ভালোবাসার গুন্ঞ্জন পর্ব-২+৩

0
2310

#ভালোবাসার_গুন্ঞ্জন 💜💜

#আইদা_ইসলাম_কনিকা
#পর্বঃ০২+০৩
অফিসের মিটিং রুমে চেয়ারে বসে আছে রাদ আর সামনেই দাড়িয়ে প্রজেক্ট প্রেজেন্টে করছে নিঝুম, সামনে কাটা চুলগুলো বার বার মুখে এসে পরছে আর চুলের সাথে যুদ্ধ করে বার বার সেগুলো কানের পিঠে গুজ দিচ্ছে। আর রাদ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিঝুম এর দিকে মেয়েটা দেখতে বেশ কিউট, একটু জোরে কথা বললেই ভিজা বিড়ালের মতোন হয়ে যায়। বেশ ভয় পায় রাদকে যদিও রাদ মাহিরের মতো এতটাও কঠোর না। তারপরও নিঝুম বেশ ভয় পায় রাদকে, আবার মাহিরের সাথে তার ভালো সম্পর্ক কারণ দুজনই ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড। কিছু সময় মধ্যেই ডিলটা ফাইনাল হয়ে যায় আর সবাই একে অপরের সাথে হেন্ডসেক করতে থাকে একটা ক্লাইন্ট নিঝুমের দিকে হাত বারিয়ে দেয়, হেন্ডসেক করার জন্য কিন্তু তার আগেই রাদ এসে নিজে হেন্ডসেক করে। আর রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিঝুমের দিকে নিঝুমও কিছু বলে না….বাঘের মতো ভয় পায় রাদকে… মিটিং শেষে রাদ নিজের কেবিনে গিয়ে দেখে মাহির চলে এসেছে আর এক মনে ফোনে পাবজি খেলছে..রাদ গিয়ে মাহিরের সামনে বসে আর বলে
–তোর কি হয়েছে? বলতো আমাকে,তুই যতো যাই হোক কাজ নিয়ে হেলামি করিস না! আজকে আবার কি হলো? অফিসে এসেও মিটিং রুমে জাসনি!! মাহির বললো
–ভাইয়া, এভাবেই রে আজকে ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়েগেছে আর দেরি করে আসাতে যায়নি ।কেমন জেনো লাগছে!! ফোনটা রেখে, গলার টাইটা লুস করতে করতে, তখনই কেবিনে কেউ নক করলো। রাদ বলে
–কামিং। দেখে নিঝুম এসেছে মাহির ফাজিল কমনা সে বলে
–জানিসতো ভাইয়া আমার ১৮৮৮সালের বন্যা দেখার খুব শক ছিল, কিন্তু তা হলো কই তাই বন্যা নামে এক শুকনা পানিবিহীন বন্যাকে আল্লাহ আমাকে প্রতিদিন দেখাচ্ছে। কিরে বন্যা কি ঠিক বললামতো? নিঝুম রেগে গিয়ে বলে
–বাদর তুই আর শুধরাবি না তাই না? ভার্সিটি লাইফ থেকে জালিয়ে মারছিস আমাকে,দেখিস তোর বউ তোর চন্ডি মটকাবে ফাজিল বদ পোলা, যাই হোক এখানে তোর আর রাদ স্যার এর একটা সাইন লাগবে। মাহির পেপারটা পড়ে সাইন করে রাদের দিকে এগিয়ে দিলো রাদ তখনো এক নজরে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে… মাহিরের হলাকা কাশিতে রাদের খেয়াল করে আর তারপর সাইনটা করে দেয়। আর নিঝুম ফাইলটা নিয়ে চলে যাবার পর মাহির পিন্চ মারতে লাগে রাদকে কারণ মাহির ভালো করেই জানে রাদ নিঝুমকে ভালোবাসে , কিন্তু প্রকাশ করে না।
–অপর দিকে
