#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবে💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১৩
অন্ধকারাচ্ছন্ন এক গুহায় দেয়ালে ঠাঙানে মশালগুলো ধিমিধিমি জ্বলছে যার ফলে আলোকিত হচ্ছে চারপাশ।বিভৎস দেখতে এই গুহা চারদিকে হারগোড় ভরা মানুষের কঙাল।যেকোন দূর্বল মানুষের হার্ট এট্যাক এর জন্যে যথেষ্ট।মাকড়শার জালগুলো বিভিন্ন আকৃতিতে পাথরের দেয়ালে আটকানো।আরো আছে ঝুলন্ত বাদুর।হঠাৎ কারো ভয়ানক কন্ঠে চিৎকার ভেসে আসায় বাদুড়গুলো চমকে ডানা ঝাপ্টে উড়াল দিলো।
–” অবশেষে অবশেষে রাজকুমার অবশেষে আমাদের অপেক্ষার অবষান ঘটেছে।আপনার দীর্ঘ অপেক্ষার ফল স্বরুপ আপনি সক্ষম হয়েছেন তাকে এখানে আনতে।”
হঠাৎ চারদিকে ঝড়ো হাওয়া বইতে লাগলো সেইসাথে দুলতে লাগলো চারপাশ।কিন্তু সেখানে দাঁড়ানো সম্পূর্ণ কালো পোষাকে মুড়ানো সাদা চুলে আবিষ্ট ব্যাক্তির বিন্দু মাত্র ভয় লাগছে না উলটো তার চেহারায় ফুটে উঠেছে এক অমায়িক হাসির রেখা।সেটা যে কতোটা প্রাপ্তকর তা লোকটাকে দেখেই বুজা যাচ্ছে।লোকটার চারপাশে এক কালো ধোঁয়ার কুন্ডলি ক্রমাগত ঘুর্ণন দিতে লাগলো।বুড়ো লোকটা কালো ধোঁয়ার কুন্ডলিদ্বয়ে হালকা হাত ছোঁয়াতেই কুন্ডলিটি স্থির হয়ে গেলো।
তারপর হঠাৎ এই কুন্ডলিটি নিজের অবস্থা পরিবর্তন করা শুরু করলো।বুড়ো লোকটার চোখ চকচক করে উঠলো সামনে তাকাতেই। রাজকীয় পোশাক পরিহিত এক সুবলিষ্ঠ দেহদারি যুবক,পোশাকে রয়েছে নানা ধরনের মুক্ত, পাথরের কারুকার্য যা ঝলমল করছে।যুবকটির চোখে জল টলমল করছে কিন্তু ঠোঁটে হাসি। সে ঢোক গিলে নিয়ে কাঁপা গলায় বললো,
–” আমার ভালোবাসার রাজ্যের সাম্রাজ্ঞী আমার হৃদয়ের রাণি তার পদার্পণ হয়েছে। আমার দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবষান ঘটেছে সম্ভৃষা।আমি উল্লাসিত প্রচন্ড খুশিতে বাকরুদ্ধ।আমি যাবো আমার রাজকুমারি দেখতে।আমার হৃদয়ের বাগানের গোলাপের রাণি সে।রাজকুমারি ফেরিহা! আমি আসছি তোমার কাছে আমাদের আর কেউ আলাদা করতে পারবে নাহ।আগের জন্মে তোমায় পায়নি তো কি হয়েছে?আমি আমার ওয়াদা রেখেছি আমার হৃদয়াক্ষি।”
বুড়ো লোকটি মানে সম্ভৃষা হঠাৎ মুখমন্ডলদ্বয়ে গভীর্যতা এনে বলে উঠে,
–” কিন্তু যুবরাজ মেহমাদ একটা দুঃখের সংবাদ আপনাকে দেওয়ার আছে?”
–” কি সংবাদ সম্ভৃষা?তোমার মুখদ্বয়ে এতো গম্ভীর্যতা কেন?কোন দুসংবাদ নয়তো?”
