#ভালোবাসা_তেতো
#part_18
#sarika_Islam
”
”
”
আমার বেশ বিরক্ত লাগছে এখন,,যেতে মটেও ইচ্ছে করছে না,,মুখের উপরও না করা যায় না কেমন দেখায়,,আমি বুঝি না তারা এত সুখ পায় কই?আমি তো পাই না!!
বিকেলে,,
বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে রেডি হতে লাগলাম,,বোরকা আর হিজাব পরে নিলাম,,আম্মু আমার রেডি হতে দেখে বলল,,
_কিরে কই যাস,,
_আরে ইয়াজ ভাই ফোন করলো,,কি নাকি সারপ্রাইজ দিবে তাই যেতে বলেছে,,
_ওহ তো এই অবস্থায় একা যাবি নাকি?
_নাহ ইয়াজ ভাই আসবে,,
কলিং বেল বাজলো,,আম্মু গিয়ে দরজা খুলল,, হয়ত ইয়াজ ভাই এসেছে,,,
_আরে ইয়াজ বাবা ভিতরে আসো,,
_নাহ আন্টি আজ না আরেকদিন,,(খুশি হয়ে)পিচ্চিকে ডাকেন না,,
_এত খুশি লাগছে কিছু কি হয়েছে?
আমি চলে আসলাম তাদের কথার মাঝে,,ইয়াজ আমাকে দেখেই আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে নিয়ে যেতে লাগলো,,আমি আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলাম,,গাড়িতে বসে আছি সেই বিকেল থেকে এখন সন্ধ্যা হয়ে যাবে তাও বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে না,,এভাবে তো অনেক তারাতারিই চলে আসি,,আমি বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললাম,,
_ভাইয়া আর কত এভাবে ঘুরবো?বাড়ি যাবো কখন?আর এই টাইমে আমার একদম বাহিরে থাকা মানায় না,,
_যাবো তো পিচ্চি,,
সাথে সাথেই ইয়াজ ভাইয়ার ফোন টুং শব্দ করে করে উঠলো হয়ত কেউ মেসেজ দিয়েছে,,,
_হুম চলো যাওয়া যাক,,
আমি শুধু বসে বসে এতক্ষন তার কান্ড দেখেছি,,আমাকে আইস্ক্রিম কিনে দিয়ে সে শুধু এখানে সেখানে হুদাই ঘুরিয়েছে,,নামতে তো পারবো না,,নয় মাস চলে,,
কিছুক্ষন পর বাড়ি আসলাম,,ইয়াজ আমাকে ভিতরে ঢুকালো,,কিন্তু বাড়ির লাইট অফ,,আমাকে ধরে ধরে ভিতরে ঢুকাচ্ছে,,সোজা মার রুমে নিয়ে গেল,,মা সেখানে বসে ছিল,,,
_মা এইসব কি?অন্ধকার কেন?
মা আমার সামনে একটি শাড়ি ধরলো,,মাকি পাগল টাগল হয়ে গেছে নাকি এই টাইমে আমি শাড়ি পরবো নাকি?
_আয় পরিয়ে দেই,,
ইয়াজ বাহিরে চলে গেল,,মা আমাকে বোরকা খুলে একটি লাল শাড়ি পরিয়ে দিতে লাগলো,,
_মা এইসব কি?এখন আমি এই অবস্থায় শাড়ি পরবো?
_একটু পরে খুলে ফেলিস,,
_কিন্তু?
_চুপ কোন কিন্তু টিন্তু নেই,,
মা আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিল,,দু হাত লাল রেশমি চুড়ি পরিয়ে দিল,,চুল গুলো খোপা করে দিল,,
_মা একটু বলবেন হয়েছে টাকি?
বাহির থেকে সিটি বাজানোর শব্দ আসতেই মা আমাকে বাহিরে নিয়ে গেল,,কোন রকম হেটে গেলাম,,এভাবেই এই অবস্থা আবার পাগলের দলরা আমাকে শাড়ি পরিয়েছে,,আমাকে পুরো ডাইনিংয়ের মাঝে দাড় করালো,,
_মা এই অন্ধকারে রেখে কই যান?
