ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-১১+১২

0
784

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো❤️
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১১
–” ছেড়ে দে আমায় আমি যাবো নাহ!” নিবিড় চিল্লাচ্ছে বলছে।

আরিফ আর মেরাজ ওকে চেপে ধরে রেখেছে।
আরিফ ওকে সামলাতে সামলাতে বলে,

–” তোকে যেতেই হবে তুই কেন যাবি না বল?”

আফরান ওদের এইসব দেখে হাসছিলো।ও হাসতে হাসতেই বলে,

–” সে এক করূন ইতিহাস তাই নাহ নিবিড়?”

নিবিড় অসহায়চোখে তাকালো।

আলিশা বাকা হেসে বলে,

–” তা নিজের ইতিহাস বলেন নয়তো চলুন আমাদের সাথে।”

নিবিড় ঠোঁট উলটে রইলো। এই মুহূর্তে সেই মর্মান্তিক কাহিনি সে মনে করতে চাইছে নাহ।আর না চাইছে এতোগুলো মানুষের সামনে নিজের ইজ্জতের ফালুদা করতে।

আলিশা আবারো বলে,

–” কি আপনি বড্ড ভিতু। স্বিকার করুন।”

নিবিড় ভাবনায় মগ্ন। সে ভাবছে এখন যদি ও এদের সাথে না যায় তাহলে ওর মান সম্মান আর থাকবে নাহ।

–” আমি মোটেও ভিতু না আমি যাবো।”

নিবিড়ের কথায় সবাই অবাক হলো।যে ছেলে এতোক্ষন কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না।এখন বলছে সে যাবে।যাক কেউ আর মাথা ঘামালো নাহ।সবাই হাটা ধরলো।নিবিড় ভয়ে ভয়ে কতোক্ষন এদিক তাকাচ্ছে তো ওদিক তাকাচ্ছে।
আবার মনিরের হাত খামছে ধরছে।

–” কি হলো তোর?এমন করছিস কেন?”

মনিরের কথায় নিবিড় কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকালো।তারপর ফিসফিসিয়ে বলে,

–” দোস্ত তোর পিছে পিছে রাখ আমাকে।আর চিল্লাইস না।আমার সম্মান চলে যাবে।”

–” তো তুই রাজি হলি কেন?”

নিবিড় ঠোঁট উলটে রইলো।

নূর সব কিছু অবাক হয়ে দেখছে।গ্রামিন সৌন্দর্য দেখে সে মুগ্ধ। আলিশা এসে ওর কাধে ধাক্কা দিয়ে বলে,

–” কিরে কি ভাবছিস?”

–” পরিবেশটা দেখতে কি সুন্দর লাগছে তাই নাহ?”

–” হ্যা আসলে আমরা ঢাকা থাকি গ্রামের এই সৌন্দর্য্ আমরা উপভোগ করতে পারি নাহ।”

–” ছোট বেলায় একবার এসেছিলাম মনেও নেই সেই কথা।”

–” হ্যা আমারও কিছু মনে নেই।”

–” এই মিমের বাচ্চা কিভাবে মেরাজ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।”

নূরের কথায় আলিশা তাকায় মিমের দিকে।দেখে মিম মেরাজ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে একধ্যানে। আলিশা নূরের হাত ধরে বলে,

–” চল ওকে দেখে আসি।”

নূর আর আলিশা দুষ্টু হেসে মিমের দিকে এগিয়ে গেলো। মিমের একসাইডে গিয়ে দাড়ালো আলিশা আর একসাইডে গিয়ে দাড়ালো নূর।
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মিমের কানে জোড়ে দিলো চিল্লান। হঠাৎ চিল্লানে মিম ঘাবড়ে গেলো।
ভয়ে এমন দৌড় দিলো কোনদিক না তাকিয়েই দৌড় দিলো।
সামনে হাটছিলো মেরাজ ওর সাথে পিঠের উপর ধরাম করে পড়লো। মেরাজ পিছে আর ওর পিঠের উপর মিম পড়ে আছে।

–” ওহ মা! কে রে?”

