ভালোবাসার আলিঙ্গন পর্ব-০৬

0
151

#ভালোবাসার_আলিঙ্গন
পর্ব [০৬]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
এক বালতি পানি এনে মুখের উপর ফেলে পৃথক, প্রচন্ড রকম ভয় নিয়ে লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে নূর।
“পৃথক ভাই এটা কী করলেন?”

অনেকটা রেগে চেঁচিয়ে উঠলো নূর,পৃথকও বের গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে।
“তুই কোন রাজের রাজকুমারী? এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাস,বের হো আমার রুম থেকে।”

নূর ক্ষে’পে যায়,উঠে দাঁড়ালো বিছানার উপর।রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল।
“আপনি আমার বিউটি স্লিপ ন’ষ্ট করে দিলেন? আপনাকে তো আমি,,,,,,

নূর বিছানা থেকে নেমে গিয়ে পৃথকের চুল টানতে লাগলো।
“ছাড়বো না,আজ এসপার নাহি তো উসপার।”
“ডা’ই’নি বুড়ি ছাড় আমাকে না হলে কাঁচা চা’বিয়ে খাবো।”
“তার আগেই আমি আপনার চুল ছিঁ’ড়ে দেব।”

নূর ঘুমের মধ্যে পৃথকের চুল টানতে শুরু করে, কঁকিয়ে উঠলো পৃথক।
“এইইইইইইইইইইইইইইইইই মেয়ে ছাড়, নূরের বাচ্চা ছাড় আমাকে।চুল টানছিস কেন?”

নূর ঘুমের মধ্যেই পৃথক কে বললো।
“লাথি মা’র।”
বলেই এক লাথি মে’রে বিছানা থেকে ফেলে দিলো পৃথক কে নূর।
“ও বাবা আমার কো’ম’ড় গেলো রে।”

ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো পৃথক, নূরের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।সে দেখলো পৃথক নিচে বসে আছে। হঠাৎ পৃথক কে নিচে দেখে আশ্চর্য হলো সে।
“এ বাবা পৃথক ভাই আপনি ওখানে কী করছেন এতো রাতে?”

পৃথক রাগে ফুঁ’সতে থাকে, ধমক দিয়ে দিয়ে হিসহিসিয়ে বললো।
“বেয়াদব মেয়ে আমাকে লাথি মে’রে ফেলে দিলি, শুধু লাথি কী বলছি তুই তো চুল গুলো শেষ করে দিয়েছিস।”

নূর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে জিভে কাম’ড় দেয়,মনে মনে বললো।
“এটা কী করলাম আমি? এবার ম্যানেজ দিতে হবে।”

নূর নিজেকে ধাতস্থ করে বিছানা থেকে নেমে পৃথক কে ধরে তুলে।
“কী বলুন তো নিজেই হয়তো স্বপ্নে হাডুডু করছিলাম তার মধ্যে দেখলাম আপনি এসে গেছেন মাঠে,তখন আমার মাথায় একটা কথাই ঘুরছিল।নূর তোকে জিততেই হবে,তাই জন্য দে লাথি,এর পর,,,,

পৃথক নূর কে কথার পিঠে থামিয়ে দিল।
“তার পর তুই আমাকে লাথি মে”রে বিছানা থেকেই ফেলে দিলি।”

নূর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল, পৃথক ফের বললো।
“তোকে বিয়ে করলে তো দেখছি দু দিনে আমাকে মে’রে ফেলবি, ও মা গোঁ কোম’ড়ে কী জোরে লাগলো ইস্।”

নূর কিছুই বললো না আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলো,যাতে পৃথক তাকে মে’রে টেরে না দেয় আবার। নূরের ভাবনার মধ্যে পৃথক ওর কান টেনে ধরলো
“মনটা বলছে থা’প্প’ড় দিয়ে তোর বত্রিশটা দাঁত ফেলে দি।”
“আহা ভুল করছেন, বত্রিশ না ত্রিশ হবে।”
“কীঈ?”
“বুঝলেন না? আম্মু বলেছে আমার এখনো আক্কল দাঁত উঠেছি,দুই দিকে আরো দুটি দাঁত উঠতে বাকি আছে। এখন আপনি বললে বত্রিশ, কিন্তু আমার দাঁত তো ত্রিশ টা!”

