ভালোবাসাময় প্রহর পর্ব-০২

0
355

#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:২

একই টেবিলে মুখোমুখি বসে আছে অধরা আর রক্তিম বাকি সবাই যে যার মতো করে কথা বলছে। রক্তিম মুরগীর লেগ পিস দাঁত দিয়ে কা/ম/ড়ে খাচ্ছে আর অধরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে।অধরার গলা দিয়ে খাবার নামছে না সে শুধু প্লেটে খাবার নাড়াচাড়া করছে রক্তিমের মা তা খেয়াল করে বললো,

~অধরা,তোমার কী শরীরটা খা/রা/প?

অধরা তার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো,

~আমি ঠিক আছি আন্টি আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না।

অধরার মা অধরার কথা শুনে বললো,

~আর বলবেন না ভাবি,খাওয়া-দাওয়ার কোনো রুটিন নেই আমার মেয়েদের দুটোই আস্ত ব/জ্জা/ত হয়েছে।

অধরার মায়ের কথায় রক্তিম মুচকি হেসে বললো,

~ভালো কাজে তো আর এদের মন বসবেনা আন্টি।যতো ধরনের শ/য়/তানি মার্কা কাজ আছে এটিতে তাদের মন বসবে।

রক্তিমের কথায় অধরা নাক ফুলিয়ে বললো,

~আমার খাওয়া হয়ে গেছে আমি রুমে যাচ্ছি।

রাত অধরাকে বললো,

~এই অধরা রা/গ করিস না আমরা ভেবেছি যে ডিনারের পর ঘুরতে বের হবো ভাইয়া ট্রিট দিবে চল যাই।

অধরা কিছু বলবে তার আগেই অধরার বাবা বললেন,

~এতো রাতে বাহিরে যাওয়ার কী দরকার?বাসায় থাকো যা খেতে মন চায় বাসায় অর্ডার করো।

অধরা বাবার কথায় অনেক খুশি হলো সে দুহাত বুকে গুজে মুখে হাসি ফুটিয়ে রক্তিমের দিকে তাকালো রক্তিম অধরার
বি/জ/য়ের হাসি দেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললো,

~আঙ্কেল,আপনি কোনো টেনশনই করবেন না গাড়ি দিয়ে যাবো আমি বুঝতে পেরেছি মেয়েদের জন্যই আপনি পারমিশন দিচ্ছেন না আর রাতও তো আছে।

রক্তিমের কথায় অধরার বাবা একটু ভেবে বললেন,

~ঠিক আছে কিন্তু চলে আসবে তাড়াতাড়ি।

রক্তিম হালকা হেসে অধরার দিকে তাকিয়ে বললো,

~অবশ্যই আপনি একদম টেনশন করবেন না।

অধরা বাবার দিকে অসহায় চোখে তাকালো তন্নি অধরার হাত টে/নে বললো,

~আপু,চলো বোরখা পরে নেই।

রাত তন্নির কথা শুনে বললো,

~তোকে কে নিয়ে যাবে তুই তো কা/না চলন্ত গাড়ি দেখেও রাস্তায় ভ্যাবলার মতো দাড়িয়ে থাকিস।

তন্নি রাতের কথা শুনে দাঁত কিড়/মিড় করে বললো,

~আজ তোমাকে আমি গাড়ির নিচে ধা/ক্কা দিবো দেখে নিও।

অধরা,তন্নি,রক্তিম আর রাত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো তন্নি আর রাত বকবক করেই যাচ্ছে রক্তিম লুকিং গ্লাসে অধরাকে দেখছে।এক পর্যায়ে দুজনের চোখে চোখ পরে গেলো রক্তিম তার এক চোখ টিপ মা/র/তেই অধরার রা/গটা আরো বেড়ে গেলো সে চেঁ/চি/য়ে তন্নিকে বললো,

~তোর মুখটা এতো চলছে কেন?চু/প থাক নাহলে একটা
থা/প্প/ড় দিবো।

তন্নি অধরার কথা শুনে বললো,

~তুমি আমাকে মা/র/বে তাও রক্তিম ভাইয়ার সামনে এতো হতেই পারেনা এতো সা/হ/স তোমার নেই।

রক্তিম তন্নির দিকে ঘুরে বললো,

~একদম ঠিক কথা।

অধরা গাল ফুলিয়ে বললো,

~সামনে দেখে গাড়ি চালান নিজে ম/র/বে/ন সাথে আমাদেরও মা/র/বে/ন।

রক্তিম সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,

~আমি থাকতে তোমাদের কিছুই হতে দিবো না।

তারা চারজনই একটা রেস্টুরেন্টে বসে আইসক্রিম অর্ডার করলো রাত আইসক্রিম খেতে খেতে বললো,

~তন্নি চল তোকে একটা জিনিস দেখাই তোর ভালো লাগবে।

অধরা এই কথা শুনে বললো,

~আমিও যাবো তোদের সাথে।এখানে একা একা বসে কী করবো?

রাত একবার রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,

~তোকে নেওয়া যাবে না তুই বরং ভাইয়ার সাথে এখানে বসে আড্ডা দে।

তন্নি বললো,

~আমাবস্যার রাত তুমি কী আমায় মে/রে ফেলার প্লান করেছো আমাকে একা নিয়ে যেতে চাইছো।

রাত বি/র/ক্ত হয়ে বললো,

~চল তো তোকে চকলেট খাওয়াবো।

তন্নি আর রাত সেখান থেকে উঠে চলে গেলো অধরা একবার তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে আইসক্রিম খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।রক্তিম মোবাইলটা সাইডে রেখে বললো,

~আরো খা/বে আইসক্রিম?

