ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-১১+১২

0
823

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(১১)
তানভীরের বাসার গেইটের সামনে রিকশা থেকে নামে তিনজন। উর্মিলা আসতে চাইছিলো না নাকিব কেই পাঠাচ্ছিলো। লাবিবা ধরে নিয়ে আসছে। উর্মিলাও ভাবলো এই সুযোগে স্যারের বাড়িট দেখা হবে।স্যারের বউয়ের সাথেও দেখা হয়ে যাবে। ওরকম হ্যান্ডসাম স্যার তার বউ নিশ্চয় কোন নায়িকাদের মতোই দেখতে। কথাটা বললো নাকিব। সেতো হেব্বি মজায় আছে । যা ফাটছে সব লাবিবার। বেচারা চলে তো এলো। এরপর কি হবে? স্যারের বউ যদি বদ মেজাজি হয়? বা স্যার জানার পর যদি লাবিবার পড়াশোনা ই বন্ধ করে দেয়? সাথে বন্ধু দুইটার ও যদি দেয়? চিন্তায় ঘামতে লাগলো। নাকের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। রোদের আলোয় মুক্তো দানার মতো লাগছে। বাড়ির বাইরে থেকে নাকিব দেখে বলে,
‘ আরেব্বাস! সেই তো বাড়িটা। পুরো ফুলের বাগান। এতো ফুলগাছ! ‘
‘ আসলেই। ছাদের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত যেনো ফুলেই ঢেকে আছে। মাঝখানে তিনতলা সাদা ফকফকা ভবন। একটা ছবি নেই দাড়া। ভবিষ্যত এ এই ডিজাইনে একটা বাড়ি বানাবো জীবনের সব রোজগার দিয়ে।’
নাকিব হাতে আটকায়।
‘ আরে রাখতো। তুই যে ছোটলোক সব জায়গায় দেখানোর দরকার নাই। ‘
উর্মিলা ভেংচি কাটে। বাড়িতে ঢুকতে যাবে তখনি দারোয়ান বেরিয়ে আসে। জিজ্ঞেস করে,
‘ আপনারা কে? কাকে চাই?’
‘ আমরা তানভীর স্যারের ওয়াইফের সাথে দেখা করতে এসেছি। আমরা কলেজ স্টুডেন্ট। একটা ইমপর্টেন্ট কাজে এসেছি। ‘
‘ কিন্তু উনি তো নেই।’
‘ কোথায় গিয়েছেন? মানে কখন আসবেন?’
‘ স্যারের ওয়াইফ তো নেই।’
‘ তা তো বললেন ই কিন্তু কোথায় গিয়েছেন?’
‘ আরে স্যার তো বিয়েই করেনি। ওয়াইফ আসবে কোথা থেকে?’
‘ কিহ? ‘
তিনজন একসাথে।
‘ হ্যা।আপনারা কে বলুন তো? না জেনেই চলে এসেছেন।’
‘ না মানে আমরা ঠিক জানতাম না। আর কেউ আছে বাড়িতে?’
‘ ভেতরে এসে বসুন। আমি বাড়ির ভেতর থেকে আসছি।’
বাগানে খোলা বাংলোতে বসার জন্য দেখিয়ে দেয় দারোয়ান। লাবিবারা বসলে দারোয়ান বাড়ির ভেতরে চলে যায়। লাবিবা আরো টেনশনে পড়ে গেছে। বউ নেই তবে নিশ্চয় কথাটা তানভীর খানের কাছে যাবে। তারপর? ‘ আল্লাহ রহম করো ‘ বলে উর্মিলার উপর গা এলিয়ে দেয়। নাকিব কে বলে,
‘ দোস্ত চল দৌড় দেই।’
‘ কেনো?’
‘ তানভীর স্যার জানতে পারলে তখন কি হবে ভেবে দেখেছিস? ‘
‘ আমরা কি কোন খারাপ কাজ করছি?’
‘ স্যারের বউকে স্যারের বিরুদ্ধে পিন্চ মারতে এসেছি এটা কি ভালো কাজ?’
‘ দেখিনা বাড়িতে অন্য কোন মহিলা থাকলে ম্যানেজ যদি করতে পারি।বউ নেই তো কি হয়েছে? বোন ভাবী মা তো থাকবে। ‘

