ভালোবাসা তেতো পর্ব-১০

0
466

#ভালোবাসা_তেতো
#part_10
#sarika_Islam



আব্বু ফ্রেশ হয়ে এসে আমাদের সাথে সোফায় বসলো,,আব্বু আর আমি কথা বলছি আম্মু আমাদের জন্য খাবার আনলো,,আম্মু বলল,,

_ফারাহ আয় মা খেনে নেই,,
_নাহ মা আমার ভালো লাগছে না,,

বলেই উঠতে যাবো আম্মু আমাকে বসিয়ে দিল,,

_আয় মা আমি খাইয়ে দেই,,

আমিও আর না করলাম না কত দিন হলো আম্মুর হাতে খাই না,,আম্মু আমাকে খাইয়ে দিল,,,আব্বুও খেয়ে নিল,,আম্মুও,,আব্বু আম্মুর সাথে কিছুক্ষন কথা বলে উঠে গেলাম,,

_আমি যাই আমার ঘুম পাচ্ছে,,

বলেই সেখান থেকে উঠে গেলাম,,কেমন যেন ভালোলাগছে না,, রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম,,লাইট অফ করেই বারান্দায় গেলাম,,বাতাস বইছে পানিরা হাল্কা হাল্কা উথাল-পাতাল করছে,,বেশ ভালোই লাগছে,,বারান্দার এক কর্নারে ফুল গাছ লাগানো,,সেখানে গিয়ে ফুলগুলো ছুয়ে দিলাম,,কতদিন ধরে দেখি না ফুলগুলো,হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো,,হঠাৎ আমি খুশি হয়ে গেলাম মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো,,দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরতে নিব দেখলাম কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন,,,,জিদ্দে ফোনটা বিছনায় ছুরে মারলাম,,,

_ইয়াদ আমাকে কি মিস করেনা?আমাকে আসার পর থেকে একটাবারও ফোন দিল না,,আমি কি এতই খারাপ,,তার কি আমার সাথে কখনো ভালোবাসা মিষ্টি হবে না?সব সময় এই তেতোই থাকবে?

এইসব ভেবেই আরও খারাপ লাগছে,,,প্লাজু আর টি-শার্ট পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম,,আর ভালোলাগছে না এইবার ব্রেন টাকেও একটু শান্তি দেওয়া যাক,,

এইদিকে,,

ইয়াদ রাতের খাবার খেয়ে নিজের রুমে যাবে তার মা জিগ্যেস করলো,,

_ইয়াদ,, ফারাহ ঠিক মতো গেছে?ফোন দিয়েছিস?
_নাহ,,

মাকে আর কিছু বলার সুযুগ না দিয়েই উপরে চলে গেল,,নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল,,বারান্দায় গেল কেন যেন ভালোলাগছে না,,ঘরটা খালি খালি লাগছে,,উফফ অসহ্য,,
এইসব ভেবেই ইয়াদ ঘুমুতে যাবে দেখলো ফারাহ ছড়িয়েছিটিয়ে শুয়ে আছে,,ফারাহকে দেখে মুখে হাসি চলে আসলো,,সে হাত দিয়ে ফারাহকে ছুতে যাবে ফারাহ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল,,,চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো,,তারপর শুয়ে পরলো আবার মুখাটা মলিন করে,,

সকালে,,

ইয়াদ ঘুম থেকে উঠে ডেইলি ফারাহকে দেখে যা ফারাহ জানে না,,আজকেও ইয়াদ উঠে তার সাইডে তাকালো,,দেখলো জায়গাটা খালি,,বুক টা হঠাৎ ধুক করে উঠলো,,সে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশ্রুমে গেল,,ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসলো লেপটপ নিয়ে কাজ করতে করতে হঠাত ড্রেসিং টেবিলের দিকে চোখ গেল,,ফারাহ বেগুনী কালারের শাড়ি পরে ভিজা চুল গুলো পিঠে পরে আছে আর সে হাল্কা নিচু হয়ে কুচি ঠিক করছে,,সে এক ধ্যানে তার সহধর্মিণীকে দেখতে লাগলো,,ফারাহ কুচি ঠিক করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল,ইয়াদও দিল আর ফারাহ উধাও,,ইয়াদ লেপটপটা ঠাস করে সোফায় ফালালো,,

ইয়াদ ফারাহকে মাথা থেক ঝেরে কাবার্ড থেকে শার্ট কোর্ট নিল অফিস যাবে,,,বাসায় যত থাকবো ফারাহকেই দেখবো,,আয়নার সামনে দারিয়ে শার্ট পরে টাই হাতে নিয়ে বলল,,

_ফারাহ আমার টাইটা বেধে,,,

হঠাৎ মনে পরলো ফারাহ?ও তো নেই,,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেই বেধে নিলাম,,এই পুরো ঘরটায় ফারাহর সৃতি আছে আমি এখন এখানে থাকতে পারবো না,,

বলেই কোর্ট পরে নিচে নামলো,,দেখলো সোফায় তার বাবা মা ইয়াজ বসা গল্প করছে,,তার বাবা ইয়াদকে দেখে বলল,,,

_কিরে অফিস যাচ্ছিস?
_হুম,,
_কিন্তু আজতো ছুটি,,
_কিসের ছুটি?
_এভাবেই সবাই অলয়েস কাজ করে তাই ভাবলাম আজ একদিন ছুটি দেওয়া যাক,,

এইটা শুনে ইয়াদের মাথা গরম হয়ে গেল,,এভবেই পুরো বাড়িতেই ফারাহকে দেখছে,,এইটার থেকে দূরে যেতে অফিস যাবে তাও নাকি অফ,,

