ভালোবাসা অবিরাম পর্ব-০৫

0
599

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ০৫
#আইরাত_বিনতে_হিমি

হঠাৎ করেই আকাশে কালো মেঘ জমেছে। এখনকার আকাশ দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না একটু আগে এই আকাশে রাশি রাশি তারা ছিলো, ছিলো একফালি চাদঁ। হঠাৎ আকাশের এই পরিবর্তন কি কোনো বিপদের সারা দিচ্ছে নাকি প্রকৃতি তার আপন মনে খেলা করছে। কালো মেঘে যেনো আকাশটা ছেয়ে গেলো পশ্চিমা আকাশ দেখে বাতাস বয়ছে। থেমে থেমে বিদুৎ চমকাচ্ছে। যেনো এখনি বৃষ্টি নামবে। আকাশের এই অবস্থা দেখে নিলুর মনে হচ্ছে আজকে তার সাথে তার ঐ আকাশেরও মন খারাপ তাই তার এমন আচরণ। নিলুর ভাবনার মাঝেই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। নিলু বসা থেকে ওঠে জানালার র্পদাটা টেনে দিলো। হাটা দিলো ওয়াশরুমের দিকে। ওয়াশরুমে ঢুকে ওয়াশরুমের দরজাটা বন্ধ করে দিলো। চুপচাপ শাওয়ারের ট‍্যাপটা অন করে দিলো। আস্তে আস্তে তার উপর পানি পরতে শুরু করলো সে ধপাস করে শাওয়ারের নিচে বসে পড়লো। আসলে নিলুর কাদা উচিত কিন্তু নিলু তা পারছে না। তার চোখ লাল হয়ে গেছে যেনো এখনি বর্ষণ নামবে। কিন্তু নামছে না। নিলুর প্রচন্ড মন খারাপ হলে নিলু এই কাজটা প্রায় সময় করে অনেকটা সময় ধরে শাওয়ারের নিচে বসে থাকে আর আজ যেনো প্রকৃতিও নিলুর সঙ্গ দিচ্ছে। প্রায় ২ ঘন্টার মতো নিলু শাওয়ারের নিচে হাটু গেরে বসে আছে না আছে কোনো ভাবাবেগ না আছে কোনো প্রানবন্ততা। এ যেনো প্রানহীন প্রানী………..

ভোর ৪ টার দিকে আসফির ফোনে অনবরত কল আসতেই থাকে। আসফি ঘুম ঘুম চোখে তার এক হাত দিয়ে ফোন খুচ্ছে এবং তার নাগালও পেয়ে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিফ করতেই একটা মেয়েলি কন্ঠশ্বর ভেসে এলো….

আসফি কোথায় তুমি কি করছোটা কি কাল থেকে কল করছি তুমি রিসিভই করছো না।

এতোখনে আসফির হুস ফিরলো। সে সোয়া থেকে এক লাফে উঠে বসলো। কিন্তু তার মাথা ছিরে যাচ্ছে। হঠাৎ উঠে বসায় আরও সমস্যা হচ্ছে। তবে তার কোনো তুয়াক্কা না করে সে বললো….

রিমি তুমি তাও এতরাতে কল করছো। আমি সকালে তোমার সাথে দেখা করব ওকে

তার কথার মাঝেই সে খেয়াল করলো ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে।

আরে এতো রাতে পানির আওয়াজ আসছে কেনো। রিমি তুমি রাখো আমি একটু পর কল ব‍‍্যাক করছি।

এই কথা বলে আসফি ফোন রেখে দিলো।

অপাশ দেখে রিমি বলেই যাচ্ছে….

হ‍্যালো আসফি কি হয়েছে কোনো সমস‍্যা হ‍্যালো।
যাহ বাবা কলটা কেটে দিলো

আসফি খুব আসতে আসতে ওয়াশরুমের সামনে গেলো। যাওয়ার পর দরজা নক করবে ঠিক তখনই তার মনে পরলো কিছুক্ষণ আগের কথা সে ড্রিংকস করছিল তারপর। তারপর এই রুমে সে আসলো কি করে তাহলে এই মেয়েটা কোনোভাবে বুঝতে পারছে আমি ড্রিংকস করছি। আর ভাবতে পারছে না তাই সে দরজা নক করলো কিন্তু ভেতর থেকে কোনো শব্দ আসছে না। কোনো উপায় না পেয়ে শেষমেশ আসফি দরজা ভেঙ্গে ফেলে। আর ভেঙ্গে যা দেখে তা দেখার জন‍্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। সে দেখতে পায় নিলু ফ্লোরে পরে আছে উপর থেকে পানি পরছে তার সম্পূর্ণ বিয়ের শাড়ি ভেজা গা ভর্তি গহনা কোনো কিছুই সে খুলেনি আধমরার মতো সে ফ্লোরে পরে ভিজছে।

আসফি…
ওহ মাই গড এই মেয়ে কি করছে

দৌরে আসফি নিলুর কাছে যায় নিলুকে ধরে তার পাছরের কাছে আনে নিলুর গাল ধরে বার বার জিঙ্গাসা করে….