দারোয়ানের দেখা মিলেছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এদিকেই আসছে। তবে একা নয়। পেছন পেছন একটা মহিলা আসছে হাতে ট্রে নিয়ে। তার পাশে আরেকজন মহিলা। সম্ভবত বাড়ির কেউই হবে। মহিলা যথেষ্ট ইয়াং তেমনি সুন্দর। লাবিবার মনে হলো এই মহিলাকে সে আগেও দেখেছে। কেমন যেনো চেনা চেনা লাগছে। তখনি নাকিব বলে উঠে,
‘ ওরে ইনি আমাদের নেতা সাহেব ফিরোজ খানের ওয়াইফ না? সম্মেলনে দেখছিলাম উনাকে। ‘
‘ আরে তাইতো। মানে কি? ফিরোজ খান তানভীর খান তামিম খান। এইই দোস্ত ইনারা একজনের সাথে আরেকজন কানেক্টেড। অথচ আমরা কিছুই জানিনা রে। সব এক পরিবারের ই লোক।’
‘ তাহলে নিতু ম্যাম ও তো কানেক্টেড। দোস্ত আমার মাথা ঘুরতেছে রে। সব এক ছোবার মানুষ এইখানে না এলে তো জানতেই পারতাম না। ‘
দোরোয়ান দেখিয়ে দেয়। ‘ মেডাম উনারাই এসেছেন। ‘
‘ আচ্ছা তুমি যাও। আর তুমি ট্রে টা রাখো। ‘
হুকুম দিয়ে মিষ্টি হাসে সোহানা ইসলাম। তিনজনের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে আসে। উর্মিলা সালাম দেয়,’ আসসালামুয়ালাইকুম। ‘
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম। বাহ তোমরা তো বেশ মিষ্টি দেখতে। কলেজ থেকে এসেছো ?’
‘ জি।’
‘ কফি নাও। তানভীর রাস্তায় আছে। চলে আসবে কিছুক্ষণের মাঝে। ‘
‘ ম্যাম। আমরা একটা বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলাম।’
‘ তানভীর আসছে। তার সাথেই কথা বলে নিও। ‘
লাবিবা মুখে কুলুপ এঁটে আছে। ফ্যালফ্যাল করে সোহানা ইসলামের দিকে তাকিয়ে আছে। চেহারাটা নিতু ম্যামের সাথে বেশ মিল আছে।গাড়ির শব্দে সাইডে তাকায়। তানভীরের গাড়িটা শো শো করে পার্কিং এরিয়ায় চলে যায়। তা দেখেই বুকে ধুক ধুক শুরু হয়। আবার ইনার কাছে অনুরোধ করতে হবে। সোহানা ইসলাম সামনে না থাকলে লাবিবা এখনি উঠে দৌড় দিতো। পারছেনা উঠতে পারছেনা কিছু বলতে। ভেতরে ভেতরে বিস্তর চিন্তা প্রভাব ফেলে। শরীর মরঘাম দিয়ে উঠে। এখন তাদেরকে দেখে তানভীর খান কি বলবে? রাগ দেখাবে? নাকি অপমান করবে? আত্মসম্মান বলতে আর কিছুই থাকবে না। সোহানা লাবিবার দিকে এগিয়ে যায়। গালে হাত রেখে বলে,
‘ প্রবলেম টা কি তোমার? কি একদম দুশ্চিন্তায় মুখটা শুকিয়ে ফেলেছো।’
লাবিবা সোহানার হাতের উপর হাত রাখে। একবার গাড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে প্রশ্ন করে,
‘ আপনি স্যারের কে হন?’
‘ মম । ‘
‘ও আচ্ছা আন্টি স্যার তো মাত্র আসলো উনার সাথে আমরা কলেজেই ডিসকাস করে নিবো। আমাকে বাসায় ফিরতে হবে। দেড়ি হলে আব্বু রাগারাগি করবে।আমরা আজ আসি হে?’
‘ আরে বসো । এতো দূর আসছো যখন কথা বলেই যাও। একি ঘামছো কেনো? নভেম্বরেও কপালে নাকে ঘাম জমেছে দেখছি। নাক ঘামলে কি হয় জানো?’
‘ কি হয়? ‘
‘ আমার আব্বাজান বেশী বেশী আদর দিবে। ‘
খুক খুক করে হেসে উঠে তানভীর। লাবিবা পেছনে তাকিয়েই তানভীরের সাথে চোখাচোখি হয়। তানভীর ভেতরে না গিয়ে এখানেই এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে। মমের সাথে লাবিবার এমন কথা কানে আসে। তানভীর তার মাকে বেশ ভালোভাবেই জানে। বাকিটুকু যেনো ননা আগায় সেজন্য কেশে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। উর্মিলা নাকিব ও হে হে করে হেসে উঠে। লাবিবা ভ্যাবাচেকা খেয়ে এদিক ওদিক তাকায়। পরমুহূর্তেই লজ্জায় নুইয়ে পড়ে।
‘ ঐতো তানভীর চলে এসেছে। কথা বলো। ‘
সোহানা চলে যায়। তানভীর ও বাড়ির ভেতরে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায়,
‘ একটু ওয়েট করো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।’

সোহানা তানভীরের ড্রেস বের করে ওয়েট করে। তানভীর ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই বলে,
‘ ওরা তোমার কাছে কেনো এসেছে?’
‘ কথা বলে নেই তারপর জানবো মম। ‘
‘ মনে হচ্ছে কোনো ক্রিটিক্যাল কিছু। মেয়ে দুটো কি সুন্দর। গুলুমুলু মেয়েটার মনে হচ্ছে বেশী প্রবলেম। মুখে কি মায়া! কেঁদেই দিচ্ছিলো যেনো!’
তানভীর মুচকি হাসে। গলা তে টি শার্ট গলিয়ে সোহানার সামনে এসে জিজ্ঞেস করে,
‘ পছন্দ হয়েছে?’
‘ এরকম মেয়ে পছন্দ না হয়ে কি পারে?লক্ষী ছাড়া ঘর আমার। সেই সৌভাগ্য কি আমার আছে? ‘
‘ মম ঠিক ধরেছো। প্রব্লেম ঐ মেয়েটারই। সামনে মেয়েটার বিয়ে। তোমাদের এলাকা জাভেদের ছেলের সাথে। ‘
‘ সেসব শুনে আমার কি কাজ? আমার ছেলে কি বিয়ে করছে?’
‘ শুনার জন্য ই তো বসে আছো । আবার বলছো কি কাজ!’
সোহানা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। কপালে তার পুত্রবধূ সুখ আর এ জীবনে হবেনা। দু দুটো দামড়া ছেলে। একটাও বিয়ে করছে না। বলতে এসেছিলো কি আর শুনে গেলো কি। ভালো ভালো মেয়েগুলো এভাবেই নাকের ডগা দিয়ে পরের ঘরে যাবে। আর সেটা সোহানা বসে বসে দেখে যাবে।

