ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-০২

0
1263

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো❤️
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি❤️
#পার্টঃ০২
আলম সিকদার অর্থাৎ সাদুর বাবা গম্ভীর মুখে বসে আছেন।তাকে এতোটা গম্ভীর মনোভাব নিয়ে থাকতে কেউ কখনো দেখেনি।
সামনে বসে আছে পাঁচ বেস্টু সাদু,নূর,আলিফা,আলিশা আর মিম।
অপরপাশে বসে আছে মনির,আফরান,আরিফ,নিবির আর মেরাজ।
তারপাশেই আছেন মনিরের বাবা।
মনিরের বাবা মানে খোকন মির্জা বললেন,

–“দোস্ত আমি খুবই দুঃখিত আমার ছেলেটা যে এমনটা করবে আমি ভাবতে পারিনি।
আমি খুবই লজ্জিত।”

আলম সিকদার গম্ভীর গলায় বলেন,

–” তুই কেন ক্ষমা চাচ্ছিস? তোর কোন দোষ নেই।
শুধু তোর ছেলেকে এটা জবাব দিতে দে যে আমরা তো ওদের বিয়ে ছোট থেকেই দেওয়ার পরিকল্পনা করিছিলাম।কিন্তু তাও কেন ও এমনটা করলো?”

মনির উঠে দাড়ালো তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আলম সিকদারের পায়ের কাছে বসলো বললো,

–” আংকেল আমি জানি আমি ভুল করেছি।
কিন্তু যদি বলি এর পিছনে কারন ছিলো যদি বলি আমি যা করেছি উম্মির ভালোর জন্যে করেছি।
তবে আই প্রমিস আংকেল আপনারা মন থেকে মেনে না নিতে আমি এই বিয়ের সম্পর্কে কোনদিন আগাবো নাহ।আপনারা চাইলে ও আগে নিজের স্টাডি কোমপ্লিট করবে তারপর না হয় আবার আমাদের বিয়া দিবেন।এটুকু বিশ্বাস রাখুন আমার উপর।যে আপনাদের মনির কখনো উম্মির খারাপ চাইবে নাহ।এতুটুকু ভরসা করুন আমার উপর।”

তারপর আবার ফরিদা আলম মানে সাদু’র মার কাছে গিয়ে বললো,

–” মামনি তুমি তো আমাকে বিশ্বাস করো।বলো?”

ফরিদা আলম মনিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললেন,

–” তোকে আমি চিনি তুই কখনোই আমাদের কারোর খারাপ চাইবি নাহ।”

আলম সিকদার হঠাৎ ওই ফিক করে হেসে দিলেন।উনাকে হাসতে দেখে সবাই আহম্মক হয়ে তাকিয়ে রইলো।হাসতে হাসতে উনি উঠে এসে মনিরকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলেন।তারপর হাসি মুখেই বলেন,

–” ইয়াংমেন আমি জাস্ট তোমাদের একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।তোমরা বিয়ে করেছো এতে আমি অনেক খুশি হয়েছি।আজ পেট ভরে মিষ্টি খাবো আহা! আয় খোকন বুকে আয় আমরা বেয়াই বেয়াই।”

মনিরকে ছেড়ে উনি খোকন মির্জাকে জড়িয়ে ধরলেন।সবার মুখেই হাসি।শুধু একজনের মুখেই হাসি নেই।সে ছলছল চোখে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।সাদু কখনো ভাবতেই পারিনি তার মা,বাবাও তার সাথে এমনটা করবে।
মনির হাসিমুখে যখন সাদুর দিকে তাকালো।মুহূর্তেই ওর মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো।
এই মেয়েটার চোখে পানি মনির একটুও সয্য করতে পারে না। মনির সাদুর দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই সাদু হাত উঠিয়ে চিৎকার করে বললো,

–” স্টোপ! আর একপাও আগাবেন নাহ।”

