ভালোবাসার আলিঙ্গন পর্ব-০৫

0
173

#ভালোবাসার_আলিঙ্গন
পর্ব [০৫]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

প্রীতি পৃথকের কাঁধে হাত রেখে ল্যাপটপে কী যেনো দেখছে, দু’জনে খুবই কাছাকাছি বসে আছে। ভীষণ রাগ হচ্ছে নূরের,তবে তা ক্ষনিকের জন্য ছিল।সোফার অপর প্রান্তে রুদ্র এবং তার সাথে ওশান বসে আছে।
ওশান কে দেখে বেশ চমকে উঠে নূর,এই সেই ছেলে যাকে সেদিন রাস্তায় দেখে শাহা কে বলেছিল ওই কথা গুলো।যা শুনে পৃথক রেগে তার বাড়িতে গিয়ে বকে আসে তাকে।
“আরেহবাস,এ তো দেখছিস সেই ছেলে!তার মানে উনিই পৃথক ভাই এর বন্ধু।”

নূর সেটার টেবিলের উপর খাবার গুলো রেখে দেয়, তৎক্ষণাৎ রুদ্র পৃথক কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো।
“উনি কে রে পৃথক,সেদিনও ক্যাফেতে দেখলাম, কিন্তু তুই কিছু বললি না।”

পৃথক আড় চোখে তাকায় নূরের দিকে,নূর বেশ ভাব নিয়েই সোফায় বসলো।
” ও আমার বোন।”
“কীঈ?”

চেঁচিয়ে উঠলো নূর।
“পৃথক ভাই আপনি এটা কী বললেন? আমি আপনার বোন?”

পৃথক ঠোঁট টিপে হাসলো, চুপচাপ বসে রইল।বাকি সবাই নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নূর সেই আগের ন্যায় বলে উঠলো।
“আমি আপনার বউ হই, বুঝলেন? বউউউউউউউউউউ।”

উপস্থিত সবাই নূরের কথাবার্তা শুনে ফিক করে হেসে উঠলো, নিজের বিষয়টি অতঃপর খেয়াল করলো।যা তাকে বেশ লজ্জায় ফেলছে।আর দাঁড়ালো না নূর, বাইরের দিকে ছুটে চলে গেলো।
সবার অগোচরে ওশান সেদিকে যায়।
“ব্রো তোর বউ কে বোন বললি তাতে তো চ’টে গেলো।
“আর বলিস না, আমি তো জানতাম ওকে এমন কিছু বললেই তে’তে উঠবে, এখন সেটাই হলো।”

বাগানে দাঁড়িয়ে আছে নূর,কারও উপস্থিত টের পেয়ে অগোচরে চোখের পানি মুছে নেয় নূর।
” আপনি কাঁদছেন?”

কথাটা বেশ নম্র ভাবেই জিজ্ঞেস করলো ওশান। নূর সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বলল।
“না এমনি।”
“উঁহু আমি তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আপনি কাঁদছেন?”

এবার নূর আর নিজেকে আটকাতে পারলো না, হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।
“দেখলেন আপনার বন্ধু কেমন? ওনার সাথে আমার আকদ হয়েছে, এবং কী কিছু দিন পর বিয়েও হয়ে যাবে অথচ সে আমাকে পাত্তাই দেয় না এ্যা এ্যা।”
“আরেহ আরেহ কাঁদবেন না,এই নিন রুমাল।”

ওশান নিজের প্যান্ট পকেট থেকে রুমাল বের করে হাতে দেয় নূরের,নূর টাক মুছে আবারও ফেরত দিতে চায় পৃথক কে।
“নো থ্যাংকস। আচ্ছা আপনি কিছু মনে করবেন না ওই পৃথক টা এমনি।”
“হ্যা তাই তো কিচ্ছু বলি না, আমি বলেই আছি।অন্য কেউ হলে লাথি মে’রে চলে যেতো হুউ।”

নূরের কথা বলার ধরন দেখে না হেসে থাকতে পারলো না ওশান, হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
“আপনি কিন্তু বেশ মজার মানুষ।ম’রা মানুষ কে হাসাতে পারবেন।”