তানভীরকে লাবিবা রোজির সব কথা খুলে বলে। নাকিব ও যতটুকু জানে পুরোটাই বলে। উর্মিলা ও বিচার দেয় ফাহাদ তার সাথে কেমন ঘেসে ঘেসে কথা বলে। সবটা শুনে তানভীরের ভেতর চিন্তার কোন ছাপ দেখা যায়না। বরং তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লাবিবার নাক টানা কান্না দেখে। চোখের পানি কম নাক টানছে বেশী। এভাবে কেউ কাঁদে নাকি! খুব স্মার্টলি বরং লাবিবাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
‘ তো লাবিবা তুমি চাইছো টাকি? বিয়েটা ভেঙে যাক?’
‘ জি স্যার। আমি বিয়েটা করতে চাইনা। জেনে শুনে আগুনে ঝাপ দিয়ে জীবনটা নষ্ট করতে চাইনা। এই ছেলে বা ছেলের ফ্যামিলি কোনটাই আমার পছন্দের নয়। আপনি হেল্প করুন স্যার। নয়তো আমি শেষ হয়ে যাবো। ‘ বলতে বলতেই আরো কেঁদে উঠে লাবিবা। তানভীরের একটু খারাপ লাগে। আবার কান্নারত মুখটা দেখে মায়াও লাগে। হাতের আঙুলের গাল বেয়ে পড়া জল তুলে নেয়। ভেতর থেকে এই মেয়েটার জন্য সফট কর্ণার আগেই তৈরী হয়ে আছে। তানভীর আনমনেই সামান্য এগিয়ে আসে লাবিবার দিকে। গালে হাত দিয়ে জল মুছিয়ে দিবে সেই মুহূর্তে ই সেদিনকার লাবিবার বলা একটি বাক্য মনে পড়ে।
‘ আমাকে ছুঁবেন না। আমি পবিত্র। ‘
হাত নামিয়ে সেন্টার টেবিলে রাখা টিস্যু এগিয়ে দেয় তানভীর। নিজের জায়গায় ফিরে এসে সিরিয়াস ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে,
‘ তোমার কি মনে হয়?তোমাকে আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি? এই বিয়েটা ভেঙে গেলে তুমি কি অন্য কাউকে বিয়ে করবে? ‘
‘ না স্যার। আমার পক্ষে সম্ভব না।আমি নিজের ক্যারিয়ারে সামান্য তম সেক্রিফাইস করতে রাজী না। ‘
‘ সেজন্য তুমি বার বার আমার কাছেই কেনো আসছো? ‘
‘স্যার আপনিতো_’
‘ হ্যা আমিই এখন মাধ্যম হিসেবে আছি। কিন্তু আমি কিন্তু কোন পরিবারেই প্রস্তাব রাখিনি। তোমার সাথে দেখাই আমার যেদিন তোমাকে কলেজে দেখতো এলো সেদিন। এর আগে দু একবার চোখে পড়লেও পড়তে পারো। তোমার ফ্যামিলি আর ফাহাদের ফ্যামিলি দুই পরিবার দুই পরিবারকে পছন্দ করেছে তারপর যেহেতু তুমি আমার কলেজে আছো আমার মমের সূত্রে তারা এসে আমাকে জানিয়েছে। তোমাকে পছন্দ করার পর রিকোয়েস্ট করেছে যেনো আমি ব্যপারটায় থাকি। এখানে আমার কর্তৃত্ব কতটুকু তোমাকে বুঝতে হবে লাবিবা। আমার হ্যা অথবা না এ কিছুই এসে যায় না।’
‘ আপনি তাহলে কিছু করবেন না?’
‘ আজ আমি বিয়েটা হয়তো ভেঙে দিতে পারবো। কাল তোমার জন্য অন্য ছেলে এসে দাঁড়াবে। এবং তোমার বাবার সাথে কথা বলে যা বুঝলাম যে কোন অবস্থায় তোমাকে এখন বিয়েটা দিয়েই ছাড়বে। উনার বেশ তাড়া।তুমি সেদিন আমাকে যে অভিযোগ গুলো করলে সেটাও ঠিক। কি কারণে এটা আমিও জানিনা। অভিযোগ সেটাতো আমারো আছে তোমার প্রতি। আমার স্টুডেন্ট হয়ে আমার সাথেই বেয়াদবি করো। আইডির নাম কি যেনো? হ্যা। সুবোধ বালিকা। উল্টাপাল্টা মেসেজ। তার আগে গাড়িতেও তোমার লেখা একটা মেসেজ পেয়েছি। চরম বেয়াদব না হলে কেউ এমন করতে পারেনা। প্রব্লেম তোমার আর তোমার ফ্যামিলির। তা না তুমি কন্টিনিউয়াসলি আমার সাথে বেয়াদবি করে যাচ্ছো। কতোটুকু সুবোধ বালিকা তুমি আমার জানা হয়ে গেছে। ‘
বলতে বলতেই ক্রোধে ফেটে যায় তানভীর। লাবিবাকে দুটো থাপ্পড় দিলে তার এই ক্রোধ কমতো। লাবিবা মাথা নিচু করে আছে। এতোসব কান্ড ঘটিয়েছে নাকিব উর্মিলা কেউ জানেনা। দুজনেও মাথা নিচু করে আছে। নাকিব সাহস নিয়ে বলে,
‘ সরি স্যার। ও বুঝতে পারেনি। ছোট বলে ক্ষমা করে দিন।’
‘ ওকে সরি বলতে বলো। ‘
লাবিবা চোখের জল মুছে বলে,
‘ সরিই স্যার। আর কখনো হবেনা। কিন্তু আমি বিয়ে করবো না। ‘
‘ আমি চাই তুমি বিয়ে করো। মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি শুনেছো তো। আমার মনে হয় তোমার তাড়াতাড়ি বিয়ে করা উচিত। ‘
তানভীরের কথায় লাবিবা মাথা তুলে তাকায়। চোখের জল মুছে দৃঢ় গলায় বলে,
‘ আমি বিয়ে করছিনা। আপনি হেল্প না করুন এই বিয়ে আমি ভেঙেই ছাড়বো।
‘ আমিও দেখতে চাই তুমি বিয়েটা ভাঙতে পারো কিনা। ওকে ডান। তুমি যদি এই বিয়েটা ভাঙতে পারো তাহলে আমি তোমার বড় সড় একটা গিফট দিবো। এবং কি বিয়ে ভাঙার পর তোমাকে যে যে প্রবলেম ফেস করতে হবে আই মিন সমাজ তোমার ফ্যামিলিকে যেভাবে ধিক্কার দিবে পুরোটাই সামলানোর দায়িত্ব আমার।’
লাবিবা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।
‘ কি গিফট?’
‘ তোমাকে এমন বড় একটা গিফট আমি দিতে চাই যে গিফট তোমাকে সারাজীবন সুখে থাকার পথ দেখাবে। বিয়ে ভাঙার রেসপনসিবিলিটি তোমার। আর তোমাকে গিফট দেওয়ার রেসপন্স পুরোটাই আমার। ‘
লাবিবা তানভীরের মাঝে নিরব একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়।লাবিবার মাথায় এখন একটা ব্যপার ই ঘুরছে তা হলো কিভাবে বিয়েটা ভাঙা যায়।

