ভালোবাসা তেতো পর্ব-১৪

0
393

#ভালোবাসা_তেতো
#part_14
#sarika_Islam



আমি চিল্লান দিয়ে মাটিতে বসে পরলাম,,আমার আশে পাশে অনেক মানুষ জমা হয়ে গেছে এতক্ষনে আমার চিৎকারে,,

_ইয়াদদদদ

বলেই আবার চিতকার করে উঠে দারালাম,,

_ইয়াদ কই আপনি ইয়াদদ,,

বলে চিৎকার করছি আর সামনে এগুচ্ছি,,আমার কোন খেয়াল নেই সামনে এগুলেই যে আমি পরে যাবো,,আমি ঝাপ দিতে নিলে আশে পাশের মানুষ গুলো আমাকে ধরে ফেলে,,

_ছারুন আমাকে আমি,,,আমি আমার ইয়াদের কাছে যাবো,,

বলেই তাদের থেকে ছাড়া পেতে চেষ্টা করছি আর ইচ্ছে মতো কাদছি,,কাদতে কাদতে এক পর্যায় আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম আর কিছু মনে নেই,,,

পিট পিট করে চোখ খুলে নিজেকে একটা রুমে আবিষ্কার করলাম,,ঠিক মতো চোখ বুলালাম পুরো ঘরে জায়গা টা চিনার জন্য,, সেকি আমি হসপিটালের বেডে কি করছি?আমার ইয়াদ কই?আমার ইয়াদের কথা মনে হতেই তরিঘরি করে উঠতে গেলে হাতে কিছু একটার টান অনুভব করি,,সেদিকে লক্ষ করে দেখি হাতে ক্যানেল লাগানো,,টান দিয়ে ওইটা ছিরে ফেলি,, আমার এখন এইসব কিচ্ছু লাগছে না আমার ইয়াদকে লাগবে,,

তখন একটা নার্স ভিতরে ঢুকলো,, আমাকে এভাবে উঠতে দেখে সে আমার কাছে এসে আমাকে ধরতে লাগলো,,আমিও ঝারা মেরে বাহিরে যেতে নিলে ডাক্তার চলে আসে,,ডাক্তার আমাকে বলল,,

_আপনি এখন দুর্বল কিছুটা বিশ্রাম করুন,,
_আমার বিশ্রাম লাগবে না আমার,,,আমার ইয়াদ কই?

বলেই বাহিরে যেতে নিলে কিছু মানুষ কেবিনের ভিতরে ঢুকে,,,সম্ভবত তারাই আমাকে এইখানে এনেছে,,,একটি মহিলা আমার পাশে এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল,,

_মা তোর স্বামীকে অনেক খুজেছি আমরা পাইনি,,

আমি স্তব্দ হয়ে গেলাম,,পাইনি?মানি কি এইসব?আমার ইয়াদকে পাইনি কেন?নাহ তা হবে না আমি খুজবো আমার ইয়াদকে কেউকে লাগবে না আমার,,

_আমি খুজবো আমার ইয়াদকে,,

বলেই আমি বাহিরে যেতে নিলে বাকি মানুষ গুলোও বলল,,

_আসলেই আমরা অনেক খুজেছি কেউ পাইনি,,

এইসব শুনে আমি পুরো ভেংগে গেলাম,,পাইনি আমার ইয়াদকে?আমি তাহলে কি নিয়ে বাচবো?কাকে নিয়ে বাচবো?আমার কি হবে?এইসব ভাবতে ভাবতেই মাটিতে লুটিয়ে পরলাম কাদতে কাদতে,,আমার পাশে মহিলারা এসে শান্তনা দিচ্ছে,,,একজন বলল,,

_মা তোমার বাসার ঠিকানা বলো আমরা দিয়ে আসি,,

আমি হেচকি তুলতে তুলতে বাসার ঠিকানা বললাম,,,কিছু লোক আমাকে বাসায় পৌছে দিল,,,

আমি এখন বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি,,কলিং বেল টাও চাপতে মন চাইছে না,,কান্না করেই চলছি করেই চলছি,,অবশেষে কলিং বেল চাপলাম,,বেশ কিছুক্ষন পর মা এসে দরজা খুলল,,আমাকে দেখে খুশিই হলো,,পরক্ষনে আমার কান্না দেখে হাসি মুখের সাথে মিলিয়ে গেল,,চিন্তিত ভাবে বলল,,

_কিরে ফারাহ কি হিয়েছে তোর?এভাবে পাগলের মতো লাগছে কেন তোকে?কি হয়েছে মা?

