ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-০৫

0
2204

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা- Mehruma Nurr
#পর্ব-৫

★আদিত্য মাত্রই অফিসের কেবিনে এসে বসেছে। একটু পরেই কেউ নক করলো।আদিত্য টেবিলের ফাইল হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বললো।
…কাম ইন।

আদিত্যর পিএ নিসা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। পরনে একটা টাইট জিন্স আর হোয়াইট শার্ট।শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে দিয়েছে যাতে বুকের ভাজ টা দেখা যায়। মুখের ওপর মনে হয় দুনিয়ায় যত মেকআপ আছে সবই ঢেলে দিয়েছে। আজ সে মনে মনে পণ করে এসেছে।যে করেই হোক আজ আদিত্যের এ্যাটেনশন পেয়েই ছাড়বে।ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে আদিত্যর কাছে যেয়ে বলে।
…গুড মর্নিং স্যার।আপনার কিছু লাগবে? কফির জন্য বলবো?

আদিত্য এখনো ফাইলের দিকেই তাকিয়ে আছে। উপরে না তাকিয়েই বললো।
…নাথিং। মিটিং এর জন্য সব রেডি?

নিসা একটু হতাশ হলো।এতো সেজেগুজে এসেছে তার জন্য
অথচ একটু চেয়েও দেখলো না।তবুও নিসা মুচকি হেসে বললো।
…ইয়েস স্যার সব রেডি।এইজে ফাইল আপনি একটু দেখে নিন।

নিসা হাতের ফাইল নিয়ে আদিত্যের একদম কাছে এসে টেবিলের উপর ঝুকে ফাইল দেখাতে লাগলো।
ফাইল দেখানোর বাহানায় নিজের বডি মুভমেন্ট দেখানোর চেষ্টা করছে।

আদিত্য চরম বিরক্ত হচ্ছে নিসার ওপর। মেয়েটাকে তার একদমই পছন্দ না। শুধুমাত্র ম্যানেজার আঙ্কেলের মেয়ে দেখে কিছু বলে না।নাহলে কবেই জব থেকে বাদ দিয়ে দিতো।
ম্যানেজার রফিক আদিত্যর বাবার অনেক পুরনো আর বিশ্বস্ত কর্মচারী।

আদিত্য গম্ভীর কণ্ঠে নিসাকে বললো।
…ফাইল রেখে যান আমি দেখে নিবো।আর হ্যা এটা একটা অফিস, কোনো মডেলিং এর যায়গা না। তাই এখানে এই ড্রেসআপে আর কখনো যেন না দেখি।কথাটা মনে রাখবেন।আমি কিন্তু এক কথা দুবার রিপিট করিনা।এখন যান।

বেচারি নিসার মুখটা ফাটা বেলুনের মতো হয়ে গেলো।কি ভেবে এসেছিলো আর কি হয়ে গেলো। মন খারাপ করে বেড়িয়ে গেলো নিসা।

—————————–

এসে গেছেন নবাবজাদী? বাসায় আসার সময় হলো আপনার? কি দরকার ছিলো আসার। বাইরেই থেকে যেতেন। ফুর্তি করে বেড়াতেন। বাসায় তো খেটে মরার জন্য আমি আছিই তাইনা?আমার হয়েছে যত জ্বালা। বাসার এতো এতো কাজ নিয়ে আমি খেটে মরছি। আর বিবি সাহেবা বাইরে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে। পড়ালেখা করে যেন একদম জজ ব্যারিস্টার হয়ে যাবে উনি হুহহ্। এসব যে শুধু কাজে ফাকি দেওয়ার ফন্দি, তা কি আমি বুঝিনা।

বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই,একদফা রুবিনা বেগম এর গলার মধুর বাণী শোনা হয়ে গেলো নূরের।

নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
…তুমি চিন্তা করোনা ছোট মা।আমি এখনি সব কাজ করে ফেলছি।তুমি যাও আরাম করো।