চলবে ___

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(১২)
গেইটের বাইরে ইসমাইলের সাথে চারজন লোকের রেষারেষি চলছে। লোক গুলোকে লাবিবা চেনে। মুন্সি বাড়ির লোক। মুন্সি বাড়ির ছেলের জন্য লাবিবাকে গত চার বছর থেকে চেয়ে আসছে। এখন নাকি ছেলেটা ব্যবসা করে অনেক টাকার মালিক হয়েছে। ঢাকায় বাড়িও করেছে। সেগুলোই ইসমাইল কে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। ইসমাইলের এক উত্তর। আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমার জবানের একটা দাম আছে। কিছুতেই কথা বরখেলাপ করতে পারবোনা।
লাবিবা ঐ মুহুর্তে সেখানে উপস্থিত হয়। লাবিবাকে দেখেই একজন বললো,
‘ এইটাই ইসমাইলের মেয়ে লাবিবা। ‘
‘ মাশাআল্লাহ। মেয়ে তো আসলেই অনেক সুন্দরী। ‘
ইসমাইল কথা শুনেই লাবিবাকে চিহ্ন করলো। ইশারায় বললো চলে যেতে। লাবিবা বুঝলোনা। বরং লোকগুলোর দিকে হা করে রইলো কাহিনী কি দেখার জন্য।
‘ হা করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? যাও ভেতরে। ‘ ইসমাইল রেগে মেগে ধমকে দিলো। ধমক খেয়েই লাবিবা দৌড় দিলো বাড়ির ভেতরে।