–” তেমনটাই যুবরাজ তবে আপনি বিচলিত হবেন নাহ আমি এইবার আপনাকে আর রাজকুমারি ফেরিহাকে আলাদা হতে দেবো নাহ।”
–” তুমি ভণিতা না করে দ্রুত সংবাদটা আমাকে জানাও সম্ভৃষা।”
সম্ভৃষা খানিক চিন্তিত স্বরে বললো,
–” রাজকুমারি ফেরিহার নিকাহ সম্পন্ন হয়ে গেছে যুবরাজ।”
যুবরাজ মেহমাদের বুকে যেন তীব্র এক ব্যাথার তীর গিয়ে বিধলো।অথচ তার তো হৃদয় নেই সে তো এক অতৃপ্ত রূহ যে অনন্তকাল ধরে নিজের ভালোবাসার মানুষটির অপেক্ষা করে গিয়েছে বছরের পর বছর। তবে এতো যন্ত্রনা কেন হচ্ছে? তার মস্তিষ্কে একটা কথাই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তার হৃদয়াক্ষির নিকাহ হয়ে গিয়েছে।যুবরাজ মেহমাদ তার ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ফির প্রশ্ন ছুড়লো সম্ভৃষার দিকে,
–” তুমি ভুল বলছো তাই নাহ সম্ভৃষা? আমার হৃদয়াক্ষী তো আমাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলো পরের জন্মে সে আমার হবে।তবে? তবে কেন এই বিষাক্ত বার্তা তুমি আমার নিকট প্রেরন করলে।
কেন এই যন্ত্রনাময় আগুনে আমাকে দগ্ধ করলে?”
সম্ভৃষা দুঃখীময় চাহনী নিক্ষেপ করলো যুবরাজ মেহমাদের দিকে। সে দেখতে পারছে এক বদ্ধ পাগল প্রেমিককে যে মরে গিয়েও নিজের ভালোবাসাকে মরতে দেইনি।নিজের ভালোবাসাকে অতি যত্ন করে নিজের থেমে যাওয়া স্তব্ধ হৃদয়ে আগলে রেখেছে।আজ তার অপেক্ষার অবষান হলেও সে প্রাপ্তির সুখ গ্রহন করতে পারিনি।
–” যুবরাজ আপনি মন খারাপ করবেন নাহ? রাজকুমারির নিকাহ হয়েছে ঠিকই কিন্তু ওরা এখনোও স্বামি স্ত্রীর সম্পর্কে আবদ্ধ হয়নি।
তবে আলম সিকদার মানে রাজকুমারির এই জন্মের বাবা তাদের সকল প্রথা মেনে আবারো তাদের পবিত্র নিকাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাইছে।”
যুবরাজ মেহমাদ নিজের আঁখিজোড়া চেপে বন্ধ করে নিলো।তারপর দীর্ঘ তপ্ত এক নিঃশ্বাস ফেলে রক্তচক্ষু নিয়ে সম্ভৃষার নিয়ে তাকালো।সম্ভৃষা ভয় পেয়ে গেলো যুবরাজের অগ্নিশর্মা রূপে।মেহমাদ শক্ত কণ্ঠে বলে,
–” সম্ভৃষা এখন বলো না যে রাজকুমারি ফেরিহার মনে ওই পুরুষের জন্যে ভালোবাসা আছে।”
সম্ভৃষা চোখজোড়া নিচু করে রইলো।এতে যেন মেহমাদের রাগ আরো বেড়ে গেলো।সে চিৎকার করে উঠলো,
–” আমার প্রশ্নের উত্তর দেও সম্ভৃষা।”
সম্ভৃষা নতজানু হয়ে বসে পড়লো যুবরাজের পায়ের কাছে।তার গলা কাঁপছে সে বললো,
–” রাজকুমারী ফেরিহা সেই পুরুষকে ভালোবাসে।শুধু এখন থেকে নয় যখন থেকে সে ভালোবাসার মানে বুজেছে তখন থেকেই সে ভালোবাসে ওই ছেলেকে।”
সম্ভৃষার বলা শেষ করতে না করতেই যুবরাজ বিকট এক চিৎকার করে উঠলো তার চিৎকারে পুরো গুহা কেঁপে উঠলো। সম্ভৃষা মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে কানে হাত দিয়ে রইলো।
যুবরাজ আবারো ধোঁয়ার কুন্ডলিতে পরিনিতি হয়ে চিৎকার করে করে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
–” ছাড়বো না আমি ছাড়বো না ওকে।আমার হৃদয়াক্ষিকে কেউ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে নাহ। দেড়শো বছর ধরে আমি অপেক্ষা করেছি আমার ভালোবাসার সাম্রাজ্ঞি’র এইবার আর না।এইবার আর তাকে আমার কাছ থেকে ওকে কেউ নিতে পারবে নাহ। রাজকুমারী ফেরিহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!”