এইসব বলেই আমাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকছে,,আমি কান্না করেই চলছি,,,ইয়াজও নিচে নেমে আসলো, আমাকে এভাবে দেখে আমার কাছে এসে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,,

_পিচ্চি এই পিচ্চি কি হয়েছে তোমার?
_এউ ফারাহ ইয়াদ কই?

ইয়াদের কথা বলায় আমার কান্না রোল যেন আরোও বেরে গেল,,আমি কান্না করতে করতে মাকে ধরে বসে পরলাম মাটিতে,,মাও আমার সাথে বসে পরলো,,আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,,

_ফারাহ বল মা কি হয়েছে?আমার ইয়াদ কই?
_মা,,,,,,মা,, ইয়াদদদদ,,

আমার মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না কান্নার ফলে,,ইয়াজও আমার পাশে বসে আমাকে বলল,,

_কি হয়েছে ইয়াদের?পিচ্চি বলো,,
_মা মা,,,,,ইয়াদ,,পরে গেছে,,,,,
_কোথায় পরে গেছে?(মা)

আমি মাকে সব খুলে বললাম,,মা স্তব্দ হয়ে গেল,,,আমি তো কান্না করেই চলছি,,ইয়াজ আমার কথায় যেন থমকে গেল,,হঠাৎ মা একটা জোরে চিৎকার করলো,,

_ইয়াদদদদদদদ,,,

বলেই কান্না করতে লাগলো,,,মার কান্না দেখে আমি আরো জোরে জোরে কাদছি,,ইয়াজ মার এরুপ কান্না দেখে তাকে বুকে জরিয়ে শান্তনা দিচ্ছে,,

_ইয়াজ,,ইয়াজ আমার ইয়াদ,,,

বলে কান্না করছে,,,,ইয়াজ তারাতারি তার বাবাকে ফোন করলো,,বাবা যেন এমন একটা নিউস শুনে ফটাফট চলে আসলো,,এসে মাকে এভাবে কান্না করতে দেখে বাবা শান্তনা দিচ্ছে,,,,ইয়াজ আমার কাছে এসে আমাকে শান্তনা দিচ্ছে,,

_পিচ্চি এই পিচ্চি চুপ,,

আমি তো কান্না করেই যাচ্ছি,,কান্না করতে করতে এক পর্যায় ইয়াজের বুকে ঢলে পরলাম,,,

চোখ খুলে দেখি আমি আমাদের রুমের বেডে শুয়ে আছি,,আমার পাশে আম্মু আব্বু মা বাবা ইয়াজ সবাই,,মা তো কান্না করেই যাচ্ছে,,আমি চোখ খুলে আস্তে আস্তে উঠার চেষ্টা করছি,,উঠে বসলাম,,আম্মুকে দেখে আমি কান্না করে দিলাম,,,আম্মু আমার পাশে এসে বসে আমাকে বুকে জরিয়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছে,,

_আম্মু,,,আম্মু ইয়াদ,,

হেচকি উঠে গেছে কান্না করতে করতে,,আমরা সবাই ডাইনিংএ গেলাম,,ইয়াদের অনেক রিলেটিভস রা এসেছে,,মা বাবাকে ধরে কান্না করছে আর বলছে,,

_আমি কি আমার ইয়াদের লাশ টাও শেষ বারের মতো দেখতে পারবো না?

বলেই বাবার বুকে মুখ রেখে কান্না করছে,,বাবাও মার এমন কান্না দেখে চোখে পানি চলে আসলো,,আমি আম্মুকে ধরে রেখে শুধু দেখছি মার কান্না,,আমার চোখ দিয়ে এখন আর পানি পরছে না,,একদম পুতুলের মতো দারিয়ে দারিয়ে সব দেখছি,,,

বিকেল হয়ে গেল,,পরিবেশ হাল্কা ঠান্ডা,,কান্নার বেগ সবারি কমেছে,,আমি তাদের সবাইকে নিচে রেখে উপরে চলে গেলাম নিজের রুমে,,আমি রুমে ঢুকতেই মনে হলো ইয়াদ হাসি মুখে সোফায় বসে আছে,,এইতো আমার সামনে এসে আমার গাল দুটো টেনে দিল আর পিচ্চি বলল,,,এইতো আবার মুখ ফুলিয়ে রাখলো,,এইতো ইয়াদ,, ওইযে ইয়াদ,,হ্যা এখানেই ইয়াদ,,,