পৃথকের মাথায় রিতিমত আ’গু’ন ধরে গিয়েছে,সে ধমক দিয়ে বলে।
“তুই কী আমাকে উঠাতে চাস নূরের বাচ্চা,তুই নিজে যাবি না কী আমি বের করবো? আমি বের করলে পা আর জায়গায় থাকবে না।”

নূর গুটি গুটি পায়ে সুর সুর করে বের হয়ে গেলো,সে জানে পৃথক রেগে গেলে কী করবে?তাই আর বিরক্ত করলো না। চুপি চুপি শাহার রুম খুলে ওখানেই শুয়ে পড়লো।
__________________
“আপনার সাথে বসে খাবো মামা?”

সকাল সকাল সবাই এক সাথে নাস্তা করতে বসেছিল,তখন নূর এসে পৃথকের জায়গা দ’খ’ল করে নেয়।সাফিন চৌধুরীর পাশের চেয়ারে পৃথক সবসময় বসে, কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম হলো।নূর এসে বসলো। তৎক্ষণাৎ সাফিন চৌধুরীর খাওয়া প্রায় শেষের দিকে,তিনি উঠতেই যাবেন তখন নূর ওনার হাত ধরে আদুরে আবদার করে বসে।
সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে,মেয়েটা বড্ড বাবা পা গল। কিন্তু ওকে বাবার ভালোবাসা দেওয়ার আগেই বাবা নামক মানুষটি হা’রিয়ে গেছে।
পৃথক সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে নূরের আচরণে একটু কেঁ’পে উঠে। নূরের পাশের চেয়ারে পৃথক এসে বসলো।
নূর সাফিন চৌধুরীর হাত ছেড়ে দেয়,সাফিন চৌধুরী আদুরে হাত রাখে নূরের মাথায়।
“হ্যা অবশ্যই খাবি,এই নূরজাহান তাড়াতাড়ি ওর প্লেটে খাবার দাও।”
“হ্যা দিচ্ছি।”

নূরজাহান চৌধুরী নূরের প্লেটে খাবার তুলে দেন, তৎক্ষণাৎ সাফিন চৌধুরী রুটির এক টু’করো মুখে তুলে দিলো নূরের।নূর প্রচন্ড উৎসাহ নিয়ে খেতে লাগলো,বার কয়েক পৃথকের দিকে তাকায়।পৃথক নিষ্পলক চেয়ে আছে,মেয়েটা বড়ই অদ্ভুত। একটু চঞ্চল বটে, কিন্তু সরল, খুবই সরল মনের।তাই সে এই পৃথক চৌধুরী এত ভালোবাসে ওকে, কিন্তু প্রকাশ করে না।তবে করবে খুব শীঘ্রই।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই নূর টিভি ছেড়ে বসে রইল।পৃথক হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিলো,সাড়ে নয়টা বাজে।
রিমোট নিয়ে টিভি অফ করে দেয় পৃথক।
“চল রেডি হ কলেজে যাবি না?”

কলেজের যাওয়ার কথা শুনে শুকনো ঢুল গিলছে নূর,আজকে কলেজে টেস্ট আছে। এদিকে নূর কিছুই পারে না,দু মাস হয়ে গেলো সে বই খুলেও দেখেনি এখনো।নূর মলিন মুখ বানিয়ে আওড়াল।
“পৃথক ভাই আজ না আমার খুব পেটে ব্যাথা করছে।আজ কলেজে না গেলে হয় না?”

পৃথক পকেটে হাত গুজে টান টান হয়ে দাঁড়ালো,ভ্রু নাচিয়ে বললো।
“আচ্ছা এত্ত সময় পেটে ব্যথা করেনি,যেই কলেজের কথা বললাম তাতেই পেটে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে?”