——————
সাদু ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো।তার বুক অনবরত কাঁপছে।এটা কেমন চিৎকার তার মনে হচ্ছে কেউ তাকে ডেকেছে আকুলতা ভরা সেই ডাক।ধুকধুক শব্দ হচ্ছে ক্রমাগত তার বুকে।
সাদু পাশ ফিরে তাকালো সেখানে তার চার বেস্টু হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমোচ্ছে।সাদু আলতো করে সবগুলোকে ঠিক করে সুইয়ে দিলো।এখন আবার নিচে যেতে হবে জগে পানি নেই।তার বড্ড পিপাসা পেয়েছে।সাদু জগ হাতে উঠে দাড়ালো আস্তে করে রুমের দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে ড্রয়িংরুমে আসতেই সাদুর কপাল কুচকে গেলো বাড়ির মেইন দরজা খুলা কেন? তাও এতো রাতে সাদু ঘড়ির দিকে তাকালো সেখানে ২ টা বেজে ২১ মিনিট দেখাচ্ছে। জগটা টেবিলের উপরে রেখে সাদু মেইন দরজা দিয়ে বাহিরে বাগানের দক্ষিন দিকের পুকুরপাড়টার দিকে তাকালো সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কারো অবয়ব। তবে সাদুর একমিনিট লাগলো না তাকে চিনতে এটা যে মনির।সাদু ধীরপায়ে সেদিকে হাটা ধরলো।নিশব্দে মনিরের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।তবে কিছু বললো না। অনেক্ষন নিরবতা চললো নিজেদের মাজে মনির পিছনে ফিরেই গম্ভীর গলায় বলে,
–” কি ব্যাপার এতোক্ষন এখানে দাড়িয়ে কেন?কিছু বলবে? আর এতো রাতে এখানে কেন এসেছো?”
সাদু আলতো হাতে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো,
–” হঠাৎ ঘুমের মাজে পানির পিপাসা পাওয়ায় ঘুম ভেংগে যায়।পাশে জগে পানি না থাকায় নিচে আসে দেখি মেইন দরজা খোলা তারপর বাহিরে এসে আপনাকে এখানে দেখেই আসলাম!”
মনির পিছনে মুড়ে সাদুর দিকে দৃষ্টি স্থির করলো।গভীর সেই দৃষ্টি।এইতো এই দৃষ্টিটাই তো সাদুর বুকে তোলপাড় সৃষ্টি করতে করতে যথেষ্ট।সাদু নয়নজোড়া নিচে নামিয়ে ফেললো এই গভীর চোখজোড়া দিকে সে বেশিক্ষন তাকাতে পারে না।ভীতরটা দুমড়েমুচড়ে যায় বাজেভাবে একদম বাজেভাবে।
–” গায়ে শাল নেই কেন?”
মনিরের কথায় সাদু নিজের দিকে তাকালো সাথে সাথেই লজ্জায় তার গালদুটো লাল হয়ে ফুলে উঠলো।এ কি করেছে সে?শুধু নাইটি পরে এতোদূর এসে পড়েছে তাও আবার মনিরের সামনে।লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার।সাদু দ্রুত নিজের চুলগুলো দুভাগ করে সামনে এনে রাখলো তারপর পাশ মুড়ে দাঁড়িয়ে রইলো।সাদুর এহেন কান্ডে মনির হেসে দিলো।বউটা তার বড্ড লাজুক।এতো লজ্জা কিসের? সেতো আর পরপুরুষের সামনে আসেনি তার স্বামির সামনে এসেছে?তবে মনির চায় তার প্রিয়তমা লজ্জা পাক শুধু তার সামনে কারন এই মেয়েটার লজ্জামাখা মুখখানা যে মারাত্নক নেশা ধড়ানো।মনিরের ঘোর লেগে যায় এই লজ্জায় কুকড়ে যাওয়া সাদুকে দেখলে।
মনির সাদূর পিছনে গিয়ে দাড়ালো তারপর পিছন থেকেই সাদুকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।সাদু কেঁপে উঠে মনিরের স্পর্শে।তবে ভালোলাগায় ছেঁয়ে গেছে তার সারা শরীর।সাদু নিজের দেহের ভর ছেড়ে দিলো মনিরের বলিষ্ঠ বাহুতে।
মনির আলতো করে নিজের অধরজোড়া ছোয়ায় সাদুর ঘাড়ে।সাদু যেন কারেন্টে শক খেয়েছে এমনভাবে কেঁপে উঠলো দ্রুত পিছনে ফিরে মনিরকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরলো।মনিরও সাদুর চুলে মুখ গুজে দিলো।
সাদু কাঁপছে সমানে।
–” এভাবে কাঁপছো কেন?আমি তো এখনো কিছুই করলাম নাহ?”
