ভালোবাসাময় প্রহর পর্ব-০৫

0
267

#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:৫

অধরার সামনে রাখা হয়েছে কয়েকটি ছবি যেখানে রক্তিম আর দিবা হাতে হাত ধরে আছে বলা সব ছবিই কাপল ছবির মতো।অধরা ছবি থেকে মুখ তুলে দিবার দিকে তাকিয়ে বললো,

~এসব কী দিবা আপু?

দিবা মনে মনে হাসলো কিন্তু মুখে অসহায় ছাপ ফুটিয়ে চোখে পানি এনে বললো,

~বলো তো অধরা ভালোবাসা কী পা/প?আমি আর রক্তিম দুজনই দুজনকে খুব ভালোবাসি কিন্তু কিছুদিন ধরে রক্তিম আমাকে ইগনোর করছে।

দিবার কথা শুনে অধরার হৃদয়টা ভে/ঙ্গে গেলো যতো স্বপ্ন এ দুদিনে বুনেছিলো তা সব ভে/ঙ্গে গেলো।এতোটা কষ্ট তার হচ্ছে যা সে কাউকে বলে বুঝাতে পারবেনা মনটাতে এক আকাশ পরিমাণ অভিমান জমা হলো তার। বিষাদে ভরে উঠলো তার ছোট্ট মনটা।তাহলে কী সব নাটক ছিল?সেই আবেগী চোখটাও কী মিথ্যে ছিল? আর কিছু ভাবতে পারছেনা অধরা তার মন চাইছে এখান থেকে দৌড়ে চলে যেতে আর রক্তিমের কাছে গিয়ে এসব প্রশ্নের জবাব চাইতে।কিন্তু সে এসব কিছুই করতে পারবেনা কারণ রক্তিমের ওপর তার কোনো অধিকার নেই।অধরাকে এভাবে চিন্তিত দেখে বাঁ/কা হাসলো দিবা আর বললো,

~তুমি জানো কেন সে আমায় ইগনোর করছে?কেন সে নিজের থেকে আমায় দূরে রাখছে?

অধরা কাঁ/পা স্বরে বললো,

~কেন?

দিবা অধরার হাত ধরে বললো,

~তোমার জন্য।

অধরা দিবার থেকে নিজ হাত ছাড়িয়ে নিলো দিবা আবার বললো,

~জানো সব ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু গত ১মাস ধরে এসকল সমস্যা শুরু হয়েছে কারণ তোমার বাবার অনেক টাকা আমার মামার ব্যবসায় দেওয়া তাই আমার মামা চায় তাদের সম্পর্ক যাতে আরো মজবুত হয় তাই রক্তিম আর তোমার বিয়ে দিতে চায়।
যার কারণে রক্তিম আমার থেকে সরে গেছে তার বাবার জন্য আমি এটাও জানি রক্তিম তোমার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছে যাতে তোমার মনটা পেতে পারে।তুমিই বলো রক্তিম কী তোমার সাথে আগে এমন ব্যবহার করতো?

অধরা কেন যেন দিবার কথা বিশ্বাস করতে পারলোনা সে কারো কথা জানে না কিন্তু তার বাবা কোনোদিন তার মতামত ছাড়া কিছুই করবে না।অধরা দিবাকে বললো,

~আপু,আমি জানি না আপনি সত্যি বলছেন কি না মিথ্যা কিন্তু আমি এতটুকু জানি আমার বাবা কোনোদিন আমার ওপর নিজ মতামত চা/পি/য়ে দিবে না।

দিবা অধরার কথা শুনে রেগে গেলেও নিজেকে সামলে বললো,

~তুমি কী আমায় অবিশ্বাস করছো?

অধরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

~আপনি যেটা ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তাই ভাবেন কোনো আ/প/ত্তি আমার নেই।

বলেই সে ব্যাগটা নিয়ে সেখান থেকে ৫০০ টাকা বের করে দিবার সামনে রেখে বললো,

~বিলটা পে করে দিবেন প্লিজ।

অধরা চলে গেলো সেখানে আর একদণ্ড ও দাড়ালো না দিবা ৫০০ টাকার নোটটা হাতে নিয়ে কটমট করে বললো,

~আমাকে অপমান করা হচ্ছে এর পরিণতির জন্য তুমি তৈরি থেকো।

অধরা কফি শপ থেকে বের হয়ে রিক্সায় উঠে বসলো তার দুচোখ বেয়ে পানি পরছে এতোটা কষ্ট হয়তো সে কখনো পায়নি।অধরার ফোন বেজে উঠলো ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই দেখতে পেলো ফোনের স্ক্রিনে “রক্তিম” নামটা জ্বলজ্বল করছে।অধরার রা/গে/র পরিমাণটা যেন বেড়ে গেলো সে ফোনটা কে/টে দিয়ে সুইচ অফ করে দিলো।
অধরার ফোন বন্ধ দেখে রক্তিমের টেন/শন হতে লাগলো কারণ সে কিছুক্ষণ আগেই জানতে পেরেছে অধরা আর দিবা একসাথে আছে।রক্তিম অফিস থেকে বের হয়ে সোজা চলে আসলো অধরার বাসার সামনে সেখানে আসতেই তার দেখা হলো দিবার সাথে।দিবা রক্তিমকে দেখে বললো,

