ভালোবাসা অবিরাম পর্ব-০৩

0
1226

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ০৩
#আইরাত_বিনতে_হিমি

বর বেশে বসে আছে বিখ‍্যাত নিউরোসার্জন আশফি চোধুরি। মুখে তার বেশ গম্ভীর ভাব। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড বিরক্ত এইসবে। এই বরবেশ কোলাহল তার উপরে আবার গ্রাম‍্য পরিবেশ কোনো কিছুই তেমন তার পছন্দ না। সে প্রচন্ড বিরক্তবোধ করে এইসবে। তার কাজিনমহল বন্ধুমহল সবাই জানে এইটা যে সে অতিরিক্ত কোনোকিছুই পছন্দ করে না। তাই তারা সবাই তার থেকে দূরে থাকে আর সেও এইসবে অভ‍্যস্ত। আসলে চৌধুরী বাড়ির সবাই জানে মিঃ আসফি চৌধুরী একজন বদমেজাজি রাগি এবং কোলাহল প্রিয় মানুষ। কিন্তু তাকে আজকে এইসব কোলাহল খারাপ একটা পরিবেশে বসে থাকতে হচ্ছে তাও আবার বরবেশে। সে প্রচন্ড বিরক্তবোধ করছে তার অবশ‍্য আর একটা কারণও আছে। সে আসলে এই বিয়েটা করতে চাইনি। আসলে আসফি গ্রামের কোনো মেয়ে বিয়ে করতে চায়নি। সে চেয়েছিল শহরেল ভদ্র সমাজের একটি মেয়েকে বিয়ে করতে। তার অবশ‍্য একটি পছন্দও আছে। নাম হচ্ছে রিমি। সে ভীষণ ভালোবাসে রিমিকে রিমিও তাকে অনেক ভালোবাসে। সেই ছোট্টবেলা থেকে তাদের প্রেম। তারা একি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েছে। ইভেন একি প্রতিষ্ঠানে দুজন একি পেশায় চাকরি করছে। আজ সেই ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে। যাকে দীর্ঘ 15 বছর ধরে ভালোবেসে আসছে তাকে ছেড়ে কিনা এই গ্রাম‍্য মেয়েকে বিয়ে করতে হচ্ছে। আজ যদি রিমি এই কথা জানে যে আমি তাকে ছেড়ে একটি গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করছি। তাহলে ওর কি অবস্থা হবে। কোথায় যাবে আমার দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি…

যেখানে আমি রিমিকে বলেছিলাম যে রিমি পরি যাই হোক না কেন আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। কোন মুখ নিয়ে আমি তার সামনে যাবো আপনারাই বলুন। কিন্তু আমিই বা কি করবো বলুন তো। ছোট থেকে আম্মু বড় আম্মু মামনি এরা এতো আদর দিয়ে বড় করলো যারা এতো ভালোবাসলো তাদের কথাই বা কি করে ফেলে দেয়ই বলুনতো। তাই আজ আমি আসফি চৌধুরী নিজের আত্মসম্মান নিজের ভালোবাসা সবকিছু বির্সজন দিয়ে নিজের অমতে এই বিয়েটা করছি…

বসার ঘরে বসে আছে আসরাফ চৌধুরী, আদনান চৌধুরী, আরমান চৌধুরী, আসরাফ চৌধুরীর স্ত্রী রুমানা চৌধুরী এবং নিলুর মা নীলা বেগম তাদের মধ‍্যে কথোপকথন হচ্ছে তারই মধ‍্য থেকে নীলা বেগম বলে উঠলেন…..

বাবা হারানো মেয়ে আমার খুব কষ্ট করে বড় করেছি শুধু আপনাদের কথায় আমার অতি আদরের এক মাত্র মেয়েকে আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। দোয়া করে আমার মেয়েটার খেয়াল রাখবেন।

এইসব বলেই নীলা বেগম আচলে মুখ গুজে ডুকরে কেদে উঠলেন। তাকে শান্তনা দেওয়ার জন‍্য রুমানা চৌধুরী ( আসফির বড় আম্মু/ বড় চাচি ) সে বললেন…

আরে আপা কাদছেন কেন? আপনার মেয়েকি আমার মেয়ে নয় আপনি একদম চিন্তা করবেন না আমি ওকে আগলে রাখব নিজের মেয়ে করে রাখবে। ওকে কেউ কিছু বলার আগে সেটা আমাকে বলতে হবে। এইযে আমি ওকে এই গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে যাচ্ছি দেখবেন মেয়েকে আমি আপনার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার মতো করেই আপনার কাছে নিয়ে আসবো। Don’t worry আমি আছি তো

তার কথায় তাল দিয়েই পাশ থেকে আশরাফ চৌধুরী (আসফির বড় আব্বু/ বড় চাচা) বললেন….

আপা আপনি শুধু ঘাবড়াচ্ছেন এই ভাইটার উপর একটু ভরসা রাখেন। দেখবেন আপনার মেয়ে খুব ভালো আছে।

হ‍‍্যা ভাই তাই যেনো হয় আমার মেয়ে যেনো অনেক ভালো থাকে সেই কামনায় করি।আচ্ছা এইবার চলেন দিরে হয়ে যাচ্ছে শুভ কাজটা শেরে ফেলি….

এইসব বলেই তারা কাজিকে নিয়ে গিয়ে আসফির সামনে হাজির করলো

আসফিকে কাজি একটি কাগজ এগিয়ে দিয়ে স্বাক্ষর করতে বললো…..

আসফি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেনো ভেবে সইটা করে দিলো….