মেরাজ ব্যাথায় চিল্লিয়ে উঠলো।মিম মেরাজের উপড়ে পড়ায় তেমন ব্যাথা পায় নাই। মিম তাড়াতাড়ি করে উঠে দাড়ালো। তারপর মেরাজকে ধরে উঠালো।

–” আ’ম সরি আমি আসলে ইচ্ছে করে করেনি।নূর আর আলিশা হঠাৎ চিল্লান দেওয়ায় ভয় পেয়ে গিয়েছি।”

মিমের অবস্থা এমন সে পাড়লে এক্ষুনি কেঁদে দেয়।
মেরাজ ওর দিকে তাকিয়ে আর কিছু বললো নাহ।

–” ইট্স ওকে।তুমি আসো।”

মিম সস্থির নিশ্বাস ফেললো।

সাদু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।সে না-কি অনেক ছোট থাকতে এসেছিলো।তা ওর মনে নেই।তবে এমন কেন লাগছে ওর যেন সব কিছু ও অনেক আগে থেকে চিনে।এই গ্রাম, এই মাটি,এই গাছ-পালা যেন ওকে স্বাগত জানাচ্ছে।তারা যেন ওর অপেক্ষাতেই ছিলো।
কেন এমন লাগছে?সাদু আলতো করে ঝোপ ঝারের গাছগুলো ছুঁয়ে দিলো।ওর সারা শরীর শিরশির করে উঠলো।

হঠাৎ মনে হলো ওর কানের কাছে দমকা হাওয়া বয়ে গেলো।আর বললো,

–” তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম! স্বাগত তোমায় রাজকুমারী। ”

সাদু চমকে তাকালো।ওর সারা শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেছে।সাদু থমকে দাড়ালো এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। ওকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনির পাশে এসে দাড়ালো ওর।সাদু’র কাধে হাত দিলো মনির।সাদু চমকে উঠে দূড়ে সরে গেলো।মনির সাদুর হঠাৎ এই আচড়নে ব্যস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করে,

–” কি হয়েছে তোমার?”

সাদু ভিতু চোখে তাকালো চারদিকে।তারপর আস্তে করে বলে,

–” আমার মনে হলো কেউ আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কিছু বললো। কেন যেন মনে হচ্ছে কেউ আমাকে দূর থেকে দেখছে।”

মনির চিন্তায় পড়ে গেলো।মেয়েটা হঠাৎ এসব বলছে কেন?তবুও নিজর চিন্তা একসাইডে রেখে সাদুকে বলে,

–” জার্নি করে এসেছো তো তাই হয়তো এমন লাগছে।বাড়িতে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও সব ঠিক হয়ে যাবে।”

সাদুও মাথা দুলালো অযথা সে এতো ভয় পাচ্ছে এমনটা কিছুই হয়নি।একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।

হাটতে হাটতে ওরা একটা বাড়ির কাছে আসলো।
একটা যৌথ বাড়ি। বাড়ি লোকজন ওদের দেখতে এসেছে পথে এসে দাড়িয়েছে।

–” হেই আমরা কি সেলিব্রেটি?” আরিফ প্রশ্ন করলো।

আলিফা ভ্রু-কুচকে বলে,

–” এমন কেন মনে হচ্ছে আপনার?”

–” দেখো না আমাদের দেখতে এসেছে কতো মানুষ।”

নিবিড় আশপাশ তাকালো আকস্মিক একটা শব্দ শুনতে পেলো।এই শব্দ যার কাছ থেকে আসছে তার ভয়েই তো আসতে চাইনি।আর ভাগ্য তাকে সেখানেই এসে থামিয়েছে। নিবিড় ভয়ে ভয়ে পিছে ফিরে তাকালো দেখে ৩ টা রাঁজহাস ওর পিছে দাঁড়িয়ে আর ওকেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
নিবিড় জোড়পূর্বক ঠোঁটে হাসি ফুটালো তারপর শুকনো ঢোক গিললো।
তার হাত-পা অসাড় হয়ে এসেছে।এদের এতো ভয় পায় নিবিড় তা বলে বুজাতে পারবে নাহ।

কাপা গলায় নিবিড় বলে,,

–” হেই দেয়ের! ভালো আছিস তোরা? দেখ আমি জানি তোরা ভদ্র মানুষ থুক্কু রাঁজহাস।
আমি তোদের অনেকগুলো চকোলেট্স দিবো ঠিক আছে?”