সাদুর চিৎকারে সবার হাসিমুখ মুহুর্তেই মলিন হয়ে গেলো।সবাই বুজতে পারছে সাদু এখন অনেক রেগে আছে।আফরান আর নিবির বোনকে উত্তেজিত হতে দেখে জলদি ওর কাছে গেলো।নিবির কাঁদো গলায় বলে,

–” পিকু! তুই শান্ত হো! এরকম কাঁপছিস কেন?আল্লাহ্ আফরান কিছু একটা কর।”

আফরান করূন চোখে তাকিয়ে বোনের দিকে।
সাদু চিৎকার করে বললো,

–” তোমরা এখন আদিক্ষেতা দেখাতে আসছো তাই নাহ?আমি বার বার বলেছি আমার কথাটা আগে শুনো আমার কথাটা আগে শুনো কিন্তু না তোমরা আমার কথা কেন শুনবে?আমার কোন গুরুত্ব আছে না-কি? তোমরা যা বলবে আমাকে তাই করতে হবে।”

আফরান এইবার রেগে গেলো।ও বললো,

–” তাহলে তুই ওই ছেলের সাথে কি করছিলি?”

–” বাহ বাহ! ব্যস এটুকু দেখেই তুমি আর নিবির ভাইয়া মিলে আমার এর সাথে (মনিরের) বিয়ে দিয়ে দিলে আরে আমি তো( সাদু সকালের সব কথা বললো কেন ছেলেটার সাথে গিয়েছিলো)”

সাদুর কথা শুনে সবাই অবাক।ওরা বুজতে পারছে ওরা বিশাল বড় একটা ভুল করেছে। এইবার এই ভুলের মাশুল ওদের হারে হারে টের পেতে হবে।
সাদু এইবার মনিরের কাছে গেলো ঘৃনা ভরা কন্ঠে বললো,

–” আপনাকে আমি সম্মান করতাম অনেক।কিন্তু আপনার চিন্তা ভাবনা এতোটা নিচ আমি ভাবতেও পারি নি। তবে আপনাকে আর কি বলবো আমার আপন দুই ভাই আমার সাথে বেইমানি করলো।”

নূর ও নিজের ভাইয়ের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে,

–” ভাইয়া! আমি আগে ভাবতাম আমার ভাই বেস্ট বাট আজ যা তুই সাদু’র সাথে করলি আমার সব ধারনা ভুল প্রমানিত হলো।”

তারপর আবার মনির এর পিছনে গিয়ে আস্তে করে বলে,

–” ওল দ্যা বেস্ট ভাই।আমি জানি আমার ভাই কখনো খারাপ কিছু করবে নাহ।
তুই বিয়ে করেছিস সাদুকে শুনে আমার লুংগি ড্যান্স দিতে মন চাইতাছে। কিন্তু এখন আমি আনন্দ দেখাইলে এই চুন্নি আমার চুল টেনে ছিরে ফেলবে তাই একটু এংটিং করতাছি আরকি।আলাভু ভাই।”

নূর গলা খাকারি দিয়ে আবার নিজেকে ঠিক করে নিলো।তারপর মনিরকে ঝারতে লাগলো।
মনির হা করে তাকিয়ে আছে তার বোনটা যে মাথায় এতো শয়তানি বুদ্ধি নিয়ে ঘুরে তা সে জানতো নাহ।অবশ্য কার বান্ধবী দেখতে হবে নাহ।

আফরান সাদুর কাছে আসতে আসতে বলে,

–” পিকু সোনা বোন আমার! মাফ করে দে ভাইয়াদের।এরপর থেকে তুই যা চাইবি তাই হবে।আই প্রমিস!”

সাদু তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

–” আপাততো কিছু চাইনা এমনিতেই অনেক কিছু পেয়ে গেছি।এখন আমি একা থাকতে চাই।”

বলেই সাদু একমুহূর্ত না দারিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ধরাম করে দরজা আটকে দেয়।

আলিফা মিনমিনে গলায় বলে,

–” দোস্ত সাদু আমার মনির ভাইয়াকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে না-তো?”