বাইক নিয়ে ভার্সিটির পার্কিং সাইডে পার্ক করে আদারা আর সামনে যেতেই দেখে আলিয়া, অর্নব,দিহান,আস্তা তার জন্য দাঁড়িয়ে আছে সেও খুশি মনে যাচ্ছে তাদের কাছে। এরা সবাই হলো আদারার আরেকটা পরিবার মানে এটাই আদারা নিজের আসল পরিবার বলে মনে করে তখনই আদারার সামনে একটা ছেলে এসে হাটু গেড়ে বসে প্রেপোজ করে..ছেলেটা আশিফ.. কলেজ লাইফ থেকে.. আদারাকে লাইক করে…লাইক করে বললে ভুল হবে….শুধু একটা মহো… তা দেখে অর্নব, দিহান সবাই এগিয়ে আসে আস্তা বলে
–আজ আর এই ছেলের রক্ষে নেই, বাঘিনীর গুহায় গেছে হাত দিতে। আলিয়া বলে
–ভালো হয়েছে, একটা শিক্ষাতো পাবে।… ওরা সাবই আদারার পাশে গিয়ে দাড়ায় ছেলেটা বলতে শুরু করে
–তোমার এই ডাগর ডাগর চোখের নেশায় পরেছি আমি… তখনই আদারা বলে
— এই অর্নব ওনাকে কেন্টিন থেকে লেবু পানি এনে দে তো নেশা কেটে যাবে।… আদারার কথা শুনে সবাই হাহাহ করে হেসে দেয় অনেকে তো ভিডিও করা শুরু করে দিয়েছে আদারা আর সবাই চলে যেতে নিলে ছেলেটা পিছন থেকে বলে
–আদারা সেই কলেজ লাইফ থেকে বলছি আই লাভ ইউ….। আজ তোমাকে হ্যা বলতে হবে নয়তো আমি নিজের জান দিয়ে দিবো। বলেই পকেট থেকে একটা বেলেট বের করে হাতের কব্জায় রাখে…. তা দেখে আদারা ভ্রুকচুকে আশিফের দিকে যায় আর্নব বাঁধ দিতে চাইলেও আদারা শুনেনা… দিহান বলে
–আজকে ওর খবর আছেরে আস্তা।.. আস্তা মাথা দোলায় যার মানে হ্যা…. আদারা গিয়ে বেলেট দেখে বলে
–কাটবি না হাত কাট…, কাটিস না কেন? কাট বলছি..। বলেই পলকের মধ্যে আশিফের হাত থেকে বেলেট নিয়ে নেয় আর গলায় চেপে ধরে হালকে কেটে যায় তাতে আর তা দেখে দিহান ছুটে এসে আদারাকে ধরে আর অর্নব এসে আশিফ কে ছাড়ায়, আদারা বলে
–আজকে জানে বেচেঁ গেলি, কিছু বললাম না তোকে এরপর যদি আবার দেখি খবর আছে। আর কিছু বলতে পারলোনা দিহান টানতে টানতে ভার্সিটির ভিতরে নিয়ে গলো আদারা কে (দুঃখিত আদারা নামটা চেন্জ করতে পারবো না নামটার সাথেই জড়িয়ে গল্পের আরেক রহস্য) আর এগুলো যারা ভিডিও করেছিল তা সোশাল-মিডিয়াতে আপলোড করে দেয় মিনিট ৩০এক এর মধ্যেই ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে যায় আদারারা ক্লাসে থাকাতে এই ব্যাপারে কিছু জানেনা…Lunch ব্রেকে মাহির পাসতা খাচ্ছে আর ফেসবুকের নিউজফিডে ঘুরছে হঠাৎ করেই সামনে একটা ভিডিও চলে আসে আর সেটা দেখে মাহির প্লে না করে পারলোনা কারণ ভিডিওতে আদারাকে দেখা যাচ্ছে মাহির ভিডিওটা ওন করে দেখে আদারা একটা ছেলের গালায় বেলট দিয়ে হুমকি দিচ্ছে আর বলছে তার থেকে জেনো দূরে থাকে..মাহির তা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলে
— বাহ!! মেডামের রাগ,জেদ তো কম না…!!