রাঁজহাস তিনটা কি বুজলো কি জানে ঘাড় কাত করে তাকালো নিবিড়ের দিকে।
নিবিড় মহাখুশি হয়ে হেলেদুলে ওদের খানিক কাছে গিয়ে দাড়ালো।

–” গুড বয়! দেখো মানুষদের ব্যাথা দেওয়া ভালো কাজ নাহ।তোমরাও এমন করবে নাহ ঠিক আছে।”

নিবিড় কথাগুলো বলেই হাটা দিলে।
রাঁজহাস গুলো ‘ ঘ্যাক ঘ্যাক’ আওয়াজ তুলে মাথাটা নিচের দিকে দিয়ে ডানা মেলে হেলিকপ্টারের মতো ভৌদৌড় দিলো নিবিড়ের পিছে।
নিবিড় একবার তাকিয়ে আর ফির পিছনে তাকাবার সাহস পেলো নাহ।
তার আগেই ‘ আল্লাহ্ গো! ‘, বলেই দৌড়।
ওর পিছেও রাঁজহাস ডাক তুলতে তুলতে ছুটছে।
নিবিড়ের এমন চিৎকার শুনে সবাই পিছনে তাকালো।
আর এরকম দৃশ্য দেখে সবারই চোখ কপালে উঠে গেছে।
আফরান আর মনির তড়িঘড়ি করে আশেপাশের গাছ থেকে ডাল-পালা ভেঙে নিলো।।
আলিফা হুরহুর করে রাস্তার পাশে নিচে ধানক্ষেত আছে তার মধ্যে গিয়ে লুকালো।
নূর আর সাদু পাশের একটা বাসা আছে তার মধ্যে চলে গেলো।মিম ভয়ে পেয়ে গাছের পিছনে লুকালো।
নিবিড় দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছে।

–” এহহ রেএএএ আমার পিছা ছেড়ে দে রে।
কেন আমার পিছে দৌড়াচ্ছিস।আমি কি দোষ করেছি!”

নিবিড় দৌড়ে প্রায় তার অবস্থা খারাপ।
মেরাজের কাছাকাছি আসায় মেরাজ দিশা না পেয়ে পাশের পুকুরে লাফ দিলো ধরাম করে পড়লো পুকুরে।

এদিকে একরিকশা চালক দিনশেষে গোসল করে মাত্র মাটির চুলো থেকে শুকনো মরিচ ভেজে ঘরে যাচ্ছে।কালকের পান্তা ভাত আছে আপাততো তাই খেয়ে তার দিন চালানো লাগবে।ঘরে অসুস্থ স্ত্রী তার জন্যে আর নিজের জন্যে শুকনো মরিচ ভেজে নিয়েছে এইগুলা মজা করে খাবে।

[ আপনাদের লেখিকারও কিন্তু পান্তা ভাত হেব্বি পছন্দ আলু ভর্তা,ডিম ভাজা,শুকনো মরিচ ভাজা,সাথে একটা পেয়াজ আহা! জিহ্বে জল এসে যায়😋]

লোকটি মাত্র ঘরে ডুকতে যাবে একহাতে তার ভাত আর হাতে শুকনো মরিচ ভাজা।
নিবির রাঁজহাসের দৌড়ানি খেয়ে এমন জোড়ে দৌড় লাগালো এক দৌড়ে একেবারে সেই লোকটার গায়ে।লোকটা তাল সামলাতে না পেরে ঘরের দরজার সামনেই উপুর হয়ে পড়লো।
আর তার উপরে তার পাশে নিবিড়। লোকটার হাত থেকে ভাতের থালা পড়ে চারদিকে ভাত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।আর হাতে যেই শুকনো মরিচ ছিলো তা হাতে ধরে রাখার কারনে একেবারে বুড়ো লোকটার নাকের ছিদ্র ভিতরে ডুকে গেলো।লোকটা এক চিৎকার দিলো।
এইদিকে রাঁজ হাস এসে পাশে পড়ে থাকা নিবিড়ের পশ্চাদে জোড়েসোড়ে দিলো এক কামড় বসিয়ে।