রুবিনা বেগম একটা ভেংচি কেটে চলে গেলেন।
নূর কাঁধের ব্যাগটা সোফায় রেখে ক্লান্ত শরীর নিয়েই কাজে লেগে পরলো। সে ভালো করেই জানে, রুবিনা বেগম কোনো কাজই করেন নি।ওসব শুধু ওকে ছোট করার বলে গেলেন। যা তার রোজকার কাজ।যেন নূর কে কথা না শোনালে তার খাবার হজম হবে না। সে ডায়রিয়া হয়ে মরে যাবে।

সব কাজ শেষ করে নূর নিজের রুমে এসে গোসল করে নেয়।গোসল করে বের হতেই দেখে। রবি ওর খাটের ওপর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। নূর এগিয়ে গিয়ে দেখে রবি উপরের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে একা একাই হাসছে। নূর ভ্রু কুচকে একবার উপরের দিকে তাকায় একবার রবির দিকে। তারপর বলে।
…কি হয়েছে ভাই? এভাবে হাসছিস কেন?

রবি নূরের কথা শুনে,লাফ দিয়ে উঠে বসে। মুখে হাসি দিয়ে বলে।
…ও আপু তুমি এসে গেছো?বসো বসো।
রবি নূর কে টেনে নিয়ে খাটের ওপর বসালো।
নূর দেখলো রবি কেমন যেন লাজুক লাজুক হাসছে।
…কি ব্যাপার বলতো?স্কুলে কিছু কি হয়েছে?
রবি মাথা ঝাকালো। তারমানে হ্যা।
…কি হয়েছে?
..আসলে আপু আমি, আমি না ইয়ে মানে, ইয়ে করে ফেলেছি।
…কি করে ফেলেছিস?ঠিক করে বল।
…আরে ওই যে ওইটা করে না?ওইটা।
…কি করে কিছুই তো বুঝতে পারছি না।এই তুই কি কারো সাথে মারামারি করেছিস।
…আরে ধ্যাৎ কি বলো মারামারি করবো কেন? আরে আমিতো চুমু দিয়েছি।
…কিহহ্? কি দিয়েছিস?
রবি একটু লাজুক হেসে বললো।
…আমি না নিনাকে চুমু দিয়েছি।

নূরের মাথায় যেন বাজ পড়লো। নূর কাশতে শুরু করে দিলো। নূর ভাবছে আজ কি ওদের ওপর চুমু দেবতা ভর করেছে নাকি?দুই ভাই বোনই একই কাজ করেছে।

রিপা ওর মায়ের রুমে এসে বললো।
…মা আমাকে কিছু টাকা দাওতো।
….কত টাকা লাগবে?
….২০,০০০
….এতো টাকা দিয়ে কি হবে?
….আসলে আমার এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টি আছে। তাই একটু শপিং করবো। তুমি দাওনা।
….গত সপ্তাহেই না শপিং করলি?এখন আবার? দেখ এবার তোর বাবার ব্যাবসায় লস হয়ে হয়েছে। তাই খরচ একটু কমিয়ে চলতে হবে।
…এমন করছো কেন দেওনা মা।
…দেখ তোকে তো আমি সবসময় যা চাস তাই দেই।এমনকি নূরের বাবা নূরের হাত খরচের জন্য যে টাকা দেয় সেটাও আমি তোকে দিয়ে দেই।তাহলে এবার যখন মানা করছি সেটা শোন।

রিপা কিছু না বলে চলে গেলো।মনে মনে সয়তানি হাসি দিয়ে বললো। টাকাতো আমি নিয়েই ছাড়বো যে করেই হোক।

————————

রাত ৭-৩০
সানা ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে বসে টিভিতে মোটু পাতলু দেখছে। আবির পিছন থেকে এসে সানার মাথায় চাটি মেরে দিল।সানা মাথায় হাত দিয়ে রাগী লুক নিয়ে আবিরের দিকে তাকালো। আবির সোফায় বসে ফট করে রিমোট টা নিয়ে নিলো।সানা বিরক্ত হয়ে বললো।
…তোর সমস্যা কি ভাইয়া? সবসময় আমাকে না জ্বালালে তোর ভালো লাগে না?
আবির দাঁত কেলিয়ে বললো।
…নারে সত্যিই ভালো লাগে না। একদম পেটে গ্যাসটিক হয়ে যায়। হা হা হা…..
…আমার রিমোট দে।
…দিবোনা।এই তোর পড়ালেখা নেই? কলেজে কি শুধু ফ্যাশান শো করতে যাস? কি সারাদিন মোটু পাতলু দেখিস। তোকে ওই মোটুর মত একটা জামায় এনে দিবো। তখন বসে বসে খালি দেখিস।
…দেখ ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি। আমি কিন্তু ভাইয়াকে সব বলে দিবো। তখন দেখিস কেমন মজা।
…আরে যা যা বলে দে আমি কি ভয় পাই নাকি।

