ভালোবাসা তেতো পর্ব-১৫

0
419

#ভালোবাসা_তেতো
#part_15
#sarika_Islam



রাতে,,

আস্তে আস্তে চোখ খুললাম,,মাথাটা খুব ধরেছে,,উফফফ অসহ্য যন্ত্রনা,,মাথাটা ধরে উঠে বসলাম,,দেখলাম আম্মুর ঘরে শুয়ে আছি তাহলে তারা কই?তাদের দেখতে রুম থেকে বাহির হলাম,,আম্মু আব্বু সোফায় বসে বসে কথা বলছিল,,আমাকে দেখে আম্মু এগিয়ে এসে বলল,,

_আয় মা খেয়ে নে,,
_নাহ খাবো না,,
_দুপুরেও খাসনি এখনো কি না খেয়ে থাকবি?
_মা ভালো লাগছে না,,

মার জোরাজুরিতে খেতে লাগলাম,,আম্মু খাইয়ে দিচ্ছে,,,লাস্টবার ইয়াদ সাজেক বসে আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছিল,,হঠাৎ মনে পরে গেল,,,মনে পরতেই চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো,,এখন আর গলা দিয়ে খাবার নামছে না,,আম্মু কে “আর খাবো না” বলে উঠে গেলাম,,নিজের রুমে গিয়ে লাইট অফ করে দিলাম,,এখন কেমন জানি জীবনটার থেকে সব রঙ উড়ে গেছে,,শুধু অন্ধকার ছেয়ে গেছে,,আলো এখন ভালোলাগে
না,,,অন্ধকারেই বেশ শান্তি,,,

বারান্দায় গিয়ে এক দৃষ্টিতে সেই পুকুরটার দিকে তাকিয়ে আছি,,সেখানে তাকিয়ে থাকলে তাও একটু মনে শান্তি আসে,,মাছদের পরিবার দেখে,,তারা কি সুন্দর ভাবে একত্রে আছে,,খুব সুখি আছে,,আর পরিবার থেকে কেউ চলেও গেলে তাদের অনুভব হয়না,, কারন তাদের তো ফিলিংস বলতে কিছুই নেই,,কিন্তু আমাদের?আমি কিভাবে থাকবো?আমার সংসার শুরু না হতেই শেষ হয়ে গেল,,,হায় আল্লাহ কি পরিনাম হবে এর?ইয়াদের কেয়ার তার ভালোবাসা তার খুনসুটি ঝগরা আমাকে গাল টেনে দেয়া বড্ড মনে পরছে,,আমি পারবো না এভাবে আর থাকতে,,এইসব ভেবেই চোখ দিয়ে পানি ঝরছে,,অঝর ধারায়,,বারান্দায় গিরিলের সাথে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম,,,

এক মাস পর,,,

সবে মাত্র ঘুম থেক উঠলাম কেমন মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো,,মাথা ধরে আবার বিছানায় বসে পরলাম,,মা আমার রুমে এসেছে আমাকে ডাকতে আর আমাকে এভাবে মাথা ধরে বসে থাকতে দেখে আমার কাছে এসে বলতে লাগলো,,

_ঠিক মতো খাস না দেখেছিস তার প্রমান?এভাবে চললে কিভাবে হবে?আয় খাবি,,
_আম্মু,,
_কোন কথা না চুপ,,,

আম্মুর ধমকে না চাইতেও উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলাম,,আব্বু আমার মাথায় হাত রেখে অফিসের জন্য বেরিয়ে পরলো,,এই এক মাসে অনেক বার সুইসাইড এটেম্পট করতে চেয়েছি,,কিন্তু আল্লাহ আমাকে সব সময় বাচিয়ে নিয়েছে কেন যে আমাকেও নিয়ে নেয় না?এভাবে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো,,কোন রকম খেয়ে উঠতে নিবো আবার মাথা ঘুরে উঠলো,,আম্মু আমাকে ধরে ফেলল আমাকে ধরে সোফায় বসালো,,,তখনি মার ফোন আসলো,,এই এক মাসে সে সব সময় ফোন দিয়ে আমার খোজখবর নিয়েছেন,,খুবি ভালো ইয়াদের বাবা মা,,

_কিরে ফারাহ কেমন আছিস?
_কেমন আর থাকবো?
_তোর নাকি শরির অসুস্থ?
_নাহ মা ওই একটু মাথা ঘুরায়,,
_আমি আসবো?
_নাহ মা আম্মু আছে তো,,
_তাহলে আজ হসপিটালে গিয়ে আস,,
_আচ্ছা,,

বলেই ফোন কেটে দিলাম,,এখন আর কারো সাথে বেশি কথা বলতে ইচ্ছে হয়না,,অনেক বিরক্ত লাগে এখন এইসব মানুষ,,,

