ভালোবাসতে চাই পর্ব-০৮

0
634

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ৮
#ফারজানা_আক্তার

রিক্তা দ্রুত গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে দিলো। শিশির বাঁকা হেসে গাড়ি চালাতে শুরু করে আবার। ৩০মিনিটের মধ্যেই তারা পৌঁছে যায় সূর্যমুখী হাউজ মানে রিক্তাদের বাড়ি।

রিক্তা গাড়ি থেকে নামছেনা, গাড়ির জানালা দিয়ে ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে ছলছল চোখে, খুশিতে রিক্তার চোখ ভরে গেছে পানিতে। চোখ এড়ালো না শিশিরের। শিশির গাড়ি থেকে নেমে রিক্তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে এখন কি ঘরের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি এতক্ষণ জার্নির পরেও?

ঘোর কাটে রিক্তার, এতক্ষণ যেন বাড়ির মায়ায় একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো সে। রিক্তা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে বলে ন নাহ মানে আসুন আসুননা।

এক হাতে মোবাইল আর অন্য হাত দিয়ে শিশিরের আঙ্গুলের ভাজে আঙ্গুল গুঁজে শক্ত করে হাতটা ধরে রিক্তা।
~আরে কি করছো? তোমার এক্স দেখলে কান্না করবে তো আবার।
চাপা কন্ঠে বলে শিশির।
রিক্তা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় শিশিরের দিকে। শিশির আর কথা না বাড়িয়ে ওভাবেই হাত ধরে ঘরের দরজার দিকে পা বাড়ালো।

কলিংবেল বাজিয়ে দরজার সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে দুজন। রেহেনা ইসলাম দ্রুত এসে দরজা খুলে মেয়ে জামাই আর মেয়েকে দেখে মুচকি হাসেন।
~আসসলামু আলাইকুম আন্টি
~ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা, এসো, ঘরে এসো বাবা।
হাসিমুখে বলেন রেহেনা ইসলাম, এইদিকে রিক্তা রাগে-দুঃখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুঁসছে।
~ মাত্র ১৭ঘন্টা হয়েছে এই বাড়ি থেকে গেছি আমি এরই মাঝে ভুলে গেছে সবাই আমায়, বাহ্ বাহ্ বাহ্
একপ্রকার চিৎকার করে কথাগুলো বলে রিক্তা, বাপের বাড়ি বলে কথা, ইচ্ছে মতো চিৎকার করলেও বাঁধা কে দিবে?
শিশির আর রেহেনা ইসলাম কুটকুট করে হেসে দেয় রিক্তার কান্ড দেখে। রিক্তার রাগ আরো বেড়ে যায়। ধপ ধপ করে পা ফেলে একাই ঘরের ভেতরে চলে যায় রিক্তা।

রেহেনা শিশিরকে ঘরে নিয়ে যায়।
~যাও বাবা ফ্রেশ হয়ে আসো, অনেক দূরের জার্নি করে আসছো।
~জি আন্টি,
এটা বলেই শিশির এদিক সেদিক তাকায়, কোনদিকে যাবে বুঝতে পারছেনা।
~আসো আমি তোমাকে রিক্তার রুম দেখিয়ে দেয়,
শিশির চুপচাপ শ্বাশুড়ির পেঁছন পেঁছন সিড়ি বেয়ে ২তালায় রিক্তার রুমের দিকে যাচ্ছে। এটা রিক্তার রুম, তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো। আমি যায়।




রিক্তা সোজা বাবার রুমে চলে যায়, সে জানে এই সময়ে বাবা(তারেক ইসলাম) নিজের রুমে বসে বই পড়ে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে আছে রিক্তা, বাবাকে ছাড়া এই ১৭ঘন্টা ১৭বছর মনে হয়েছে রিক্তার, একটু বেশিই ভাব বাবার সাথে রিক্তার।
রেহেনা ইসলাম রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে বাবা মেয়ের রংঢং হয়ে গেলে ফ্রেশ হয়ে আয় এবার।

~দেখছো বাবা আম্মু আমাকে একবারও জড়িয়ে ধরেনি, আবার এখন তোমার সামনেই শক্ত গলায় কথা বলতেছে।
বাবার গলা জড়িয়ে আহ্লাদী সুরে বলে রিক্তা। তারেক ইসলাম মুচকি হাসলেন।

রেহেনা হাসতে হাসতে জড়িয়ে ধরে মেয়েকে। ফুফিয়ে কেদে উঠে রিক্তা, রেহেনা নিজের কান্না লুকিয়ে রিক্তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে আরে পাগলি মেয়ে কাঁদছিস কেন?বিয়ের পর সব মেয়েকেই শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়।যা এবার ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়, আমি খাবারের আয়োজন করতেছি।

চলে যায় রিক্তা। রেহেনা বলে বড় হলেও এখনো বাচ্চামো গেলোনা মেয়েটার। তারেক ইসলাম চোখের মোটা চশমাটা খুলে বলে ছেলে মেয়ে যতই বড় হোক না কেন বাবা মায়ের কাছে সেই বাচ্চাই থেকে যায়। রেহেনা ইসলাম বলে মন্দ বলোনি।



শিশির কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে রুমে প্রবেশ করতেই একগাদা ছেলেমেয়ের আওয়াজ শুনতে পাই “ওয়েলকাম জিজু ওয়েলকাম।