–ভিডিও টা আলফাজ সহ বাসার সবাই দেখেছে…আস্তার বাসায় থেকে আসার সময় নিঝুমকে আদারা নিজেই বলেছে, নিঝুমও কিছু বলে নাই কারণ তার মতে আদারা ঠিক করেছে।আর ভিডিও টাও আদারা দেখেছে কিন্তু কিছু বলেনি কারণ সে চায় মেয়েদের যারা উইক ভাবে তাদের ভূল ধারণা যেনো আর না থাকে…বাসায় যাওয়ার পরই আদারার গালে ঠাসসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় শাহাদাত… আদারাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে

–ভার্সিটি যাও মারামারি করতে? কি সমস্যা কি তোমার? আমাদের মানসম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দিলে। আদারা এইবার রেগে বলে
–কি করেছি আমি? তখনই আদারা চাচচি আদারাকে মারতে আসলে আদারা হাতটা মুচরে ধরে আর বলে
–কাকি কাকির মতো থাকবা কাক হয়ে কা-কা-কা করবানা আর আমার গায়ে হাত তুলার অধিকার কে দিলো…? তখনই শাহাদাত আবার মারতে আসলে আদারা তার চাচিকে ছেড়ে তার বাবার হাতটা ধরে ফেলে আর বলে
–মি.শাহাদাত কান খুলে শুনে রাখুন আমি, নিঝুম আপির মতো ভদ্র নই আমি অনেক অভদ্র, আর আপনি মানসম্মান এর কথা নাই বলেই সভা পায়, আর শুনেন না আমি যা করেছি নিজের জন্য করেছি আমারতো কেউ নেই যে এসে বলবো আমি বাবা,আম্মু একটা ছেলে আমাকে ডিস্টার্ভ করে.. আর কিছু বলতে চাই না আর হ্যা… ইউ মিসেস.শাহমাত নিজের হাতকে লাগাম দেন নয়তো তা ভাঙতে ২ মিনিট লাগবে না…. আমার। নিঝুম আর আলফাজ কেউ কিছু বলছে না দেখে আদারার চাচি রুমে চলে যায় বক বক করতে করতে, যেখানে নিজের ছেলে, মেয়ে তার মার জন্য প্রতিবাদ করে না সেখানে থেকে সে কি করবে। আর আদারার দিদুন আর তার চাচা গেছে হসপিটালে দিদুনের ডক্টর দেখাতে। আয়শাও কাদঁছে হয়তো তারা যদি একটু ভালোবাসতো মেয়েটাকে মেয়েটা হয়তো এমন হতো না। নিঝুম আদারার পাশে এসে বসে আরেক পাশে আলফাজ বসে বলে
–আমার তো আর আদারা নামের কোনো ছোট বোন নেই যে বলবে ভাইয়া আমাকে ঐ ছেলেটা বিরক্ত করে।নিঝুম বলে
–আমার তো কেউ নেই যাকে বলবো আদারা আমাকে একটু বাইকে করে অফিসে নামিয়ে দিয়ে যায়।। আদারা আর না পেরে আলফাজকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়…. আদারা সহজে কান্না করে না হয়তো আজ বাবার হাত তোলাতে অনেক কষ্ট পেয়েছে আলফাজও জড়িয়ে ধরে আদারাকে তখনই নিঝুম বলে
–আমি তো আকাশ থেকে টপকাইছি তাই না? তখন তিন জনই একটা বড় হাগ করে।।
রাতে আদারা যখন ডাইনিং খেতে যায় তখন তার দিদুন আর চাচা শুরু হয়ে যায়। মানুষ কি বলবে? বড় হয়েগেছে আর অনেক কিছু আদারা আর সহ্য করতে না পেরে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। নিঝুম আর আলফাজ ডাকলেও শুনেনা আদারা যাওয়ার পর বেশ রেগে আলফাজ কয়েকটা, কথা শুনিয়ে নিজ ঘরে চলে যায় নিঝুমও আর খেতে বসে না।

ব্রিজের এক কোনে বিয়ারের বতল হাতে বসে আছে আদারা সাথে আছে তার নিজের ছায়া আদারা নিজের সাথে কথা বলছে আর বিয়ার খাচ্ছে তখনই একটা ছেলের বাইকের সাথে আদারার গাড়ির ধাক্কা লাগে তা দেখে আদারা রেগে গিয়ে বলে
