ভালোবাসতে চাই পর্ব-০৭

0
623

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ৭
#ফারজানা_আক্তার

এই মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তুমি মানে শিশির আহমেদ এর বউ ফুচকা খাবে, কখনোই নাহ।
সামনে ভালো একটা রেস্তোরাঁ আছে সেখানে খুব ভালো ফুচকা পাওয়া যায়, সেখানে যত ইচ্ছা ফুচকা খাও বাঁধা দিবোনা।
ঝাঁঝালো গলায় বলে শিশির।

নাহ নাহ নাহ আমি এখানেই দাঁড়িয়ে ফুচকা খাবো।
কিছুটা চিল্লিয়ে বলে রিক্তা।
~আর একবার চিৎকার করলে মুখ বন্ধ করে দিবো।
দাঁতে দাঁত চেপে রিক্তার দিকে ঘুরে বলে শিশির।

রিক্তা ভয়ে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেই শিশিরের চোখ থেকে।
শিশির গাড়ি স্টার্ট দিবে এমন সময় দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে যায় রিক্তা।

~রিক্তা ভালো হবেনা বলছি, গাড়িতে উঠো।
রাগান্বিত স্বরে বলে শিশির।
রিক্তা এক দৌড়ে ফুচকাওয়ালার কাছে গিয়ে বলে ওই যে নীল গাড়িটা দেখছেন সেখানে এক প্লেট ফুচকা নিয়ে আসেন।
এটা বলেই গাড়ির দিকে পা বাড়ালো রিক্তা, গাড়ির কাছে আসতেই দেখে আগুনের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে শিশির। ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে রিক্তার।

~আ আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আ আমি তো দা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাবোনা, আ আমি গা গাড়িতে ব বসেই খাবো।
অনেক কষ্ট করে ভয়ে থেমে থেমে বলে কথাগুলো রিক্তা। গাড়িতে না উঠেই বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সে।

শিশির কিছু বলছেনা শুধু রাগান্বিত নজরে তাকিয়ে আছে রিক্তার দিকে।
ফুচকাওয়ালাকে ফুচকা নিয়ে আসতে দেখে রিক্তা গাড়িতে উঠে, শিশির চোখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকায়।

ফুচকা হাতে নিয়ে শিশিরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে “৫০টাকা দিন, আমি কথা দিচ্ছি বাসায় গিয়ে প্রথমে আপনার টাকায় দিবো।

ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায় শিশির। দ্রুত মানিবেগ থেকে ১০০টাকার নোট বের করে ফুচকাওয়ালাকে দেয় শিশির। ফুচকাওয়ালা ৫০টাকা ফেরত দিতে চাইলে শিশির তা নেইনা। ফুচকাওয়ালা চলে যায়।

টাকা আমি দিবো ঠিক আছে, কিন্তু বাসায় গিয়ে দিয়ে দিবে এটা কেমন কথা?
ভ্রু কুঁচকে বিরক্তিভাব নিয়ে বলে শিশির।

রিক্তা মুখে ফুচকা পুরে চিবুচ্ছে, চিবুতে চিবুতে অনেক চেষ্টা করে শিশিরের কথার উত্তর দিতে কিন্তু পারছেনা।

শিশিরের হাসি পাচ্ছে রিক্তার কান্ড দেখে, একদম বাচ্চা মেয়েদের মতো ফুচকা মুখে পুরে চোখমুখ খিঁচে চিবুচ্ছে।

কোনোমতে ফুচকা একটা খেয়ে বলে আগে খেয়ে নি তারপর আপনার সাথে বকবক করবো। এই নিন আপনিও একটা খান,,
এটা বলেই জোর করে শিশিরের মুখে ফুচকা একটা পুরে দেয়, শিশির চোখমুখ খিঁচে ফেলে। কারণ শিশির আগে আর কখনো ফুচকা খাইনি, শিশিরের পছন্দ চটপটি কিন্তু সবসময় খাওয়া হয়না, খুব কমই খাওয়া হয় শিশিরের এসব বাহিরের খাবার।

শিশির ঝাল খেতে পারেনা কিন্তু ফুচকাতে অনেক ঝাল ছিলো যার কারণে শিশিরের চোখমুখ লাল হয়ে গেছে, হেঁচকি উঠে গেছে, সে গাড়িতে রাখা পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে পেলে।

রিক্তা হা হয়ে তাকিয়ে থেকে হেঁচকি তুলে নাক টেনে টেনে বলে আপনি সব পানি খেলেন কেন?এখন আমি কি খাবো।
~আরেকটা আছে বোতল। ঝাল যখন লাগে তবে এসব ছাইপাঁশ খাওয়ার দরকার কি?
চোখ বন্ধ করে সিটের সাথে গা ঠেকিয়ে বলে শিশির।

আর রিক্তা আছে ফুচকা খাওয়ায় ব্যাস্ত। খাওয়া শেষে রিক্তা হাত দিয়ে হালকাভাবে ধাক্কাতে থাকে শিশিরকে।
শিশির হঠাৎ চমকে উঠে কারণ শিশিরের চোখে ঘুমের রাণী ভর করেছিলো অল্প সময়ে। চোখ খুলতে ইচ্ছে করছেনা তবুও মিটিমিটি করে চোখ খুলে শিশির।