কিছুক্ষণ পর আবার আবির বললো।
…আমার কাছে আজকে ধামাকা ব্রেকিং নিউজ আছে তোর আদিত্য ভাই কে নিয়ে।

সানা এখন একটু নরম হয়ে আসলো।শান্ত স্বরে বললো।
…কি নিউজ ভাইয়া? বলনা।

আবির সয়তানি হেসে আড়মোড়া দিয়ে সোফায় দুই হাত সোফায় ছড়িয়ে পা দুটো টি টেবিলের ওপর রেখে বাদশাহী ভঙ্গিতে বসে বললো।
…আমার এখন মুড নেই।

সানা আবিরের কাধ ঝাকিয়ে বিনীতভাবে বললো।
…বল না ভাইয়া এমন করছিস কেন?তুই না আমার সোনা মোনা চোনা হ্যান্ডপাম্প থুক্কু হ্যান্ডসাম ভাইয়া। বলনা প্লিজজজ।
…কিভাবে বলবো বল?দেখ না আমার হাতে পায়ে কি ব্যাথা।ইশশ্ কেউ যদি একটু টিপে দিতো তাহলে হয়তো বলতে পারতাম।কিন্তু কে করবে বল?এই নির্দয় পৃথিবীতে কি কেউ আছে যে এই অধমের একটু সেবা করবে?
আরচোখে সানার দিকে তাকিয়ে ন্যাকা করুন কন্ঠে বলছে আবির।

সানা ভালোই বুঝতে পারছে আবির এখন সুযোগের সৎ ব্যাবহার করছে। ভেতরে ভেতরে রাগে কটমট করছে সানা।ইচ্ছে করছে আবিরের হাত পা না গলাটাই টিপে দিতে। কিন্তু কিছু করার নেই এখন। নিউজটা শোনার জন্য ওকে এখন এই গন্ডারের সেবা করতে হবে।

সানা জোরপূর্বক মুখে একটা মেকি হাসি দিয়ে বললো।
…কেন থাকবেনা। এই যে তোমার আদরের ছোট বোন আছে নাহ?সে কবে কাজে আসবে। আমি দিচ্ছিতো তোমার গলা থুক্কু পা টিপে। হে হে
সানা দাঁতে দাঁত চেপে জোরে জোরে আবিরের পা টিপতে লাগলো।
আবির মুখ টিপে হাসছে।

একটু পরে সানা বললো।
…এখন তো বল ভাইয়া।

…কিভাবে বলবো বল?গলাটা শুকিয়ে একদম কাট হয়ে গেছে। কেউ যদি একটু কফি খাওয়াতো তাহলে হয়তো কথাটা ভালো করে বলতে পারতাম।

সানার এখন ইচ্ছে করছে আবিরের মাথা ফাটিয়ে দু ভাগ করে দিতে।
দাত কটমট করে বললো।
…এখনি আনছি ভাইয়া।
সানা উঠে রান্না ঘরে যেতেই আবির অট্রহাসিতে ফেটে পরলো। সানাকে কাবু করার ভালো একটা হাতিয়ার পেয়েছে।

একটু পর সানা কফি নিয়ে এলো।আবিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো। এই নেও।খেয়ে নেও
তারপর চুপচাপ বলো কি হয়েছে।আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে কিন্তু খুব ভালো হবে না বলে দিলাম।

আবির বুঝতে পারছে সানা বেশি খেপে গেছে। একে আর কিছু বলা যাবে না। নাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
তারপর গলাটা ঝেড়ে বললো।
…হ্যা হ্যা বলবোই তো। তুই আমার এতো সেবা করলি।তার ফল তো তোকে দিতেই হবে। বস এখানে বলছি।

সানা খুশি হয়ে সোফায় বসে পরলো।
আবির উৎসাহ নিয়ে বললো।
…জানিস আজকে ভার্সিটিতে কি ইতিহাস হয়েছে?
সানা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
…কি হয়েছে? কি হয়েছে?