নিবিড় ‘ আম্মাহ গোওঅঅ তোমার পোলা শেষ।’ বলেই চিল্লান দিয়ে উঠলো।

মনির আর আফরান নিবিড়ের পিছে পিছে আসছিলো তারা দ্রুত লাঠি দিয়ে রাঁজহাসগুলো তাড়িয়ে দিলো।
আর তাকিয়ে থেকে নিবিড় পশ্চাদে হাত দিয়ে চিল্লাচ্ছে, ‘ আম্মা গো মা গো আব্বা গো!’ বলে।

#চলবে,,,,,,

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১২

সাদু আর নূর যেই ঘরে ডুকেছিলো সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।মিম ও গাছের পিছন থেকে বের হএ আসে।দেখে আরিফ মেরাজকে রাস্তার পাশের পুকুর থেকে টেনে উঠাচ্ছে।

–” সালা জোড় লাগা তোর মতো হাতির শরীরের মতো মানুষরে আমি একলা পারি।” আরিফ মেরাজকে টানতে টানতে বলে।

মেরাজ দুঃখী গলায় বললো,

–” কপালটাই খারাপ আমার।এখানে আসতে না আসতেই পুকুরে পড়লাম।”

নূর, মিম আর সাদু ফিক করে হেসে দিলো।
মেরাজ পুকুর থেকে ভিজা শরীরে উঠে দাড়ালো।তারপর ওদের হাসতে দেখে ঠোঁট উলটে তাকিয়ে রইলো।এদিকে আরিফ উঁকি দিচ্ছে সাদুদের দিকে।
তারপর বলে,

–” সাদু তোমরা আছো আলিফা কোথায়?”

আরিফের কথায় সবাই চিন্তিত স্বরে বললো,

–” আসলেই তো আলিফা কোথায়?আর আলিশাকেও দেখছি নাহ?”

আরিফ বিচলিত হয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। সবাই খুজতে লাগলো ওদের দুজনকে।
সাদু খুজতে খুজতে ওই ধানক্ষেতের কাছে গিয়ে দেখে আলিশা দড়ি দিয়ে কি জানি টানছে।
সাদু বাকিদের এদিকে আসতে বলে দ্রুত আলিশার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

–” কিরে তোকে খুজতে খুজতে আমি হয়রান আর তুই এখানে কি করছিস?”

আলিশা করুন চোখে একবার সাদুর দিকে তাকিয়ে তারপর সাদুকে সামনে তাকাতে বললো।
সাদু তাকিয়ে দেখে আলিফা কাদায় মাখামাখি হয়ে হয়ে আছে।আর ওর অর্ধেক শরীর প্রায় কাদার মাজে ডুকে গেছে।ওকে দেখতে পুরো ভূতের মতো লাগছে।
সাদু ফিক করে হেসে দিলো।ততোক্ষনে বাকিরা এসে হাজির।
সাদুকে হাসতে দেখে ওরা আলিশাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে আলিশা ওদের ও সামনে তাকাতে বলে।ওরা সামনে তাকাতেই কতোক্ষন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
আরিফ জোড়ে হাসছে না তাহলে ওর কপালে দুঃক্ষ আছে তাই মিটমিটিয়ে হাসছে।
আলিফা রাগে দুঃখে এক ধমক দিয়ে আরিফকে বলে,

–” ওখানে সং সেজে না দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে উঠান।”

আরিফ কোনমতে হাসি থামিয়ে মেরাজকে নিয়ে দড়ি দিয়ে টেনে আলিফাকে উঠালো।
ওর অবস্থা এমন হয়েছে যে বাকিরা ওর দিকে তাকালেই তাদের হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যাবে।

আলিফা ধুপ-ধাপ পা ফেলে মেরাজ যেই পুকুরে পড়েছিলো সেখানে পাকা ঘাটের মতো বানানো আছে সেখানে গিয়ে আগে নিজের কাঁদা ছাড়িয়ে আসলো।
আলিফা আসতেই আরিফ বলে উঠে,

–” তুমি ওখানে কিভাবে গেলে?”

আলিফা কাঁদো গলায় বলে,

–” রাঁজহাসের ভয়ে দিক বেদিক না দেখে ধান ক্ষেতের মাজে লুকোতে গিয়ে কাঁদার মাজে ফেসে গেলাম।পরে অনেক্ষন চিল্লালাম কেউ আসে নাহ।এতো চিল্লাপাল্লা করার পর আলিশা এসে হেল্প করলো।”

রাঁজহাসের দৌড়ানির কথা শুনে আলিশা বললো,

–” এই একমিনিট নিবিড়, আফরান আর মনির ভাইয়া কোথায়?”