নূর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, কিন্তু তাতে পৃথকের কোনো ভাবান্তর নেই।
“যা যা তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আয়,আ’ম গ্রেটিং লেইট অলরেডি।”

নূর সুর সুর করে উপরে শাহার রুমে চলে গেলো, নিজের ব্যাগ নিয়ে আবারও নিচে আসে। পৃথক নূর কে নিয়ে কলেজে গেলো, গ্রেটের কাছে নামিয়ে দেয় নূর কে পৃথক।
“যা কলেজে আমি বিকেলে নিতে আসবো।”
নূর এবার কলেজের ভেতর দেখে আবার পৃথক কে দেখে।মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলল।
“আপনি যান না পৃথক ভাই, আমি ভেতরে যাচ্ছি। আপনার না অফিসের দেরী হচ্ছে?যান যান?”

পৃথক ভ্রুকুটি করে তাকালো নূরের দিকে, হঠাৎ এত তাড়া দেওয়ার কারণ বুঝতে পারলো না পৃথক।তার উপর আজ নূর বাহনাও করেছে না কলেজে যাবে না বলে, হঠাৎ হলো কী?

নূর অপেক্ষা করছে পৃথকের যাওয়ার জন্য।পৃথক দাঁড়িয়ে রইল,নূর ধীর পায়ে হেঁটে কলেজের ভেতর ঢুকে।পৃথক গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়া মাত্র নূর পিছনের দেয়ালের কাছে যায়, ইতিমধ্যেই শাহা ওখানে উপস্থিত হয়।
“কী রে তুই এখানে কী করছিস? ক্লাসে চল।”
“না না আমি ওই ক্লাস করব না,ইনফেক্ট আমি এখন বাড়ি যাবো।”

শাহা অবাক হলো।
“কীঈ?বাড়ি যাবি মানে কি?ক্লাস করবি না? আজকে তো টেস্ট আছে।”

নূর তুড়ি বাজিয়ে বললো”ওই জন্যেই তো করব না ক্লাস, বিশ্বাস কর তোর ভাইয়ের কসম আমি কিচ্ছু পারি না।”

শাহা কপালে হাত দিয়ে বললো।
“ওহো তুই চিন্তা কেন করছিস? আমি আছি তো, আমি হেল্প করব তোকে।”

নূর মুখ বাঁকিয়ে বলল।
“না বাবা, কেমিস্ট্রি স্যার কী কড়া।কী নজরদারি করে,ওমন ভরসায় আমি যাবো না মানে পরীক্ষা দেবো না।তুই বরং আমাকে সাহায্য কর, আমি দেয়ালে উঠছি তুই আমাকে ব্যাগটা দিয়ে দিছ।”

শাহা বাধ্য হয়ে বললো।
“ওকে।”

অতঃপর নূর কলেজের পিছনের দেয়ালের উপর উঠে কোনো রকমে নিচে লা’ফিয়ে পড়লো।শাহা ব্যাগ ছু’ড়ে দেয়,নূর যেই সামনের দিকে হাঁটতে যাবে তখনি চোখ গেলো গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুঠামদেহী পুরুষের দিকে।
চোখ দুটো লাল হয়ে আছে, মুখশ্রী জুড়ে স্পষ্ট রাগের চাপ।
“আপনি যাননি?”

কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে নূর,পৃথক কিছুই বললো না। নূরের হাত ধরে টেনে গাড়িতে বসায়, অতঃপর ফিরে যায় বাড়িতে তবে সেটা নূরের বাড়ি।
_____________
চিলড্রেন হোমে গিয়েছে রিয়াজ,নিমু কে খুশি রাখতে চায় সে।
মেয়েটা রুম রাতে তার বুকে মাথা রেখে নৈঃশব্দ্যে চোখের পানি ফেলে।মিসেস সাবিনা বলেছেন শধ্য জন্ম নেওয়া এক শিশুর মা মৃত্যু বরণ করেছে এবং কী শিশুটির বাবাও তাকে নিতে চাইছে না,সেই জন্য এই হোমে রেখে গিয়েছে।সেই বাচ্চা শিশু কে দেখতে এসেছে রিয়াজ।
“আসুন মিস্টার রিয়াজ, বাচ্চা টা ভেতরেই আছে।”
“জ্বি চলুন।”

মিসেস সাবিনা রিয়াজ কে ভেতরের একটি রুমে নিয়ে যান,বেডের উপর শুয়ে আছে ফুটফুটে একটা ছেলে। পিটপিট চোখ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
“মাশাআল্লাহ বাচ্চা কত কিউট দেখতে,আর একে নাকি ফেলে চলে গেছে?”

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রিয়াজ,কত আহাজারি করেও একটা বাচ্চা পাচ্ছে না তারা।আর সেখানে কী নি’র্দয় বাবা,এই বাচ্চাটা কে ছেড়ে চলে গেছে।
“তো মিস্টার রিয়াজ কী ভাবছেন? আপনি কি ওকে এডপ্ট করতে চান।”

রিয়াজ এক বাক্যে বলে উঠে।
“জ্বি মিসেস সাবিনা, আমি ওকে এডপ্ট করতে চাই।যা যা ফরমাল্যাটি আছে প্লিজ সব বলুন আমায়।”

অতঃপর রিয়াজ বাচ্চা টি কে এডপ্ট করে নেয়,মনে মনে ভাবে তার প্রাণপ্রিয় বউ নিশ্চয়ই খুশি হবে।

“কী করছেন পৃথক ভাই? ছাড়ুন আমি ব্যথা পাচ্ছি।”

পৃথক এক প্রকার কাম’ড় বসাছে নূরের ঠোঁ’টে।
গাড়িতে উঠা মাত্র পৃথক হনহনিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়,একটাও কথা বলছে না সে। গুরুগম্ভীর মুখশ্রী তার।নূর আড় চোখে তাকাচ্ছে বার বার।
হঠাৎ কী ভেবে পৃথক রাস্তার ধারে বড় একটা গাছের নিচে গাড়ি থামালো।
“কী হয়েছে পৃথক ভাই?”

পৃথক সীট বেল্ট খুলে নূরের হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসে, নিজের পুরুষালী ঠোঁ’টে ঠোঁ’ট চেপে ধরে।
প্রথম দিকে আবেশে চোখ বুজে নেয় নূর,পরক্ষণে বুঝতে পারলো পৃথক নিজের সুচা’লো দাঁত বসিয়ে দিচ্ছে।ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল নূর,এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় পৃথক কে।
“কেন ভালো লাগে নি?”

নূর নাক মুখ কুঁচকে বললো।
“ছে একদম মজা না, আপনার মুখের টেস্ট কী বাজে ইয়াক থু থু।”

পৃথকের মুখ কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেলো।
“কীঈ?তোর কাছে বাজে লাগলো?”
“অবশ্যই, দাঁত ব্রাশ করেন না?ছে ছে।”
“শয়’তা’ন মাইয়া।”
“হি হি।”

পৃথক পকেট থেকে চকলেট বের করলো,ফট করে মুখে গুজে বললো।
“আরেকটা দি আয়।”

নূর কিছু বলার পূর্বে পৃথক আরও একবার আস্বাদন করলো নূরের অধর।কিয়ৎক্ষণ পর ছেড়ে দেয়।
“এবার?”

নূর হামি দিয়ে বললো।
“ইয়াম্মি ইয়াম্মি।”

পৃথক ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“তাই!”

নূর বাঁকা হাসে।
“প্রথমেই টেস্টি ছিল,আরেকটা নেওয়ার জন্য ঢঙ করলাম হি হি।”
“তবে রে,,,

নূর ফট করে গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দেয়, পৃথক ওর পিছু পিছু ছুটলো।

চলবে………..✨।