_ফারাহ চল হসপিটাল যাই,,
_নাহ যাবো না,,
_ফারাহহহ,,

আম্মুর চেচানিতে যেতেই হলো,,বোরকা পরে নিলাম,,ইয়াদ বোরকার জন্য শুধু বকতো,,এইসব ভেবে হেসেই বোরকা পরে নিলাম,,ইয়াদকে না হয় তার স্মৃতি নিয়ে বেচে থাকি,,হসপিটালের জন্য বেরিয়ে পরলাম,,,

_আপনার মেয়ে মা হতে চলছে,,she is pregnant,,

ডাক্তার আমার কাছে এসে আমাকেও বলতে লাগলো,,

_you are pregnant,, congress,,

আমি প্রেগন্যান্ট?আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমি মা হতে চলছি,,,ইয়াদের একটা ছোট্ট অংশ আমার ভিতর বড় হচ্ছে,,এর জন্যই হয়ত আল্লাহ আমাকে তার কাছে নিতে বারন,,আল্লাহ এখন আমাকে বাচতে একটি আশা দিয়েছে,,আম্মু আমার কাছে এসে কান্না করে দিল,,আমাকে জরিয়ে ধরে,,আমিও কান্না করে দিলাম,,

_আম্মু,,, আম্মু ইয়াদের বাচ্চা,,আমার বাচ্চা,,আমাদের বাচ্চা,,,

পেটে হাত দিয়ে বললাম,,

_হুম মা,,

আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল,,মা আমার এই খবর শুনে ছুটে আসলো,,ইয়াজ আর মা কেবিনে ঢুকলো,,মা এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল,,

_ফারাহ,,আজ আমি অনেক খুশি,,

আমি কোন কথা বললাম না এতে খুশির কি?যেখানে আমার ইয়াদি নেই সেখানে খুশি আবার কিভাবে মানাবো?ইয়াজ আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বলল,,

_পিচ্চি কেমন আছো?

আমি কিছু বললাম না,,কেমন আর থাকবো?যেমন দেখছে তেমনি আছি,,জিন্দা লাশ,,প্রেগন্যান্সির খবর শুনে খুব খুশিই হয়েছি কিন্তু পরক্ষনেই আবার খুশি শেষ,, ইয়াদ হলে একসাথে খুশি হতাম,,কি ভাগ্য আমার আমি প্রেগন্যান্ট তা আমার স্বামীই জানে না আর সবাই জানে,, হুহহহহ,একটা দীর্ঘ শ্বাস ছারলাম,,মা আমাকে বলল,,

_ফারাহ মা,অনেক তো মার বাড়ি থাকলি এখন নিজের বাড়ি চল,,,
_আমার নিজের বাড়ি এখন এটাই,,
_এভাবে বলিস না মা,,(বলেই কান্না করে দিল)
আমাদের সাথে চল তোর আসল ঠিকানায়,,
_আমি যার বউ হয়ে সেখানে গিয়েছি সেই যদি না থাকে আমি সেখানে থেকে কি করবো মা?
_আমার ইয়াদ নেই মা,, কিন্তু তোর এই সন্তান আমার ইয়াদের সন্তান,, ইয়াদ না হয় তার সন্তানকে নিয়ে থাকবি ওই বাসায়,,আমাদের একমাত্র চিহ্ন ইয়াদের বাচ্চা,,এভাবে না বলিস না,,

অনেক জোরাজুরি করে আমাকে তারা তাদের সাথে নিয়ে গেল,,,আমি বাসায় আসলাম আজ প্রায় এক মাস পর,,আমার মটেও আসতে ইচ্ছে ছিল না মার জন্য আসা হলো,,আবার আমাকে ইয়াদের কথা মনে করিয়ে দিবে,,ইয়াদের প্রত্যেকটা কাজ আমার মনে পরবে,,আমি এখানে কিভাবে থাকবো?মা আমাকে আমাদের রুমে নিয়ে গেল,,যেখানে আমরা ঠিক এক মাস আগে একটা সুখের সংসার করছিলাম,,আর এখন?আমি রুমে ঢুকে সব দেখতে লাগলাম,,একিই আছে,,মা আমাকে রুমে দিয়ে নিচে চলে গেল,,আমি গোসল সেরে নিলাম,,আয়নার সামনে কুচি ঠিক করছি হঠাৎ সোফায় নজর গেল,,সেখানে ইয়াদ বসে বসে লেপটপ চালাতো,,সেখানে গিয়ে বসলাম,,ইয়াদের চিহ্ন আছে এখানে,,