সাদু মনিরকে আরো শক্তভাবে আকড়ে ধরে বললো,
–” এভাবে স্পর্শ করবেন প্লিজ। আমি যে মরে যাই। অসয্য সুখে নেতিয়ে পড়ি আমি।”
–” আমি সামলানোর জন্যে আছি তো।”
সাদু কিছু বললো না চুপ করে রইলো।
মনির ফিসফিস করে সাদুর কানে বললো,
–” প্রিয়তমা দেবে কি সেই অধিকার আমায়?আমি তোমার ওই অধরজোড়ার সুধা পান করে নিজেকে ধন্য করতে চাই।”
সাদু আস্তে করে নিজের চোখজোড়া খুলে মনিরের দিকে তাকায় ভালোবাসায় ঘেরা সেই দৃষ্টি।তারপর লাজুক হেসে নিজের চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো।
মনির তার উত্তর পেয়ে গেছে। মনির হেচঁকা টানে সাদুর কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো তারপর আলতো করে ঠোঁট ছোয়ায় সাদু ঠোঁটে। সাদু চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় তারপর আরো গভীরভাবে মনিরের সাথে মিশে যায়।
মনির কিছুক্ষন সাদুর দিকে তাকিয়ে থেকেই ঠোঁট জোড়া গভীরভাবে প্রবেশ করালো সাদুর ঠোঁটে।
প্রেয়সীর ঠোঁটের সুধা পানে মত্ত হয়ে গেলো।
মনিরের এমন পাগল করা স্পর্শ সাদু সয্য করতে না পেরে প্রায় নেতিয়ে। দু-হাতে মনিরের গলা জড়িয়ে ধরে সেও সমান তালে চুমু খেতে লাগলো মনিরকে।
একটু নাহয় কাটুক তাদের সুখের মুহূর্ত। দুজনের মাজে হারিয়ে যাক দুজন আর তাদের এই ভালোবাসাময় দৃশ্য দেখে লজ্জায় চাঁদ মুখ লুকাক ওই ধুসর মেঘের আড়ালে।
#চলবে,,,,,,
#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১৪
গ্রাম অঞ্চল হওয়ায় এখনো চারদিকে কুয়াশার ছাপ।ভোর ৫ টা বেজে ৪৭ মিনিট ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো মনির।আপাততো তারা সবাই হাটতে বেড়িয়েছে।আলম সিকদার বাচ্চাদের জাগিয়ে এনেছেন।তবে কারো তেমনটা সমস্যা হচ্ছে না কারন কাল তারা ক্লান্ত থাকায় অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।কিন্তু আমাদের সাদু ঝিমুচ্ছে।কাল সারারাত মনিরের সাথে প্রেমবিলাশ করে ফজরের নামাজ পড়ে একটু ঘুমিয়ে ছিলো কিন্তু সেটা আর পারলো কোথায় নিজের বাবার চেঁচামেচিতে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।ঘুমে ঢুলুমুলু সাদু হেলেদুলে হাটছে।ওকে এমন করতে দেখে নূর আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
–” কিরে ফকিন্নি কাল রাত্রে কি চুরি করতে গিয়েছিলি এমন ঝিমুচ্ছিস কেন?”