…আজকে একটা মেয়ে..

…একটা মেয়ে?

…আদিত্যকে…

..আদিত্যকে?

…আদিত্যকে..

…আদিত্যকে কি? বলনা জলদি।

…চুমু দিয়েছে।

সানা যেন বড়সড় একটা শক খেল।ও হা হয়ে বসে রইলো। কোনো নড়াচড়া করছে না।

আবির সানার এমন চুপ থাকা দেখে ওর মুখের সামনে হাত নাড়াতে নাড়াতে আস্তে করে ডাকলো।
…সানা,সা…না..আর ইউ হিয়ার মি?

কয়েক সেকেন্ড পর ঘর কাপিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
…আয়ায়ায়ায়া……
আবির সাথে সাথে নিজের কান চেপে ধরলো।

…কি বলছিস ভাইয়া।সত্যিই? কে? কখন? কিভাবে?হায়য়,আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। অত্যান্ত উত্তেজিত হয়ে সানা বলছে।

আবির বিরক্ত হয়ে বললো।
…এই তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? এভাবে কেউ চিল্লায়?ইশ আমার কানটা শেষ।

এদিকে সানার চিৎকারে বাড়ির সবাই ছুটে এসেছে।
সানার বাবা বললো।
..কি হয়েছে সানা? চিৎকার করলে কেন?

সানা চাচা আহনাফ বললো।
…হ্যা মা কি হয়েছে বলো?কোথাও ব্যাথা পেয়েছো?

সানা পরে গেলো মহা মুশকিলে।সবাইকে এখন কি বলবে?

সানার চাচি তুলি বললো।
…ইয়েস,টেল টেল। হুয়াট হাপানি(ওয়াট হ্যাপেন্ড)।

সানার চাচির এমন ইংলিশে সবাই অভ্যাস্ত।তাই ওরা তেমন রিয়্যাক্ট করলো না।

বেচারি তুলি বেগমের ইংলিশ বলার খুব সখ।কিন্তু সে ইংলিশ বললে মনে হয় ইংলিশের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে।

সানা মেকি হেসে বললো।
…আসলে তেলাপোকা দেখেছি তো তাই ভয়ে চিৎকার করেছি। হে হে

সবার কথার ভেতর হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে ওঠে।
সানার চাচি যেয়ে দরজা খুলতেই দেখে আদিত্য এসেছে। তুলি বেগম এক গাল হেসে বলে।
…আরে আদিত্য তুমি? ইউ হাউ আছো?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…আমি ভালো। তোমরা সবাই কেমন আছো?

…উই গুড আছি। ইউ কাম ভিতরে।
তুলি বেগম সরে যেতেই আদিত্য ভেতরে ঢুকলো।
সানা আদিত্যকে দেখে খুশী হয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
…ভাইয়া তুমি এসেছো?তুমি খুব পচা।আমার কথা একটুও মনে হয় না তোমার?

আদিত্যও দু’হাতে সানাকে জড়িয়ে নিয়ে বললো।
…কে বলেছে মনে পরে না।আমার পিচ্চিটাকে কি আমি ভুলতে পারি?

একটু পরে সবাই একসাথে ডিনার করতে বসলো।আদিত্যর চাচা আহনাফ বললেন।
…আদিত্য তুমিতো ব্যাবসার কাজ ভালোই দেখাশোনা করছো।তা এই হতচ্ছাড়াকেও একটু কাজ কর্ম শিখাও। সারাক্ষণ শুধু আড্ডা দিয়ে বেড়ায়। ওকেও বলো অফিসে বসতে।
আবির বলে উঠলো।
…এসব কি বলছো বাবা?এই ছোট ছেলেটাকে তুমি এই বয়সেই কাজে ঠেলে দিতে চাও এটা তো ঘোর অন্যায়।