_নাহহহহহহহহহহহ

চিৎকার করে কান ধরে নিচে বসে পরলাম,,তারাতারি করে কাবার্ড থেকে ব্যাগ বের করে কাপর গুছিয়ে নিলাম,,ব্যাগ নিয়ে নিচে নামছি,,আমাকে এভাবে দেখে সবাই আমার দিকে আশ্চর্য ভাবে তাকালো,,,আমি আম্মুকে বললাম,,,

_আম্মু চলো বাসায় যাবো,,

আম্মু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,,,মা আমার কাছ এসে হাত ধরে বলল,,

_ফারাহ মা কোথায় যাচ্ছিস?
_বাড়ি,,(সোজা ভাবে বললাম,)
_বাড়ি যাবি কেন?
_এই পিচ্চি কি বলছো?(ইয়াজ)
_নাহ আমি এখানে থাকবো না,,ওই রুম আমাকে বারবার ইয়াদের কথা মনে করিয়ে দেয়,,বারবার আমাকে অনুভব করায় আমার ইয়াদ আমার কাছেই আছে আমার পাশেই আছে,,আমি এভাবে থাকতে পারবো না,,আমি ইয়াদকে চাই নাহয় তার কাছে যেতে চাই,,

এইসব বলে কাদতে কাদতে বসে পরলাম,,মা আর আম্মু আমাকে ধরলো,,বাবা বলল,,

_আচ্ছা মা যাও তুমি,,

মা মাঝ দিয়ে বলল,,

_সেকি ও যাবে,,,,,,

ইয়াজ মাকে থামিয়ে বলল,,

_পিচ্চি এখানে থাকলে ভাইয়ের স্মৃতি তাকে বারে বারে তারা করে বেরাবে,,

আমি সোজা বেরিয়ে পরলাম,,আমার আর ভালো লাগছে না এইসব,,,আম্মু আব্বুও তাদের থেকে বিদায় নিয়ে আমার সাথে বেরিয়ে পরলো,,

আমরা বাড়ি এসে পরলাম,,আমি সোজা আমার রুমে চলে গেলাম,,আম্মু আমাকে আটকাতে চাইলে আব্বু ধরে ফেল,,

_মেয়েটাকে একা থাকতে দাও,,এত বড় একটা শোক সামলাতে তো কিছুদিন লাগবেই,,,

আমি রুমে গিয়ে ওয়াশ্রুমে চলে গেলাম,,শাওয়ারের নিচে বসে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম,,

_কেন ইয়াদ কেন?আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলেন?আমাকেও সাথে নিয়ে যেতেন,,আমি এই দুনিয়ায় আপনাকে ছাড়া একা বাচতে চাইনা,,বাচতে হলে একসাথেই বাচবো,,আপনি,, আপনি না বলেছিলেন ওই বুকে সারাজীবন আমাকে আগলিয়ে রাখবেন?আপনি মিথ্যে বলেছেন,,আপনি আমাকে মিথ্যে কথা বলেছেন ইয়াদ,,মিথ্যে,, আপনি আপনার কথা রাখেন নি রাখেন নি,,,

বলেই আরো চিৎকার করে কাদতে লাগলাম,,

ফারাহ চিৎকার শুনে বাহিরে তার আম্মু ভেংগে গেল,,মেয়ের এমন কান্না দেখে,,

_মেয়েটার বিয়েও হলো অপ্রত্তাশিত ভাবে এখন আবার আমার মেয়েটার স্বামীও ছিনিয়ে নিল আল্লাহ,,কেন করলো এমন কেন?আমার মেয়েটাকে আর কত কষ্ট দিবে আল্লাহ,,

বলেই কান্না করতে করতে তার আব্বুর বুকে ঢলে পরলো,,

_তুমি এভাবে ভেংগে পরলে মেয়েকে সামলাবে কিভাবে?যা হয়েছে আল্লাহর মরজিতেই হয়েছে,,তুমি ভেংগে পরো না,,
_মেয়েটা যেভাবে কান্না করছে আমি কিভাবে ঠিক থাকবো?
_তাও নিজেকে সামলাও,,

আমার রুমে আম্মু এসে ওয়াশ্রুমে ঢুকে গেল,,আমার এভাবে শাওয়ারের নিচে কান্না করতে দেখে তারাতারি শাওয়ার অফ করে দিল,,আমাকে উঠিয়ে দারা করালো,,আমাকে তারাতারি বাহিরে এনে বলল,,

_কিরে এভাবে ভিজছিস কেন?ঠান্ডা লেগে যাবে তো?