তারপর তাকে কবুল বলতে বলা হলো…

আসফি চুপচাপ ৩ বার কবুল বললো। কবুল বলার সাথে সাথে সবাই আলহামদুলিল্লাহ্ বলে উঠলো।

কিন্তু এইদিকে আসফির হাত শক্ত হয়ে আসলো। তার গলার প্রত‍্যেকটা রগ ফুলে উঠলো। সে হাতের মুঠি শক্ত করে চোখ বন্ধ করে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে…..

এইদিকে নিলু সেইযে কান্না জুরছে। তার কান্না থামার আর নাম নেই। সে কেদেই চলছে। তারই মধ‍্যে ঘরে প্রবেশ করলো কাজি বললো মা এই কাগজটা সই করে দেয়….

নিলু এইবার জোরে কেদে উঠলো হাতে কাগজাটা নিয়ে সে শুধু দেখছে আর কান্না করছে। মনে পরছে সেই শৈশবের কথা। যখন সে এই বাড়িতে নতুন অতিথি হয়ে এসেছিল। কতই না আনন্দ ছিল। কতই না যত্ন করে তার বাবা মা তাকে বড় করেছে। কত দুঃখ কষ্ট আসছে জীবনে তবু তার মা বাবা তাকে কিচ্ছু বুঝতে দেয়নি তাকে আগলে রেখেছে। আগলে রেখেছে সব বিপদ থেকে। তার যখন ১০ বছর তখন তার বাবা মারা যায় নিলু সেদিন খুব কেদেছিল। বাবার হাতটা ধরে বলেছিল বাবা তুমি চলে যাচ্ছো তুমি চলে গেলে আমায় আইসক্রিম কিনে দিবি কে স্কুল নিয়ে যাবে কে ঘুরতে নিয়ে যাবে কে আমাকে মার বকুনির হাত থেকে রক্ষা করবে কে বলোনা প্লিজ ওহ বাবা কথা বলোনা বলোনা এই তোমরা আমার বাবাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো কোথায় নিয়ে যাচ্ছো মা মা দেখো বাবা ওরা আমার কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। মা মা ওদেরকে বলোনা আমার বাবাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে বলোনা বলোনা এইসব বলেই সেদিন নিলু sense হারিয়ে ছিলো….

বর্তমান…

নিলু এই নিলু সই টা কর কিরে কোথায় হারায় গেলি তুই….

এই কথা শুনে নিলু অতীত থেকে বর্তমানে আসে আর চোখের পানি মুছে সই করে আর মনে মনে বলতে থাকে…..

আজ তুমি আমার এই বিশেষ মুহূর্তে আমার পাশে নেই। এ কেমন বলোতো নারীকে ছারতে হয় তার আপন ঘর। ছাড়তে হয় তার প্রথম ভালোবাসা তার বাবাকে। ছাড়তে হয় যেখানে সে শৈশব কৈশোর পার করেছে এ কেমন নিয়ম….

নিলু সই করে কাগজটা দিয়ে দেয় এবং সে তার ভাবনা থেকে বেড় হয়ে আসে….

এরপর নিলুকে কবুল বলতে বলা হয় কিন্তু নিলু কবুল বলতে পারছিলো না। তার গলা ধরে আসছিলো। মনে হচ্ছিল কেউ তার গলা চেপে ধরে আছে। তার গলা অসার হয়ে আসছে। গগন বিদারি চিৎকার দিতে ইচ্ছে করছে। বলতে ইচ্ছে করছে মা আমি তোমায় ছেড়ে যাবো না। তাও নিলু কষ্ট সহ‍্য করে কান্নার হিরিক নিয়ে কবুল বললো। নিলুর কবুল বলার সাথেসাথে নিলুর মা নিলুকে ধরে কাদতে শুরু করলো। নিলুও চিৎকার করে কাদছে।আর পাগলের মতো প্রলেব করছে। বার বার বলছে মা আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না মা আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না। এরি মধ‍্যে নিলুকে নিয়ে গাড়িতে উঠানোর ব‍্যবস্তা করে ওকে গাড়ি সামনে নিয়ে আশা হচ্ছে নিলুর পিছু পিছু আসছে আসফি চৌধুরি….

নিলুঃ মা আমি যাবো না মা আমি যাবো না।

এইসব বলতে বলতে ওর হাতপা অবশ হয়ে আসছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। নিলুর কাছে সবকিছু সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছে। আস্তে আস্তে সব অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। নিলু sense হারিয়ে পরে যেতে নিলে পাশ থেকে আসফি ধরে ফেলে….

আরে Hello miss আপনি ঠিক আছেন তো আরে এ তো senseless হয়ে পড়েছে।

আসফির এক হাত নিলুর কোমরের আরেক হাত গলার নিজ দিয়ে কানের কাছে আসছে। নিলু এখন শুন্নে ভাসছে। আসফি নিলুকে কোলে করে গাড়িতে নিয়ে যায় এবং তার বোন নেহা আপুর কাধে মাথা রেখে সুয়িয়ে দেয়। আর বন্ধু আদিকে বলে পানি আনতে আর সে পালস চেক করে। তার এতো কেয়ারিং দেখে নীলা বেগমের খুব ভালোলাগে। সে মনে মনে ভাবে তার মেয়েটার বুঝি এবার ভাগ‍্য ঘুরলো।

আদি পানি নিয়ে আসলে আসফি গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে আর বড় আম্মুকে বলে….

বড় আম্মু আমরা যাচ্ছি তোমরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে এসো আল্লাহ্ হাফেজ। এরপরই গাড়িটা শাই করে চলে যায়। একে একে সব গাড়ি চলে যায়। পরে থাকে শুধু নীলা বেগম। সে খুব কান্নাকাটি করে। পরে তাকে ধরে তার এক বোন তাকে ঘরে নিয়ে যায়

চলবে….