_চুপচাপ দারিয়ে থাক নরিস না,,
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি,,তারা যে কি করবে আল্লাহই জানে,,হঠাৎ কেউ আমার সামনে হাটু গেরে বসলো,,আমার সামনে হাতে কিছু ধরে বলা শুরু করলো,,
_ভালোবাসি ফারাহ,,খুব বেশিই ভালোবাসি,,এই কয়দিন অনেক কষ্ট দিয়েছি তার জন্য সরি,,মরতে মরতে বেচে এসেছি শুধু মাত্র তোমার ভালোবাসার জোরে,,আর আমাদের বেবির জন্য,,আর কখনো তোমাকে ছেরে কোথায় যাবো না,,আমরা একসাথেই থাকবো,,এখন আমার পিচ্চিটা যেভাবে চাইবে তাকে ঠিক সেভাবেই ভালোবাসবো,,তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা সব সময় মিষ্টিই থাকবে কখনো তা তেতো হবে না,,
কথা গুলো শুনে আমার চোখ থেকে পানি পরতে লাগলো,,এ আমার ইয়াদের কন্ঠ,,আমি একে কিভাবে ভুলবো?কথা গুলো বলার সাথে সাথেই লাইট অন হয়ে গেল,,,সামনে হাটু গেরে বসে থাকা মানুষ টাকে দেখে আমার চোখ থেকে অটমেটিকলি পানি গরিয়ে পরতে লাগলো,,শব্দ করে কান্না করতে দিলাম,,,আমার সামনে আমার ইয়াদ বসে আছে,,ইয়াদ আমার কান্না দেখে উঠে আমাকে জরিয়ে ধরলো,,আমিও ইয়াদকে জরিয়ে ধরলাম,,কতদিন পর প্রিয় মানুষ টাকে কাছে পেলাম,,এভাবে জরিয়ে ধরলাম,,ইয়াদ আমার কপালে আলতো ভাবে চুমু খেল,,আমার কান্না থামার নামই নেই,,কান্না করেই যাচ্ছি,,
বাড়ির সবাই আসলো,,সবার মুখে হাসি,,ইয়াদ আমার কান্না মুছে দিয়ে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,
_এত কান্না করতে নেই পিচ্চি,,আমি তো মরি নি বেচে এসেছি,,
আমি ইয়াদকে মারতে লাগলাম,,,
_কেন কেন এত এত দিন আমাকে কষ্ট দিলেন?জানেন আমি আপনাকে ছাড়া কত কষ্টে ছিলাম?আমার কি হাল হয়েছিল?তার উপর আবার প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলাম,,কত কষ্ট হয়েছে একা থাকতে,,
ইয়াদ আমাকে আলতো ভাবে তার বুকে জরিয়ে নিল,,মাথায় হাত বুলাতে লাগলো,,আমার হেচকি উঠে গেছে,,আস্তে করে ইয়াদ বলল,,
_happy anniversary jan,,
আমি মুখ তুলে তার দিকে অবাক ভাবে তাকালাম,,
_আপনার মনে ছিল?(চোখ মুছতে মুছতে)
_পিচ্চির সাথে বিয়ের ডেট মনে থাকবে না তা কি হয় নাকি?
_হুহহহ মার পছন্দ,, (বলেই ভেংচি দিলাম)
_আমারও,,
আমাদের খুনসুটি দেখে উপস্থিত সবাই হেসে দিল,,ইয়াজ বলল,,
_কতদিন পর পিচ্চি মন খুলে হাসলো,,
_সরি,,(ইয়াদ)
_আরে নাহ আপনি কেন সরি বলেন,,
_হুম দুস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও,,(মা)
_আচ্ছা হয়েছে এখন আসো কেক কাটি,,(ইয়াজ)
আমাদের সামনে একটা কেক আনলো,,আমি এখন ঘরটাকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম কত সুন্দর করে ডেকুরেট করেছে,,কেকের উপর আমার আর ইয়াদের ছবি যা আমরা সাজেক গিয়ে তুলেছিলাম,,,আমি চোখ মুছে একটা হাসি দিয়ে ইয়াদের দিকে তাকালাম,,,ইয়াদও একটা হাসি দিয়ে কেক কাটতে ইশারা করলো,,,আমি আর ইয়াদ কেক কাটলাম,,দুইজন দুইজনকে খাইয়ে দিলাম,,তারপর বাবা মাকে আর ইয়াজ ভাইকে খাইয়ে দিলাম,, ইয়াজ তো কেকের ক্রিম নিয়ে ইয়াদের মুখে লাগিয়ে দিল,,আমারও খুব ইচ্ছে করছে লাগিয়ে দিতে কিন্তু দুর্ভাগ্য লাগাতে পারবো না,,দুই ভাই দুই ভাইকে লাগিয়ে দিল,,,সবাই হেসে দিল,,
অনেক দিন পর এই পরিবারে আবার হাসির রোল শুরু হয়েছে,,
রাতের খাবার খেয়ে আমি আর ইয়াদ নিজেদের রুমে চলে আসলাম,,ইয়াদ ধরে ধরে উপরে উঠিয়েছে,,কতদিন পর ইয়াদের এমন কেয়ার পেলাম,,ইয়াদ আমাকে রুমে নিয়ে খুব সাবধানে বিছানায় বসালো,,আমি ইয়াদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,সব যেন আগের মতোই আছে,,শুধু মাঝ দিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম মনে হচ্ছে,, যা ছিল অনেক ভয়ানক দুঃস্বপ্ন,, আমাকে ইয়াদের দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,,
_কি হয়েছে?
