ভালোবাসা তুই পর্ব-০২

0
664

#ভালোবাসা_তুই
#পর্ব_২
#লেখিকা_সাদিয়া_জান্নাত_সর্মি

ওদের কথা শুনে আমার চোখ থেকে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়লো। শেষে কি না চুরি করেছি এই কথাও শুনতে হলো আমাকে। আমি ওখান থেকে উঠে চলে আসতে যাবো তখন দেখি আফি আমার সামনে এসে আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো আফি,,

তোর মুখে কি লাগাম লাগানো আছে নুর? ওরা সবাই তোকে এতো বাজে কথা বলছে আর তুই কিছু না বলে চুপচাপ শুনছিস?আর আপনারা,কি মন মানসিকতা আপনাদের হ্যা? পোশাক দেখে মানুষ কে কেন বিচার করেন?ও কমদামি পোশাক পড়ে আছে দেখে যে ও কোন বাড়ির কাজের মেয়ে এটা ভাবলেন কি করে আপনারা?আর কাজের লোক হলেই যে এই ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে না, মানুষের বাসায় চুরি করে পরে এরকম রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে এমনটা কেন?

আফির চিৎকার চেঁচামেচি শুনে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার তাড়াতাড়ি আমাদের এখানে এলেন।

এক্সকিউজ মি ম্যাডাম, আমাদের রেস্টুরেন্টে কোন সমস্যা হয়েছে কি আপনার? এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করছেন কেন?
আফি রাগি গলায় উত্তর দিলো,,
হ্যা হয়েছে। আপনার রেস্টুরেন্টে কিছু নিচু মানসিকতার লোক আছে আর সেজন্য আমরা এখানে খেতে পারবো না, আসছি আমরা।
আফি আমাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। প্রচুর পরিমাণে রেগে আছে এখন,আমাকে কেউ বাজে কথা বললে আফি সেটা সহ্য করতে পারে না। আমি চুপচাপ অপমান সহ্য করি কাওকে কিছু বলি না কিন্তু আফি আমার একদম বিপরীতে। আমি ওকে শান্ত করার জন্য বললাম,

আফি, তুই শুধু শুধু ওদের বকাবকি করলি কেন? ওরা তো ঠিকই বলেছে আমাকে। আমি তো আমাদের বাসার কাজের মেয়েই,ভুল কিছু বলেনি ওরা।

দেখ নুর এতোক্ষণ ওরা আমার মাথা গরম করেছে আর এখন তুই শুরু করেছিস।কে বলেছে তুই কাজের মেয়ে, আন্টি তোর সাথে এমন আচরন করে বলে তুই নিজেকে কাজের মেয়ে ভাবতে শুরু করেছিস আজকাল।চল, পাশের রেস্টুরেন্টে যাবো,তোর খিদে পেয়েছে খুব তাই না?সরি রে, তখন আমি বাইরে না এলে ওরা তোকে এসব কিছুই বলতে পারতো না।

ধুর পাগলি আমাকে সরি কেন বলছিস তুই? এসব তো আমার ভাগ্যের লিখন।
আফি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
নুর এসব কি বলছিস?
আফি চল, পাশের রেস্টুরেন্টে না যেতে চাইলি।
চল।
____________________
ঝর্নার নিচে বসে আছি আমি। চোখ থেকে শ্রাবনের ধারা বয়ে চলেছে আমার, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু পারছিনা আমি।
কিছুক্ষণ আগে,,

আফির সাথে খাওয়ার পর বাসায় ফিরে এসেছি। বাসায় আসার সঙ্গে সঙ্গে মা আমাকে জিজ্ঞেস করল,

রান্না ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলি তুই?

আফির সাথে একটু বাইরে গিয়ে,,
আমার কথা শেষ করার আগেই মা আমাকে ঠাস করে একটা চড় মারলেন। বাজখাঁই গলায় বললেন,
চুলায় ভাত বসিয়ে বাইরে নষ্টামি করতে গিয়েছিলি? নিজে তো নষ্টামি করছিস সাথে আফিয়া কেও নষ্ট করছিস। আরে তোর লজ্জা করে না এসব করতে,বাড়ির মানসম্মান সব ডুবিয়ে দিলি তুই?