সাদু চোখ পিটপিট করে নূরের দিক তাকালো।তারপর ইয়া বড় একটা হাই তুলে বললো,
–” তোর ভাইয়ের সাথে রোমান্স করছিলাম রাত্রে।”
নূর চোখ বড়সড় করে তাকালো সাদুর দিকে।সাদু এই মুহূর্তে যেই কথাটা বলেছে তা ঠিক ওর হজম হচ্ছে না।আপাততো সে কথাটা তার মস্তিষ্কে ভালোভাবে স্কেন করে বুজবার চেষ্টা চালাচ্ছে।অবশেষে বুজতে পেরে চেঁচিয়ে উঠলো।সাথে সাথে সাদু নূরের মুখ চেপে ধরলো।
–” ওরে শাকচুন্নি ফাটা বাশের গলা নিয়া আস্তে চিল্লা মান-ইজ্জত খেয়ে ফেলবি দেখি।”
সাদু আশেপাশে তাকালো সকলের দৃষ্টি আপাততো তাদের উপর নিবদ্ধ।সাদু জোড়পূর্বক ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে সকলের দিক তাকালো।
আফরান বলে উঠে,
–” কিরে পিকু? কি হয়েছে?তুই এমন ওর মুখ চেপে ধরে রেখেছিস কেন?”
সাদু আমতা আমতা করছে,
–” আসলে ভাইয়া বাবা সবাইকে সাত-সকালে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে যে তাই নূর ব্রাশ করতে ভুলে গেছে শুধু চোখে মুখে পানি দিয়ে এসেছে এখন ও আমার সাথে কথা বলছিলো আর ওর মুখ থেকে গন্ধ আসছিলো এইজন্যে আমি ওর মুখ চেপে ধরে রেখেছি।”
সকলেই ড্যাবড্যাব করে একবার নূরের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার সাদুর দিকে।মনির পকেটে দুহাত গুজে নূরের কাছে গিয়ে ওর চুল টেনে ধরলো।
–” কিরে ফকিন্নি এমন খোচ্চর কবে থেকে হলি?”
নূর চোখ রাঙিয়ে সাদুর দিক তাকাচ্ছে আর মুখ থেকে সাদুর হাত ছাড়াবার চেষ্টা করছে।অবশেষে হাত ছাড়াতে সক্ষম হলে সাদুর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,
–” আমি ব্রাশ করেনি খোচ্চর মাইয়া।তুই আমারে এমনে সবার সামনে অপমান করলি আমি তোর কথা এখন বেজ্ঞুনের কাছে কইয়া দেই তহন কি করবি?উষ্ঠাইয়া কপালের চারা উডাইয়ালামু।”
সাদু এক ঢোক গিলে আশে-পাশে তাকালো তারপর সামনে একটা সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত দেখতে পেলো এক দৌড় লাগালো সেই ক্ষেতের দিকে।নূর ও চিল্লিয়ে ওর পিছে ছুটলো সাথে ওর পা থেকে জুতা খুলে নিয়ে সাদুকে তাড়া করতে লাগলো।আর কান্ড দেখে সকলের কপালে হাত।আলিশা হতাশ গলায় বললো,
–” এরা আর বড় হবে নাহ।কবে যে একটু বুজ হবে এদের।”
আলম সিকদার হাসতে হাসতে বললেন,
–” আমি তো চাই ওরা এমন থাকুক সারাজীবন।আগে চিন্তা করতাম সাদুর বিয়ে হবে কোথায়? কিভাবে ও থাকবে?কিন্তু এখন টেন্সন নেই আমার বন্ধু কম ভাই বেশি খোকন আছে না সাদুকে অনেক ভালোভাবে আগলে রাখবে বাবার মতো।আর মনির তো আছেই।”
খোকন মির্জা মুচকি হেসে বললেন,
–” আমার নূরটাকে তোর কাছে পাঠিয়ে দিলে তো আমার ঘর খালি হয়ে যাবে তাই তোর মেয়েকে আমার মেয়ে করে নিয়ে এলাম।”
ওদের দুজনের কথায় সবাই চমকে চোখ বড়সড় করে তাকালো।আফরান বেকুব বনে জিজ্ঞেস করলো,
–” নূরকে বাবার কাছে পাঠাবেন মানে কি আঙেল?”