_অযথা অফিস অফ দেওয়া একদম ভালো না,,

বলেই সোফার লাথি মেরে কোর্ট টা খুলে ফেলল,, টাইটাও খুলে শার্টের উপরে দুই তিনটা বোতাম খুলে দিল,,চুলগুলো সেট করা ছিল হাত দিয়ে নষ্ট করে দিল,,এখন অসহ্য লাগছে সব কিছু,,সে ধপাধপ পা ফেলে বাহিরে চলে গেল,,তার মা বাবা ভাই সব হা হয়ে ইয়াদের কান্ড দেখলো,,তার মা বলল,,

_ইয়াদের কি হয়েছে?
_হয়তো পিচ্চি ভাবীকে মিস করছে!
_হয়তো,,বাহ আমার ছেলে দেখি বউকে ছাড়া একদিনও থাকতে পারে না,,,

তারা হেসে দিল,,ইয়াদ ফারাহদের বাড়ির সামনে গেল,,দুর থেকে দেখছে বাড়িটা ভাবছে ভিতরে যাবে কি যাবে না?এইসব ভেবেই ফিরে আসলো আর ভিতরে গেল না,,হাটছে আপন মনে কেমন যেন নিজেকে অসম্পুর্ন লাগছে,,হাটতে হাটতে সেই নদীর ধারে আসলো যেখানে সেদিন তারা নৌকায় চরেছিল,,নৌকাগুলো দেখছে,,হঠাৎ এক নৌকায় দেখলো ফারাহ বসে আছে তাকে তার দিকে ডাকছে হাত দিয়ে ইশারায়,,ইয়াদ মুখে হাসি এনে একদম নৌকার কাছে গেল পরে দেখলো নেই ফারাহ,,সে চারদিকে খুজতে লাগলো,,পরে ভাবলো মনের ভুল,,

ইয়াদ রাতে বাসায় চলে আসলো,,আজ এমন উসখুস উসখুস করতে করতে সারাটাদিন গেল,,রাতে বাসায় এসে সোজা ছাদে চলে গেল ভালো লাগছে না কিছু ভালো লাগছে না,,,জোরে বাতাস বইছে মাঝে মাঝে বিদুৎ চমকাচ্ছে ইয়াদ হাত দুই দিকে ছড়িয়ে দিল আকাশের দিকে মুখ করে জোরে একটা চিৎকার করলো,,আজ আকাশও ইয়াদের কষ্টের সাথে তাল মিলাচ্ছে তাই মাঝে মাঝে বজ্রপাত হচ্ছে,,চিৎকার করতে করতে হাটু গেড়ে নিচে বসে পরলো,,কান্না করছে খুব কান্না করছে,, ছেলেদের নাকি কান্না করতে নেই কিন্তু যখন খুব বেশি কষ্ট বুকে জমা হয় তখন সহ্য করা বড্ড মুশকিল হয়ে পরে,,তখন বুক ফেটে কান্না আসে,,যা এখন ইয়াদের হচ্ছে,,কান্না করছে আর নিজে নিজেই বকছে,,

_আজ আজ আমি অনুভব করছি তুমি আমার লাইফে কতটা ইম্পরট্যান্ট,,আমি আমি বড্ড অচল তোমাকে ছাড়া,আমি পারবো না থাকতে তোমাকে ছাড়া,,আজ দেখ দেখ আমার কত কষ্ট হচ্ছে,, তাই আমি চাইনি আমার জীবনের সাথে কাউকে জোরাতে কিন্তু এখন চেয়েও তোমাকে আমার জীবন থেকে সরাতে পারবো না,,, আমি হয়ত মরেই যাবো তোমাকে ছাড়া হয়ত না সত্যিই মরে যাবো আজ একদিনেই আমার এই অবস্থা তাহলে তো,,, আই আই লাভ ইউ ফারাহ আই রেইলি লাভ ইউ,,ফারাহ ফারাহকে ফোন করতে হবে আমার ভালোবাসার কথা বলতে হবে,,

বলেই তারাতারি করে নিজের পকেট থেকে ফোন বের করলো,, বেশ কয়েকবার ফোন লাগালো কিন্তু কেউ ধরলো না,,,এখন মন চাইছে ফোনটা আছার দিয়ে ভেংগে ফেলতে তাও নিজের রাগটাকে দমিয়ে রেখে নিচে গেল,,গিয়ে দেখলো মা বাবা ভাই সবাই নিচে বসে আছে,,ইয়াদ তারাহুরো করে বাসা থেকে বের হতে দেখে তার মা বলল,,

_কিরে এভাবে কোথায় যাচ্ছিস?
_ফারাহ দের বাসায়,,

বলেই বেরিয়ে পরলো,,তার মা বলল,,

_ছেলেটা যে আমার কবে এত্ত পাগল হলো ফারাহর প্রেমে,আগে তো এমন ছিল না কাউকে পাত্তাই দিত না এখন নিজেই পাত্তা পাচ্ছে না,,
_হুম বুঝুক তোমার ছেলে হুহহ
_চুপ ইয়াজ,,

সকালে,,
আমি ঘুমের ঘোরেই অনুভব করছি কেউ আমাকে খুব শক্ত ভাবে আকৃেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরিয়ে ঘুমিয়ে আছে,,আমি নড়তেও পারছি না চডতেও পারছি না,,খুব কষ্ট করে নিজেকে হাল্কা ছাড়িয়ে মাথা তুলে জরিয়ে থাকা ব্যাক্তিটিকে দেখে আমি হা হয়ে গেলাম,,পুরুই শকড আমি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছি না,,,

চলবে,,
(ভুল ত্রুটিগুলো হ্মমার দৃষ্টিতে দেখবেন🖤)