ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-০৫

0
875

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো❤️
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি❤️
#পার্টঃ০৫
বারান্দায় দোলনায় বসে একধ্যানে বাহিরে তাকিয়ে আছে সাদু।আকাশে মেঘের লুকোচুরি খেলা হচ্ছে,থেকে থেকেই ঢেকে দিচ্ছে চাঁদটাকে।
আকাশে আবার অসংখ্য তারার মেলা।
মৃদুমন্দ বাতাস বইছে সেই বাতাসের সাথে ভেসে আসছে হাসনাহেনা ফুলের সুভাস।
আহা! কি সুন্দর ঘ্রাণ।সাদুর প্রানটাই জুড়িয়ে যায় এই ঘ্রাণটায়।
কিন্তু আজ এই অতি মনোরম দৃশ্যগুলোও যেন সাদুর কাছে বিষাদ লাগছে।
আচ্ছা! ভালোবাসলে বুজি এতো কষ্ট?
এইযে এখন সাদূর মনে কষ্টের উথালপাতাল ঝড় বইছে।নিজের প্রিয় মানুষটিকে কটু কথা শুনিয়ে সে নিজেই যে ভীতরে ভীতরে গুমড়ে মরছে।
সাদুর চোখ বেয়ে এক ফোট তপ্ত জল গড়িয়ে পড়লো।
কিন্তু তা মাটিতে পরার আগেই একজন তা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তাকায় সাদু।
মনিরকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে সে।
এই লোকটা আসলো কিভাবে?বারান্দা দিয়ে তো আসে নাই কারন বারান্দা দিয়ে আসলে তো সে দেখতে পেতো।তাহলে কিভাবে? মুখ ঘুড়িয়ে বারান্দার দরজা দিয়ে রুমের দিকে তাকায় সাদু।
না দরজা তো আটকানো তাহলে মনির আসলো কিভাবে?ভেবে কুল পাচ্ছে না সে?
সাদু আবারো মনিরের দিকে তাকায়।
লোকটাকে এই মুহূর্তে ভয়ানক সুন্দর লাগছে।
মনির অতোটাও ফর্সা না শ্যাম বর্ণের।
কিন্তু এই শ্যামবর্ণ ধারন পুরুষটার প্রেমেই তো সে পড়েছে খুব বাজে ভাবে পড়েছে।
এই যে ঘন কালো সিল্কি চুলগুলো বাতাসে দুলছে আর এই দৃশ্য দেখেই তো তার মন চাচ্ছে আলতো হাতে তার চুলগুলো ঠিক করে দিতে।
খোচাখোচা দাড়িগুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
এইযে সাদু দেখছে লোকটার শার্টের দুটো বোতাম খোলা এতে যে তার লোমস বুকটা দৃশ্যমান।
আর এই বুকটাতেই নিজেকে সপে দিতে ইচ্ছে করছে।এই বুকটায় মাথা রেখে প্রাণ ভড়ে শ্বাস নিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আচ্ছা! এইযে সামনে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা এটা তো ওর স্বামি তাই নাহ? পৃথিবীর সবথেকে নিরাপদ ভরসা যোগ্য একজন তার।
তার ভালোবাসার মানুষ।তাকে যে সে কতোটা ভালোবাসে বলে বুজাতে পারবে নাহ।
তবুও! তবুও সে পারছে না লোকটাকে জড়িয়ে ধরতে।লোকটার আদড়মাখা ডাকে আহ্লাদী কন্ঠে আবদার করতে পারছে না।না পারছে নিজের ভালোবাসার প্রকাশ করতে।লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সাদু।
সাদুকে একধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনির দু ধাপ এগিয়ে আসে ওর কাছে।
আলতো করে স্পর্শ করে সাদুর গাল।
মুহূর্তেই এক ভালোলাগার শীতল স্রোত যেন দমকা হাওয়ার মতো সাদুর সারা শরীর স্পর্শ করে গেলো।
আবেশে চোখ দুটি বুজে ফেলে সে।
এইতো এই স্পর্শটাই তো সে চাইছিলো।এই স্পর্শটা ওর ভীতরটায় কতোটা শান্তি দিচ্ছে বলে বুজাতে পারবে নাহ সে।
মনিরের কথায় চোখ তুলে তাকায় সাদু।

