ভালোবাসাময় প্রহর পর্ব-০৭

0
263

#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:৭

রক্তিমের কথা শুনে অধরা উৎসুক চোখে তার দিকে তাকালো রক্তিম অধরার হাত টা ধরে বললো,

~শুনো যেদিন থেকে দিবা জানতে পেরেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি সেদিন থেকেই সে এসব শুরু করেছে। আর যে ছবিগুলো তোমায় দিয়েছে সে সকল ছবি দিবা আর তার এক্স বয়ফ্রেন্ড রোদ্দুরের এখানে শুধু আমার মুখটা বসিয়ে দিয়েছে।দিবার সাথে রোদ্দুরের সম্পর্ক ছিলো ২ বছরের দিবা ইচ্ছা করে ছেলেটার ওপর নানান অ/ভি/যো/গ তুলে ব্রেকআপ করে নেয়।
কারণ হঠাৎ করেই তার মনে আমার জন্য ফিলিংস এসে পরে কিন্তু এ কথাটি একদম মিথ্যে দিবা আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে। নিজ বাবার জন্য সে অনেক মানুষের মনে কষ্ট দিয়েছে তার বাবাও আমাদের সাথে অনেক বড় অ/ন্যা/য় করেছে যার কোনো ক্ষমা হয় না।

রক্তিমের কথা গুলো শুনে অধরা অবাক হয়ে গেলো সে পুরো কাহিনি জানার জন্য বললো,

~আমাকে সব খুলে বলুন।

রক্তিম শুরু থেকে সব কথা অধরাকে জানালো অধরা সব কিছু জানার পর একরাশ ঘৃণা নিয়ে বললো,

~মানুষ কিছু টাকার জন্য এতোটা নিচু হয়ে যেতে পারে।আর দিবা আপু নিজ বাবাকে না বুঝিয়ে উল্টো তাকে সাহায্য করছে ছি ছি।আমার ভাবতেই খা/রা/প লাগছে আমি তার কথায় বিশ্বাস করেছি আর বাবাকে এধরনের প্রশ্ন করেছি।

রক্তিম মুচকি হেসে অধরার গালে হাত ছুঁইয়ে বললো,

~অধরা, আমি তোমাকে বোকা বলবোনা তোমার যে হৃদয়টা আছে না সেটা খুব ভালো সহজেই যে কাউকে বিশ্বাস করে ফেলে।আর মানুষের কষ্ট দেখলে নিজেকে সামলাতে পারে না কারণ সবাইকে আপন মনে করে।এই সকল গুনের কারণে তুমি একজন ভালো মানুষ সেটা আমি বলতে পারি।কিন্তু অধরা একটা কথা মনে রাখবে,এ পৃথিবীর সকল মানুষ ভালো না তোমায় মানুষ চিনতে শিখতে হবে কেননা আমরা সবাই তোমার পাশে চিরকাল থাকবো না।তোমার পথ তোমায়ই চলতে হবে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে কিছু একটা অর্জন করতে হবে।আশা করি তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো আমি যা বলেছি তোমার ভালোর জন্যই বলেছি।

অধরা রক্তিমের হাতটা নিজ হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো,

~কিছুক্ষণের জন্য আমি আপনাকেও ভু/ল বুঝেছি কিন্তু দেখেন আপনি আমার সাথে কোনো খা/রা/প ব্যবহার না করে আমার সকল স/ন্দে/হ দূর করে দিলেন।আপনি আমাকে আজ যেসকল কথা গুলো বুঝালেন আমি আজীবন তা মনে রাখবো।

রক্তিম অধরার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,

~আমার কোনো ইচ্ছে ছিলো না এভাবে তোমার বাসায় এসে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার।আমি ভেবেছিলাম প্রথমে তোমাকে প্রপোজ করবো একদম রোমান্টিক ভাবে তারপর তোমার আঙ্গুলে আমার দেওয়া একটি আংটি পড়িয়ে দিবো।তারপর তুমি আমায় জড়িয়ে ধরবে আশেপাশে হালকা আওয়াজে গান বাজতে থাকবে।আমি সবকিছু পার্ফেক্ট ভাবে করতে চেয়েছিলাম কিন্তু দিবার কারণে সব পানিতে চলে গেলো।আমার মন চাইছে ওকে নদীতে চু/বা/তে।

অধরা রক্তিমের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো আর বললো,

~আপনাকে কে বলেছে এখন এসব করা যাবে না আমি আপনাকে কালকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দিলাম সব আয়োজন করে আমাকে প্রপোজ করতে হবে তা না হলে বিয়ে হবে না।

রক্তিম অধরার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,

~এতো সোজা নাকি যে বিয়ে করবেন না একদম বাসা থেকে তু/লে নিয়ে বিয়ে করে আসবো।কালকের জন্য তৈরি থেকো আমার সারপ্রাইজ রেডি হচ্ছে।

অধরা রক্তিমের কাঁধে দুহাত জড়িয়ে বললো,

~নিচে গিয়ে তাহলে সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দেই সবাই অনেক চিন্তা করছে।

রক্তিম অধরার ঠোঁটে নিজ আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে বললো,

~এই ঠোঁট দিয়ে একবার বলো “আই লাভ ইউ রক্তিম” জাস্ট একবার।

অধরা মৃদ্যু হেসে রক্তিমের কানের কাছে গিয়ে বললো

~কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন জনাব আপনার কাঙ্ক্ষিত জিনিস আপনি পেয়ে যাবেন।

রক্তিম হেসে অধরাকে ছেড়ে দিলো দুজনই নিচে নেমে আসলো আর দেখলো সবাই থমথমে মুখে বসে আছে। তাদের দুজনকে দেখে অধরার মা সকলের উদ্দেশ্যে বললো,