–কোন বিটকেল রে আমার গাড়ির বারোটা বাজালি? এখানে আয় এই আদারার সামনে আয়য়য়…সাহস থাকলে। ছেলেটা বাইকে হেলান দিয়ে আদারার কান্ড দেখছে চাদেঁর আলোতে আদারাকে মায়াবী লাগছে। পরনে তার ওয়াইট কার্টুনের টিশার্ট আর একটা থ্রিকোয়াটার পেন্টে চুলগুলো জুটি করা আর পায়ে কার্টুন লাগানো স্লিপার ছেলেটা নিজের ফোন বের করে চট জলদি কয়েকটা পিক তুলে নিলো …
–ফ্লাস করাতে আদারা হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে। তারপর বলে
-কে আপনি? কি চাই? আমার গাড়ির বারোটা কেনো বাজালেন? ছেলেটা বললো
–ধরে নাও তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী, আর আমি এটা ইচ্ছে করে করিনি,যাই হোক তোমার সাথে কি বসতে পারি এখানে? আদারা ভ্রুকুচকে বলে
–এই কে তুই বলতো, নয়তো তোকে এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিবো।ছেলেটা হেসে বলে
–চলো বসে বসে কথা বলি,কেমন? আদারা বলে
–মামা বাড়ির আবদার!! আসছে কথা বলতে যা ভাগ, বলেই নিজের আগের জায়গায় গিয়ে বসে পরে ছেলেটাও তার সাথে গিয়ে বসে..আদারা এইবার বেশ রেগে যায় নেশায় থাকলেও কি হবে পলক পরার আগে ছেলেটাকে নিজের ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে আর বিয়ারের বোতল টা সজোরে পাশে বারি মারে আর তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় আর হাতে থাকা টুকরোটা ধরে ছেলেটার পেটে… ছেলেটা বেশ অবাক হয় তারপর কিভেবে যেনো বাঁকা হাসি দেয়.. আর নিজে আদারাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফেলে আর দু-হাত এক সাথে চেপে ধরে এক হাত দিয়ে আরেক হাত দিয়ে আদারার হাতে থাকা বিয়ারের বোতলের অংশটা নিয়ে ফেলে দেয় নিচে…।কিছু সময় আদারার দিকে তাকিয়ে থেকে জুটি করা চুলগুলো খুলে দেয়। আদারাতো নিজেকে ছাড়াতে ব্যাস্ত…আর সামনে থাকা ব্যাক্তিটা বলে…
–চাদেঁর আলোর স্নিগ্ধতায় তোমাকে বেশ মানিয়েছে, আর এই গুন্ডি লোকে আমি যে ফিদা হয়েগেছি…তার দায় ভার কে নিবে শুনি?যাইহোক এই আমি কারো মায়াতে পরি না, কিন্তু তোমার এই মায়াবী চোখের আড়ালে সেই উদাসীনি পরির মায়াতে পরে গেছি, ভালোয় ভালোয় বলছি আর আমার সামনে এসো না, নয়তো তোমার আমার #ভালোবাসার_গুন্ঞ্জন 💜💜 ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে। আল্লাহ্ হাফেজ মায়াবী রানী…. বলেই ছেলেটা বাইক নিয়ে চলে যায় আর বলতে থাকে
–“গাড়ির কোনো ক্ষতি হয়নি,আর যা বললাম মনে যেনো থাকে…মাইন্ড ইট। বলেই নিমেষে হাওয়া হয়ে গেলো
আদারাও এখন থেকে আর কি করবে বিয়ারতো শেষ তাই গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো…আর ছেলেটার কথা ভাবতে লাগলো…!! কে সে? কেনোই বা এতো কিছু বলে গেলো… উফফ আর ভাবতে পারছেনা আদারা। তাই আর কিছু না ভেবে বাসায় চলেগেলো…. আর চুপচাপ নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো…
আর ঐদিকে একজন একমনে ভেবে যাচ্ছে আদারার কথা

চলবে

