ভালোবাসা অবিরাম পর্ব-০৪

0
701

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ০৪
#আইরাত_বিনতে_হিমি

চৌধুরী বাড়ি….
বাড়ির এক রুমে আধ শোয়া হয়ে বই পরছে এই বাড়ির সবচেয়ে আদরের মেয়ে মিষ্টি। এই বাড়ির বললে ভুল হবে আসলে আসফি চৌধুরীর খুব কাছের এবং আদরের বোন। এই ছোট্ট বোনটিই তার সব। মিষ্টির কিছু হলে সে পাগল হয়ে যায় তার বোনকে কেউ কাদালে সে তাকে ছেরে দেয় না। মিষ্টি পরছে হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা উপন‍্যাসটি। ঠিক সেই সময় চৌধুরী বাড়ির মেইন দিয়ে প্রবেশ করছে ৫ টি গাড়ি। সেই গাড়ির আওয়াজ পেয়েই মিষ্টি দৌড়ে বেলকনিতে যায় গিয়ে দেখতে পায় তার ছোট ভাইয়া বউ নিয়ে চলে এসেছে তাই সে এক দৌড়ে উপর তোলা থেকে নিচ তলায় নামছে আর বলছে……

মা, ছোট মা, বড় ভাবি, মেজো ভাবি, দাভাই, মেজো ভাই কোথায় তোমরা তাড়াতাড়ি এসো বউ চলে এসেছে ছোট ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে চলে এসেছে আরে বাড়ির সবাই কোথায়…

তার কথায় পুরো চৌধুরী বাড়িতে যেনো একটি শব্দই মুখরিত হচ্ছে বউ চলে এসেছে বউ চলে এসেছে…

রেখা আর রেবা চৌধুরী মিষ্টির কথায় তাড়াতাড়ি বাহির হয়ে আসে আর খুব জটলাজলদি বাড়ির বাহিরে মেইন গেটের সামনে চলে যায়। গিয়ে দেখতে পায় নিলু চুপচাপ নেহার কাধে মাথা রেখে সুয়ে আছে তাই তো নিজের উদগ্রিব ধরে রাখতে না পেরে রেখা চৌধুরী(নেহা আর আসফির মা) বলেই ফেলে…..

নেহা নিলুর কি হয়েছে এইভাবে সুয়ে আছে কেন? কিরে বল….

তার কথায় আদনান চৌধুরী (নেহা আর আসফির বাবা) বলে….

আহ রেখা কি হচ্ছেটা কি সব কথা তুমি পড়েও শুনতে পারবে এখন মেয়েটা খুব টায়ার্ড ওকে ধরে তাড়াতাড়ি বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাও। মেয়েটার রেষ্টের প্রয়োজন।

কিন্তু….

রুমানা চৌধুরী ঃ কিন্তু কিচ্ছু না রেখা মেয়েটাকে রুমে নিয়ে যা।

রেখা চৌধুরী আর কিচ্ছু বললো না সে চুপচাপ নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখে নিলুকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো এবং নিলুকে সাথে করে মিষ্টির রুমে নিয়ে গেলো এবং বলল তুমি এখানে বসো মা আমি তোমার জন‍্য লেবু পানি নিয়ে আসছি….

নিলু শুধু মা নারালো সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে এইটা তার শাশুড়ি মা…

মিষ্টি একটু কাছে এসে নিলুর পাশে বসলো আর বলল…

হাই আমি রুশা চৌধুরী আসফি চৌধুরীর ছোট চাচার মেয়ে সবাই আমাকে মিষ্টি বলে ডাকে তুমিও আমাকে ডাকতে পারো। আর হ‍্যা আমি কিন্তু তোমার ননদ।

মিষ্টির কথায় নিলু মুচকি হাসলো আর বল্লো ওকে ননদিনী।

তারপর তারা কিছুক্ষণ কথা বললো তাদের কথার মাঝেই রেখা রেবা আর রুমানা চৌধুরী রুমে ডুকলো। রেখা চৌধুরী নিলুর দিকে লেবু পানি এগিয়ে দিলো। রেবা চৌধুরী হাতে খাবার নিয়ে বলল…..

তাড়াতাড়ি লেবু পানি শেষ করো তারপর এইটা খেতে হবে।

নিলু তাদের এমন ব‍্যবহার দেখে সবার দিকে ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাকিয়ে রইল। তার এমন ভাবে তাকানো দেখে রুমানা চৌধুরী তার মাথায় হাত রেখে বললো…..

কিরে কি হলো এইভাবে তাকিয়ে আছিস যে। তুই আমার মেয়ের মতো তাই তুই করে বললাম কিছু মনে করিসনিতো আবার….