জল্পনা কল্পনা চেষ্টা অনেক করেও কোন ফল পাওয়া গেলো না। সবাই রেগে গেলো উল্টো লাবিবার দিকে। ঘরের দরজা বন্ধ করে হাওমাউ করে কাদলো। ফাহাদের সাথেও কথা বললোনা। একবার নিজেই ফোন দিয়ে ফাহাদ কে জানালো তার সম্পর্ক আছে। আর সে তার বয়ফ্রেন্ড কে অসম্ভব ভালো বাসে। লাবিবার কথা ফাহাদ যেনো গায়েই তুললো না। উল্টো হেসে উড়িয়ে দিলো। লাবিবাকে বোঝালো,
‘ দেখো তুমি সুন্দরী মেয়ে তোমার বয়ফ্রেন্ড থাকবেনা এটা অস্বাভাবিক। বিয়ের আগে দুই একটা বয়ফ্রেন্ড থাকা ভালোই। আমি ওসবে মাইন্ড করবোনা। বরং এখন থেকে তুমি আমাকে নিজের বয়ফ্রেন্ড হিসেবে মেনে নাও। তারপর আমাদের হয়ে যাবে লাভম্যারেজ। মেডাম… আমি কিন্তু আপনার দেওয়ানা হয়ে গেছি। আপনি রাগ করলেও পাগল হই ঝাঁঝ দেখালেও পাগল হই হাসলেও পাগল হই। নাছোড়বান্দা করে ছেড়েছেন আমায়। ‘
লাবিবা বুঝলো এ বান্দা তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোন উপায় কি নেই? এর মাঝে যেনো মুক্তিদূত হয়েই এলো নাকিবের ফোন।
‘ কোন উপায় খুঁজে পেলি? ‘
‘ না দোস্ত। ‘
‘ তাহলে পরশু বিয়েটা করছিস ই । ‘
‘ পারবোনা। ‘
‘ কত উপায় আছে! পালিয়ে যা। ‘
‘ আমি কি অবুঝ? নাকি টিনেজ? বাবা মার একমাত্র সম্বল আমি। কোথায় যাবো? মান সম্মান কিছু কি থাকবে? ‘
‘ দোস্ত একটা হেল্প করতে পারি। যদি তুই রাজি হস।’
‘ হবো। বল। ‘
‘ বদনাম করবি? নিজের!’
‘ কি বলিস?’
‘ সম্মান টা বিসর্জন দে। তারপর দেখবি কিছু দিনের মাঝেই পরিস্থিতি নরমাল হয়ে উঠবে। ‘
‘ পাগল হয়ছিস?’
‘ বিশ্বাস আছে তো আমার উপরে?’
‘ হ্যা। ‘
‘ তাহলে চিন্তা কর। ‘
‘ এছাড়া কোন উপায় নাই?’
‘ না। ‘

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা বেলায় জাভেদ ফাহিমের হুয়াটসএপ এ পর পর কয়েকটা ছবি যায়। ছবিতে স্পষ্ট লাবিবার সাথে একটা ছেলের খুব ক্লোজ কিছু ছবি। সীন করা মাত্রই আনসেন্ড করা হয়। বাপ বেটা এতোটাই অবাক হয় যে সস নেবার কথা মাথাতেও থাকেনা। পর পর মেসেজ আসে। যেখানে স্পষ্ট লেখা,
‘ আপনি যে মেয়েকে ঘরের বউ করতে চান উনি ইতোমধ্যে একজনের বউ আর তার সাথে অবাধ মেলামেশা রয়েছে। আপনার টাকা দেখে বিয়ে করতে চাইছে। বাঁচতে চাইলে এখুনি সরে আসুন ফাঁদে পড়ার আগে। ‘
ফাহাদের মাথা হ্যাং হয়ে যায়। কি সব দেখলো সে! প্রেম করবে কাছে যাবে এটা ঠিক ছিলো। কিন্তু বিবাহিত মেয়ে তার উপর টাকা দেখে ফাঁদে ফেলতে চাইছে ! বিশ্বাস করতে চায়না সে। সাথে সাথে টেক্সট পাঠায়,
‘ আপনি কে?’
রিপ্লাই আসে,
‘ আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। ‘
এতোবড় একটা ভয়াবহ কথা কিভাবে মেনে নিবে? তার উপর যদি তাই সত্যি হয় তাহলে লাবিবাই কেনো আগে জানাবে যে তার রিলেশন আছে? ছবি গুলো আবার না দেখতে পারলেও তখনি খেয়াল করে দেখেছে যে ঐটা লাবিবাই ছিলো কিন্তু ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছিলো না। আর একদমি ইডিট লাগছিলো না।
বিয়ের আগের দিন এরকম কিছু দেখবে ভাবতেও পারেনি।

জাভেদের মাথায় হাত। এ কি করলো সে? খোঁজে খোঁজে এতো ইনোসেন্ট একটা মেয়েকে বউ করে আনতে চাইলো সেই মেয়ে তলে তলে এতো! না না না ভালো মানুষ আর পৃথিবীতে নাই। এই মেয়ে বিয়ের পর কি করবে? সেজন্য ই তো এতো এতো শর্ত মেয়ের বাপের। তার ছেলেটাকে ঠকিয়ে প্রথম স্বামী নিয়ে ফন্দি এটেছে। এই বিয়ে দিয়ে অনর্থ কোনভাবেই করতে পারবেনা। কিন্তু ছেলেটাকেও তো কিছু বলতে পারবেনা। ছেলেটা তার মেয়েটার প্রেমে গলে গেছে। এই মুহূর্তে না করলেই কি শুনবে? লোক জানাজানি হয়ে গেছে ‌। হায় হায় রে আমার মান সম্মান সব গেলো রে। চিন্তায় কপাল চাপড়াতে লাগলো। তার স্ত্রী বুদ্ধি দিলো,
‘ এতো চিন্তা করছো কেনো? বিয়েটা হয়ে যাক ঘরে বন্দি করে ফেললেই তো হলো। ‘
‘ নাগো ফাহাদের মা। অন্য বউদের মতো এই মেয়ের পরিবার দূর্বল না। কিছুতেই ছেড়ে দিবে না। তার উপর একখানাই মেয়ে। ঝামেলা পাকাবে উনিশ থেকে বিশ হলে। এর বাপের কতবড় হাত তুমি জানো না। ‘
‘ তাহলে আমার ছেলের কি হবে?’
‘ জানিনা। বড় মুখ করে তো আনলাম।ছেলে আমার দিওয়ানা হয়ে গেছে । এখন না করলেও ছেলেই বা শুনবে কেনো? মুখ মুখেই বা না করবো?’
চিন্তায় চিন্তায় রাত পার হয়ে যায়।এদিকে ফাহাদ ও বাবাকে কিছু বলতে পারছেনা কারণ তার কাছে প্রমান নেই।আবার জাভেদ ও ছেলেকে কিছু বলতে পারছেনা। দুজনের ভাবনাতেই সকাল গড়িয়ে যায়। বাড়ি সুদ্ধ লোক। জুম্মা বাদেই রওনা হয় মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ভেতরে ভেতরে চলে বিস্তর পরিকল্পনা।

