ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-১০

0
805

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো❤️
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১০
‘কুয়াকাটা’ নামটা শুনলেই কেমন একটা ভ্রমন ভ্রমন ফিলিংস আসে।আহা! শান্তি!
এই জায়গা এর নাম শুনেনি এমন মানুষ খুব কম।
‘কুয়াকাটা’ নামটা শুনলেই মানুষ সমুদ্রের কথা আগে ভাবে।বাংলাদেশের প্রকৃতিক সৌন্দর্যের একটি হলো কুয়াকাটা।
অপার সৌন্দয়ের লীলাভুমি সাগর সৈকত ‘কুয়াকাটা’।কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা “সাগর কন্যা” হিসেবে পরিচিত। কুয়াকাটা প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় ও সূর্য়াস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়। সমুদ্র সৈকতের পাশেই দেড় শতাধিক একর জমিতে অবস্থিত নারিকেল বাগান যা “নারিকেল কুঞ্জ” নামেই পরিচিত। ১৯৬০ সালে ১৬৭ একর খাস জমি লীজ নিয়ে জনাব ফয়েজ মিয়া ‘ফার্মস এন্ড ফার্মস’ নামে এ বাগান করেন। সৈকতের পূর্ব দিকে রয়েছে মনোরম ঝাউ বাগান। ১৯৯৭/৯৮ অর্থ বৎসরে বন বিভাগ ১৫ হেক্টর জমিতে সি বিচ সংলগ্ন ঝাউ বাগান গড়ে তোলেন। এর পরেই রয়েছে আর এক বিশাল বনাঞ্চল চরগঙ্গামতি। বনের মধ্যে রয়েছে ছৈলা, কেওড়া ও কড়াই বাগান। বিশাল এই বাগানের মাঝে রয়েছে একটি নয়নাভিরাম লেক। কুয়াকাটা সমূদ্র সৈকত থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে লেম্বুর চরে বন বিভাগের একটি বাগান আছে। বনে রয়েছে কড়াই, গেওয়া, ছৈলা ও কেওড়া গাছ। বেড়াতে আসা পর্যটকরা এখানে যায়। আন্ধারমানিক নদীর মোহনার পূর্ব দিকে লেম্বুর চর আর পশ্চিম দিকে রয়েছে ফাতরার চরের বিশাল বনাঞ্চল। ভৌগোলিক ভাবে বরগুনা জেলায় বাগানটির অবস্থান থাকলেও কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা বিনোদনের জন্য সেখানে ট্রলার যোগে যাতায়াত করেন। কুয়াকাটা সৈকতের ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে শুটকি পল্লী। অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী শীত মৌসুমে বিভিন্ন মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরী করে। পর্যটকরা তাজা মাছ কেটে শুটকিজাত করার দৃশ্য দেখতে ভিড় জমায়। দেখতে পায় খুটা জেলেদের ইলিশ শিকারে সাগরে ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালি করা জীবন জীবিকার যুদ্ধ। দেখতে পায় বেড় জালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকারের অনন্য দৃশ্য। পর্যটকদের থাকা খাওয়ার সুবিধার্থে গড়ে উঠেছে পর্যটন কর্পোরেশনের পর্যটন হলিডে হোমস ও রেস্তোঁরা, জেলা পরিষদ ও এলজিইডির অত্যাধুনিক ডাক বাংলো। এছাড়াও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় অনেক আবাসিক ও খাবার হোটেল গড়ে উঠেছে। সরকারী উদ্যোগে নির্মিত রাখাইন কালচারাল একাডেমী, রাখাইন মহিলা মার্কেট সহ ঐতিহ্যবাহী কুয়া ও বৌদ্ধ মন্দির। কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার গঙ্গামতিতে ইকোপার্ক ও বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কুয়াকাটা উন্নয়নের জন্য মাস্টার প্লানের কাজ চলমান রয়েছে । অবস্থান: কুয়াকাটা সমূদ্র সৈকত পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা পৌরসভা ও লতাচাপলী ইউনিয়নের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত।
[কালেক্টেড]
যথারিতী ওদের বাস এসে থামলো নির্দিষ্ট জায়গায়।ওরা এসেছে বরিশাল বিভাগের, পটুয়াখালি জেলার,কলাপাড়া বা খেপুপাড়া উপজেলায়।

আলম সিকদার বলে উঠেন,

–” বাচ্চারা বাস এটুকুই যাবে এর পরের পথ হেটে যেতে হবে।”

মনির উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললো,

–” আচ্ছা আঙেল সমস্যা নেই।আমরা এই মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে করতে চলে যাবো।”

তারপর আবার কিছু একটা ভেবে চিন্তিত স্বরে,

–” কিন্তু আমরা নাহয় চলে যাবো কিন্তু আপনারা কিভাবে যাবেন?এতোটা পথ?”