মিম চারদিকে তাকিয়ে সন্ধান চালালো আশেপাশে তাদের দেখতে না পেয়ে বলে,

–” আশেপাশে তো দেখছি না গেলো কোথায়?”

নূর বললো,

–” কি জানি না জানি রাঁজহাসের দৌড়ানি খেয়ে কোথায় উলটে পড়ে আছে ওরা।”

সাদু বিরক্তি নিয়ে বলে,

–“এখানে বসে আলোচনা না করে খুজে দেখি চল।”

সবাই মাথা ঝাকিয়ে ওদের তিনজনকে খুজতে লাগলো।
সাদু খুজে না পেয়ে আশেপাশে যারা ছিলো তাদের জিজ্ঞেস করে।এবং তাদের থেকে শুনতে পায় তিনজন ছেলে না-কি রহিম রিকশাওয়ালার বাড়ির দিকে যেতে দেখেছে।অবশ্য সাদু রহিম রিকশাওয়ালা কে তা জানে না।তাই ওই লোকটাকে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বলতেই সে সাদু আর বাকিদের নিয়ে রহিম রিকশাওয়ালার বাড়িতে যায়।
ঘরের মাজে ডুকেই ওদের সবার চোখ চড়কগাছ।সাদু দেখে মনির একজন বুড়োলোকের না-কে বরফ ঘসে দিচ্ছে।
আর আফরান নিবিড়ের পশ্চাদে আগুনের ছেক দিচ্ছে সামনে তার হারিকেন সেখান থেকেই একটা কাপড় গরম করে নিয়ে সেক দিচ্ছে।

ওরা সবাই ভিতরে ডুকে ‘ কি হয়েছে?’, জিজ্ঞেস করতেই মনির সবাইকে সবটা খুলে বললো।
একদিক থেকে সবার হাসি পেলেও বুড়ো লোকটার জন্যে কষ্ট লাগছে।

সাদু বলে উঠে,

–” বরফ পেলেন কোথায়? আর উনার নাকটাও তো লাল হয়ে আছে।”

–” পাশের বাসার একজনের থেকে এনেছি।নাহলে তো উনার আরো জ্বলতো।”

সাদুর চোখে জল টলমল করছে
ইসস! লোকটা কতোটা কষ্ট পেয়েছে।গরিব মানুষ তারপর যেটুকু আহারের ব্যবস্থা করেছিলো তাও শেষ।সাদু ধরা গলায় বললো,

–” আঙেল ভাইয়ার পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাইছি।আসলে ভাইয়ার দোষ দেবো তেমনটাও না রাঁজহাসগুলো যে এমন করবে আমরা কেউ বুজতে পারেনি।আমি জানি আপনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন।”

রহিম মিয়া কোনমতে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললো,

–” আরে কোন ব্যাপার না আম্মা।আমি জানি তোমরা বুজতে পারো নাই।তোমরা বহো।আমার ঘরে কিছু নাই তোমাগো হুদা মুড়ি খাইতে দিতে পারুম।”

সাদু চোখের পানিটুকু মুছে মুচকি হেসে বলে,

–” আমরা বসবো নাহ।আমার একটা ভাই আর একটা বন্ধু এই রাঁজহাসের দৌড়ানি খেয়ে পুকুরে পড়ে অবস্থা পুরো খারাপ।আর এইযে পাশে (নিবিড়কে দেখিয়ে) ভাইয়ার তো আরো খারাপ।
আমরা এখন বাড়ি যাবো।তবে আপনাদের কেও আমাদের সাথে নিবো।আজ আপনাদের দুজনের আমাদের বাড়িতে দাওয়াত।চলুন চলুন তাড়াতাড়ি উঠুন!”