আলম সিকদার গম্ভীর গলায় বললেন,
–” চুপ থাক গাদারাম! তুই জানিস না বুজি? আমরা ছোট থেকেই নূর আর তোর এবং মনির সাদুর বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলাম।”
আফরান খুক খুক করে কেশে উঠলো।কথাটা ঠিক হজম হলো না ওর।এদিকে সবাই হা করে তাকিয়ে থেকে ‘ইয়িপ্পি’ বলে চিল্লিয়ে উঠে।মনিরের ঠোঁটে বাকা হাসি।
নিবিড় আফরানের দিকে তাকিয়ে গান ধরলো,
–” প্রেম পিরিতি কাঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়েনা সাবধান ব্রো।”
আফরান এক ধমক,
–” তুই চুপ থাক।”
নিবিড় ঠোঁটে আঙুল দিয়ে রইলো।
মেরাজ মিমের কানে হালকা আওয়াজে বললো,
–” সবাই তো কাপল হয়ে যাচ্ছে।শুধু তুমি আর আমি বাকি। তো আমরা কি দোষ করলাম?”
মিম চোখ উল্টে তাকালো মেরাজের দিকে।মেরাজ থতমত খেয়ে কোনরকম বলে,
–” ইয়ে মানে আসলে ওই বলছিলাম তুমি আমি সিংগেল আমাদের কপালটাই ফুটো গফ/বফ জুটলো নাহ।”
মিম অন্যপাশে ফিরে ঠোঁট টিপে হাসলো।ছেলেটা এতো বোকা কেন?সোজাসাপ্টা প্রোপোজটাও করতে পারে নাহ।হাদারাম কোথাকার।
আফরানের ঠোঁটে মনের অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো। তা খেয়াল করে মনির বলে উঠে,
–” কিরে ভালোবাসার জ্বালে ফেসেছিস না-কি?”
আফরান আনমনেই বলে,
–” হ্যা তা তো সেই কবেই!”
–” কিহ?”
আফরান চমকে উঠে।ওর খেয়াল আসে ও এতোক্ষন কি বলছিলো।
–” না মানে আসলে…!”
মনির আফরানের কাধে চাপড় মেরে বললো,
–” তুই চুপ থাক।যা বুজবার তা আমি বুজে ফেলেছি।আরে গাধা ভালোবাসিস লুকানোর কি আছে?মন খুলে বলে দিবি।এই দেখ আমি নির্দ্বিধায় যেভাবে বলি আমি তোর বোনকে ভালোবাসি।”
আফরান মুচকি হেসে মাথা চুলকে অন্যদিকে ফিরে গেলো।
এদিকে সবার হাটার মাজে ঝড়ের গতিতে দুই ঘূর্ণিঝড় মানে সাদু আর নূরের এন্ট্রি।নূর চিল্লিয়ে বলছে,
–” সাদ্দুনির বাচ্চা তোর খবর আছে আজকে তুই শুধু একবার আমার সামনে আয়।আমার ফ্লাইং জুতা আর তোর মুখ।”
সাদু আলিশার পিছে লুকিয়ে বললো,
–” তোর কাছে যাবে কে?”
দুজন সবার চারপাশে গোলগোল করে ঘুরছে।মনির আর আফরান ওদের দুজনের দিকে প্রেমাসিক্ত নয়নে তাকিয়ে।দুজনেরই দৌড়ানের কারনে বাতাসের ঝাপ্টায় খোলা চুলগুলো এসে চোখে মুখে বাড়ি খাচ্ছে।ঠোঁটে মিষ্টি হাসি সেই সাথে হাসছে তার গাল,চোখ, মনির আর আফরানের কাছে তো তাই মনে হচ্ছে।
মনির আনমনেই নিজের মনে কবিতা আওড়ায়,
‘যার কাছে সবকিছু
বলা যায়…
যার হাতে হাত রেখে
চলা যায়…
যাকে আপন বলে
ভাবা যায়…
যার কাছে বিশ্বাস টুকো জমা রাখা যায়..
তাকেই তো ভালবাসা যায়..’
এদিকে আলিশা,আলিফ আর মিম বিরক্ত হয়ে গিয়েছে নূর আর সাদুর কান্ডে।
সাদু আলিফার পিছে লুকাতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে নূর তার একহাতের জুতো উড়িয়ে মারলো সাদুর দিক।সাদু নিজে ঝুকে গেলো আলিফা ওর সামনে এনে সামনে ওর দিকে মুখ করে দাড় করলো।নূরের ফ্লাইং জুতা উড়ে গিয়ে লাগলো একেবারে ধরাং করে আলিফার পিঠে।
এদিকে আলিফা আকস্মিক ব্যাথায় চোখ বড়সড় করে তাকালো।নূর বেশি জোড়ে আস্তে করে মেরেছে তবুও আলিফা ঘুরে নূরের দিক তাকালো পিঠে হাত দিয়ে,
–” এটা কি করলি?”