~এসো পরেছো আহা একটু আগেই তো আ/গু/ন লাগিয়ে আসলাম।

রক্তিম রা/গে লাল হয়ে গেলো দিবার কথায় সে হাত উঠাতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

~তোর সাথে পরে কথা বলছি।

দিবা রক্তিমের আরো কাছে গিয়ে বললো,

~আজ বাবা আসবে সেই ফাইলটা নিয়ে একবার সাইন করে দেও আর বাবার কাছ থেকে আমাকে চেয়ে নেও তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

দিবার কথা শুনে রক্তিমের গা ঘিন/ঘিন করে উঠলো একটা মেয়ে এতো নি/চু হয় কীভাবে? রক্তিম দিবাকে মৃদ্যু ধা/ক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে অধরার বাসার ভিতরে চলে গেলো।দিবা সেখানেই দাড়িয়ে রইলো আর রক্তিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।অধরা রুমে বসে বই পত্র ছড়িয়ে রেখেছে তন্নি কেও রুম থেকে বের করে দিয়েছে বইতে মুখ গু/জে সে রক্তিমের কথা ভাবছে তার মনটা মানছেই না যে রক্তিম এরকমটা করতে পারে।তবুও সে নিজেকে বুঝাচ্ছে কিন্তু এই পা/গ/ল মন বুঝতেই চাইছে না সে কথা এসব ভাবনার মাঝেই দরজায় টোকা পড়লো পাশাপাশি তন্নির গলা ফাঁ/টা ডাক সে জোরে জোরে বলছে,

~আপু,রক্তিম ভাইয়া এসেছে দেখা করতে বের হও।

রক্তিম, নামটা শুনে অধরা গম্ভীর হয়ে উঠলো মনটা বিষাদে ভরে উঠলো অভিমান গুলো বিশাল আকার ধরাণ করলো।মানুষটি যে তাকে এক আকাশ স্বপ্ন দেখিয়ে এতো কাছে ডেকে এক
ধা/ক্কা দিয়ে সব চুর/মার করে দিলো।অধরার ভাবনার মাঝে তন্নি আবার ডেকে উঠলো অধরা এবার রে/গে গিয়ে বললো,

~আমি কারো সাথে দেখা করতে চাই না বলে দে।

পরের আওয়াজটা আর তন্নির আসলোনা বরং আকুল একটা কন্ঠস্বর অপর পাশ থেকে সেই কন্ঠস্বরটি হচ্ছে রক্তিমের সে বলছে,

~একটা বার দরজা খুলো অধরা।

অধরা বললো,

~বাবার সাথে কথা বলার পর আমি অন্য কারো সাথে কথা বলবো।

রক্তিম বললো,

~তুমি কী চাও আমি দরজা ভে/ঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করি?

অধরা বললো,

~আপনার লজ্জা করছে না রক্তিম এসব যদি মা শুনে ফেলে।

রক্তিম বললো,

~তাই তো আন্টিকে আমার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।

অধরা এবার শুকনো ঢোক গিললো সে ভাবলো রক্তিম যদি সত্যিই দরজা ভে/ঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে তখন।এই পা/গ/ল মানুষ দ্বারা সব সম্ভব।তাই অধরা গিয়ে দরজা খুলে দিলো দরজা খোলা পেয়ে রক্তিম রুমে প্রবেশ করলো তন্নি মুচকি হেসে ছাদে চলে গেলো।অধরা জানালা দিয়ে আকাশপাণে তাকিয়ে রইলো রক্তিম অধরার সেই মলিন চেহারার দিকে তাকিয়ে বললো,

~আমি জানি না দিবা তোমাকে কী বলেছে?কিন্তু এতো টুকু তুমি বিশ্বাস করতে পারো তোমার রক্তিম শুধুই তোমার।আমি জানি হয়তো সবকিছু তোমার কাছে অনেক জলদি মনে হচ্ছে কিন্তু এগুলো সব ৫বছর আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে।

রক্তিমের কথা শুনে অধরা অবাক নয়নে তার দিকে তাকালো আর বললো,

~কী বলতে চাইছেন আপনি?

রক্তিম অধরার কাছে গিয়ে তার দুগাল জড়িয়ে ধরলো তারপর অধরার চোখে চোখ রেখে বললো,

~I love you Odhora.আমি তোমাকে সেই ৫বছর আগে থেকে সেই বৃষ্টিময় রাত থেকে ভালোবাসি❤️❤️

চলবে