নূর ওশানের কথায় হাসলো।
“তাই বলুন! কিন্তু পৃথক ভাই একটুও হাসে না,বেডা শয়tan।”

“এহ এটা আবার কী?শয়tan?”
“আহা বুঝলেন না এইটা হলো গা’লি, সরাসরি তো আর কাউকে গালি দেওয়া যায় না?তাই বাংলিশ করে দিলাম হে হে।”

আর কিছুক্ষণ দু’জনে মিলে কথা বলে নূর এবং ওশান, অতঃপর প্রীতি রুদ্র এবং ওশান পৃথক কে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।

সন্ধ্যা বেলা সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ছে। র’ক্তি’ম আভা ছড়িয়ে পড়েছে ধরণীতে। পাখিরা ফিরে যাচ্ছে আপন নীড়ে, ঠিক তেমনি বাড়ি ফিরছে নূর। সবাই কে রেখে যেতে তার বেশ বিরক্ত লাগছে,তবে পরক্ষণেই মনে পড়লো আরও একজন তো তার অপেক্ষায় আছে।তার জননী মা, মায়ের কথা চিন্তা করা মাত্র ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল নূরের।
পৃথক বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলো নূর কে। যাওয়ার সময় কী একটা ভেবে নূর পৃথক কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।
পৃথক কিছু বললো না, চুপচাপ রইল।কিয়ৎক্ষণ পর আবারও দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো নূর। চোখের আড়ালে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নিষ্পলক তাকিয়ে রইল পৃথক। অতঃপর হাসলো,কী স্নিগ্ধ সেই হাসি।

মায়ের বুকে গুটি সুটি হয়ে শুয়ে আছে নূর,আহা পৃথিবীতে প্রথম আল্লাহর ইবাদত এবং দ্বিতীয়ত পিতা মাতার বুকে শান্তি মিলে।এ দুটি জায়গায় পরম শান্তি।
মেয়ের চুলে বিলি কে’টে দিচ্ছিলো রূপা আহমেদ, এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে নূর।গায়ে পাতলা চাদরটা টেনে দিয়ে বের হতেই যাবেন তৎক্ষণাৎ ওনার হাত ধরে নূর। মলিন মুখে শুধায়।
“মা বাবার আদর কেমন ছিল গোঁ?”

রূপা আহমেদ নিশ্চুপ, নৈঃশব্দ্যে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চোখের কার্নিশ বেয়ে। বাবার আদর!আহ মেয়েটা কখনো বাবার আদর পায়নি।যতটা সময় পেয়েছিল তখন মাস খানেকের হবে নূর,ছোট বেলায় এমনি ভাবে বাবা বাবা বলে সারাদিন জিজ্ঞেস করতো। তার কী বাবা আসবে না? বরাবর নিশ্চুপ থাকতেন রূপা আহমেদ।এইবারেও তাই হলো। কিচ্ছু বলতে পারলেন না রূপা আহমেদ, বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।
নূর চুপচাপ শুয়ে রইলো, অতঃপর বুঝতে পারলো তার চোখ দুটো ভিজে উঠেছে।
____________________
ভেজা চুল মুছতে শুরু করেছে শাহা,ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় লক্ষ্য করলো এক জোড়া চোখ তাকে গভীর দৃষ্টিতে দেখছে। মুচকি হেসে বলল।
“কী দেখছেন আপনি?”

সোহান কিছু বললো না সে নিজের কাজে ব্যস্ত,এক সময় বিছানা ছেড়ে উঠে শাহার অনেকটা কাছে চলে আসে।
“তুমি এত মায়াবী কেন? এত্ত আদুরে,খালি আদর করতে এবং ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।”

শাহা চুপ রইল, দৃষ্টি তার ফ্লোরের দিকে।বেশ লজ্জা লাগছে তার, ইতিমধ্যেই সোহান শাহার কো’ম’ড় টেনে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে শাহা কে।
“কী করছেন?কেউ চলে আসলে কী বলবে?”