লাবিবার সম্পূর্ণ ভরসা আছে নাকিবের প্রতি। আপাতত সে টেনশন ফ্রি হয়ে ঘুমুচ্ছে। বিগত কয়েকদিন ঘুমুতে পারেনি। বেচারা আজ সকালেই ঘুম ভেঙ্গে ছে। খেয়ে দেয়ে আবার ঘুমিয়েছে। সাবিনা এসে ডেকে গেছে কয়েকবার। উঠার নাম নেই। পুরো বাবি আয়োজনে গম গম করছে। এলাকায় চ্যায়ারম্যান মেম্বার সহ মুরুব্বি রাও এসেছে। লাবিবার দুই চাচার আত্বীয় স্বজনরাও বাদ যায়নি। সল্প পরিসরেই কাছের আত্মীয় দের নিয়ে বেশ জমকালো আয়োজন করা হয়েছে। কাজিন মহলের বোনেরা একসাথে এসে দরজায় ধাক্কা দেওয়া শুরু করেছে।
‘ লাবিপু উঠো। আজ তোমার বিয়ে। উঠো উঠো। তুমি কিভাবে ঘুমুচ্ছো? বিয়ের দিন কি কেউ এভাবে ঘুমোয়?’
সাবিনা বেশ ভয়ে আছে। মেয়েটা না জানি কি করে বসে। জেদ ধরে তো আছে ই। মেয়েদের বার বার ডাকতে ইশারা করছে। লাবিবা মেয়েদের কন্ঠ শুনে উঠে বসে। আড়মোড়া ভেঙে দরজা খুলে দেয়। এতো জন কে একসাথে দেখে বলে,
‘ কিরে? সবাই একসাথে কি? যা বাড়ি যা। আমার বিয়ে টিয়ে কিছু হচ্ছেনা। ‘
‘ তোমাকে কি জোর করে বিয়ে দিচ্ছে লাবিপু? বলছো যে বিয়ে হবেনা। ‘
‘ ওদিকে তো বরের বাড়ির লোকজন চলে আসছে। আমি দেখে এলাম। ‘
‘ কিহ? সত্যি? ‘
‘ হ্যা।’
‘ এটা কিভাবে সম্ভব? এতো কিছুর পরেও এই ভ্যাবলা বিয়ে করতে চলে এসেছে? এখন আমার কি হবে? ‘
দৌড়ে গিয়ে ফোন লাগায় উর্মিলার ফোনে।
‘ দোস্ত এই ভ্যাবলা তো বিয়ে করতে চলে আসছে। তোরা কি পিক গুলো সেন্ড করিস নিই?’
‘ কি বলিস? পিক তো সেন্ড করেছি। মেসেজের রিপ্লাই ও দিয়েছি। তারপরেও কেনো এলো? ‘
‘ জানিনা। আমি কিচ্ছু জানিনা। ‘
‘ দারা নাকিব কে কল লাগাই। ‘

নাকিব ফোন তুলছে না। তিন বারের মাথায় কল ধরে।
‘ হ্যালো নাকিব। ‘
‘ হ্যা দোস্ত বল।’
‘ কি তুই?’
‘ জিলাপী খাই। আজকে মসজিদে জিলাপী দিছে। খাবি নাকি?’
‘ রাখ তোর জিলাপি। এতো পিন্চ মারলাম তার পরেও হারামজাদা টা বিয়ে করতে চলে আসছে। ‘
‘ মাইরালা! হালায় সোজা খারাপ? বিয়াত্তা মাইয়া নিবো তারপরেও লোভ ছাড়বো না। ‘
‘ কিছু একটা কর।প্লান তো ফ্লপ হলো। ‘
‘ তোর বান্ধবীরে সারা শরীর কালি মাখি থাকতে বলতে পারিস না? এতো সুন্দর হবার কি দরকার ছিলো? ‘
‘ বাজে না বকে তাড়াতাড়ি আয়। ‘
‘ আসতাছি। চুলোয় যাক জিলাপী। ‘