মিম খুশিতে টগবগ করে বললো,

–” হায়্! ওয় যদি মনির ভাইরে ডাইভোর্স তাইলে আমি বিয়া করে ফেলমু।”

আলিশা মিমের পিঠে ধরাম করে একটা কিল দিয়ে বললো,

–” লুচ্চা মাইয়া! ডিভোর্স বানানটা আগে ঠিকভাবে উচ্চারণ কর তারপর নাহয় পরেরটা পরে।”

এদিকে সাদুকে যেতে দেখেই নূর খুশির ঠ্যালায় সোফার উপর লাফাতে লাগলো আর বলছে,

–” ইয়েএএএ আমার বেস্টু এখন আমার ভাবি।
হায়! ভাইয়া তুই কি সুন্দর একটা কাজ করলি আমি দোয়া করলাম তুই ১০০ টা সন্তানের বাবা হো।”

মনির নূরের কথা শুনে বিষম খেলো।বলে কি এই মেয়ে এখনো ঠিকভাবে সাদু ওর সাথে কথাই বলে না আবার না-কি ১০০ টা বাচ্চা।

এদিকে সবাই চিন্তিত মুখেও হেসে দেয়।সবগুলাই পাগল কিন্তু মন অনেক ভালো।বড়রা সবাই চিন্তা ঝেড়ে যার যার রুমে চলে গেলো কারন তারা জানে সাদুকে এরা ঠিক মানিয়ে নিবে।

আলিফা নূরের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে নামাতে নামাতে বলে,

–” নাম সোফা থেকে তুই কি সোফা ভাংবি?”

–” তুইও আয় আমার সাথে আনন্দ করবি?” নূর লাফাতে লাফাতে বলে।

–” তোর মতো আমারে পাগলা কুত্তায় কামড় দেয় নাই যে আমি এমন করবো।”

–” আলুর বাচ্চা আমারে রাগাইস না। তাহলে কিন্তু একটু আগের কথা বলে দিমু।”

সাথে সাথে আলু নিজের মুখে আঙুল দিয়ে বললো,

–” আমি নিস্পাপ।আমি কিছু করিনি।”

আরিফ ভ্রু-কুচকে বললো,

–” কি ব্যাপার আলিফা? কি এমন হয়েছে যে তুমি ভয় পেয়ে গেলে।”

আলিশা দৌড়ে সামনে এসে বলে,

–” আমি বলছি আমি বলছি আসলে হয়েছে কি ভাইয়া সাদু যখন সকালে আমাদের কাছে এসে কান্না করছিলো তখন….”

আর বলতে পারলো নাহ তার আগেই আলিফা আলিশার মুখ চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

–” ফকিন্নি মাইয়া তুই আমার মান সম্মান সব ডুবাইবি এই প্লান করেছিস।”

এর মাজে মিম এসে ভাবনার মতো মুখভঙি করে বলে,

–” আচ্ছা কেউ আমাকে বলবে চুমু খেলে কি প্রেগনেন্ট হয়ে যায়?”

সবাই বড়বড় চোখ করে তাকালো মিমের দিকে।
মেরাজ বলে,

–” তোমাকে এইসব কে বলেছে?”

–” আরে বলেন নাহ?”

–” নাহ হয় নাহ।”

মেরাজের কথাটা শুনে মিম চিন্তিত স্বরে বলে,

–” তাহলে আরিফ ভাইয়ার চুমু খেয়ে আলিফা প্রেগনেন্ট হবে কিভাবে?নিশ্চয় ঘাপলা আছে।আই হেভ টু ফাইন্ড ইট।”

আরিফ বড় বড় চোখ করে তাকালো আলিফার দিকে।এদিকে আলিফা পারে না মাটি খুড়ে তার মাঝে ডুকে যেতে।আল্লাহ্ তার কপালেই কেন এমন বান্ধবী জুটাইলো মান সম্মান আর রাখলো নাহ।

#চলবে,,,,,