ভালোবাসি তাই পর্ব-০২

0
1436

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ২
#Tanisha Sultana

“কথা কানে যাচ্ছে না? কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি?

মারুফার কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। তানহা এখান থেকে পালানোর পথ খুঁজছে। মারুর মুখ দেখে তানহা স্পষ্ট বুঝতে পারছে এই মাইয়া তানহাকেই ফাঁসাবে।

” লাস্ট বার জিজ্ঞেস করছি। মুখ না খুললে তোমাকে বেলকনি থেকে নিচে ফেলে দেবো।
মারুফা তানহার হাত জড়িয়ে ধরে।

“বিশ্বাস করুন আমার কোনো বফ নাই। আমি পিওর সিঙ্গেল। কিন্তু আমি প্রেগন্যান্ট হলাম কি করে বুঝতে পারছি না।
ভয় জড়ানো কন্ঠে বলে মারুফা।
অভি হাত ভাজ করে দাঁড়ায়। তানহার দিকে তাকায়। তানহা লেহেঙ্গারের স্কার্টটা উঁচু করে দৌড় দিতে যায় অভি হাত টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অভির বুকে বাড়ি খায় তানহা।

” কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে এক পা নড়বা না
তানহার হাত মুঠো করে ধরে তানহাকে পাশে দাঁড় করিয়ে বলে অভি।
“আজ তানহা তুই শেষ। এই করলার জুস আজ তোকে খেয়ে ফেলবে।
মনে মনে বিরবির করে বলে তানহা।

” তো মারুফা তুমি কি করে বুঝলে তুমি প্রেগন্যান্ট?

“তানহা বলছে।
তানহার দিকে হাত উঠিয়ে বলে মারুফা। তানহা ছিটকে ওঠে। যা ভেবেছিলো তাই। অভি তানহার দিকে কপাল ভাঁজ করে তাকায়।

” বিশ্বাস করুন আমি কিচ্ছু করি নি। শুধু ওকে বলেছিলাম বাংলা মুভিতে দুইবার বমি করলে আর মাথা ঘুরলে নায়িকারা প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। কিন্তু ও তো নায়িকা না।
এক নাগারে কথা গুলো বলে তানহা।

মারুফা এবার মরা কান্না জুড়ে দেয়।
“এখন আমার কি হবে? আল্লাহ তুইলা নাও আমারে।
অভি বিরক্ত হয়ে জোরে বলে ” সাট আপ”
তানহা আর মারুফা ছিট্টেবিট্টে ওঠে

“ইডিয়েটের দল। অম্বল হয়েছে তোমার।
মারুফা বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নেয়।
” আল্লাহ বাঁচাইছে।

“আমি না ভাবতে পারি না মানুষ এতোটা স্টুপিট ইডিয়েট কি করে হয়। ডিজগাস্টিং
বলেই নাক সিটকিয়ে চলে যায় অভি। তানহা মারুফার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। তানহার চাহনি দেখে মারুফা হকচকিয়ে যায়
” আসলে হইছে কি। আমি বুঝতে পারি নি বোইন। মাপ করে দে।
কান ধরে বলে মারু। তানহা বলে
“তোর জন্য কয়বার স্টুপিট আর ইডিয়েট শুনলাম

” বেশি না মাএ একবার স্টুপিট আর কয়েকবার ইডিয়েট

মারুর মাথায় বাড়ি মারতে ইচ্ছে করছে তানহার।

অভি রুম থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের কাছে চলে যায়। আবির বর সেজে বসে আছে। আর একটু পরেই বিয়ে করতে চলে যাবে। সাকিল রাকিব নিরব আর আবির কথা বলছিলো। অভি ওদের মাঝখানে গিয়ে বসে।

“এতোখন কই ছিলি? (আবির)

” ওই আর কি সাওয়ার নিতে গেছিলাম

“ওহহ আচ্ছা।
এবার সাকিলের নজর যায় অভির হাতের দিকে

” সাওয়ার নিতে গিয়ে কি ফুলসজ্জা করে এলি না কি?
সাকিলের কথায় অভি ফোন রেখে সাকিলের দিকে তাকায়।

“হোয়াট

” না মানে তোর হাতে লিপস্টিক। তা কার কাছ থেকে টেস্ট করে আসলি?
চোখ টিপে বলে রাকিব।
অভির এবার মনে পড়ে তানহার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছিয়ে দিয়েছিলো। কপাল চুলকায় অভি।

“তা বন্ধু বলো বলো কে সেই লিপস্টিপ কুইন
সাকিল বলে।
অভি উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর সুরে বলে
“সিক্রেট

তখন তানহার বাবা অভিকে ডাকে। কিছু বলে অভিকে।
” ঠিক আছে আংকেল আমি তানহাকে নিয়ে চলে যাচ্ছি।
তানহার বাবা নিশ্চিত হয়।
অভি তানহার রুমে যায়। তানহা একটা কুশল নিয়ে মারুকে তাড়া করছে। আর মারুফা দৌড়াচ্ছে। অভি রুমে আসতেই তানহা ঠাস করে অভির সাথে ধাক্কা খায়। পরে যেতে নিলেই অভি কোমর জড়িয়ে ধরে। মারুফা অভিকে দেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
অভি তানহাকে ধরছে তো ধরছেই ছাড়ার নাম নেই। কেমন করে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে। তানহা কাচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করে

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

” কাঁচা চিবিয়ে খাবো তোমায় তাই।
তানহা ঢোক গিলে

“জামাকাপড় গুছিয়ে নাও

” কেনো?