নূর দু-হাত উচুতে উঠিয়ে নিয়ে বললো,
–” আমার কোন দোষ নেই সব দোষ সাদ্দুনির।”
সাদু চেচিঁয়ে উঠে,
–” নারে আলু ওর দোষ সব আমি কি বলেছি ওকে জুতা ফিক্কা মার।ও মারলো কেন?”
তারপর পাশ থেকে নূরের জুতোটা টুকিয়ে এনে আলিফার হাতে দিয়ে বললো,
–” আলুরে আমার চুনা আলু একেবারে ওর থোব্রা বরাবর টার্গেট করে ফিক্কা মার।বিনিময়ে আরিফ ভাইয়াকে বলবো তোরে একসাথে ১০০ টা চুম্মা গিফটাইতে।”
আলিফা আর আরিফের কাশি উঠে গেলো।গুরুজন রা আছে তাদের সামনে এই মেয়ে বলে কি?
–” লুইচ্চা মাইয়া মুখে লাগাম লাগা তোর বাবা আর আঙেল আছে।কুত্তা ছেম্রি।”
–” আচ্ছা আর বলবো না তুই ফিক্কা মার।”
আরিফ মনিরের কাছে গিয়ে বিরবির করে বলে,
–” ভাই তোর বউটা সেই ড্যাঞ্জারাস মাইরি।”
মনির কিছু বললো না শুধু হাসলো।
এদিকে আলু নূরের জুতোটা নুরের দিকে মারতেই নূর ঝুকে বসে পড়ে আর জুতো উড়ে গিয়ে পড়লো সামনে সুয়ে থাকা এক কুকুড়ের গায়ে।কুকুরটা শোয়া থেকে ‘ঘেউ ঘেউ’ করে লাফিয়ে উঠলো।চোখের সামনে এতোগুলো মানুষকে দেখে আক্রমন করার চিন্তা বাদ দিয়ে কতোক্ষন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।
তারপর হঠাৎই সামনে পড়ে থাকা নূরের জুতো মুখে নিয়ে দৌড়।এদিকে নূর চিল্লিয়ে উঠে,
–” আরেএএএ এই কুত্তা আমার জুতো দিয়ে যা কোথায় যাচ্ছিস আমার জুতো নিয়ে আরেএএএ।”
মিম হাসতে হাসতে বললো,
–” একছাড় ভালো হইছে আরো মার জুতা ফিক্কা।”
আলিশা নিবিড়কে ধাক্কিয়ে বললো,
–” আরে দাঁড়িয়ে কেন যান ওই কুকুর থেকে নূরের জুতো এনে দেন!”
নিবিড় চুপসানো মুখে তাকায় আলিশার দিকে।
আলিশা আবার বলে,
–” কি হলো যান!”
উপায় না পেয়ে নিবির ছুটলো কুকুরের পিছে।কালকে এমনিতেই ওর প্রেস্টিজের ১২ টা বেজে গিয়েছিলো আজকেও চাইছে না আর তেমনটা হোক।কিন্তু বলে না কপালে সুখ না থাকলে কেউ জোড় করে আনতে পারে না।নিবিড়ের সাথে তেমনটা হলো।
সে উলটাপালটা দৌড়াতে গিয়ে রাস্তায় ইটের সাথে উষ্টা গিয়ে একেবারে পড়লো গরুর ইয়াক মার্কা পটির উপর।একেবারে গোবড়ের উপর গিয়ে মুখটা লেপ্টে গেছে।সবাই শক এমনটা হবে কেউ ভাবতেই পারিনি।নিবিড় গোবড় থেকে মুখ উঠিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
–” যা সালা ছুট লাগালাম কুত্তার পিছনে,শেষে কিনা গরুর ইয়াক মার্কা পটি দিয়ে ফেসিয়াল কএ ফেললাম।মাম্মিইই হেল্প মিইই।”
#চলবে,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।