ভালোবাসাময় প্রহর পর্ব-০৩

0
305

#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:৩

দিবা আজ শাড়ি পরে রক্তিমের বাসায় হাজির হয়েছে কলিংবেল টিপতেই রক্তিমের মা এসে দরজা খুলে দিলো।দিবা তাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বললো,

~কেমন আছো মামীমা?

রক্তিমের মা একটু অবাক হলেন দিবার এই রুপ দেখে যে মেয়ে শাড়ি তো দূর সেলোয়াড় কামিজও ঠিক মতো পরে না তার আজ এই রূপ।রক্তিমের মা নিজেকে সামলে বললেন,

~ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?আর তোমার মা-বাবা কোথায়?

দিবা তাকে ছেড়ে দিয়ে কাঁ/দো কাঁ/দো হয়ে বললো,

~মা আর বাবার কী আমার জন্য সময় আছে দুজনই অফিসে।
আচ্ছা মামীমা রক্তিম আর রাত কোথায়?

রক্তিমের মা বললেন,

~রাত তো ভার্সিটি চলে গেছে আর রক্তিম ফ্যাক্টরিতে গিয়েছে অনেক বড় অর্ডার পেয়েছে তারই স্পালাই আজকে।

দিবা মুচকি হেসে বললো,

~মামীমা, আজ তাহলে আমি শুধু তোমার সাথে সময় কাটাবো।
কতদিন তোমার হাতের রান্না খাই/নি।

রক্তিমের মা দিবার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

~এটাতো তোমারও বাসা যখন মন চায় চলে আসবে।

দিবা রক্তিমের মায়ের হাত ধরে বললো,

~আমার তো তোমাদের সাথেই থাকতে মন চায় যদি এমন কিছু হতো তাহলে কতোই না ভালো হতো।

দিবার কথায় রক্তিমের মা মুচকি হেসে বললো,

~তাহলে চলে এসো তুমিও তো আমার মেয়ে রক্তিম আর রাতের বোন কোনো সমস্যা হবে না।

দিবা “রক্তিমের বোন” শব্দটা শুনে তেঁ/তে উঠলো কিন্তু কিছুই বললো না কারণ তাকে এসব হজম করতেই হবে নাহলে সব পরিকল্পনা পানিতে ধু/য়ে যাবে।দিবা হাসি হাসি মুখ করে বললো,

~আর রক্তিমের ফ্রেন্ডও জানো মামীমা রক্তিম আমাকে একটুও সময় দেয় না তুমি একটু ওকে ব/কে দিও।

রক্তিমের মা বললেন,

~মা গো ওতো ব্যস্ত থাকে কারণ ওর বাবা সব ব্যবসার হাল ওকে বুঝিয়ে দিয়েছে তাই হয়তো সময় পায়না।

দিবা রক্তিমের মায়ের কথায় হালকা হেসে ব্যাগটা নিয়ে নিজ রুমে চলে গেলো আজ থেকে সে এখানেই থাকবে যে পর্যন্ত সব ঠিকঠাক না হয়ে যায়।রক্তিমকে তার কথা মানতেই হবে আর না মানলেও সমস্যা নেই মামীমাকে ইমপ্রেস করলেই সব কাজ হয়ে যাবে। রক্তিমকে বিয়ে করলেই তো তার লাভ বাবাও তো তাই চায় দিবা ব্যাগটা বিছানায় রেখে সোফায় পায়ে উপর পা তুলে বললো,

~রক্তিম তুমি তো ছা/ড় পাবে না বাবার স্বপ্ন আমি অবশ্যই পূরণ করবো।

সব ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে ২টা ক্লাস আজ হবে না তাই সব এক জোট হয়েছে।রাত অধরাও সেখানে উপস্থিত আছে তখনই রাতের ফোন বেজে উঠলো রাত ফোন হাতে নিয়ে দেখলো “রক্তিম” নামটা জ্বল/জ্বল করছে।রাত ফোন রিসিভ করতেই রক্তিমের গম্ভীর কন্ঠটা শুনতে পেলো রক্তিম বললো,

~বাসায় দিবা এসেছে ব্যাগপত্র নিয়ে এসেছে এই প্রব/লেম টাকে তাড়াতাড়ি দূর কর সাথে তন্নিকেও নিয়ে নে।

রাত একবার অধরার দিকে তাকালো তারপর উঠে অন্য জায়গায় গিয়ে বললো,

~দিবা এখন লিমিট ক্র/স করছে ভাইয়া ওকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে নাহলে

রাতের কথা শেষ হওয়ার আগেই রক্তিম বললো,

~তোকে যা বলেছি তাই কর বাকিটা আমি দেখে নিবো সব কিছুরই শে/ষ আছে।

রাত আর কিছুু্ না বলে ফোন রেখে দিলো রক্তিম ফোনটা টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো,

