ভালোবাসি তাই পর্ব-০১

0
2377

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana

নিজের রুমে পা রাখতেই দেখে টাওয়াল পড়া খালি গায়ে চুল ঝাড়ছে সুপার সিঙ্গার অভি। তানহা এক চিৎকার দিতে যায় তার আগেই অভি এসে তানহার মুখ চেপে ধরে। আরেক হাত দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে অভির দিকে। অভির এক হাত তানহার উন্নক্ত পেটে আরেক হাত মুখে। দেয়ালের সাথে লেপ্টে আছে দুজন। অভির নিশ্বাস তানহার চোখ মুখে আছড়ে পড়ছে। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে তানহার মুখে। খুব অস্বস্তি হচ্ছে তানহা। অভির হাতটা পেটের ওপর ক্রমশ শক্ত হয়ে আসছে। তানহা শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে আছে। শ্বাস নিতেও কেমন কেমন লাগছে। হার্ট বিট জোরে জোরে লাফাচ্ছে।

“ইসসসসসস একদম শব্দ করবা না
রাগী কন্ঠে ফিসফিস করে বলে অভি। অভির এমন ভয়েস শুনে তানহা কেঁপে ওঠে
” উমমমমমমমম

“কি উমমম করছো! বলো শব্দ করবা না তাই মুখ ছেড়ে দেবো

তানহা এবার কপাল কুচকে তাকায়। এই লোকটাকেই তানহা পৃথিবীতে সব থেকে বেশি ভয় পায়। পান থেকে চুন খসলেই ইডিয়েট, ডিজগাস্টিং, ননসেন্স, সাটআপ এগুলো ওনার ডাইলোক। সব সময় কপাল কুচকে থাকে। কিভাবে হাসতে হয় এই লোকটা জানে না।

” হা করো তাকিয়ে আছো কেনো? আমি কি জোকস বলছি?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অভি। তানহা এবার হাত সরানোর ইশারা করে। অভি মুখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে পিঠে রাখে।
তানহা কাচুমাচু হয়ে অভির বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের দিকে তাকানোর সাহস নেই।
“প্লিজ সরে যান…….
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে তানহা।

অভি মুখটা আরও একটু এগিয়ে নেয়। তানহা চোখ বন্ধ করে ফেলে।
” না সরলে কি করবা?
তানহা চোখ খুলে তাকায়। কি বলছে লোকটা? না সরলে তানহার শ্বাস আটকে যাবে। হাত পা কাঁপছে তানহার।
অভি সরে আসে। তানহা বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। দুই তিনবার বুকে থু থুও নেয়।

“আর একটু থাকলেই আমি দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতাম
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে তানহা।

” কি বললে?
অভি কান খাড়া করে বলে।

“কককিছু না
তুতলিয়ে বলে তানহা।

” মিনিমাম কমনসেন্স নেই তোমার? কারো রুমে ঢুকতে গেলে নক করতে হয়। জানো না? কোনো মেনার্সই শেখো নাই। ডিজগাস্টিং
চরমভাবে রেগে বিরক্তি নিয়ে বলে অভি।

“এটা তো আমারই রুম। এখানে ঢুকতে গেলে আবার পারমিশন নিতে হবে। কোথা থেকে আইছো তুমি চান্দু
মনে মনে বলে তানহা। জোরে বললে নির্ঘাত খুন করে ফেলবে।

অভি এবার ভালো করে তানহার দিকে তাকায়
” লজ্জা করে না তোমার? পেট দেখিয়ে ছেলেদের ইমপ্রেস করতে চাও। ওড়না কই তোমার?

তানহার মনে পড়ে আবিরের রুম থেকে আসার সময় হয়ত ওড়নাটা পড়ে গেছে। তানহার আবির নামটা মনে আসতেই বুকের ভেতর ধুববুক করে।

“যখনই দেখলা আবির তোমায় বিয়ে করবে না তখনই নতুন পটানোর ধান্দা শুরু করে দিলা। ইউ আর গ্রেট তানহা। তোমার তো নোবেল পাওয়া উচিৎ। তো কতোজন তোমার পেট ছুঁয়ে দিলো?

এরকম নোংরা কথা তানহার আর সয্য হচ্ছে না। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

” আর এক ফোঁটা পানি চোখ থেকে পড়লে চোখ তুলে ফেলবো
কিছুটা হুমকি দিয়ে বলে অভি। তানহার কান্না অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।

অভি দরজা খুলে। দরজার বাইরেই তানহার ওড়নাটা পড়ে ছিলো কুড়িয়ে নিয়ে আসে। তানহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অভি তানহার হাতে ওড়নাটা দেয়।

তানহা একবার অভির দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে আসতে নেয়।
” এক মিনিট
তানহা দাঁড়িয়ে যায়। অভি সেবটিপিন এগিয়ে দিয়ে বলে
“পেটটা ঢেকে যাও তোমার ট্যাটু করা পেট দেখতে এখানে কেউ আসে নি। সবাই ভদ্র ফেমিলির লোকজন। আর আমি যতদূর জানি তোমার বাবাও একজন ভদ্রলোক। সো

