছেন ঘুম থেকে?

~যখন তুমি শাড়ী পরতে শুরু করেছো।
মিটমিট করে হেসে বলে শিশির।

~তার মানে!!!!
চোখ বড় বড় করে বলে রিক্তা।

~ হ্যাঁ দেখেছি
দাঁত কেলিয়ে হাসে শিশির।

~ছি ছি ছি কি লজ্জা কি লজ্জা
দুই হাত দিয়ে মুখ ডেকে বলে রিক্তা।

শিশির হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে যায়,

রিক্তা দ্রুত তৈরি হয়ে চলে যায় নিচে, নয়তো নজর মেলাতে পারবেনা যে রিক্তা। বেশ লজ্জা পেয়েছে এবার।



বিকাল ৩টা ৩০শে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরে দুজন।
শিশির গাড়িতে বসে অপেক্ষা করে রিক্তা একটু পর এসে গাড়ির পেঁছনের সিটে বসে যায়। তা দেখে শিশিরের চোখ লাল হয়ে যায় রাগে। সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি করে মেয়েটা।

~আমি তোমার ড্রাইভার নয়, সামনে এসে বসো,
শক্ত গলায় বলে শিশির।
~আমার সামনে বসতে ভালো লাগেনা।
স্পষ্ট বলে দেয় মুখের উপর রিক্তা।
~তো ড্রাইভার নিয়ে চলে যাও, আমি যেতে পারবোনা। আর আম্মুকে বলবো তুমিই আমায় যেতে বারণ করেছো।
সামনের দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে শিশির।

রিক্তা আর কথা না বাড়িয়ে সামনের সিটে চলে আসে, বেশ অসস্থি লাগছে তার।লজ্জা করছে খুব কিছুক্ষণ আগের ঘটনার জন্য।

~সিটবেল্ট বাঁধো।
~পারিনা
মাথা নিচু করে বলে রিক্তা।
~শুধু কি চিল্লাইতে পারো গলা পাঠিয়ে?
ঝাঁঝালো গলায় বলে শিশির।

ভরকে যায় রিক্তা।

শিশির রিক্তার খুব কাছে গিয়ে একটু ঝুঁকে রিক্তার দিকে সিটবেল্ট বাঁধার জন্য ।
~ক কি করছেন আপনি?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে রিক্তা।
~চুপ থাকো একদম নয়তো
ধমক দিয়ে রিক্তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলে শিশির।
চুপ হয়ে যায় রিক্তা। লজ্জাও পাচ্ছে খুব।

শিশির চুপচাপ ড্রাইভ করছে। আঁড়চোখে রিক্তার দিকে তাকাচ্ছে একটু পর পর। হালকা মেকআপ,কপালে লাল কয়েরি রংয়ের একটা ছোট্ট টিপ, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চোখের নিচে হালকা কাজল, হাতভরা চুড়ি পরেছে সবমিলিয়ে অনিন্দ্য সুন্দর লাগছে রিক্তাকে। চুলগুলো খোলা রেখেছে শিশিরের বলাতে, বাতাসে এলোমেলো হয়ে উড়ছে চুলগুলো।
দু একটা চুল গিয়ে শিশিরের চোখে মুখে লাগতেছে, কিন্তু শিশির মোটেও বিরক্ত হচ্ছেনা।

~আজব এক মেয়ে তুমি, এই যুগে এমন হাত ভর্তি চুড়ি কেউ পরে?
সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলে শিশির।
~আমি পরি, কারণ চুড়ি আমার নেশা ভালোবাসা। খুবই ভালো লাগে চুড়ি আমার।
মিষ্টি হেসে বলে রিক্তা।

শিশির আর কিছু বলেনা এই বিষয়ে। চুলগুলো ভীষণ ভাবে উড়তে দেখে বলে “এসি গাড়িতে গাড়ির গ্লাস খোলা রাখা কি খুব বেশিই প্রয়োজন?
ড্রাইভ করতে করতে বলে শিশির।
~ হ্যাঁ খুব প্রয়োজন, নয়তো বমি আসে আমার।
মুখ টিপে হেসে বলে রিক্তা।
কারণ রিক্তার কোনো বমি টমি আসেনা, বাহিরের বাতাসগুলো খুব ভালো লাগে রিক্তার, সে প্রকৃত বাতাস উপভোগ করতে চাই কিন্তু শিশিরকে আপাতত সেটা বলতে চাচ্ছেনা রিক্তা। কিছু বললেই এখন কথা বাড়বে আর কথা বললে রিক্তা এই সুন্দর মুহুর্ত টা ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেনা।



গাড়ি থামান গাড়ি থামান,,,,
রিক্তা শিশিরকে হালকা থাবর দিতে দিতে বলে।
শিশির আশে পাশে থাকিয়ে গাড়ি থামায়।
~এই মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামাতে বললে কেন?
কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে শিশির।
~ওই দেখুন
বাহিরের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে রিক্তা, শিশির হা হয়ে তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে_______

#চলবে