আহনাফ সাহেব ভ্রু কুচকে বললেন
…আদিত্য তোমার মাত্র দুই মাসের বড়ো। সে পারলে তুমি পারবে না কেন?
আদিত্য বলে উঠলো।
…থাকনা চাচু এমবিএ টা শেষ হোক। তারপর না হয় বসবে।

আবির হেসে বললো।
…একমাত্র তুই আমারে বুজস। আই লাভ ইউ ভাই।
এভাবেই কথাবার্তার ভিতরেই ডিনার শেষ করে সবাই সোফায় এসে বসে পরে।

সানা এতক্ষণ চুপ থাকলেও এখন আর পারছে না। হঠাৎ বলে ওঠে।
…বড়ো ভাইয়া আজকে নাকি তোমাকে একটা মেয়ে চুমু দিয়েছে?

আদিত্য বেচারা কেবলি পানির গ্লাস হাতে নিয়ে মুখে দিয়েছিলো।সানার এমন কথায় গলায় পানি আটকে বিষম উঠে কাশি শুরু হয়ে যায়।
বড়োরা চরম অস্বস্তিতে পরে যায়।
তুলি বেগম মুখ টিপে হাসছে।

আবিরের চরম রাগ লাগছে সানার উপর ।মেয়েটার পেটে একটা কথাও পচে না।এভাবে সবার সামনে বলে কেউ ডাফার একটা।এখন আদিত্য আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।আল্লাহ এইবারে বাচিয়ে দেও।আর কখনও এই ডাফারকে কিছু বলবো না।

আদিত্য কোনরকমে কাশি থামিয়ে সানাকে ধমকের সুরে বললো।
…কে বলেছে এসব ফালতু কথা তোকে?
কথাটি বলে আদিত্য অগ্নি চোখে আবিরের দিকে তাকালো। যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে। ও ভালো করেই জানে এই কথা আবিরিই বলেছে সানাকে।

আদিত্যের বাবার অস্বস্তি লাগছিলো ছোটদের এমন কথা বার্তায়। তাই তিনি বললেন।
…আমি রুমে যায় ঔষধ নিতে হবে ।

আদিত্যর চাচা চাঁচিও চলে গেলেন।

আবির আদিত্যের এমন তাকানো দেখে ভয়ে শেষ। সে কোনরকমে
এখান থেকে কেটে পরার উপায় খুঁজছে।

সানা বললো।
…সে যেই বলুক না কেন। সত্যি কিনা তাই বলো?

আদিত্য গলা খাঁকারি দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
…এমন কিছুই না।মেয়েটাকে র্যাগিং করা হয়ে ছিলো তাই এমন করেছে।

…তার মানে কথাটা সত্যি। ওয়াও মেয়েটা দেখতে কেমন বলোনা।

আদিত্য হালকা ধমক দিয়ে বললো।
…আমি কি এসব দেখে বেড়িয়েছি নাকি? তুই যা শুয়ে পর রাত অনেক হয়েছে।
——————————–

নূর বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে। নাজানি কাল কি হবে? কি শাস্তি দিবে? এক কাজ করি কাল যাবোই না।তাহলে আর কিছু করতে পারবে না।কিন্তু কতদিন না যেয়ে থাকবো একসময় না একসময় তো যেতেই হবে। তখন যদি শাস্তি আরো বেশি করে দেয়? আল্লাহ তুমি রাতের ভিতর উনার মাথা থেকে সব ভুলিয়ে দেও। উনার যেন কিছু মনেই না থাকে।
এসব আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতেই একসময় নূর ঘুমিয়ে পরে।