অধরা বললো,

~নাহ।

আশেপাশে হালকা বাতাস চলছে আকাশেও কিছুটা মেঘ জমেছে লাল নীল লাইট জ্বলছে রেস্টুরেন্ট জুড়ে বেশি মানুষের সমাগম নেই আশেপাশে।অধরার অনেক ভ/য় করছে এভাবে রক্তিমের সাথে বসে থাকতে সে মনে মনে তন্নিকে অনেক গুলো ব/কা দিলো তাকে একা এভাবে রেখে যাওয়ার জন্য।রক্তিম অধরাকে খুব ভালোভাবে দেখছে একটু পর পর তার নাক ফুলানোটা রক্তিমের বেশি ভালো লাগছে।রক্তিমের মন চাইছে এই সময়টা এখানেই থেমে যাক সে অধরাকে এভাবেই দেখতে থাকুক। অধরা রক্তিমের চোখের দিকে তাকাতেই তার হৃদয়ের গহীনে একটা গীত বেজে উঠলো সে অপলক ভাবে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।রক্তিম হালকা হেসে বললো,

~আমাকে কী অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে?

রক্তিমের প্রশ্নে অধরা একটু নড়ে/চড়ে বসলো সে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,

~বাসায় কখন যাবো?

রক্তিম বললো,

~যাবো তো কিন্তু তোমায় আজ কয়েকটা কথা বলবো।

অধরা রক্তিমের দিকে উৎসুক চোখে তাকালো রক্তিম বলতে শুরু করলো,

~আজ যদি আমার জায়গায় অন্য কোনো ছেলে হতো তোমার অবস্থা কী হতো একবার ভাবো?আমি তো তোমাকে টিউশন দিয়েছি তাই তোমার রাইটিং চিনেছি।তুমি একবার ভাবো তো এলাকায় যদি কেউ এসব জানতো কেউ কী দিবার কথাটা জানতো সবাই তোমাকে দো/ষী ভাবতো।কাউকে এতোটাও চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে নেই আশা করি কথাটা বুঝতে পেরেছো।

রক্তিমের প্রতিটি কথা অধরা মন দিয়ে শুনলো সে বুঝতে পারলো আসলেই সে ভুল করেছে অধরা রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,

~দিবা আপু যদি একবারও আপনার নিতো তাহলে কোনোদিন হয়তো তার সাহায্য করতাম না।

রক্তিম আর সে বিষয়ে কথা বললো না বরং অন্য কথা বলতে লাগলো অধরাও রক্তিমের সাথে আড্ডায় মেতে উঠলো।কিছুক্ষণ পর রাত আর তন্নি চলে আসলে তারা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাতে বিছানায় শুয়ে অধরা শুধু রক্তিমের কথাই ভাবছে লোকটা তাকে অনেক বড় সমস্যা থেকে বাঁ/চি/য়ে/ছে।
অধরা মনে মনে বললো,

~সে যে আমার দিকে যে চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকে সেটা কী
ভালোবাসার চাহনি।তাকে যে আমি আমার মনের গহীনে ছোট্ট একটা ঘর বানানোর পারমিশন দিয়েছিলাম বহু বছর।কিন্তু আমি আসলেই বুঝতে পারিনা আদৌ সেটা ভালোবাসা নাকি শুধুই পছন্দ।

অধরা এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে সে তো জানে না তার জন্য একজন মানুষ রাত জাগা পাখি হয়ে আছে মোবাইলের ওয়ালপেপারের দিকে তাকিয়ে বার বার মুচকি মুচকি হাসছে।
শীতের সকালটা বেশ সুন্দর হলেও ঘুম থেকে উঠাটা বেশ কঠিন অধরা আর তন্নির ক্ষেত্রেও তাই হয় মায়ের ব/কু/নি/তে তাদের ঘুম ভে/ঙ্গে যায়।দুজনই উঠে রেডি হয়ে নেও তন্নি চলে যায় তার কলেজে এবার সে ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ছে অধরাও মাকে বিদায় জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে রাস্তায় আসতেই সে দেখতে পায় একজন গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে অধরা সেই ব্যক্তিটিকে দেখে বলে উঠলো,

~দিবা আপু,আপনি এখানে?

দিবা নিজ সানগ্লাসটা খুলে অধরার দিকে এগিয়ে আসলো আর বললো,

~অধরা,আ’ম সরি তোমার সাথে এরকমটা করা উচিত হয়নি কিন্তু কী করবো বলো রক্তিম তো আমার কথাই শুনছিলো না তাই এই আইডিয়াটা কাজে লাগিয়েছিলাম।

অধরা বললো,

~আপু,আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি কিন্তু এরকমটা কারো সাথেই করবেন না।

দিবা অধরার কাঁধে হাত রেখে বললো,

~আমি মনে রাখবো কথাটা।

অধরা মুচকি হেসে দিবার থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো দিবা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

~এইবার তো বেঁচে গেলে আগামীবার কী হবে

এতটুকু বলে চোখে চশমাটা লাগিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো সে জানালা দিয়ে সবই পর্যবেক্ষণ করলো রক্তিম জানালার পর্দা খা/ম/চে ধরে বললো,

~অনেক নাটক হয়েছে এখন এই নাটকের শেষ দরকার।

চলবে