–” কেন এরকম করিস?আমাকে কষ্ট দিয়ে নিজে কষ্ট পাচ্ছিস।তাও কেন স্বিকার করিস না যে ভালোবাসিস?আচ্ছা! আমি কি এতোটাই তুচ্ছ তোর কাছে?প্রমিস করলাম তো আর কখনো তোকে কষ্ট দিবো নাহ।
মাফ করে দে।আমাকে তুই যা মন চায় বল।পারলে মার তবুও! তবুও তুই প্লিজ নিজের এই মুল্যবান অস্রুগুলো ঝড়াস না।বড্ড এলোমেলো লাগে নিজেকে তখন।তোর চোখে জল সইতে পারি নাহ।বিশ্বাস কর তোর প্রতিটা জলের ফোটা এসিডের ঝলসে দেয় আমার হৃদয়টাকে।”

সাদু চোখ খুলে তাকায়।লোকটার মাঝে কি আছে এতো ভেবে পায়না সে।লোকটাকে চোখের দিকে তাকালেই সবকিছু এলোমেলো লাগে।বুকের ভীতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।
সাদু চোখ সরিয়ে চলে আসতে নেয়।
কিন্তু মনির ওর হাত ধরে ফেলে।একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে।সাদু দু-হাত মনিরের বুকের মাঝে আবদ্ধ।টান দেওয়ায় সাদুর চুলগুলো মুখে এসে আচঁড়ে পড়েছে।মনির হালকা হাতে চুলগুলো সরিয়ে দেয়।চুমু খায় কপালে গভীরভাবে।
সাদু অজানা ভালোলাগায় কেঁপে উঠে।
কেন?এতো কেন ভালোলাগে?এইযে লোকটা এই মাত্র তার কপালে ঠোঁট ছোয়ালো কেমন যেন সুখ সুখ লাগে।স্বামি সোহাগের চেয়ে পৃথিবীতে আর মধুর কিছু আছে বলে সাদু জানে নাহ।
তার কাছে তার স্বামি সবার আগে।পৃথিবীতে আর কিছু চাই না এই লোকটা তার কাছে তার পাশে থাকলেই হবে ব্যস।

–” হয়তো ঠিক ভাবে তোকে বুঝতে পারিনা
কিন্তু ভালোবাসি খুব,
হয়তো ঠিক ভাবে তোকে বুঝাতে পারিনা
তারপরও ভালোবাসি খুব,,
হয়তো একটু সাদামাটা
তারপরও ভালোবাসি খুব,,
হয়তো সময়ের বিবর্তনে একটু উবে গেছিলো
কিন্তু ভালোবাসি খুব,,
আর
হ্যা,,
এখনো ভালোবাসি খুব।”

মনিরের বলা এক একটা ‘ভালোবাসি’ শব্দগুলো যেন হৃদয়ে ঝংকার তুলে দিচ্ছিলো সাদুর।
সাদু পারলো না নিজেকে আটকাতে শক্তহাতে নিজের স্বামিকে জড়িয়ে ধরলো।হুঁহুঁ করে কেঁদে উঠলো।
আচ্ছা! এতো দূর্বল কেন সে?কেন পারলো না একটু অভীমান করে থাকতে? থাক অভীমান করা লাগবে নাহ! সে পারবে না অভীমান করে থাকতে।
এইযে এতোগুলো আদুড়েভাবে ভালোবাসাময় কথাগুলো কি উপেক্ষা করা যায়? উহু! কিছুতেই নাহ।
মনির দু-হাতে নিজের প্রিয়তমাকে জড়িয়ে ধরলো।।থেমে যাক সময়, থেমে যাক সব, এই মুহূর্তে চারদিকে বইতে থাকুক শুধু প্রেমের বাতাস।