——————————-
আদিত্য মাত্রই ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় গা টা এলিয়ে দিয়েছে। চোখ দুটো বন্ধ করতেই, ওর সামনে ভেসে উঠলো নূরের সেই ভীতু চেহারা।
আদিত্য ঝট করে চোখ খুলে উঠে বসলো।ভাবছে,কি হচ্ছে এসব? নূরের চেহারা কেন দেখতে পেলাম আমি।
আদিত্য মাথটা একটু ঝাকিয়ে নিজেকে শান্ত করে আবার শুয়ে পরলো।এবং আবারও একই ঘটনাই হলো।আদিত্য আবারও উঠে বসলো। কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে ওর।বুকের বাম পাশের যন্ত্রটা খুব দ্রুত গতিতে বিট করছে।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে কতক্ষণ ঘরের ভেতর পায়চারী করতে থাকে। কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না।বার বার শুধু নূরের চুমু দেওয়ার কথাই মনে পরছে।আদিত্য নিজের ওপরেই চরম বিরক্ত। আজ পর্যন্ত দেশ বিদেশের কত সুন্দর সুন্দর মেয়েরা ওকে নিজের শরীর দেখিয়ে কাবু করতে চেয়েছে। অথচ ও কখনো তাদের দিকে ফিরেও তাকাই নি।আর আজ কিনা ও, সামান্য একটা মেয়ের চুমুতেই কুপোকাত হয়ে গেলো?

আদিত্য আর না পেরে নিজের টিশার্ট টা খুলে ওয়াশরুমে যেয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে, শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরে। প্রায় ঘন্টা খানিক শাওয়ার নেওয়ার পর আদিত্য বেড়িয়ে আসে।এখন একটু ঠিক লাগছে। তারপর আবার যেয়ে শুয়ে পরে।তবু্ও ঘুম আসছে না।আদিত্য ভাবে, সব দোষ ওই মেয়েটার। ওর জন্যই এসব হচ্ছে। কাল একবার পাই তারপর মজা বুঝাবো।সারারাত এপাশ ওপাশ করতে করতে ভোরের দিকে ঘুম আসে আদিত্যর।

সকাল বেলা আদিত্য রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে সবাই নাস্তা করছে।ও এসে চেয়ার টেনে বসে পরে।
আদিত্য জিজ্ঞেস করে।
…এখন কি অফিসে যাবে?

..না ক্যাম্পাসে যাবো।

আবির অবাক হয়ে যায় আদিত্যের কথায়। আদিত্য কখনো ইম্পর্টেন্ট কিছু না হলে,কিম্বা আবির আর তাসির ফোন না করলে ক্যাম্পাস যায় না। তো আজ কি হয়ে গেলো?

আবির বাঁকা হেসে আদিত্যের দিকে ঝুকে আস্তে করে বললো বললো।
…কেন ভাই? আজ হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই ক্যাম্পাস?ঘটনা কি ব্রো?নাকি কাওকে মিস করছো হুম?

আদিত্য গলা ঝেরে থতমত হয়ে বললো।
…এমন কিছুই না।সামনে এক্সাম তাই ভাবছি এখন রেগুলার যাবো।

সানা বললো।
…ভাইয়া আমাকে কলেজে ড্রপ করে দিয়ে যাও।

…ঠিক আছে চল।

তারপর ওরা সবাই বেড়িয়ে গেলো।
——————————

ভার্সিটিতে এসে নূর ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কোথাও আদিত্য আছে কিনা দেখার জন্য। আদিত্যকে দেখতে না পেয়ে নূর খুশী হয়ে গেলো। ভাবলো হয়তো আজ আসেনি।মনে হয় উনি সব ভুলে গেছেন। এটা ভেবেই নূর খুশী মনে ক্লাসে গেলো।কিন্তু নূরের এই খুশী বেশিক্ষণ টিকলো না।
ক্লাস শেষ করে নূর আর তানি একসাথে বের হতেই । একটা ১৪/১৫ বছরের ছেলে ওদের সামনে এসে নূরকে বললো।
…আপা আপনারে আমার সাথে যাইতে কইছে ভাইজান।

ওরা দুইজনই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। তারপর তানি জিজ্ঞেস করলো।
…কে ভাইজান? কিসের ভাইজান?আর কোথায় নিয়ে যাবে নূর কে।

…আদিত্য ভাইজান ডাকছে এই আপারে।

আদিত্যর কথা শুনে নূরের আবার ভয় শুরু হয়ে গেলো। তারমানে লোকটা ভোলেনি। ওকে শাস্তি দিয়েই ছাড়বে।

তানি নূরের কাঁধে হাত দিয়ে বললো।
…এতো ভয় পাস না। আমি আছি তো। চল গিয়ে দেখি কি বলে।তারপর ওরা দুজনই চলে গেলো ছেলেটার সাথে।

চলবে…