ভরকে যায় শিশির। সবাই শিশিরকে হাত ধরে টেনে বিছানায় বসায়, তারপর শিশিরের চারপাশে গোল হয়ে বসে পরে সবাই।
একে একে সবাই শিশিরকে পরিচয় দিতে লাগলো। সবার আগে রিক্তার ছোটবোন রুপা বলে ” জিজু আমি রুপা, এখানে আমি আসল আর বাকি সবাই নকল, সবাই হো হো করে হেসে উঠলো রুপার কথায়, কিন্তু শিশিরের মুখে হাসি নেই, সে বুঝে উঠতে পারছেনা কি হচ্ছে এসব তার সাথে।
আমি সীমা, রিক্তার চাচাতো বোন, আমি রিনা, রিক্তার ফুফাতো বোন, আমি শান্তা, রিক্তার খালাতো বোন, আমি শাহিন, রিক্তার চাচাতো ভাই আর এরা সবাই তোমার শালি শুধু আমি শালা। আবারো সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো, এবার শিশিরেরও বেশ হাসি পেলো। কিন্তু এসময় শিশির বড্ড ক্লান্ত, অনেকক্ষণ ড্রাইভ করেছে কিনা।

রিক্তা রুমে প্রবেশ করতেই অবাক, এই কি অবস্থা হলো তার রুমের, চোখগুলো বড় বড় রসগোল্লার মতো হয়ে গেছে রিক্তার। অসহায় ফেস করে রিক্তার দিকে তাকিয়ে আছে শিশির, চোখ এড়ালো না রিক্তার। রিক্তাকে দেখে সবাই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। রিক্তা সবার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলে এবার যা বের হও আমার রুম থেকে, একদিনেই রুমটাকে খাট্টাস বানিয়ে দিছোস তোরা, এবার যাওয়ার সময় তালা দিয়ে যেতে হবে দেখছি। এটা বলেই রিক্তা ঠেলে টুলে সবাইকে রুম থেকে বের করে দরজা আটকিয়ে দেয়।

~দরজা আটকালে কেন?
অবাক চোখে জিজ্ঞেস করে শিশির।
~যাতে ওরা আবার না আসতে পারে, আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আম্মু অপেক্ষা করছে।
~হুম হবো তো ফ্রেশ কিন্তু তার আগে,
কেমন যেন নেশালো গলায় বলে শিশির।

রিক্তার বেশ ক্লান্ত লাগছে, সে কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। শিশির গিয়ে রিক্তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে রিক্তার পাশে।

~ক কি করছেন আপনি?
~বউকে জড়িয়ে ধরেছি।
~আপনি যাবেন ফ্রেশ হতে নাকি আমিই যাবো আগে?
~যেতে দিলেই তো যাবে
দুষ্টু হেসে বলে শিশির।
~দে দেখুন
~দেখাও
~ইতর

শিশির টুস করে রিক্তার পেটে চুমু দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়, রিক্তা চোখ বড় বড় করে তাকাতেই শিশির বলে এভাবে পেট বের করে শাড়ি পড়তে যেন আর না দেখি, ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে যেন দেখি সব ঠিকটাক। এটা বলেই শিশির ওয়াশরুমে চলে যায়। হাসি পাচ্ছে খুব রিক্তার চাহনি দেখে তার, একটুতেই চোখগুলো রসগোল্লা করে ফেলে মেয়েটা।

রিক্তা দ্রুত উঠে শাড়ি ঠিক করে নেই, না জানি আবার কি থেকে কি করে বসে লুচ্চাটা, তার চেয়ে ভালো শাড়ি ঠিক করে শুয়ে থাকি।।



শিশির ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রিক্তা ঘুমিয়ে পরেছে, শিশির গিয়ে রিক্তার পাশে বসে। ঘুমন্ত রিক্তাকে জাগাতে ইচ্ছে করছেনা শিশিরের। একটা হলুদ টিশার্ট গায়ে পরে নেই শিশির, তার সাথে কালো টাউজার। চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে নিলো, শালিকাদের সামনে স্মার্ট দেখাতে হবে তো। মিটি হাসছে শিশির এসব ভাবে।

সে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবার কি যেন মনে করে ফিরে এসে রিক্তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে রিক্তার কপালে একটা চুমু দেয়। মুখের উপর এলোমেলো হয়ে পরে থাকা চুলগুলো খুব যতনে গুছিয়ে দেয়। ঘুমের মধ্যেই কেঁপে ওঠে রিক্তা।
শিশির যেন এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে। যে মায়া তাকে বারবার রিক্তার কাছে আসতে বাধ্য করছে।




খাবার টেবিলে সবাই আছে রিক্তা ছাড়া, রুপা ডাকতে যেতে চাইলে শিশির বলে রিক্তা বেশ ক্লান্ত, কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিক ও, গাড়িতে খাবার খেয়েছে ও তাই এখন আর ডাকিনি আমি।
থেমে যায় রুপা। আবার এসে শিশিরের পাশে বসে পরে রুপা, শিশির মুচকি হাসে। রুপার বয়স ১৯+হবে।

বেশ জামায় আদর পাচ্ছে শিশির, মমটা ভরে গেলো একেবারে। এত্তগুলা কিউউউট শালি থাকলে বউয়ের আর কি প্রয়োজন? মনে মনে হাসতে লাগলো শিশির। এরই মধ্যে রুপার সাথে বেশ ভাব জমে গেছে শিশিরের।



রিক্তা হঠাৎ জেগে উঠে, ফ্রেশ হয়ে নিচে আসবে, রুম থেকে বের হতেই রিক্তার হাত টেনে ধরে কেউ একজন, পেঁছনে তাকাতেই চোখগুলো ছলছল করে উঠে রিক্তার।



খাওয়া শেষে তারেক ইসলাম বলে শিশির বাবা তোমার আব্বু কল দিয়েছিলো আমায়, আর বলল তোমরা নাকি_____

#চলবে