আমি অবাক হয়ে গেলাম। কি নষ্টামি করেছি আমি, আমি তো আফির সাথে খেতে গিয়েছিলাম, বাইরে খেতে যাওয়াটা কে কি নষ্টামি বলে? একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
কি করেছি আমি, তুমি কি বলছো এসব?
মা আমার সামনে ফোন ধরে বললো, এই দেখ কি করেছিস তুই?
ফোনের দিকে তাকিয়ে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। এসব কি দেখছি আমি?ফোনে একটা ভিডিও প্লে করা, ওখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমি একটা ছেলের সাথে খুব অন্তরঙ্গ অবস্থায়। ছেলের মুখ টা দেখা যাচ্ছে না কেটে দেওয়া হয়েছে সেটা কিন্তু আমার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমি তো এইসব কিছুই করিনি। তাহলে এটা কি করে হলো?

মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,

দেখেছিস কি করেছিস তুই? বিয়ের সখ হয়েছিল তা বলতে পারতি আমাদের, এভাবে মানসম্মান টা কেন ডুবালি এই বাড়ির। বলে মা আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না, একটা লাঠি খুঁজে নিয়ে এসে মারতে শুরু করলো আমাকে।আফি ফেরাতে এলো কিন্তু মা আফিকে ধমক দিয়ে দুরে সরিয়ে টানতে টানতে আমার রুমে নিয়ে গেল। নিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ মনের ঝাল মিটিয়ে মা চলে গেল।

আমি কাঁদছি আর ভাবছি এসব কি হচ্ছে আমার সাথে, আমার জানামতে আমি তো কোন অন্যায় কাজ করিনি। ছোট থেকে মায়ের বকা, মা’র খেয়ে বড় হয়েছি। মা যখন মারতো তখন কেউ যদি ফিরাতে আসতো মাকে তাহলে মা আরো মারতো আমাকে। বাবার আদর কি বুঝিনি, মায়ের সাথে ঝগড়া করে বাবা চলে গেছে বাসা থেকে তার রাগ মা সবটুকু আমার উপর ঝারে। কখনো ভালো কিছু পাইনি মায়ের থেকে। সবকিছু সহ্য করে গেছি তারপরও আল্লাহ কেন আমার সাথে এমন করছে?যেই কাজের কথা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা শেষে কি না সেই কাজের অপবাদ দিলো আমাকে।আমি তো কোন ছেলের সাথে ভালো করে কথাও বলি না এরকম জঘন্য কাজ করা তো দূরে থাক।
বাইরে থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে আমি তাড়াতাড়ি করে গোসল করে বের হয়ে এলাম। বাইরে এসে দেখি আফি এসেছে।ওর চোখে পানি দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম,

কি হয়েছে আফি তুই কাদছিস কেন? আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোর মা কি তোকে কিছু বলেছে, মেরেছে নাকি তোকেও?

আফি কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।আফি কাঁদতে কাঁদতে বলল,

আমি জানি, তুই এরকম কিচ্ছু করতে পারিস না। ওই ভিডিওটি এডিট করা।আন্টি শুধু শুধু তোকে মেরেছে,দেখিস যে তোকে এইভাবে ফাঁসিয়েছে আমি তাকে কখনো ছাড়বো না।

তার পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
আন্টি যে তোকে মেরেছে তোর খুব লেগেছে না রে? তুই বস আমি আয়োডেক্স নিয়ে আসছি এখনি।

আফি চলে গেল। আমি বিছানায় বসে পরলাম।ভিডিও টা এডিট করা সেটা আমিও বুঝতে পারছি কিন্তু বুঝেই বা লাভ কি? বাসার মানুষেরা তো আমাকে খারাপ ভেবেই নিয়েছে। একটু পরেই আফি আয়োডেক্স নিয়ে এলো। আস্তে আস্তে আমার গায়ে লাগিয়ে দিচ্ছে, আর আমি সামনের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছি। কিছুক্ষণ পর আফি কে জিজ্ঞেস করলাম,

সবাই তো আমাকে ভুল বুঝলো তাহলে তুই আমাকে বিশ্বাস করছিস কেন?
আফি কাটকাট গলায় বলল,

সবাই যদি গরু হয়ে ঘাস খায় তাহলে কি আমিও ঘাস খাবো?
আফির কথা শুনে এই কষ্টের মধ্যেও হাসি পেল আমার। হাসতে হাসতে বললাম,

সবাইকে শেষ পর্যন্ত গরু বানিয়ে দিলি তুই?

যারা একটা ভিডিও দেখেই তোকে অবিশ্বাস করছে,যার কোন ভিত্তি নেই তাদের গরু বলবো না তো কি বলবো?
(চলবে………… কী)

আসসালামুয়ালাইকুম। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।রেসপন্সের অনুরোধ রইল।