তানহা সেপটিপিনটা নিতে যায় অভি সরিয়ে নিয়ে যায়।
” তোমার কাছে দিলে তুমি ঠিক মতো পেট ঢাকবা না। জানা আছে। ট্যাটু করছো সেটা দেখানোর জন্য এভাবেই রাখবা।
বলেই অভি তানহার ওড়না নিয়ে ভাজ করে কাঁধে দেয়। পেটের কাছে ওড়না রাখতে গিয়ে তানহার পেটে হাত লেগে যায় অভির ছিটকে দুরে সরে যায় তানহা। অভি ভ্রু কুচকে বলে

“হোয়াট

” আআআমি পারবো
মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে বলে তানহা।

“এখানে এসে সোজা হয়ে দাঁড়াও। নাহলে

তানহা এসে অভির সামনে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে দাঁড়ায়। অভি পিন দিয়ে ওড়না আটকে দেয়। তানহার মুখে ফু দিয়ে দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। তানহা এখনও ওভাবেই স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফু দেওয়াতে আত্না কাঁপছে।

” আউট
অভি কিছুটা চিৎকার দিয়ে বলে। তানহা চমকে চোখ খুলে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
“কথা কানে যায় না? কালা তুমি? রুম থেকে বেরোতে বলছি। তোমার সাথে কেউ আমাকে দেখে ফেললে আমার পেজটিজ থাকবে না। এমনিতে তো তোমার মা তোমার সাথে আমার বিয়েটা দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

হাত দিয়ে এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে পেছন ঘুরে অভি হাত ধরে ফেলে। তানহা ভ্রু কুচকে তাকায়
অভি তানহার চোখের লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছে দেয়। তারপর ঠোঁটের লিপস্টিক ও হাত দিয়ে মুছে দেয়

” একদম সাজুগুজু করে আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করবা না।

” আপনিও নিশ্চয় আপনার বডি দেখিয়ে আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য এখনো খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন? আমি কিন্তু ইমপ্রেস হবো না।

বলেই তানহা এক দৌড় দেয়। এখন এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে “সাটআপ” শব্দটা শুনতে হবে। আর নাহলে একটা থাপ্পড়।
“ইডিয়েট একটা
বিরবির করে বলে অভি।

দরজা খুলে ফুপিকে দেখতে পায় তানহা।

“একদম বাইরে বের হবি না। বরযাএী না যাওয়া পর্যন্ত তুই এই রুমেই থাকবি

” এমনটা করো না ফুপি। এই রুমে জল্লাদ আছে আমাকে খেয়ে ফেলবে
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তানহা।

“এমনটাই করবো। তুই নিজেই তো শয়তান। আর সয়তানের কাছে জল্লাদ আসে না।
তানহাকে ভেতরে ধাক্কা দিয়ে দরজা লক করে দেয় ফুপি। তানহা দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে
” ফুপি দরজা খুলে দাও। আমাকে অন্য রুমে লক করে দাও

অভির ততোখনে চেঞ্জ করা শেষ। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তানহাকে এভাবে দরজা ধাক্কাতে দেখে ভ্রু কুচকায়।

“কি হচ্ছে
অভির গম্ভীর সুরে তানহা হকচকিয়ে পেছনে তাকায়।
“আমি কিচ্ছু করি নি। বিশ্বাস করুন। মারুর দিব্যি
ভয়ে ভয়ে বলে তানহা। বলেই চোখ বন্ধ করে ফেলে। এখনই জোরে বাজ পড়ছে। হুংকার ছেড়ে বলবে ” ড্রামা হচ্ছে এখানে? স্টুপিট মেয়ে। ইচ্ছে করে করেছো এসব

তানহা যা ভেবেছিলো তাই। অভি তানহাকে দরজার সাথে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে

“একদম ড্রামা করবা না ড্রামা কুইন। তুমি ইচ্ছে করেই এখানে আটকে আছো

তানহার এবার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কান্না করলেও ধমক দেবে তাই চুপ করে আছে। ঘনোঘনো ঢোক গিলছে। আর মনে মনে বলছে আল্লাহ হেলেপ। কেউ একজনকে তো পাঠাও

এমন সময় হতদম্ভ হয়ে রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে মারুফা।

” তানহা আমি প্রেগন্যান্ট
উত্তেজিত কন্ঠে বলে মারুফা। অভি সরে দাঁড়ায়। তানহাও সরে যায়। মারুফা হা করে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকপ।

“মারুফা কি বলছিস তুই এসব?
ভয় জড়ানো কন্ঠে বলে তানহা। মারুফার হুশ ফেরে

” ঠিকি বলছি?
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে মারু।

“তুমি অবিবাহিত মারুফা। এটা কিভাবে পসিবল

অভির কন্ঠ শুনে মারুফা চমকে ওঠে। মারুফার হাত পা কাঁপছে।

“এই বাচ্চার বাবা কে মারুফা
অভি প্রশ্ন করে। মারুফা আর তানহা একটা ঢোক গিলে অভির দিকে তাকায়।

চলবে।