আরিফের বাবা হেসে মনিরের কাধে হাত রেখে বলে,

–” আহা! বাবা এতো চিন্তা করো নাহ।বুড়ো হয়েছি ঠিকই কিন্তু গায়ের জোড় অতোটাও কমে যাইনি।আমরা পারবো।কি বলিস আলম?”

আলম সিকদার হেসে দিয়ে বলে উঠেন,

–” একদম! আজ আমরা চার বন্ধু একসাথে আনন্দ করতে করতে যাবো।”

মেরাজের বাবা আর খোকন মির্জা আনন্দিত গলায় উল্লাস করে উঠে।মেরাজের বাবা বলে,

–” হ্যা দোস্ত! এই প্রকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মনটা আসলেই চাঙ্গা হয়ে গেলো।”

–” হ্যা ঠিক বলেছিস! চল আমরা হাটি।” খোকন মির্জা বলেন।

ফরিদা আলম মুখ বাকিয়ে বলে,

–” এহহহ! মনে হয় তারা একলাই পারবে যেতে আমরাও পারবো।আমাদের গায়েও শক্তি আছে।”

আলম সিকদার ঠেস দিয়ে বলে,

–” তা সুন্দরী চলো না মানা করলো কে?”

ফরিদা আলম লজ্জা পেলেন।মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,

–” যাহ! এসব কি বলেন? বুড়ো হয়েছেন বাচ্চারা আছেন একটু সরম রাখিয়েন।”

সবাই হেসে দিলো উনাদের কান্ডে।

বড়রা সবাই হাটা ধরলো।

আফরান বলে উঠে,

–” তা তোরা এই পথ দিয়ে যাবি?না-কি অন্য আর একটা পথ আছে সেখান দিয়ে যাবি?”

নিবিড় আফরানের কথায় ঘাবড়ে গেলো চিল্লিয়ে বলে,

–” নো নো নো ভাই আমি জীবনেও যাবো নাহ ওই পথ দিয়ে আল্লাহ্ মাফ করুক।”

আলিশা ভ্রু-কুচকে বলে,

–” কেন? কেন যাবেন নাহ?”

–” নাহ আমি যাবো নাহ।”

আলিশা শয়তানি হাসি দিয়ে আফরানের উদ্দেশ্যে বলে,

–” আফরান ভাইয়া আমরা ওই পথ দিয়েই যাবো। চলুন।”

কথাটা শুনে নিবিড় শুকনো ঢোক গিললো। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দিলো ভো দৌড়।

–” মাহহ! তোমার ছেলেকেও তোমার সাথে নিয়ে যাও।আমি তোমাদের সাথে যাবো।”

আরিফ আর মেরাজ একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলে,

–” চল ব্যাটাকে ধরে আনি।”,

ওরাও নিবিড়কে ধরতে ছুটলো।
এদিকে সবাই হাসতে হাসতে শেষ ওর কান্ড দেখে।
সাদু দাঁড়িয়ে আছে একটা গাছের নিচে সেখানে ছোট্ট একটা ডালায় একটা টুনটুনি পাখির বাসা।বাসাটায় একটা পাখি আছে। কি সুন্দর পাখিটি বাসায় বসে ডিমে তা দিচ্ছি।২ টা বাচ্চাও ফুটেছে ।
সাদু একধ্যানে তাকিয়ে আছে।

মনির সাদুকে দেখে এগিয়ে এসে ওর কানে ফু দিলো। সাদু চমকে উঠে পাশে তাকালে মনির অন্যদিকে ঘুরে গেলো।সাদু আবার ওইদিকে তাকাতেই মনির সাদুকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
সাদু কিছুই বললো নাহ।মনির সাদুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

–” কি দেখছে আমার কলিজাটা?”