রহিম মিয়া হেসে দিয়ে সাদুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।মনির একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদুর দিকে।
মেয়েটার মন কতোটা নরম আর নিস্পাপ তাই ভাবছে ও। আর কতোভাবে ঘায়েল করবে এই মেয়ে তার রূপে আর গুনে।
মনিরের ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো।
এই বাচ্চা মেয়েটা ওর বউ ভাবতেই অসম্ভব ভালোলাগায় মন প্রান জুড়িয়ে যাচ্ছে।

আলিফা ভেজা শরীরে ঠান্ডায় জোবথোব হয়ে আছ।ওকে এরকম করতে দেখে আরিফ আলতো করে আলিফাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

–” ঠান্ডা যে লাগছে আমাকে বলছো না কেন,?”,

–” এতোটাও লাগছে না।” মলিন হেসে বলে আলিফা।

আরিফ আলিফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে।নিজের গায়ের শার্টটা খুলে আলিফার গায়ে জড়িয়ে দিলো। আলিফা কিছু বললো না কারন ওর অনেক ঠান্ডা লাগছে।
তাই শার্টটা আরো ভালোভাবে নিজের সাথে এটেসেটে জড়িয়ে নিলো।শার্টটা থেকে হুবহু আরিফের শরীরের মতো ঘ্রাণ আসছে।আলিফা চোখ বুজে জোড়ে নিশ্বাস টেনে নিলো শার্ট টা নাকের কাছে নিয়ে।তারপর চোখ খুলে আরিফের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।

———–
সবাই বাড়ির জন্যে হাটা রওনা হয়েছে।আলিফার একসাইড থেকে আরিফ জড়িয়ে ধরে নিয়ে হাটছে যাতে ঠান্ডা কম লাগে।
রহিম মিয়াকে সিকদার বাড়ির কথা বলতেই তিনি এক মিনিটে চিনে ফেলেন তাই তাকে মনির বলেছে যাতে আর স্ত্রীকে নিয়েই রিকশা দিয়ে আগে চলে যেতে। ওখানে গিয়ে ওদের নাম বললেই হবে।
আর মনির আর বাকিরা আসতে আসতে আসবে।
নিবিড়ের ব্যাথাটা কমেছে অনেক্ষন সেক দেওয়ার পর।তারপরেও বেচারা কোমড় ধরে হাটছে।

আলিশা ঠোঁট চেপে হেসে দুষ্টু কন্ঠে বলে,

–” আচ্ছা সাদু তোর ভাই বুজি এই রাঁজহাসের ভয়েই এদিক দিয়ে আসতে চাইছিলো না তাই নাহ?”

সাদু ঠোঁট উলটে জবাব দেয়,

–” আমি ঠিক জানি না। আমি অনেক ছোট থাকতে এসেছিলাম।আমার মনে নেই কিছু।”

আলিশা আবারো আফরানের উদ্দেশ্যে বলে,

–” আচ্ছা আফরান ভাইয়া আপনারা দুজন তো জমজ তো আপনারা অবশ্যই মনে আছে কারনটা? বলুন না?”

নিবিড় রেগে মেগে এক ধমক দিলো আলিশাকে,

–” এই মেয়ে কি শুরু করেছো হ্যা? আমি এমনিতেই এই পথ দিয়ে আসতে চাইনি।”

আলিশা তার থেকেও দ্বিগুন জোড়ে ধমক দিয়ে বলে,

–” এই আপনি চুপ থাকেন ভীতু কোথাকার।”

নিবিড় থতমত খেয়ে গেলো।এই পুচকে একটা মেয়ে না-কি তাকে নিবিড়কে ধমকাচ্ছে।একবার বাড়িতে গিয়ে নিক তখন মজা দেখাবে।মনে মনে কথাগুলো ভেবে ডেবিল হাসি দিলো।

নূর উচ্ছাস্বিত গলায় বলে,

–” কি হলো বলুন নাহ?”

আফরান কতোক্ষন হেসে নিলো।তারপর নিবিড়ের দিকে তাকিয়েই বলতে শুরু করলো,

–” আমরা যেহেতু জমজ ভাই আমাদের একই বয়স। তখন আমাদের বয়স ৯ বছর আর সাদুর ২ বছর। তো এইরকমই আমরা এখানে বেড়াতে আসছিলাম।”

ফ্লাসবেক,,,,

আলম সিকদার, ফরিদা আলম , আফরান আর নিবিড় কুয়াকাটা বেড়াতে এসেছে।
সবাই শর্টকাট এই পথটা দিয়েই হাটছে।
ফরিদা আলম আর আলম সিকদার একে-অপরের সাথে টুকিটাকি কথা বলছিলো।
আর নিবিড়ের কাধে সাদু আর আফরান সাদুর সাথে দুষ্টুমি করছে।
এসবের মাজে নিবিড় হঠাৎ আফরানকে বলে,