~ওরা চলে এসেছে।

অধরা সবার উদ্দেশ্যে বললো,

~আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছি।

রক্তিমের বাবা বললেন,

~হ্যাঁ মা বলো তোমার সিদ্ধান্ত।

অধরা মাথানিচু করে বললো,

~আমি রাজি।

সবাই একসাথে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে উঠলো অধরা লজ্জা পেয়ে নিজ রুমে চলে গেলো রক্তিম তার বাবার পাশে বসে পরলো। রক্তিমের বাবা বললেন,

~যেহেতু সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে তাই বিয়েটা আমি চাইছি ১৫দিন পরই হয়ে যাক।

অধরার বাবা বললেন,

~ঠিক আছে তাই হোক।

একথা শুনে রক্তিম আর অধরার দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,

~অভিনন্দন।

রাত আর তন্নি বসে বসে বিয়ের প্ল্যান করছে আর অধরা বসে বসে তাদের কথা শুনছে। রাত অধরার দিকে তাকিয়ে বললো,

~কী রে তুই এতো চু/প/চা/প কেন?

অধরা রাতের কথা শুনে বললো,

~রাত,আমার মনটা কেমন যেনো করছে আমার মনে হচ্ছে
খা/রা/প কিছু ঘটবে।আর দিবা আপু কী এভাবেই চুপ হয়ে যাবে সে নিশ্চয়ই বড় কোনো কিছু করবে।

রাত বললো,

~তুই এসব নিয়ে ভাবিস না ভাইয়া আর আমি মিলে সব ঠিক করে দিবো।তুই শুধু বিয়েতে মনোযোগ দে শপিং মলে ঘুরে বেড়া।

রাতের কথার মাঝেই তন্নির ফোনটা বেজে উঠলো তন্নি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তা হাতে নিয়ে বললো,

~আমি একটু কথা বলে আসছি তোমরা প্ল্যান করতে থাকো।

বলেই সে বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় চলে গেলো বারান্দার দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে কথা বলতে লাগলো।রাতের কেন জানি বিষয়টা ভালো লাগো না তাই সে অধরাকে বললো,

~তন্নি এমন বিহেভ করলো কেন?

অধরা রাতের কথা শুনে বললো,

~আরে ওর বান্ধুবীর ফোন এসেছে তাই বারান্দায় চলে গেছে।

রাত বললো,

~ওর হাবভাব সুবিধার লাগছে না অধরা তুই ওর ওপর নজর রাখিস।

অধরা বললো,

~তুই যেদিকে ইঙ্গিত করছিস এসব কিছুই না তুই বেশি ভাবছিস।হ্যাঁ কিছুদিন আগে বলেছিলো কোচিংয়ের কোন স্যারের ওপর ক্রা/স খেয়েছে এই বয়সে তো মেয়েরা এইসব
বলেই থাকে।

অধরার কথায় রাত চিন্তিত হয়ে গেলো তবুও সে অধরাকে তা বুঝতে না দিয়ে বললো,

~সবাই যেহেতু বাহিরে আমরাও ওখানে গিয়েই বসি।

রক্তিমরা রাতের খাবার খেয়ে নিজ বাসায় চলে গেলো রক্তিমের মা যাওয়ার আগে অধরার হাতে সোনার চু/রি পরিয়ে দিলেন আর বললেন,

~সবসময় সুখী থাকো মা এই দোয়াই করি।

অত:পর তারা চলে যেতেই অধরা মায়ের সাথে সবকিছু গুছিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো ফোনটা হাতে নিতেই চোখে পরলো রক্তিমের ম্যাসেজ সেখানে লেখা আছে,

~আজকের জন্য তোমার ছুটি কালকে রাত থেকে তোমার চাকরি শুরু সারারাত ফোনে কথা বলতে হবে আজ ঘুমাও
সুইট ড্রীম বেবি😘।

অধরা লজ্জা পেয়ে গেলো সে বিড়বিড় করে বললো,

~নি/র্ল/জ্জ লোক একটা।

অধরা দুচোখ বন্ধ করে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে ত/লি/য়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে।অধরা আর রক্তিম মনে করছে তাদের জীবনে এখন সুখ এসে পরেছে কিন্তু কে জানে নিয়তি তাদের সাথে কীসের ব্যবস্থা করেছে।
নে/শা/য় বু/ধ হয়ে দিবা বসে আছে তার মায়ের সামনে মেয়ের এমন দশা দেখে বুক কেঁ/পে উঠলো।দিবার বাবা স্ত্রীর এমন
ক/রু/ন চেহারা দেখে বা/কা হেসে মুখে অসহায় ভাব ফুটিয়ে বললেন,

~দেখোছো তানহা(দিবার মা) আমাদের মেয়ের কী অবস্থা?এসবের জন্য শুধু রক্তিম দ্বায়ই।এতো কষ্ট পেয়েছে আমাদের মেয়ে আর দেখো আমাকেও পথে বসিয়ে দিলো রক্তিম আমার ব্যবসার সব ইনফরমেশন পুলিশকে দিয়েছে। আমাকে যেকোনো সময় গ্রে/ফ/তা/র করতে চলে আসবে এখন আমরা কী করবো?

দিবার মা দুচোখ মুছে বললেন,

~ঘরে ৫লক্ষ আছে তা দিয়ে পু/লি/শ বিদায় করো বাকিটা আমি করছি।

বলেই দিবার মা ফোনে ব্যস্ত হয়ে গেলো দিবার বাবা দিবার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

~ঘুমন্ত বা/ঘ/নি আবার জেগেছে খেলায় এখন নতুন টুইস্ট আসছে।

চলবে