লাবিবাকে সাদা জামদানি পড়ানো হয়েছে। লাল ব্লাউজে সাদার কম্বিনেশন একদম ফুটে উঠেছে। চুল গুলো খোপা করে বেলী ফুলের গাজরা আর কানের পাশে দুটো লাল গোলাপ গুজে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুখটা কিছুতেই সাজানো যাচ্ছেনা। কান্নার দমকে চোখের জলে নাকের জলে বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। মামী চাচী বোনরা সবাই শান্ত হতে বলছে। আদরে আদরে বুকে চেপে ধরছে। পিঠ বুলিয়ে বোঝাচ্ছে,
‘ সোনাটা এভাবে কাঁদে না। তোকে তো শ্বশুড়বাড়ি পাঠানো হচ্ছেনা। এখানেই থাকবি। কবুলটা বলে দিবি আর একটা সাইন। আর কিছুই লাগবে না। ‘
লাবিবার কান দিয়ে কথা যাচ্ছে না। আম্মু আম্মু করছে আর কাঁদছে। সাবিনা দরজা থেকে দেখেই মুখে আঁচল চেপে চলে যায়। লাবিবার কাছে আসেনা। মেয়েটা আরো ভেঙে পড়বে। কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। নারী ছেড়া ধন কিভাবে আলাদা করবে! ইসমাইল তো চুপচাপ হয়ে গেছে। বাইরে সব কিছুর তদারকি করছে। কেউ ভালো নেই। কারো মন ভালো নেই। লাবিবার সকল অভিযোগ সত্য। তা ইসমাইল ও জানে। তবে দিন পাল্টিয়েছে। ভালো ছেলে। সব কথা পাকা করেই মেয়েকে তুলে দিচ্ছে। তবুও যেনো শান্তি পাচ্ছে না। পাওয়ার কথাও না। মেয়ের জন্য এতোবড় ঘর পাওয়াও যায়না। আজকের পর মেয়েটা অন্যের দায়িত্বে। বুক ভার হয়ে আসছে।
অবশেষে লাবিবাকে জোর করে আদর দিয়ে কোনমতে মুখে মেকাপ বসাতে পেরেছে। চোখ দুটো সাজাতে পারেনি। হালকা আইসেডো দিয়েছে না পারতে। একেকজন আসছে আর হায় হায় করছে।
‘ এ্যা মা। ছিহ ছিহ! কেঁদে কেটে চেহারা কি বানিয়ে রেখেছে। কান্না অফ। একটু হাস না মা। ‘
‘ এতো সুন্দর জামাই পাচ্ছো হাসবে তা না কাঁদছে। লোকে দেখলে খারাপ বলবেতো। অনেক হয়েছে আর কাদেনা। ‘
‘ যেভাবে মুখ করে রেখেছে বউ ! পরের বাড়ির লোক দেখলে তো বলবে নির্ঘাত কোথাও লাইন ছিলো জোর করে এখানে বিয়ে দিচ্ছে। মান সম্মান কি আর কিছু থাকবে? ‘
লাইন থেকে বেলাইনে একেরপর এক মন্তব্য ছুঁড়ছে। ছোট কাকীকে বলতেই উনি রুমে আসে। সকলকে বাহির করে দেয়।
‘ আপনার সবাই একটু বাইরে যান। হাতে হাতে কাজ গুলোও করে দিবেন।আমাদের মেয়ে একটু রেস্ট নেক।’
‘ সাজাতেই তো পারলাম না। মরা কান্না কাঁদছে যে হারে।’
‘ বাকিটা আমি সাজিয়ে দিচ্ছি। একা ছাড়ুন প্লিজ।’

সবাই চলে যেতেই কাকী এসে সাদা দোপাট্টাটা মাথায় দিয়ে দেয়। ঠোঁটের লিপস্টিক গাঢ় করে। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে দেয়। থুতনি তুলে বলে,
‘ মাশাআল্লাহ। কি সুন্দর লাগছে! লাবি মা আর কাঁদে না হ্যা। তুমি তো বোঝদার মা। দেখছো লোকে খারাপ বলছে। আমাদের সোনা মা। ‘
লাবিবা আর কাঁদে না। উর্মিলার বুকে মুখ গুঁজে থাকে। সর্বনাশ যা হবার হয়েই যাচ্ছে।