না না না কিচ্ছু মনে করিনি আন্টি। আপনি তো আমার মায়ের মতো তাই তুই করে বলতেই পারেন…

এই আন্টি আবার কিরে বড় আম্মু বল। আসফি আমাকে বড় আম্মু বলে আমি চাই তুইও আমাকে বড় আম্মু বল। শুধু তাই নয় এইযে তোর শাশুড়ি মা তাকে আম্মু বলবি আর এইযে দেখছিস আসফির ছোট চাচি। ওকে আসফি মামনি বলে তুইও তাই বলবি ঠিকাছে তাহলে আমরা খুশি হবো বুঝলি নাহলে কিন্তু না….

তার কথা শুনে নিলু মাথা নারালো। তারপর নিলুকে তারা খায়িয়ে দিয়ে বাড়ির অন‍্য মেয়ে বউদের ডাক দিলো। বললো নিলুকে রেডি করে আসফির রুমে দিয়ে আসতে। তারাও মাথা নাড়ালো…

বাড়ির বড় বউ…
হাই নিলু আমি দিশা এই বাড়ির বড় ছেলে বউ।

হ‍্যালো ভাবি। ভালো আছেন।

হুম ভালো আছি…

বাড়ির মেজো বউ…
নিলু আমি কিন্তু তোমার মেজো জা বুঝছো

জি ভাবি

আমাকে(নেহা) তো তুমি চিনোই নিলু আর কি পরিচয় দেবো বলো। চলো নিলু তোমাকে ভাইয়ের রুমে দিয়ে আসি।

নিলু মাথা নাড়ালো। তারপর তারা সবাই মিলে নিলুকে আসফির রুমে দিয়ে আসলো। নিলু এখন আসফির রুমে বসা। রুমে কেউ নেয় নিলু ছাড়া তাই নিলু রুমটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। রুমটা বেশ বড়। একসাইটে একটা শোফা। আরেক সাইটে ড্রেসিং টেবিল। আরেক পাশে একটা কাবার্ড। কাবার্ডের পাশেএকটা study table আর আজকে বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে রুমটাকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে গোলাপ আর অর্কিডের সমন্বয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আর সারা রুমে ক‍্যান্ডেল জলছে। কিন্তু যার রুম সে কোথায় সে কেনো এখনো রুমে আসছে না।

একজন আর্দশবান ডাক্তার হওয়ার সত্বেও একের পর এক ড্রিংকসের বোতল সাবার করছে আসফি চৌধুরী তাও আবার নিজ বাড়ির ছাদে। পাশে তার খুব কাছের বন্ধু আদি। আদি বার বার বলছে….

আসফি প্লিজ বন্ধ কর এইসব। বাড়ির সবাই দেখলে কি ভাব্বে। আর তার মধ‍্যে আজ তোর বাসর রাত..

বাসর রাত কিসের বাসর রাত বল তুই কিরে বল যেই বিয়েটা আমি মানি না। যাকে আমি বউ বলে পরিচয় দেয় না। তার সাথে কিনা আমার বাসর হাও ফানি।

এই কথা বলতে বলতে আসফি পরে যাচ্ছিল। অতিরিক্ত নেশা করার ফলে তার এমনটা হচ্ছে। খুব ভালো করেই তা বুঝতে পালছে আদি। তাই সে আসফিকে ধরে তার রুমে দিয়ে আসতে নিলে। আসফি বমি করে দেয়। আসলে আসফি কখনো ড্রিংকস করে না। আজ হুট করেই ড্রিংকস করায় তার সহ‍্য হয় নাই। তাই এই অবস্থা। আসফি এবার গা ছেড়ে দিছে। তাই ওকে ধরে নিয়ে আদি অর রুমের সামনে গিয়ে আসতে করে রুমের দরজায় নক করে আর বলে….

ভাবি আসবো

কে

আমি ভাবি আসফিকে নিয়ে আসছি

আসুন

আদি আসফিকে নিয়ে রুমে ভিতরে যায়এবং আসতে করে খাটে সুয়িয়ে দেয়…

নিলু অবাক তার মনে অনেক প্রশ্ন। নাহ সে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারছে না তাই সে জিঙ্গাসা করেই বসলো….

কি হয়েছে উনার…

সরি ভাবি আমি বলতে পারবো না। আমি আসছি। এই কথা বলে আদি বাহির হয়ে যায়। আর নিলু দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসফির কাছে আসে খুব কাছে এখন তাদের মাঝে দুরত্ব খুব কম। কিসের একটা গন্ধ পেয়ে নিলু চোখ মুখ খিচে দূরে সরে আসে।

একি আমি কি দেখছি এই লোক নেশা করে মাতাল হয়ে নিজের বিয়ে করা নতুন বউয়ের কাছে আসছে। নিলু আর ভাবতে পালছিলো না তাই ধপাস করে ফ্লোরে বসে পরে…

চলবে….