~চলো দিবা প্রেম প্রেম খেলি আমিও দেখতে চাই এই পানি কতদূর গড়ায়।

অধরা একা একা ছাদে দাড়িয়ে আছে তন্নির কী যেন কাজ আছে তাই সে রক্তিমের বাড়িতে গিয়েছে।এই মেয়ের হাবভাব সে বুঝে না একবার রাতের সাথে ঝ/গ/ড়া করবে আরেক বার
গ/লা/য় গ/লা/য় ভাব করবে।তখনই অধরার পিছে কেউ এসো দাড়ালো অধরা কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো রক্তিম তার একদম কাছে এসে দাড়িয়েছে।সন্ধ্যার সময় হওয়ার কারণে আকাশ পুরো লাল হয়ে উঠেছে পাখিরা ফিরে যাচ্ছে নীড়ে বাতাসের কারণে অধরার চুলগুলো উড়ছে সূর্যের লাল আভাটা অধরা আর রক্তিমের মুখে প/র/ছে।
অধরা একবার মুখ তুলে রক্তিমের দিকে তাকালো সেই নেশাময় দৃষ্টি দেখে অধরার হৃদপিন্ড চলা বন্ধ করে দিলো সে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে।অধরার মনে হচ্ছে কেউ তার গ/লা চেপে ধরেছে।রক্তিম এক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে অধরার লজ্জা/মাখা মুখটা দেখতে তার প্রচন্ড ভালো লাগছে।অধরা
পি/ছি/য়ে যেতে নিলেই রক্তিম তার কোমড় জ/ড়ি/য়ে ধ/রে তার কাছে টেনে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

~আর মাত্র কিছুদিন এরপর আর পা/লা/তে পারবেনা।

রক্তিমের কথায় অধরার অবস্থা আরো খা/রা/প হতে লাগলো তা বুঝতে পেরে রক্তিম অধরাকে ছেড়ে দিলো।অধরা ছাড়া পেয়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রক্তিম বললো,

~বড্ড পু/রা/য় এই দুরত্ব তুমি তা কখন বুঝবে প্রেয়সী।

দিবা শাওয়ার নিতে যাবে তাই নিজ কাপড় গুছাতে লাগলো তখনই তার রুমে প্রবেশ করলো রাত।রাতকে দেখে দিবা বললো,

~আরে রাত যে কেমন আছো?

রাত হাসার চেষ্টা করে বললো,

~ভালো আপু তা তুমি এখন কী করছো?

দিবা বললো,

~এই যে শাওয়ার নিবো অনেক ক্লান্ত আমি।

রাত দরজার আড়ালে থাকা তন্নিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো তখনই তন্নি রুমে প্রবেশ করে বললো,

~দিবা আপু,তোমার জন্য কী যেন পার্সেল এসেছে?

দিবা একটু অবাক হয়ে বললো,

~পার্সেল আমার?

তন্নি বললো,

~নাহলে কী আমার তাড়াতাড়ি যাও।

দিবা দেরি না করে রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিচে চলে গেলো সেই সময়টা কাজে লাগালো এই দুজন চু/ল/কা/নি/র পাউডার দিবার সারা জামায় দিয়ে দিলো।তাদের কাজ শেষ হতেই দিবা পার্সেল নিয়ে রুমে ডুকলো।রাত আর তন্নি শ/য়/তা/নি মার্কা হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো দিবা পার্সেলে তার বাবার নাম দেখে আর কোনো প্রশ্ন করে না।সোজা চলে যায় শাওয়ার নিতে শাওয়ার শেষে কাপড় পরতেই তার পুরো শরীর চু/ল/কা/তে শুরু করে। একপর্যায়ে সে বহু জোড়ে চিৎকার করে উঠে কারণ তার পুরো শরীর লাল হয়ে গেছে।

দিবার কন্ঠ শুনে সবাই তার রুমে যায় গিয়ে দেখে দিবা দেওয়ালের সাথে পিঠ ঘ/ষ/ছে।তা দেখে সবাই হতবাক হলেও রাত,তন্নি আর রক্তিম মিটমিট করে হাসছে।রক্তিমের বাবা ডাক্তারকে ফোন করতে চলে গেলো আর রক্তিমের মা দিবাকে সামলাচ্ছে।তন্নি আফসোস এর সুরে বললো,

~আ/হা দিবা আপু এ কী হয়ে গেলো?তোমার হয়তো এই বাসার পানিতে আ্যর্লাজি আছে।

তন্নির কথা শুনে দিবা কট/মট নজরে তাকালো সে বুঝতে পারলো এসব তাদেরই কাজ তবুও নিজেকে সামলে নিলো।

অধরা নিজ রুমে বসে ছাদে ঘটে যাওয়া কান্ডের কথা ভাবছে আর মনে মনে বলছে,

~ইশশ সে আমার কতো কাছে ছিলো সেই নিশ্বাস আমি ভুলতে পারছিনা।এগুলো স্বপ্ন ছিলো নাকি বাস্তব

ভেবেই সে দুহাত দিয়ে মুখ ডেকে ফেললো তার অনেক ল/জ্জা করছে তাহলে কী অধরার ভালোবাসাময় প্রহর শুরু হয়ে গেলো?

চলবে