ছেলে পক্ষের সাথে বেশ তর্ক হচ্ছে। ইসমাইল দেনমোহর ধরতে বলেছে পঁচিশ লাখ। জাবেদ ধরতে চাইছে দশ লাখ। চাঁপা চাপিতে বেশ কথা উঠে। ইসমাইল নতজানু না হয়ে ই বলে, ‘ আমার মেয়ের জন্য ইচ্ছে করলেই আমি এই মুহূর্তে দশলাখ বের করতে পারি। সেখানে আপনারা কোটিপতি হয়ে মাত্র দশলাখ কিভাবে দেনমোহর ধরতে পারেন ? ‘
‘ আহা বেয়াই। যত কম দেনমোহর হবে ততো সংসারে রহমত আসবে। ‘
‘ আগের দিন বাঘে খাইছে। এখন আর সেসব বললে হবেনা। সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর ধরুন। ‘
‘ আমরা দশের উপর যেতে পারবোনা।’
‘ পঁচিশের নিচে আমি মেনে নিবো না। ‘ এক কথা দুই কথায় বেশ গন্ডগোল শুরু হয়। শেষমেষ তানভীর ই একটা প্রস্তাব রাখে।
‘ আমার মনে হয় সমঝোতা করে নেওয়া উচিত। বিশে আসুন। দশে আসলে হবে না। ‘
‘ না না অসম্ভব। আমরা নগদ দেনমোহর পরিশোধ করবো। দশের উপর যাবো না। ‘
ফাহাদ বুঝতে পারছেনা হচ্ছে টাকি। তার বাবা বা এতোকমে কেনো দেনমোহর করতে বলছে। যে কোন মূল্যেই তো এই বিয়েটা দেবার কথা। বাবার মতিগতি ধরতে বেশী বেগ পেতে হয়না। সিউর ও হয়ে যায় যখন রাগে গজগজ করতে করতে ইসমাইলের উপর হাইফত দেখায়।
‘ তোমার দুশ্চরিত্র মেয়েকে দিয়ে আমার ভদ্র ছেলেকে বিয়ে করাচ্ছি এটাই তো বেশী। সেখানে আবার আমাকে অসম্মান করো। ‘
‘ আপনি নিজে দেনমোহর বাড়াচ্ছেন না বেশ কিন্তু আমার মেয়ের সম্পর্কে উল্টোপাল্টা কথা বলতে পারবেন না।’
‘ কি উল্টোপাল্টা কথা বলছি? সম্পত্তির লোভে মেয়েকে আমার ছেলের কাছে বিয়ে দিচ্ছেন । মেয়ে নোংরামো করে বেড়ায় সেদিকে নজর নেই আপনার। মুখোশ পড়ে থাকেন মিয়া! প্রথমে তো বিশ্বাস ই করতে চাই নাই। এখন মোহরানা নিয়ে বাধিয়েছেন। কদিন পরে ডিভোর্স চেয়ে এতো গুলো টাকা হাতিয়ে নিবেন। আপনার এই রুপ না দেখলে তো জানতাম ই না। ‘
‘ জাভেদ ভাই মুখে লাগাম লাগিয়ে কথা বলুন। আমার মেয়ের সম্পর্কে উল্টোপাল্টা কিছু বলবেন না। আমি কিন্তু এটা মেনে নিবো না। ছেলের সংসার পাকাপোক্ত ই যদি করতে চান তাহলে দেনমোহর কেনো এতো কম ধরছেন? কোটি টাকা ধরলেও তো সমস্যা হবার কথা না। আপনার মতলব কি আগে সেটা বলুন। ‘
লাবিবার কাকারা প্রচুর রেগে যায়। জাভেদের পরিবারের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। জাভেদের থেকে সরাসরি প্রমান চেয়ে বসে। তাদের মেয়েকে যেচে পড়ে বিয়ে করতে এসে অপমান! তারা ছেড়ে কথা বলবেনা। কবির ও বোনের বিয়ে উপলক্ষে ছুটি নিয়েছে। সেও শাষিয়ে উঠে, মান হানি মামলা দিয়ে বসবে। ফাহাদের চাচ্চু মামা উঠে দাঁড়ায়। এই বিয়ে তারা হতে দিবে না। বিয়ে ভাঙা মেয়েকে কিভাবে বিয়ে দেয় দেখে নিবে। অত্র এলাকায় ইসমাইল কিভাবে মুখ দেখায় সেটাও দেখে নিবে। জাভেদ কে হাত ধরে টেনে তুলে। জাভেদ ছেলের দিকে তাকায়। ফাহাদ হড় হড় করে বলে,
‘ বাবা আমি বিয়ে না করে যাবো না।’
‘ এই মেয়ে ভালোনা বাবা। তোমাকে ভালো মেয়ে দেখে বড় বাড়িতে বিয়ে দিবো।’
‘ ভালোনাকে ভালো কিভাবে করতে হয় আমার জানা আছে। আমি এই বিয়ে না করে যাবো না। ‘
বাবাকে আপত্তি জানিয়ে তানভীরের হাত চেপে ধরে।
‘ স্যার এখানেই এই মুহূর্তে আমি বিয়ে করবো।আপনি বউকে আসতে বলেন। ‘
কবির রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
‘ যে পরিবারের লোক বিয়ের দিন এতো নিচু মন মানসিকতার পরিচয় দেয় সেই বাড়িতে আমার বোন কতটা ভালো থাকবে আমার বোঝা হয়ে গেছে। ফাহাদ তুমি চলে যাও এই মুহূর্তে। তোমার কাছে আমার বোন বিয়ে দিবো না। ‘
‘ আমি আপনার বোনকে ভালোবাসি। আমি লাবিবাকে না নিয়ে যাবোনা। ‘
‘ আমরাও আমাদের মেয়েকে ভালোবাসি। এতোক্ষন যে ছেলের বাবা আমাদের মেয়ের সম্পর্কে খারাপ খারাপ কথা বললো আর সেই ছেলে বসে বসে সায় দিলো তার কাছে আমরা মেয়ে বিয়ে দিবো না। ‘
কাজী সাহেব বললেন,
‘ দেখুন আপনারা সমঝোতা করেন। বিয়ে ভাঙলে খুব খারাপ দেখায়। আপনাদের ই মান সম্মান যাবে। ছেলের বাড়ির কিছুই হবেনা। ‘
‘ আমাদের মেয়েও ফেলনা না। ‘
জাভেদ বলে,
‘ উঠ ফাহাদ। এই ছোটলোকের বাড়ি আর থাকবো না।’
‘ না বাবা আমি লাবিবাকে বিয়ে না করে যাবো না। ‘

চলবে___