–” আফরান ভাই তুই একটু পিকুকে ধর। ”

আফরান ভ্রু-কুচকে বলে,

–” কেন? ও তো তোর কাধেই বেশি খুশি।”

–” আরে ভাই ধরনা আমার ইয়ে মানে এক নাম্বার পেয়েছে।”

সাদু নিবিড়ের কাধে বসে আঙুল খাচ্ছিলো।সে টুকুরটুকুর চোখে তাকায় ভাইদের দিকে।তারপর তার আধোকন্ঠে বলে,

–” আলফান ভাইয়া এক নাম্বাল তি?”

আফরান হেসে দিয়ে বোনকে কোলে নিতে গেলে।সাদু নিবিড়ের চুল খামছে ধরে মাথা এদিক সেদিক নাড়িয়ে বললো,

–” আমি তোমাল কলে দাবো না!”

নিবিড় অসহায় গলায় বলে,

–” যা না রে বোন তোর ভাইয়ুর হিসু পেয়েছে।”

ভাইয়ের কথায় সাদু খিলখিল করে হেসে দিলো।তারপর আফরানের দিকে দু-হাত বাড়িয়ে দিলো।আফরান ও বোনকে কোলে নিয়ে নিলো।
এদিকে নিবিড় বাবা আর মাকে বলে পুকুরের পাশে এক নাম্বার সাড়তে চলে গেলো।
পুকুরের পাড়টা অনেকটা ঝোপঝাড়ে ভরা ছিলো।আর নিবিড় চোখ বুজে নিজের কাজ সারতে এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে ওর কোনদিকে হুস ছিলো না।
সে আপন মনে গান গেয়ে প্রাকৃতিক চাপ কমাতেই আছেকরতেই আছে। সেই পুকুর পাড়ে দুটা রাঁজহাস ছিলো আর নিবিড়ের এক নাম্বারের ইয়াক সব গিয়ে পড়েছে ওদের উপর।
রাঁজহাস দুটো কতোক্ষন নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থেকে ডানা দুটো মেলে দিয়ে এমন ভোদৌড় দিলো।
এক দৌড়ে একেবারে ঘচাং করে নিবিড়ের তোতাপাখিতে কামড় বসিয়ে দিলো।
হঠাৎ আক্রমনে নিবিড় দিন দুনিয়া ভুলে দিলো এক চিৎকার,

–” আম্মাগোওওওওওওও!”

প্যান্টের জিপার না আটকিয়েই নিবিড় নিজের তোতাপাখি চেপে ধরে উলটাপালটা পা ফেলে চিৎকার দিয়ে ছুট লাগালো।আর ওর পিছে পিছে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে রাঁজহাস দুটোও দৌড়।
পরে আলম সিকদার আর ফরিদা আলম ওকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে লাঠি নিয়ে রাঁজগুলোকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো।এদিকে অবুজ সাদু এসব কান্ডে খিলখিল করে হাসছিলো।

বর্রমান,,,

নিবিড়ের অতীত শুনে সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।
আফরান হাসতে হাসতেই বলে,,

–” জানিস নিবিড় সেই ভয়ে প্রাই ১ সপ্তাহ ঘর থেকে বের হয়নি।”

আলিশা পেট চেপে ধরে হাসছে।

–” ওহ মাই গোড শেষে কি-না রাঁজহাস আর জায়গা পেলো নাহ। আমি আর হাসতে পারছি না।
এই রাঁজহাসের সাথে কি উনার আগের জন্ম থেকেই শত্রুতা ছিলো।”

সবাই আরো জোড়ে হেসে দিলো।এদিকে নিবিড় অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে।
ও বলে,

–” আফরাইন্না তুই আমার মান ইজ্জত রাখলি নাহ।আমার আল্লাহ্ করবো তোর বিচার।আর এই রাঁজহাসের কপালে ঠাডা পড়বো।সালা এর কারনেই আমার কপাল ফুটছে।”

#চলবে,,,,,,

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।সবার কিছু ভালো মন্তব্য পাওয়ার আশা করছি।