আমি কোন কথা বলছি না,, মুর্তির ন্যায় দারিয়ে আছি,,আম্মু আমাকে ধাক্কা মারে তাও যেন নরচর নেই আমার,,আম্মুর ও আমার এই অবস্থা দেখে চোখ ভরে আসলো,,আমাকে কাপর চেন্স করালো,,আমাকে বাহিরে নিয়ে গেল,,,মুখের সামনে খাবার ধরে বলল,,

_খা মা খেয়ে নে,,

আমার এইসব এখন অনেক বিরক্ত লাগছে,,,কিসব খাওয়া দাওয়া?যেখানে মনে শান্তিই নেই সেখানে কিভাবে খাবো?গলা দিয়ে কি নামবে?আমি আম্মুর হাত থেকে খাবার সরিয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলাম,,গিয়ে ঠাস করে রুমের দরজা টা বন্ধ করে দিলাম,,বিছানার চাদর টান দিয়ে নিচে ফালিয়ে দেই,,

_আাাাাাাাাাাাাাাাাাাাাা,,,,,আমার সাথেই কেন এমন হয় আল্লাহ?আমার সাথেই কেন?আমি কি দোষ করেছি বলতে পারবে?

কান্না করছি অঝরে,,,একদম ভালোলাগছে না,,,,মন চাইছে মরে যাই হ্যা মরে যাবো আমিও আমার ইয়াদের কাছে চলে যাবো,,যেখানে ইয়াদ নেই সেখানে আমিও নেই,,,

এইসব ভেবেই রুমের দরজা খুলে তারাহুরো করে রান্না ঘরের দিকে ছুটলাম,,আমার এমন ভাবে যাওয়া দেখে আম্মুও আমার পিছু পিছু আসে,,আমি রান্না ঘরে গিয়ে ছুরি খুজতে থাকি,,আমি আর বাচবো না,,বাচতে চাইনা,,ছুরি টা পেয়েও গেলাম,,যেই হাতে ধরে কাটতে যাবো,,ওমনিই আম্মু ছুরিটা নিয়ে ফালিয়ে দেয়,,আর আমাকে ঠাস করে একটা থাপ্পর মারে,,

_মারো মারো আমাকে আরও মারো,,আমি বাচতে চাইনা আম্মু বাচতে চাই না,,

বলেই আম্মুকে ধরে কান্না করতে লাগলাম,,,আম্মু আমাকে উঠিয়ে তার রুমে নিয়ে গেল,,আম্মু আমাকে তার কোলে মাথা রেখে ঘুম পারালো,,

_আম্মু আমি বাচতে চাইনা আম্মু,,আল্লাহ কেন আমার থেকে তাকে কেরে নিয়েছে?বলতে পারো?তাহলে আমাকেও কেন নিল না সাথে?

এইসব বলছি আর কান্না করে বালিশ ভিজাচ্ছি,,আম্মুও কান্না করছে,,আব্বু দরজার সামনে দারিয়ে দারিয়ে আমার এরুপ কান্ড দেখছে,,আব্বু হাতে ওষুধ আর পানি নিয়ে আসলো,,

_ফারাহ,,মা এটা খেয়েনে,,
_খাবো না আব্বু,,
_দেখ মা নিজের জন্য না হলেও আমাদের জন্য খা,,

আব্বু আম্মু আমাকে জোর করে ওষুধ টা খাইয়ে দিল,,কাদতে কাদতে কিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলাম,,

_ওকে ঘুমের টেবলেট দিয়েছি এখন মেয়েটা একটু ঘুমাক,,অনেক কান্না করেছে আজ,,
_আমার মেয়েটা আবার আগের মতো হবে না?

বলেই আম্মু কান্না করতে লাগলো,,আব্বু আম্মুকে শান্তনা দিয়ে বলল,,

_আল্লাহ ভরসা,,

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটিগুলো হ্মমার দৃষ্টিতে দেখবেন🖤)