আমি তার হাত ধরে আমার পাশে বসিয়ে বললাম,,
_জানেন এই মাস গুলো আমার কিভাবে কেটেছে?কতটা ভয়ানক ভাবে যে কেটেছে,,
ইয়াদ আমাকে এক সাইড দিয়ে জরিয়ে ধরলো,,আমি বললাম,,
_ইয়াদ আমি কেক খাবো,,
_ইসসসস মেডামের ফরমাইশ শুরু,,
_এই কয়েক মাস করেননি তা এখন করবেন,,
_যো হুকুম মেরে আকা,,
বলেই একটা পিরিসে এক টুকরো কেক নিয়ে আসলো,,আমার হাতে দিতেই আমি একটু খেয়েই তার গালে কেকের ক্রিম লাগিয়ে দিলাম,,আসলে কেক টা আনার মুল কারন এইটাই ছিল,,ক্রিম দিয়ে আমি পেট ধরে হাসতে লাগলাম,,
ইয়াদের উপর এমন কিছু হওয়ায় সে কিছু টা বোকা বনে গেল,,পরেই বুঝলে রাগী ভাবে আমার দিকে তাকালো,,আমি তাকে হাত দিয়ে ইশারা করে কাছে আসার জন্য বললাম,সে আমার কাছে আসতেই ক্রিমটা তার গাল থেকে কিছুটা খেলাম,,আমার এহেন কাজে ইয়াদ আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
_ওহ আমি তো ভুলেই গেছিলাম এ যে আমার পিচ্চি,,রোমেন্সের রানী,,
_রোমেন্স কোথায় দেখলেন এইখানে?
_তোমার সব জিনিসই রোমান্টিক,,
বলেই গালে চুমু খেল,,
_আমিও তোমার থেকে রোমান্স শিখেছি,,
বলেই আমার গলায় কিছুটা ক্রিম লাগিয়ে দিল,,সেখান থেকে সে কিছুটা খেল,,আমি হেসে উঠলাম,,আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল,,
_আচ্ছা হয়েছে চলো এখন ঘুমুবে,,
আমরা দুইজন ঘুমিয়ে গেলাম,,
সকালে,,
আমার পেট খুব ব্যাথা করছে,,আমি না চাইতেও মুখ দিয়ে চিৎকার বের হয়ে এলো,,,পাশে শুয়ে থাকা ইয়াদকে ডাকতে লাগলাম,,,
_ইয়া,,,,দ,,,আহহহহহহহ,,,
আমার চিল্লানিতে ইয়াদ উঠে গেল,,আমাকে এভাবে চিল্লাতে দেখে ঘাবরে গেল,,মা বাবা ইয়াজকে ডাকলো,,সবাই রুমে এতক্ষনে চলে আসলো,,আমার চিল্লানের মাত্রা ক্রামাগত বেরেই চলছে,,ইয়াদ আমার চিল্লানি আর নিতে না পেরে তারাতারি কোলে তুলে নিল,,গাড়ি ড্রাইভ করছে ইয়াজ আর তার পাশে বাবা বসা,,ইয়াদের কোলে আমার মাথা,,আর মা পাশে,,,আমার ব্যাথা যেন বাড়তেই আছে কমছেই আর না,,আমরা হসপিটাল পৌছে গেলাম,,তারাতারি ওটি তে নিয়ে গেল,,
ইয়াদ তো পুরু টেনশনে একাকার,,তার পিচ্চির যেন কোন ধরনের কষ্ট না হয় এই দোয়াই করছে,,এই কয়েক মাস তার পিচ্চি অনেক কষ্ট করেছে আল্লাহ আর দিও না,,এই বলেই ওটির বাইরে পাইচারী করছে,,
বেশ কিছুক্ষন পর ওটির লাল লাইট অফ হয়ে গেল,,আর টাওয়ালে মোরানো একটা বাচ্চাকে নিয়ে এলো,,নার্স বাচ্চাটাকে ইয়াদের মার কোলে দিল,,,আর নার্স বলল,,
_মা বাচ্চা এখন দুইজনি সুস্থ,,
ইয়াদের এতক্ষনে যেন প্রান ফিরে পেল,,সে বাচ্চাকে কোলে নিল,,মাসাল্লান ফুটফুটে একটা কন্যা হয়েছে তাদের,,,সে বাচ্চাটাকে নিয়ে ভিতরে গেল,,ফারাহকে কেবিনে শিফট করা হয়ে ,,ফারাহ ইয়াদের উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুলল,,তার দুই প্রিয় মানুষকে একসাথে দেখে যেন মনের মধ্যে শান্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে,,ইয়াদ বাচ্চাটাকে আমার মুখের সামনে ধরে আমি একটা চুমু খেলাম,,ইয়াদ এক হাতে বাচ্চাকে ধরে আরেক হাতে আমার হাত ধরে বলল,,,
_পিচ্চি আমাদের বাচ্চা,,
_এখন তো বাচ্চার মা ও হয়ে গেছি এখন অন্তত পিচ্চি বইলেন না,,
_আমার জন্য তুমি পিচ্চি পিচ্চিই থাকবা,,
_হুহহহ,,
ইয়াদ আমার কপালে একটা চুমু খেল,,তারপর বেবির কপালে,,,
_আমার ফেমিলি সম্পুর্ন,,,
🖤🖤সমাপ্ত🖤🖤