সাদু মাথা তুলে হাত দিয়ে পাখির বাসাটা দেখিয়ে দিলো।মনির হেসে সাদুর নাকটা হালকা করে টেনে দিয়ে বললো,

–” পাখিটা বুজি পাখি দেখছিলো।”

সাদু মুখটা বাচ্চাদের মতো করে মাথা উপর নিচ করলো।ওকে এরকম করতে দেখে মনির শব্দ করে হেসে দিলো।

–” তুমি এতো বাচ্চা কেন?”

–” আপনি বুইড়া দামড়া ব্যাটা কেন?”

এরকম একটা সিচুয়েশনে সাদু যে এমন একটা কথা বলবে মনির ভাবতেই পারিনি।

–” লাইক সিরিয়াসলি তুমি আমাকে এই ভাবো?”

সাদু ঠোঁট উলটে বলে,

–” এখানে অবাক হওয়ার কি আছে ভাবতেই পারি।”

মনির কিছুক্ষন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকলো সাদুর দিকে।তারপর হঠাৎ বাকা হেসে সাদুকে হেচঁকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।

সাদুর কানের কাছে মুখ নিয়ে আলতো স্বরে ফিসফিসিয়ে বলে,

–” তোমার আমাকে যা ভাবার ভেবে নেও।
বাট এই আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করলেও তোমার জন্যে তা ভয়ানক হবে।”

সাদুর মনে হচ্ছে ওর শ্বাস আটকে আছে গলায়।
কেন এই লোকটার স্পর্শ সে সয্য করতে পারে নাহ।কেন ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায় জঘন্যভাবে।
সাদু ঠেলে মনিরকে সরিয়ে দিয়ে নিজে দুরে গিয়ে দাড়ালো।হঠাৎ সাদুর মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসে।

ও বলে,

–” কিন্তু আমার মনে তো ওলরেডি সাত সাতজন আগে থেকেই বসবাস করে।এই সাতজন ছাড়া আমার চলেই নাহ।ঘুম থেকে উঠে এদের দেখি, ঘুমোতে যাওয়ার আগে এদের দেখি।”

মনির গেলো রেগে।ও ধুপধাপ পা ফেলে সাদুর কাছে গিয়ে ওর হাত শক্ত করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–” শোনো আমি জানি তুমি আমাকে রাগানোর জন্যে এসব বলছো।আর আমি জানি সেই সাতজনকে তারা তোমার প্রাণপ্রিয় BTS। আর এও জানি তাদের তোমার অনেক ভালোলাগে।হ্যা মানছি তারা এতোটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য।কিন্তু আমার জায়গা আমারই থাকবে আর তার বিন্দুমাত্র ভাগ আমি কাউকে দিবো নাহ।তারা শুধু তোমার ভালোলাগা আর ভালোবাসা আর তোমার জীবনের সব কিছু আমি।”

সাদু মুখ ভেংচি কেটে দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

–” হাহ্ হিংসুটে কোথাকার।”

–” ভালো হয়েছে আমি হিংসুটে।নিজের বউয়ের ভালোবাসার ভাগ আমি কাউকে দিবো নাহ।”

–” আমাদের বাচ্চা হলেও তাদের এই কথা বলিয়েন!”

মনির চমকে তাকালো।সাদু নিজেও কথাটা বলে আহাম্মক হয়ে গেলো।মনির ধীর পায়ে সাদুর কাছে এসে পিছন থেকে আলতো করে ওর বাহু ধরে বলে,

–” কি বললে আবার বলো?”

সাদু তো লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে।ওর গাল,নাক,কান সব লাল হয়ে আছে।
মনির আলতো হাসলো।মেয়েটাকে লজ্জা পেলেও কতোটা আবেদনময়ী লাগে বলে বুজাতে পারবে নাহ।
মনির ঘোর লাগা গলায় বলে,

–” কি হলো বলো নাহ।”

সাদু নিজের কুনুই দিয়ে মনিরের পেটে গুতো দিয়ে বললো ‘ যাহ!’ তারপর দৌড়ে চলে গেলো।
আর মনির তাকিয়ে রইলো সেদিকে।ঠোঁটে তার মনোমুগ্ধকর হাসি।

#চলবে,,,,,,,

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।