~কি হয়েছে আবার? রাতেও লাইট জ্বালিয়ে রেখে ঘুমাতে দাওনি আর এখনো,,
~জায়গাটা দেখুন।
শিশিরকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে হালকাভাবে বলে রিক্তা।

শিশির চারপাশটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। তারপর নড়েচড়ে বসে।
শিশির গাড়ি স্টার্ট দিবে তখনই মলিন ফেস করে রিক্তা বলে পানি খাবো।
এতক্ষণ রিক্তা প্রচুর হেঁচকি তুলছিলো আর নাক টানছিলো ঝালে, কিন্তু শিশির ঘুমের ঘুরে থাকাই তা লক্ষ করেনি।

শিশির রিক্তাকে পানি দিয়েই গাড়ি স্টার্ট করে। রিক্তা পানি খেতে খেতে আঁড়চোখে শিশিরের দিকে তাকায়। চোখ এড়ায়নি শিশিরের, মুচকি হাসে শিশির।



গাড়ি চলছে, শিশির একটু পরপর একহাত দিয়ে রিক্তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় কারণ রিক্তা শিশিরের কাঁধেই মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে।

কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ঘুমন্ত রিক্তাকে, নাক টা লাল হয়ে আছে এখনো, ফুচকা আসলেই বেশি ঝাল ছিলো। শিশির রাস্তার এক পাশে খালি জায়গায় গাড়ি থামায় আর অপরূপ নয়নে দেখতে থাকে রিক্তার ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা। এই ফাঁকে কয়েকটা সেলফি তুলে নেই দুজনের।

রিক্তা একটু নড়েচড়ে উঠতেই শিশির চোখ ঘুরিয়ে নেই রিক্তার দিক থেকে। শিশির গাড়ি স্টার্ট দিতেই জেগে উঠে রিক্তা। রিক্তা হঠাৎ হকচকিয়ে যায় নিজের মাথা শিশিরের কাঁধে দেখে।

দ্রুত নিজের জায়গায় গিয়ে বসে যায় রিক্তা।

~এতো অবাক হওয়ার প্রয়োজন নেই, তুমি ঘুমুচ্ছিলে, জানালা দিয়ে মাথা বাহিরে চলে যাতে না যায় তাই আমার কাঁধে রেখেছি তোমার ৫০কেজির মাথাটা।
ড্রাইভ করতে করতে বলে শিশির।

~কীহ্ আমার মাথা ৫০ কেজি? এত্তো বড় অপমান? কেএএ, কে বলেছে শুনি আপনাকে আমার মুন্ডু থুক্কু মাথাটা নিজের কাঁধে নিতে?

শিশির রিক্তার উত্তেজিত দেখে হাসে, কিছু বলেনা।
~এই যে এখন আবার কুটকুট করে হাসেন কেন?
কিছুটা চিল্লিয়ে বলে রিক্তা।
~বলবো, আগে কুটকুটের মিনিং টা বুঝাও আমায়।
~এ্যাঁ এতো বড় গাবলা ছেলে কুটকুট চেনেনা এখনো, হাহাহা

ভেবাচেকা খেয়ে যায় শিশির, এখন আবার এই কোন নতুন শব্দের আবিষ্কার করলো এই মেয়ে, গাবলা আবার কি?

~ওই চুপ একদম, আর একটা কথা বললে এই মাঝ রাস্তায় রেখে চলে যাবো। এক তো এতো মাইল দূরে বাসা তোমাদের তারউপর সারা রাস্তা ধরে তোমার অত্যাচার।
ঝাঁঝালো গলায় বলে শিশির ড্রাইভ করতে করতে।

শিশিরের রাগ দেখে রিক্তা শান্ত গলায় বলে আর কতক্ষণ লাগবে?

~আরো পাক্কা আধঘন্টা লাগবে। দের ঘন্টা হয়েছে মাত্র, যেতে লাগে ২ঘন্টা। ৩টা ৩০এ বের হয়েছি আমরা আর এখন বাজে ৫টা।
কিছুটা বিরক্তিভাব নিয়ে বলে শিশির।

রিক্তার ইচ্ছে করছে শাড়ির আঁচল দিয়ে শিশিরের কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মুছে দিতে কিন্তু শিশির কি না কি মনে করে সেটা ভেবে হাতে হাত গুটে বসে আছে।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে, পশ্চিম আকাশটা কেমন লাল বর্ণে সেজে আছে। আকাশটা আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে রিক্তার কাছে। রিক্তা জানালা দিয়ে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

শিশির হালকা সুরে ডাকে রিক্তাকে, রিক্তা তাকাই একনজর শিশিরের দিকে, আবার বাহিরের দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেই।

~রিক্তা
এবার বেশ জোর গলায় ডাক দেয় শিশির।
ভারকে যায় রিক্তা।
~জ জি।
কিছুটা থেমে থেমে বলে রিক্তা।
~জানালা বন্ধ করো, সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
~তো কি হয়েছে?
~শুনবেনা তো আমার কথা?
~না শুনবোনা।
~বউ আমার না সেই মিষ্টি টা খেতে ইচ্ছে করছে গো আবার।
গাড়ি থামিয়ে রিক্তার দিকে নেশালো নয়নে তাকিয়ে বলে শিশির। রিক্তা ঢুক গিলে____ বোনাস পর্ব দিবো তবে একটা শর্ত আছে😁

#চলবে