❤️ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে ❤️ আর তোমাদের কি মনে হয় ছেলেটা কে? আন্তরিক ভাবে দুঃখিত আদারা নামটা বদলাতে পারলাম না কারণ গল্পের একটা রহস্য এই নামেই লুকিয়ে আছে,আর গল্পটার মেন কাহিনি আদারা কে নিয়ে । আশা করি রহস্য টা কি তোমরা সেটা জানার জন্য পাশেই থাকবে।।ধন্যবাদ সবাইকে💜💜

#ভালোবাসার_গুন্ঞ্জন 💜💜
#আইদা_ইসলাম_কনিকা
#পর্বঃ০৩
ব্যাক্তিটা আদারার হেয়ার বেন যেটা সে খুলে নিয়েছিলো সেটার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে, আর ভাবছে মেয়েটা এ-তো মায়াবী কেনো? বিশেষ করে তার চোখের দিকে তাকালে সে নিজের সর্বনাশ দেখতে পায়। ফোন থেকে আদারার ছবিটা দেখে, আর বলে
–তোমার এই রকম হওয়ার কাড়ণ কি? সেটা আমি জানিনা কিন্তু, তুমি যদি আরেকবার আমার সামনে পরো তাহলে, সত্যি আমি তোমার দেওয়ানা হয়ে যাবো…বলেই ফোনটা ওফ করে রেখে দেয়।…. রাদ লেপটপ নিয়ে বসে বসে অফিসের কাজ করছে, আর মাহির সে কখন বাসায় এসেছে আবার কখন বেড়িয়ে গেছে তার কোনো খবর নেই। রাত ১২ঃ২৬ বাজে, রাদ মাহিরের রুমে গিয়ে নক করে। গিয়ে দেখে মাহির বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এনার সাথে কথা বলছে(মাহির,রাদের বোন এনা) মাহির রাদকে আসতে দেখে কিছুসময় কথা বলে ফোনটা কেটে দেয়। রাদ বলে
–কিরে!!!বিকেলে আসার পর আবার কখন বেড়িয়ে গেলি, কিছুই তো বুঝলাম না। যাই হোক রাতে খাবি না চল…। মাহির বললো
–না ভাইয়া,খাবো না। আর এমনি একটু বেড়িয়ে ছিলাম।আচ্ছা ঘুমিয়ে পর, কালকে তো অফিস আছে তাই না? রাদও কিছু বললো না কিন্তু সে যে মাহিরকে চিনে এটা সে মাহির না মাহির আহনাফ আবিদ খান কখনো অন্যমনস্ক থাকতো না, সে ছিল খুবই কর্মঠর, আর মনোযোগী..। রাদ এইসব ভাছে আর নিজের রুমে গিয়ে নিঝুমের একটা পিক বের করে,দেখে মুচকি হাসি দিয়ে ঘুমিয়ে যায়….!!!
ভোরের স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে চারদিকে। সূর্যটা পূর্ব দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। আদারার কানে ভেসে আসছে ফজরের আজানের ধ্বনি, মেয়েটা আর যাই করুক যদি সে বাসায় থাকে নামাজ টা সে আদায় করে। যদি নিজের মধ্যে থাকে…,জলদি ওঠে পরে আর নিঝুম কেও ডাক দেয় নিঝুম বলে সে উঠবে না, তাকে নাকি আল্লাহ ছুটি দিয়েছে। আদারাও কিছু বললো না চুপচাপ নিজের ড্রেসটা পাল্টে নিলো… তারপর ওজু করে এসে নামাজ টা আদায় করে নিলো..।বাসার সবাই এখন ঘুমে। বাহিরে থেকে একটা মিষ্টি বাতাস আসছে তাই আদারা ভাবলো, একটু হেটে আসবে সামনে থেকে… যেই ভাবা সেই কাজ… পরনে তার সাদা কালের থ্রিপছ…,মাথায় ঘোমটা মনে হচ্ছে আসমান থেকে একটা ডানা কাটা পরি নেমে এসেছে।…. আধার ভাবটা এখনো কাটিয়ে ওঠেনি, বাতাসে আদারা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে…। হাটতে হাটতে আদারা নিজের অজান্তেই অনেকটা দূরে চলে আসে। জায়গাটা বেস সুন্দর অনেকটা পার্কের মতোন চারদিকে বসার জন্য বেন্ঞ্চ, আর একটু আগালেই একটা লেক। আদারা লেকের পারে গিয়ে বসে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে মানুষজন ও মসজিদ থেকে বাসায় ফিরছে…। তখনই কেউ আদারার পাশে এসে বসে… আদারা তার দিকে তাকায়, ছেলেটা বেশ সুন্দর কিন্তু এতে আদারার কি? আদারা ওঠে চলে যেতে নিলে… ছেলেটা তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে
–হাই আমি মাহির আহনাফ আবিদ খান… (মাহির নামাজ পড়তে এসেছিলো মসজিদে এটা মাহিরের পছন্দের জায়গা তাই প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর সে এখানে আসে।…আর আজকে এসে দেখে তার মায়াবী পরি, একা একা আরেক নতুন রুপে বসে আছে।)আদারা বলে
–তো আমি কি করতে পারি? মাহির বলে
–আপনার নাম কি? আদারা বলে
–এই!! আপনাকে আমি চিনি? মাহির বললো
–হুমম, এখন পরিচয় দিন তারপর জানা হয়ে যাবে।
–আদারা আফাফ…। মাহির বললো
–নাইছ নেম।বাট আমি কি আদর বলতে পারি?…আদর নামটা শুনার সাথে সাথে আদারার চোখ দুটি দিয়ে আপনাআপনি জল পরছে আদারা বলে
–না। আমি আদারা, আদারা আফাফ। তো আফাফ অথবা আদারা ডাকলেই খুশি হবো,চেনা নাই জানা নাই আসছে। মাহিরের চোখে এড়াতে পারেনি আদারার চোখের জল, আদারা চোখের কোণের জলের কারণ মাহিরের অজানা কিন্তু তা সে বেশি সময়, থাকবে না।
মাহির নিজের পকেট থেকে রুমালটা বের করে দিয়ে বলে…
–নাও,আর কান্নার কারণটা কি?… আদারা বলে
–কিছু না,চোখে কিছু পরেছে আর কিছু না। মাহির বললো
–চলো..তোমায় বাসায় পৌঁছে দেই। আদারা বলে
–আমাদের মেয়েদের কোনো বাসা হয়না, আর ধন্যবাদ ব্যবহারেই খুশি। বলেই আদারা হাটার গতি বাড়িয়ে দিলো এক পর্যায় দৌড় দিলো আদারা…. আর মাহির পিছন থেকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে
–মেয়েটা আদর নামটা শুনার পর কাদঁলো কেনো? কিন্তু আজ অন্য রূপে আদারাকে বেশ মানিয়েছে। মাহির আর লেট করলো না চলে গেলো বাসায়…. অপর দিকে আদারার বাসায় সবাই ঘুম থেকে উঠে পরেছে। শাহামাত,শাহদাত আর দিদুন সোফায় বসে চা খাচ্ছে আর আলফাজ নিঝুম ডাইনিং এ বসে অপেক্ষা করছে আদারার জন্য…. আদারাকে প্রথেমে কেউ খেয়াল না করলেও যখন দেখে সবাই অবাক। কারণ আদারাকে এই রূপে কেউ দেখে না তেমন। সবসময় জিন্স,টোপস পড়ে। নিঝুম ও একটু অবাক কারণ আদারা এরকম ভাবে বেরহয় না আদারা সবার দৃষ্টি উপেক্ষা করে ডাইনিং গিয়ে নিঝুম আর আলফাজ কে গুড মর্নিং বলে একটা টোস্টে জেম ভরিয়ে খেতে খেতে ওপরে চলে যেতে থাকে তখন শাহাদাত জিজ্ঞেস করে
–এতো সকালে কোথায় গিয়েছিলে? আদারা কিছু না
বলেই নিজের রুমে চলে যায় কারণ সে কারো সাথে কথা বলে না। কাল ফ্রাইডে +নিঝুমের বার্থডে তাই বাসার সবাই ডিসকাস করছে কাকে কাকে ইনভাইট করবে বা কিভাবে বাসা সাজানো হবে। আদারা ভার্সিটি যাওয়ার সময় সবটা শুনলো, আর তার বার্থডের কথা তো কেউ মনেই রাখে না। নিঝুম আর আলফাজ ছাড়া। তাতে তার কিছু যায় আসেনা। কারণ দিহান,অর্নব, আস্তা,আলিয়া তার বার্থডে যাকজমক ভাবে পালন করে। আলফাজ কে বায় বলে সে ভার্সিটির জন্য চলে যায়। আর নিঝুম অফিসে বসে বসে কাজ করছে তখনই মাহির নিঝুমকে কেবিনে ডেকে পাঠায়… নিঝুমও যায় দরজায় নক করার সাথে সাথে মাহির বলে
–কামিং…. নিঝুম বলে
–আমাকে ডেকলি যে, কিছু কি ভুল হয়েছে? মাহির বলে