—————————–
নূর বাগানে সুইমিংপুলে পা ডুবিয়ে বসে আছে।দৃষ্টি স্থির তার পানিতে।এই পানিতে সে কি দেখছে সে জানেনা তবুও তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে।হালকা বাতাসে তার চুলগুলো উড়ছে আর তা কিছুক্ষন বাদে বাদেই সে কানের পিছে গুজে দিচ্ছে।
আর তাকে দূর থেকে লক্ষ্য করছে আফরান।
মেয়েটাকে দেখতে তার ভালোলাগে।
মেয়েটার চঞ্চলতা, দুষ্টুমির সময় এদিক সেদিক তাকানো,থেকে থেকে কপাল থেকে আলতো হাতে চুলগুলো সরিয়ে দেওয়া,গভীর কালোচোখ জোড়া দিয়ে চারপাশ যখন দেখে তার সব কিছু ভালো লাগে।মেয়েটা তার কাছে থাকলেই তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আফরান।মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেললো সে।তার ধীর পায়ে হেটে গিয়ে নূরের পিছে দাড়ালো।
বললো,

–” ঘড়ে চলো! এখানে কি করছো?ডিনার করবে নাহ?”

আকস্মিক আফরানের গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে নূর।দ্রুত উঠে দাড়াতে নিতেই পা ফসকে সুইমিংপুলে পড়ে যেতে নিতেই।
একজোড়া হাত তার কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে কাছে টেনে নেয়।
আফরান বিচলিত হয়েই বললো,

–” কি করছো কি?সাবধানে থাকতে পারো না এখনি তো পড়ে যেতে।”

নূর দৃষ্টি সংযত করলো।লোকটার দিকে তাকালে সে চোখ সরাতে পারে নাহ।
নূর দুহাতে আফরানকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলে আফরান নিজেই সরে এলো।গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে,

–“চলো সবাই অপেক্ষা করছে।”

–“হুম!!”

আফরান আগে নূর তার পাশে হাটছে।একটু পর পর আঁড়চোখে তাকাচ্ছে।
আফরান হাটার মাঝেই বলে,

–” কোন সমস্যা?”

নূর আলতো হেসে বললো,

–” নাহ! আসলে অনেক রাত হয়েছে তাই ঘুম পাচ্ছে।”

–” খাবে না?”

–” ইচ্ছে হচ্ছে না!”

–” তা বললে হবে না অল্প করে হলেও কিছু খেয়ে নিও।”

নূরের কেমন যেন করে উঠে মনটায়।আর মানা করতে পারে নাহ।
মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিলো।

——————–
সবাই ডায়নিং টেবিলে বসে আছে।
বড়রা খেয়ে দেয়ে চলে গেছেন।কারন তারা চায়না তাদের জন্যে ছোটদের কথা বা দুষ্টুমিতে কোন ব্যাঘাত ঘটুক।

আলিফা ভয়ে ভয়ে খাচ্ছে।না জানি তার কোন বেস্টি আবার তার মান সম্মান খেয়ে দেয়।
আলিফাকে এমন করতে দেখে আরিফ খাওয়া থামিয়ে বললো,

–” কি হলো খাচ্ছো না কেন?”

আলিফা কেশে উঠলো।
আরিফ দ্রুত একগ্লাস পানি নিয়ে ওকে খাইয়ে দিলো আর একহাতে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

–” ঠিক আছো তুমি?”

আলিফা মাথা ঝাকায়।আরিফ ধমকে উঠে,

–” কিসব করো কিভাবে খাও হ্যা?
ভালো করে খেতে পারো নাহ?”

আলিফা ঠোঁট উলটে কাঁদো মুখ করে তাকায়।
আরিফ মুখ ঘুরিয়ে বিরবির করে বলে,

–” এই মেয়েটাকে বকতেও পারি নাহ।এরকম বাচ্চাদের মতো মুখ করলে তো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।”

তারপর আবার আলিফার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” দেখি এদিকে ঘুরো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

সবাই ‘উউউউউউ’ করে উঠলো।আলিফা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে আরিফের হাতে খেতে লাগলো।
মনির সেদিকেই তাকিয়ে আছে।তারও খুব ইচ্ছে করছে সাদুকে খাইয়ে দিতে।কিন্তু তাদের সময়টাতো আর ওদের মতো নাহ?
কবে যে ওরাও একটা একটা ভালোবাসাময় সম্পর্কে আবদ্ধ হতে পারবে।

#চলবে,,,,,,,,,,