রাতে,,

ইয়াজ আমার রুমে আসলো,,

_এই পিচ্চি চলো খাবে,,
_আমি খাবো না,,,
_সে কেমন কথা চলো,,

বলেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো,,অনেক বিরক্ত লাগছে মন চাইছে ঝারা মেরে হাতটা সরিয়ে নেই,,কিন্তু এইটা করা চরম বেয়াদবি হয়ে যাবে তাই চুপচাপ গেলাম,,গিয়ে দেখলাম বাবা মা সবাই বসে আছে,, হয়ত আমার অপেক্ষা করছিল,,আমি বসতেই বাবা জিজ্ঞেস করল,,

_কেমন আছিস মা?
_যেমনটা আল্লাহ রাখতে চেয়েছে,,

আর কেউ কোন কথা বলল না,,খাওয়া শেষ করলাম,,আমি আমার রুমে এসে আবার মনমরা হয়ে বসে রইলাম,,বারান্দায় গেলাম,,এখানে ইয়াদ মুখ ফুলিয়ে চলে আসতো আমি মানাতাম,,প্রত্যেকটা জিনিস ছুয়ে দিচ্ছি,,এই সব যায়গায় আমার ইয়াদের ছোয়া আছে,,আমি কিভাবে না ছুবো?ঘভির রাত হয়ে গেছে,,সেখানে দারিয়ে থাকতে থাকতে মনেই হয়নি যে এত্ত রাত হয়ে গেছে,,ইয়াদের চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলে আমার আর দিন দুনিয়ার খেয়াল থাকে না,,ভেবেই হেসে দিলাম,,কিন্তু এখন এইখান থেকে যেতেই ইচ্ছে করছে না,,ফজরের আজান দিয়ে দিল,,তারপর রুমে আসলাম,,অজু করে নামাজ পরে নিলাম,,

আবার বারান্দায় চলে গেলাম,,কেন জানি এখন ঘরে মন টিকে না,,উপর থেকে বাগানটা খুব সুন্দর লাগছে,,গাছে অনেক ফুল ফুটেছে দেখতে বেশ ভালোই লাগছে,,আমার ফুল গুলোকে অনেক ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে,,তাই নিচে চলে গেলাম,,সবাই ঘুমুচ্ছে,,মাত্র সুর্যের আলো ফুটেছে তারা কি আর উঠবে?আমি বাগানে গিয়ে ঘুরতে লাগলাম,,মনটায় একটু শান্তি লাগছে,,,ফুলগুলো ছুয়ে দিচ্ছি,,বেশ কিছুক্ষন ঘুরলাম,,এখন বসতে ইচ্ছে করছে কোথায় বসবো?ভাবতে ভাবতে দেখি ইয়াজ দুইটা চেয়ার নিয়ে আসলো,,একটা আমাকে দিয়ে আরেকটায় নিজে বসলো,,

_আরে আপনি?
_হুম আজ খুব সকালেই চোখ খুলে গেল,,,বাগানে আসতাম দেখলাম তুমি তাই ভাবলাম গল্প করা যাক,,
_ওহ,,
_ঘুমাওনি?
_নাহ,,
_কেন?
_ঘুমানোর সময়ই পাইনি,,
_মানি?
_ইয়াদের কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমানোর টাইম পাইনি,,(হাল্কা হেসে বললাম)
_এত্ত ভালোবাসো ইয়াদকে?

তার প্রতিউত্তরে শুধু একটা শুকনা হাসি দিলাম,,ইয়াজের সাথে কথা বলছি আজ অনেক দিন পরে,,,ছেলেটা মনের বেশ ভালো,,তার ভার্সিটির কাহিনি শুনিয়ে হাসাচ্ছে আমাকে,,,আমিও হাসছি আজ অনেক দিন পর এভাবে মন খুলে হাসলাম,,,ইয়াজ আমার হাসি দেখে আমার এক গাল টেনে বলল,,

_এভাবেই সব সময় হাসবে পিচ্চি,,,হাসিটা তোমাকে বেশ মানায়,,

গাল টানায় আমার ইয়াদের কথা মনে পরে গেল,,চোখ আবার ভরে আসলো,,চোখ মুছে বললাম,,

_এখন তাহলে উঠি,,

বলেই আমি উঠে ভিতরে চলে আসলাম,,তাদের কাহিনি এতক্ষন ইয়াদের মা দেখছিল,,ফারাহকে এতদিন পর হাসতে দেখে তার মনেও কিছুটা শান্তি মিলল,,,নাহয় মেয়েটা সব সময় মনমরা হয়ে পরে থাকে,,,

চলবে,,
(ভুল ত্রুটিগুলো হ্মমার দৃষ্টিতে দেখবেন🖤)