এই মেয়ে তুমি ঠিক আছো তো প্লিজ কথা বলো এই এই প্লিজ চোখ বন্ধ করো না একটুকষ্ট করে তাকিয়ে থাকো প্লিজ। আসফি জটলাজলদি নিলুকে কোলে তুলে নেয় ট‍্যাপটা বন্ধ করে নিলুকে রুমে নিয়ে আসে। ঐ অবস্থায় নিলুকে বিছানায় সুয়ায় দেয়। আসফি কি করবে কিছু বুঝতাছে না। তারও শরীর টা ভালো লাগছে না মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আসফি কল করে একজনকে কল করে বলে…..

হ‍্যালো আপি(নেহা) তুই কি রুমে এখনি আমার রুমে আয় প্লিজ its emergency..

ফোনটা রেখে আসফি নিলুর হাতটা ধরে নিজের হাতের তালু দিয়ে ঘসতে লাগলো যাতে তার হাত ঠাণ্ডা না হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ‍্যে তার রুমে নক করার আওয়াজ শুনতে পায়। সে বুঝতে তারে কাঙ্খিত মানুষ চলে এসেছে। তাই সে দেড়ি না করে অতি দুরোতো দরজা খুলে দেয় আর বলে….

আপি ভেতরে আয় তাড়াতাড়ি

নিলু আসফি নিলুর কি হয়েছে ও এইভাবে সুয়ে আছে কেন ওর শরীরের কাপড় এতো ভেজা কেনো। আসফি বল কিরে….

আপি প্লিজ হোল্ড কর প্লিজ এখন এত কথার সময় নয়। ওর জামাটা অতি তাড়াতাড়ি চেন্স করায় দে প্লিজ। ওর শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। ওর শরীর emergency গরম করতে হবে। আর তার জন‍্য প্রয়োজন শুকনো কাপড়। প্লিজ আপি আর দেরি করিস না আমি বাহির হয়ে যাচ্ছি ওকে….

এই কথা বলে আসফি রুম থেকে বাহির হয়ে যায়

নেহা নিলুর কাছে এসে নিলুর কাপড় চেন্স করিয়ে দিয়ে ওকে আবার বিছানায় সুয়ায় দেয়। কাবার্ড থেকে ব্লাংকেট এনে গা ঢেকে দেয়। তারপর নেহা বাহির হয়ে আসফিকে ডাক দেয়। বলে….

ভাই তুই রুমে যা আমি আমার রুমে যাচ্ছি। অবস্থা খারাপ দেখলে আমাকে একটা কল দিছ ওকে….

আচ্ছা তুই যা…

এই কথা বলে আসফি রুমে আসে। রুমে এসে দেখে নিলু শীতে কাপছে।

ওহ শিট। এই মেয়ের অবস্থা তো আরও খারাপ হচ্ছে

আসফি তাড়াতাড়ি কাবার্ড থেকে আরেকটা ব্লাংকেট এনে নিলুর গা ঢেকে দেয়। নিলুর গালে আস্তে আস্তে থাপ্পর দিয়ে দিয়ে নিলুকে ডাকছে আর বার বার পালস চেক করছি। পাশের ডয়ার থেকে একটা ইনজেকশন বাহির করে নিলুর শরীরে পুশ করে। তারপর সে নিচে যায় কিচেনে ফ্রিজ থেকে দুধ বেড় করে গরম করে গ্লাসে করে উপরে নিয়ে আসে। এসে নিলুকে ধরে উঠিয়ে খায়িয়ে দেয়। তারপর খুব আস্তে করে আবার নিলুকে সুয়ায় দেয়।

ফজরের আজান দিচ্ছে নিলু এখন ঘুমে। করিডরে বসে বসে বাহিরে বৃষ্টি দেখছে আসফি। ভাবছে আজ কথা থেকে কথায় আসলো তার জীবন। আজ ঘরে তার একটা বউ আছে কিন্তু সে তো এই মেয়েকে বউ হিসেবে চায়নি। যাকে চেয়েছিল সে আজ অনেক দূরে। আজ আবার রিমির সাথে তার দেখা করতে হবে। কি বলবে সে রিমিকে ঘরে বউ রেখে বাহিরে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। ব‍্যাপারটা কেমন চরিত্রহীন চরিত্রহীন মনে হচ্ছে। বৃষ্টির পানির ঝাপটায় আসফি কল্পনা থেকে বাহির হয়ে আসে। সে বসা থেকে উঠে রুমে আসে রুমে এসে নিলুর মুখটা দেখেই তার খুব বিরক্ত লাগে। সামান‍্য একটা ইসুর জন‍্য এই মেয়ে কত বড় একটা কাজ করছে। কোনো maturity নেই তার মধ‍্যে। সকালে বাড়ির সবাইকে কি বলবে সে। খুব জঘন্য একটা ব‍্যাপার হবে ছি।

চলবে…