“তোমার বাপ তোমাকে এবাড়িতে রাখবে না। আমার ঘারে ঝুলিয়ে দিয়েছে তোমায়।
কথাটা তানহার খুব লাগে। তাচ্ছিল্য করে বলে
” হুমম সেটাই। না ছাড়লে জামাকাপড় গোছাবো কি করে?
অভি ছেড়ে দেয়।

তারপর অভির হাত ছাড়িয়ে লাগেজ বের করে। অভি ততোখনে বেলকনিতে চলে। খারাপ লাগছে তানহার। কিছুখন পরে অভি বলে

” এই যে মিস লেজ ছাড়া বাঁদর হয়েছে?

তানহা লাগেজের চেন আটকিয়ে বলে
“হুমম হয়েছে।
অভি তানহার লাগেজ নিয়ে এগোতে থাকে। রুম থেকে বেরিয়ে তানহা মা বাবা আর ফুপিকে দেখে।

” আই প্রমিজ তানহা নামের বাঁদরটা আর কখনোই এই বাড়িতে পা রাখবে না
বলেই তানহা গটগট করে বেরিয়ে যায়।
তানহার মা অভির কাছে এসে বলে
“পৌঁছে ফোন দিও

” ঠিক আছে খালামনি

অভিও চলে যায়। তানহার বাবা ধাপ করে বসে পড়ে।
“ভাই ভেঙে পড়ো না। তানহার চলে যাওয়ায় ভালো। আবিরের বিয়ে তানহা সয্য করতে পারবে না। আর তানহা সামনে থাকলে আবিরও বিয়ে করতে পারবে না।
তানহার ফুপি বলে।
তানহার মা ভেংচি কেটে বলে

” আবিরের জন্য আমার মেয়েকে মোটেও পাঠাই নি। আমি অভির সাথে তানহার বিয়ে দেবো তাই পাঠিয়েছি
বলেই তিনি নাচতে নাচতে রুমে চলে যায়। অভিকে ওনার দারুণ লাগে। এবার অভির মা মানে ওনার বোনের সাথে কথা বলে সেটিং করতে হবে।

গাড়িতে তানহা অভির ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। এই মাএ জিপি অফার আসাতে ফোন জ্বলে উঠেছিলো আর ওয়ালপেপারে একটা মেয়ের পিক দেখেছে তানহা। স্পষ্ট করে দেখতে পায় নি। তবে একটু খানি দেখেই বুঝে গেছে এটা একটা মেয়ের পিক। তাই অধিক আগ্রহ নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আবার মেসেজ আসলে ভালো করে দেখবে।

“কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?

অভির কথাটা তানহার কান ওবদি পৌছায় নি। তানহা ফোন দেখতে ব্যস্ত

” তুমি কালা? না কি প্রতিবন্ধী? কোনটা?
এবার অভি চেচিয়ে বলে। তানহা ধমফরিয়ে ওঠে

“ইয়ে মানে কি বললেন?

বিরক্তির একটা নিশ্বাস ফেলে অভি।

“কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?

” ইহহহহ আমি ওনার এক মাএ খালামনির একমাত্র মেয়ে তাও উনি জানে না আমি কিসে পড়ি। ভাব দেখে বাঁচি না।
ভেংচি কেটে মনে মনে বলে তানহা।

অভির রাগে বিরক্তিতে কানে হেড ফোন গুজে নেয়। তানহার এভাবে বসে থাকতে বোরিং লাগছে। ইসস যদি ঠিক সময় উওর দিতো তাহলে ওনার সাথে একটু গল্প করা যেতো। সময় কাটতো।

তানহা অস্তে করে ছিটবেল খুলে ফেলে। তারপর অভির দিকে ওনেকটা এগিয়ে বসে। অভির বা কানের হেডফোনের তারটা অতি সাবধানতার সাথে খুলে নিজের কানে নিতে যাবে আর সাথে সাথে অভি ব্রেক করে তানহা ছিটকে অভির কোলে গিয়ে পড়ে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে তানহা। গাড়ির পেছনের ছিট থেকেও আহহহহহ শব্দটা ভেসে আসে। অভি এক হাতে তানহাকে ধরে পেছনে ঘুরে তাকায়। তানহা এতোটাই ভয় পেয়ে গেছে অভির বুকের সাথে লেপ্টে আছে।

পেছনের ছিটে মারুফা দাঁত কেলিয়ে বসে আছে। অভির রাগটা মাথায় চড়ে যায়। মারুফা গাড়ির দরজা খুলেই দৌড়। এখন রইলো পড়ে তানহা।

চলবে