–না৷ গত মাসের ফাইলগুলো একটু দিতে পারবি? নিঝুম মাথা দোলায় আর রাদ তখন মিটিং রুম থেকে কেবিনে ঢুকে দেখে নিঝুম আর মাহির কিছু নিয়ে ডিসকাস করছে। রাদ কে দেখে নিঝুম বলে
–রাদ স্যার আর মাহির আপনাদের একটা কথা বলার ছিল। রাদ বলে
–হুমম বলো। মাহিরো বলে
–বল। নিঝুম বলে
–কালকে তো ফ্রাইডে তাই না? অফিসও ওফ আর কালকে আমার বার্থডে তাই বলছি আপনারা যদি যেতেন তাহলে ভালো হতো। মাহির বলে ওঠে
–ও হ্যা হ্যা কালকে তো পানিবিহীন বন্যার বার্থডে তোর কত বছর হলো রে? দাড়া আমি হিসাব করছি।২০২১-১৮৮৮=১৩৩ বছর আল্লাহ। বন্যা ভ্রুকচকে বলে
–হাদারামের ভাই গাধাঁ বন্যা ১৯৮৮ সালে হয়েছে বলেই চলে যায়, আর বলে কালকে আসবি কিন্তু তোকে কারো সাথে মিট করাবো যে তোকে ২ মিনিটে লাইনে নিয়ে আসবে। বন্যার যাওয়ার পর মাহির বললো
—ভাইয়া বন্যা তোকে হাদারাম বললো। রাদ এতখোন হাসছিল এদের কাহিনি দেখে কিন্তু মাহিরের কথা শুনে বলে
–কখন? মাহির বলে
–হাদারামের ভাই বলছে আমার ভাইতো তুমিও আর এরমানে তুমি হাদারাম। হাহাহহা। মাহির তো হাসছে রাদ মনে মনে একটু একটু করে রাগছে। মাহির বলে, –আচ্ছা সরি। কাল কিন্তু আমি যাচ্ছি তুই যাবি না? রাদ চোখের ইশারায় বলে হুমমম। মাহির জানতো রাদ যাবে, বড় কথা হচ্ছে ভালোবাসার মানুষের জন্মদিন।

–ওপর দিকে আদারা ভার্সিটি শেষে আলাফাজ কে ফোন করে বলে দেয় তার আসতে আজ লেট হবে বাসায় আর কিছু বলতেও দেয়না ফুন কেটে দেয়।
যতো যাইহোক আজ নিঝুমের বার্থডে তাই সপে গিয়ে একটা কেক কিছু লাইটিং আর ডেকোরেশনের জন্য বেলুন, আর নিজের জমানো টাকা থেকে একটা পারপাল কালারের গাউন কিনলো। আদারা আাসায় আগেই চলে আসে কিন্তু পিছনের গেট দিয়ে কেকটা ফ্রিজে এমন ভাবে রেখে দয় এটা বুঝা দায় হয়ে পরে এখানে কিছু আছে। তারপর আদারা চলে যায় ছাদে.. গিয়ে পুরো ছাদটা নিজ হাতে সাজায়। ১২ টা বাজতে আর মাত্র ৭মিনিট বাকি গাউনটা নিয়ে নিঝুমের হাতে ধরিয়ে বলে
–হ্যাপি বার্থডে আপি তখনই আলফাজ এসে শুভেচ্ছা জানায় নিঝুম ধন্যবাদ দিলে পরে আদারা আলফাজের কানে কানে বলে ফ্রিজে কেক আনা আছে সেটা নিয়ে আসতে আলফাজ ঐটা আনতে যায় আর আদারা নিঝুমের চোখ বেধে নিয়ে যায় ছাদে। নিঝুম তো পুরো অবাক জড়িয়ে ধরে আদারাকে ধন্যবাদ দেয় আর আলফাজ কেক হাতে চলে আসে ছাদে… ওদের চিল্লাচিল্লিতে বাসার সবাই ছাদে চলে আসে। শাহমাত বলে
–কি হচ্ছে? এইসবের কি দরকার ছিল কালকে তো…দিদুন বলে
–আহ,করতে দে ওদের। দিদুনের কথা শুনে আদারা মনে মনে খুশিই হয় কিন্তু তা প্রকাশ করে না সবাই একসাথে কেক কাটে.. নিঝুমের পার পাশে দাড়িয়ে আছে আদারা নিঝুম কেক কেটে তার মার সামনে দিয়ে কেকটা আদারার মুখের কাছে ধরে নিঝুমে মা তো কেকটা খাওয়ার জন্য হা পর্যন্ত করে নিয়েছিল কিন্তু হলোকি তার উল্টো। নিঝুমের মা এতে রাগ করলেও নিঝুমের কিছু আসে যায় না পার্টি করা শেষে আদারা সব ডেকোরেশন খুলে ফেলে দেয় আর নিত্যদিনের মতো বিয়ার হাতে ছাদের শেষ কিনারয় বসে পরে আর তার সঙ্গী হয়ে তারপাশে বসে আছে তার নিজের ছায়া। তার জবীনটা আর ৫টা মেয়ের মতো না কেনো?

চলবে…