সোহান ঠোঁ’ট কাম’ড়ে হাসলো।শাহার কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে বলে।
“আমার বউ আমি যা ইচ্ছে করবে কেউ দেখলেও কিছু যায় আসে না।”

শাহা সোহানের পাগলামিতে মজা পায়, ওর বুকে আলতো ধা’ক্কা দিয়ে বলল।
“এখন এসব ছাড়ুন আর আমাকে কলেজে দিয়ে আসুন।”
“ইয়েস ম্যাডাম। এখুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

সোহান টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো,শাহা তাড়াতাড়ি কলেজের জন্য তৈরি হয়ে নেয়।

সকাল সকাল রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পৃথক, আজকে একটা জরুরী মিটিং আছে তার। দশটার মধ্যে পৌঁছাতে হবে,তাই এত তাড়াহুড়া।

সাদা ফকফকা জামা পরে কলেজে গিয়েছে নূর,ক্যান্টিনে বসে ছিল সে, হঠাৎ কেউ তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, প্রথম দিকে ভয় পেয়ে গেল নূর। পরক্ষণে দেখলো শাহা কে,কালো রঙের একটা শাড়ি পড়েছে সে।বেশ মানিয়েছে শাহা কে।
“ও মাই গড শাহা!”

নূর উৎফুল্ল হয়ে জড়িয়ে ধরে শাহা কে, দু’জনেই বেশ খুশি।
“তুই আসবি একবারো বললি না?”

শাহা নূরের প্রশ্নে হাসলো, দু’জনেই পায়ের চেয়ারে বসে।
“তোকে সারপ্রাইজ দেবো বলেই তো কিছু বললাম না।”

নূর বললো।
“ঠিক আছে তবে কে দিয়ে গেলো তোকে?”
“আর কে?সোহান অফিসে যাওয়ার আগে নামিয়ে দিলো।”

নূর বেশ মজা নিয়েই আওড়াল।
“আহা কী লোমান্টিক হি হি।”
“আচ্ছা চল এখন ক্লাসে যাই, তবে শুন বিকেলে কিন্তু আমি বাড়ি যাবো তোর সাথে।”

নূর বিস্ময় নিয়ে বলে।
“সত্যি?”
“ইয়েস।”

অতঃপর দুজনে ক্লাসে চলে গেল।
বিকেলের দিকে বাড়ি পৌঁছে যায় শাহা এবং নূর, নূরজাহান চৌধুরী বাড়িতে নেই। নিজের বাপের বাড়িতে গিয়েছে, কোনো এক কারণ বশত তার বড় ভাই ডেকেছে।নিমু রান্না করছিল,তখন বলিষ্ঠ হাত তার পেট স্পর্শ করে।ক্ষনিকের জন্য থমকে যায় নিমু। অতঃপর হাতের মালিক কে জানতে পেরে মুচকি হাসে।
‘কী ব্যাপার স্যার এত্ত তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন।”

রিয়াজ খপ করে জড়িয়ে ধরে নিমু কে, ফিসফিস করে বলল।
“আজকে বাড়িতে কেউ নেই এটাই তো রোমান্স করার সঠিক সময়।”

নিমুর বেশ ভালো লাগে রিয়াজের এই পাগলামো।
হঠাৎ ভেতরে এসে হাজির হয় নূর ও শাহা।
“উপ্স ভাইয়া স্যরি স্যরি।”

নিমু ওদের দেখে লজ্জা পেয়ে সাইটে সরে দাঁড়ালো।
নূর ফিক করে হেসে উঠলো।
“ইস্ ভাই ভাবি তো সেই আগের জুটি একদাম রোমান্টিক।”

শাহাও নিমু কে কনুই দিয়ে ধা’ক্কা দিয়ে বলে।
“আহা ভাবি কী ব্যাপার বলো তো?এত রোমান্টিক হও কী করে তোমরা?”

তখনি নূর ফোড়ন কে’টে বলে।
“হ্যা হ্যা বলো,যাতে ও কিছু শিখতে পারে। এখন তো বিয়াইত্তা মহিলা তাই তো!”

