ভালোবাসা তুই পর্ব-০৩

0
582

#ভালোবাসা_তুই
#পর্ব_৩
#লেখিকা_সাদিয়া_জান্নাত_সর্মি

আমি মন খারাপ করে বললাম,সবাই যদি তোর মতো আমাকে ভালোবাসতো আফি তাহলে কতই না ভালো হতো।আফি বললো,ভালোবাসে তো নুর, শুধু মাত্র ওই আন্টি ছাড়া।এ সময় বড় চাচি আমার রুমে এসেই আফিকে ধমক দিলেন।

আফিয়া, তুই এখানে কি করছিস?

আফি খানিকটা ভয় পেয়ে গেল।ঢোক গিলে বললো,

মা নুর কে আন্টি যে মেরেছে তার জন্য আমি ওকে আয়োডেক্স লাগিয়ে দিচ্ছিলাম।
চাচি আরো জোরে ধমক দিয়ে বললেন,,

তোকে আয়োডেক্স লাগিয়ে দিতে কে বলেছে হ্যা?সাথি যা করেছে তা বেশ করেছে। ওকে ভালো মেয়ে ভেবে সাথির মারধরের হাত থেকে বাঁচিয়ে বড় ভুল করেছি আমরা।ওর মতো নষ্টা কে তিন বেলা মারলেও শান্তি হবে না। আমাদের সবার আদর পেয়ে এ বাড়ির মানসম্মান সব ডুবিয়ে দিয়েছে এই মেয়েটা। তুই যা এখান থেকে,,আর কখনো যদি তোকে ওর আশেপাশে আসতে দেখি তাহলে ভালো হবে না আফিয়া।

এইসব বলে চাচী আফির হাত ধরে টেনে আমার রুম থেকে নিয়ে গেলেন।আফি যাওয়ার সময় আমার দিকে করুন চোখে তাকালো আমি চোখে পানি নিয়ে মুচকি হাসলাম। চাচি চলে যাওয়ার পর আমি রুমের দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। শরীর টা খুব ব্যাথা করছে, জায়গায় জায়গায় মারের জন্য কেটে গিয়েছে,জ্বালাপোড়া করছে খুব। আমি সেটা পাত্তা দিলাম না। শরীরের ব্যাথার থেকে মনের ব্যাথা টা অনেক বেশি কিন্তু সেটা বোঝার জন্য যে আমার কেউ নেই।যাও ছিল আফি,তাকেও চাচি আমার কাছে আসতে মানা করে দিয়েছে।দিবেই তো,যার নামে এমন একটা অপবাদ আছে তার কাছে নিজের মেয়েকে আসতে দিবে কেন। চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। খুব কান্না পাচ্ছে এখন, ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদি কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে সেভাবে কাঁদতে দিচ্ছে না।

সকাল ছয়টায় আমার ঘুম ভাঙল। রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা টেরই পাইনি আমি। ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে আমি রান্না ঘরে গেলাম। বাসায় কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও সব কাজ আমাকেই করতে হয় না করলে খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় আমার। রান্না ঘরে ঢুকতে যাবো তখনি পিছন থেকে আওয়াজ পেলাম ওই রান্না ঘরে তোর মতো নষ্টা মেয়ে ঢুকবে না। ঘুরে দেখি আমার মা নামধারী মহিলা টি দাঁড়িয়ে আছেন,উনিই বলেছেন আমাকে এই কথা। আমি বললাম,
তাহলে কাজগুলো কে করবে?

বাসার কাজ করার জন্য অনেক মানুষ আছে কিন্তু তুই, তুই কোন কাজে হাত দিবি না আর। আমি তোকে এই বাড়ি থেকে বিদায় করবো আজকেই। দশটার দিকে পাত্রপক্ষ আসবে তোকে দেখতে, তোকে ওদের যদি পছন্দ হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে আর এই বাড়ি থেকে চিরকালের মতো বিদায় হবি তুই।
আমি মায়ের কথা শুনে পাথর হয়ে গেলাম। এসব কি বলছে মা, আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে মানে টা কি। আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না, আর মা ই বা আমাকে বাসা থেকে তাড়াতে চাইছে কেন? এতো অত্যাচার করে তাতেও কি ওনার মন ভরে না। থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলাম,

তুমি এইসব কি বলছো? আমাকে দেখতে আসবে মানে? তুমি আমাকে বিয়ে দেবে কেন?

মা তেড়ে বললেন,
তোকে বিয়ে দেবো না তো কি ঘরে বসিয়ে রেখে আমাদের মুখ কালো করবো হ্যা? তুই যা করেছিস তার পর তো তোকে আর একমুহুর্তও বাড়িতে রাখা চলে না।বাড়ির সবার মুখ কালো করে দিয়েছিস তুই আর এখন বলছিস বিয়ে দেব কেন? তোর মতো নষ্টা মেয়ে কে যে একটা ছেলে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে সেটাই তো তোর কপালের ভাগ্য।চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে বসে থাক যখন নিচে আসতে বলবো তখন রেডি হয়ে নিচে আসবি তার আগে যেন তোর এই পোড়া মুখ টা আমি না দেখি।এখন যা এখান থেকে তোর মুখ টা দেখলেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।

মায়ের এসব কথা শুনে আমি দৌড়ে আমার রুমে চলে আসলাম। দরজা লাগিয়ে দিয়ে মেঝেতে বসে কাঁদতে লাগলাম আমি।কি দোষ আমার, কেন সকাল বিকাল আমাকে চোখের পানি ফেলতে হয় কেন আমাকে আমার আপনজনের কাছ থেকে এতো কষ্ট পেতে হয়। নিজের মা হয়ে এসব কথা কি করে বলছেন উনি,একটা বারও কি মুখে বাধছেনা এসব বলতে।

বসে বসে কতক্ষণ ধরে কাদছিলাম খেয়াল নেই আমার। হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে আমি চোখ মুছে দরজা খুললাম। দরজা খুলে দেখি মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।কাঠ কাঠ গলায় বললেন,রেডি হয়ে নিচে আয়, পাত্রপক্ষ এসে গেছে। খবরদার ওদের সামনে গিয়ে যদি নাটক করিস তো।
মা চলে গেলেন। আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে কৃত্রিম সাজ করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর রেডি হয়ে নিচে এলাম আমি। আমাকে দেখে মা এগিয়ে এসে আমাকে নিয়ে গিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে বসালো। আমাকে সালাম দিতে বললো, আমি নিচের দিকে তাকিয়ে শুধু সালাম দিলাম। মা ছেলের বাসার লোকদের সাথে কথা বলছে আর আমি চুপচাপ শুনছি। আমার খুব গুনগান করছে মা, আমি অবাক হয়ে ভাবছি এতো মিথ্যে নাটক মানুষ কি করে করতে পারে। আমাকে দেখে ছেলে মাকে বললো,

আন্টি আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমি নুরের সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাই।
মা তো এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। আমাকে বললেন, ওনাকে নিয়ে বাড়ির বাগান থেকে ঘুরে আসতে। আমি ওখান থেকে উঠে বাইরে চলে আসলাম, আমার পিছু ছেলে টাও এলো।

________________________________

সামনের দিকে তাকিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি আমি।

(চলবে……..)
(আসসালামুয়ালাইকুম। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।)