বেচারি নূর মলিন মুখে বলে তৎক্ষণাৎ সবাই হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
রুমে মেয়েলি সুবাস পাচ্ছে পৃথক, খুব সুন্দর সুবাস। তৎক্ষণাৎ চোখ বুজে ঘ্রাণ টেনে নিলো, আশেপাশে ভালো করে লক্ষ্য করেও কাঙ্খিত জিনিসটা খুঁজে পেলো না। অতঃপর দেখলো ওয়শরুমের দরজা বন্ধ,যা আন্দাজ করার তা বুঝতে পারলো।
বাইরের স্যুট খুলে কালো রঙের একটা ট্রাউজার নামিয়ে নেয় পৃথক, অপেক্ষা করে নূরের বাইরে আসার।খট করে দরজা খুলে বাইরে আসে নূর, হঠাৎ সামনে পৃথক কে দেখে চমকে উঠে।এই মূহুর্তে তাকে এখানে আসা করেনি, না জানে এখন কত বকাই না তাকে দেবে।সেটা ভাবতেই শিউরে উঠলো নূর।
লোকটা নিজের ঘরে কাউকে আসতে দেয় না,মূলত পছন্দ করে না। এদিকে নূর প্রায় বার কয়েক এসেছে।
“আপনি?”

পৃথক নড়ে চ’ড়ে উঠলো।
“আমার রুম আমি থাকাটা কী অস্বাভাবিক?”

নূর এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে চারিদিকে, পৃথক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।চোখে চোখ রাখতে পারছে না নূর। পৃথক ওয়াশ রুমে চলে গেল,নূর জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
নূর সেই কখন বাড়ি চলে যেতো কিন্তু নিমু এবং শাহা দু’জনে বলেছে আজ থাকার কথা।
শাহা কিছুক্ষণ আগেই চলে গেছে, সোহান এসে নিয়ে গেছে। এবং যাওয়ার সময় বলেছে কাল দিয়ে যাবে,যাতে শাহা কিছু দিন থাকতে পারে এখানে।
নিমু কে বলেছিল নূর শাহার রুমে থাকবে, কিন্তু তা হতে দেয়নি নিমু।বেশ গুছিয়েই বাহানা দিয়েছে যে শাহার রুম অপরিষ্কার হয়ে আছে, তুমি বরং পৃথকের রুমে থাকো।
এক সাথে থাকবে কথাটা ভাবতেই অন্তঃপুরে জলো’চ্ছ্বা’স হচ্ছে তার। বুকের ভেতর দ্রুম দ্রুম শব্দ বেড়েই চলেছে।
পরনে কালো ট্রাউজার এবং সফেদ ট্রি শার্ট পরে বের হয় পৃথক,চুল গুলো থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।হাতে থাকা টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে নূরের দিকে পৃথক।
“কী হয়েছে এভাবে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছিস কেন?”

নূরের শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে এখুনি প্রাণপাখি বেরিয়ে যাবে,যতই মুখে বলুক সে পৃথক ভাইয়ের বউ। কিন্তু সামনাসামনি একা কী ঘরে তাকে দেখে কেউ বলতেই পারবে না মেয়েটা পৃথক কে দেখে ল’জ্জায় লাল হয়ে উঠেছে।
“পৃপৃথক ভাই আসলে,,,,
নূর কিছু বলতে অক্ষম তার পূর্বেই পৃথক পুরুষালী ঠোঁ’ট দিয়ে চেপে ধরে নূরের অধর খানি। বারংবার কেঁ’পে উঠলো নূরের ছোট্ট শরীর টা।এক পর্যায়ে সেও প্রতিক্রিয়া দেখালো পৃথকের প্রতি।গলা জড়িয়ে ধরে তার,এক সময় পাঁজা কোলে তুলে নেয় নূর কে পৃথক। এগিয়ে যাচ্ছে বিছানার দিকে,নূর কিছু বলছে না। আস্বাদন করতে ব্যস্ত সে।
পুরুষালী বলিষ্ঠ হাত দুটি স্পর্শ করছে নূরের স্পর্শকাতর জায়গা গুলো।সফেদ ট্রি শার্ট খা’মচে ধরেছে নূর।
“পৃথক ভাই!”
“বউ জান।”

চলবে……………✨।