ভালোবাসি তাই পর্ব-০৪

0
1130

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana

“ভেরি সরি। আর হবে না
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে তানহা। অভি তানহাকে অবাক করে দিয়ে তানহাকে জড়িয়ে ধরে তানহার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। তানহা সরার জন্য ছটফট করে।
” ডোন্ট ডিস্টার্ব ঘুমতে দাও

তানহা একটা ঢোক গিলে। এ আবার কোন বিপদ?
“আমাকে ছেড়ে ঘুমান না
করুনার সুরে বলে তানহা

অভি ঘুমঘুম চোখে হালকা তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে।
” বউ ঘুমতে দাও

বউ শব্দটা শুনে তানহার মুখ আপনাআপনি হা হয়ে যায়। আমি ওনার বউ হলাম কবে? নিশ্চয় গন্ডগোল আছে। লুকিয়ে বিয়ে করেছে। এখন বউ মনে করে আমাকেই জড়িয়ে ধরেছে। চান্দু ভেবেছে কেউ জানতে পারবে না। কিন্তু এখন আমি জেনে গেলাম আর সবাই কে জানিয়ে দেবো। আমাকে ধমক দেওয়া সুধে আসলে মিটিয়ে নেবো হুমমমম
শয়তানির হাসি দিয়ে মনে মনে বলে তানহা। অবভি আরও একটু টাইট করে ধরে। তানহা ছটফট করা বন্ধ করে। হাত বাড়িয়ে অভির ফোনটা নেয়। নক বাটনে চাপ দিতেই তানহার হাসি মুখটা ভেসে ওঠে। তানহার চোখ বড়বড় হয়ে যায়। ওনার ফোনে আমার পিক। আগ্রহ নিয়ে লক খুলতে যায়। ফেসলক দেওয়া। অতি চেষ্টা করেও তানহা খুলতে পারে না। কয়েকবার অভির মুখের সামনে ফোন ধরে তাও খুলে না। নিশ্চয় বত্রিশটা দাঁত বের করে লক দিয়েছে।

“বউ দরজা লক করেছো
অভির ঘুমঘুম কন্ঠে এই কথাটা শুনে তানহা কেঁপে ওঠে । তানহার ঘাড়ে অভির নিশ্বাস পড়ছে। পেটের ওপর এক হাত আর পিঠের নিচে আরেক হাত রেখে ঘুমচ্ছে। দারুণ অস্বস্তির মুহুর্ত। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। অভি এবার ভালো ভাবে চোখ খুলে। তানহাকে ছেড়ে দেয়। তানহা অভির পাশে বসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। হার্টবিট দ্রুত উঠানামা করছে। অভিও বসে পড়ে

” এখানে কি করছো?
ঠান্ডা গলায় বলে অভি। তানহা কি বলবে ভাবছে। যদি বলে ফোনের ওয়ালপেপার দেখতে এসেছিলো তাহলে ধমক একটাও মাটিতে পড়বে না

“আপনাকে ডাকতে এসেছিলাম। সোজাসাপ্টা মিথ্যা কথা বলে দেয় তানহা। অভি সন্দেহ নিয়ে তাকায়
” রিয়েলি? ভ্রু কুচকে বলে অভি।

“হুমমম। মাথা নুয়ে বলে তানহা।

” তো আমাকে ডাকার এই মূল্যবান দায়িত্বটা তোমাকে কে দিয়েছে?

তানহা এবার হাত কচলাচ্ছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। অভির কন্ঠ স্বাভাবিক শোনালেও ও যে ভীষণ রেগে যাচ্ছে তা তানহা বুঝতে পারছে।
“আপনার ওয়ালপেপারে আমার পিক কেনো? কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বলে তানহা। অভি ছো মেরে তানহার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। ওয়ালপেপার চেক করে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে
” ইডিয়েট আমার ওয়ালপেপারে তোমার পিক কেনো দিয়েছো? তোমার ফোন নেই? এই পিকটা আমি তুলছিলাম তোমার বার্থডের দিন ডিলিট করতে ভুলে গেছি আর তুমি এই সুযোগে তোমার পিকটা ওয়ালপেপার দিয়ে দিলে?

তানহা রীতিমতো হা হয়ে গেছে। মুখের ভাসা হারিয়ে ফেলছে। কি বলছে লোকটা?

“হা করে তাকিয়ে আছো কেনো? ছেলে দেখো নি জীবনে? বেরিয়ে যাও। অতিরিক্ত বিরক্তি নিয়ে বলে অভি। তানহা এখনো হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
” কথা কানে যাচ্ছে না। আউট
কিছুটা জোরে বলে অভি। তানহা ছিটকে উঠে একটা দৌড় দেয়। দরজা কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পেছন ঘুরে বলে

“আপনি যে বিয়ে করেছেন এটা আমি সবাইকে বলে দিবো
বলেই দৌড় দেয়। অভি তানহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে
” ইডিয়েট একটা।

রুমে এসে তানহার খুব আবিরের কথা মনে পড়ে। প্রতিদিন সকালে আবির ফোন দিয়ে তানহার ঘুম ভাঙাতো। যেদিন ফোনের শব্দে তানহার ঘুম ভাঙতো না সেদিন রুমে গিয়ে ডেকে তুলতো তানহাকে। কালকেও আবির এটাই করেছে। কিন্তু আজ অন্য কাউকে ঘুম থেকে তুলবে। পরিস্থিতি মানুষকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে আসে।
বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়ায় তানহা। অভির বেলকনি থেকে ম ম করে ফুলের গন্ধ আসছে। একটা সাদা গোলাপ ও ফুঁটেছে। সাদা গোলাপ তানহার বড়াবড়ই খুব পছন্দের। প্রতিদিন আবির তানহাকে একটা করে সাদা গোলাপ দিতো। পূর্ব আকাশটা লাল হয়ে গেছে। এখনই সূর্য উঠবে৷ তানহা এক মনে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে। ছুঁটে যেতে মন চাইছে আবিরের কাছে কিন্তু মন বাঁধা দিচ্ছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে পুরোনো কথা মনে পড়বে তাই তানহা রুমে ফিরে আসে।

ফ্রেশ হয়ে কিচেনে যায় খালামনি সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে। তানহা গিয়ে খালামনির পাশে দাঁড়ায়।
“হেল্প করবো? মিষ্টি হেসে বলে তানহা।

” সত্যি হেল্প করবি? চা কাপে ঢালতে ঢালতে বলে খালামনি

“হুমমম

” তাহলে অনির আর অভিকে চা টা দিয়ে আয়। ট্রে তে চা সাজিয়ে বলে

তানহার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চাপে। চা দিতে গিয়ে যদি কোনো প্রমাণ আনা যায়। প্রমাণ ছাড়া তো কেউ বিশ্বাস করবে না অভি বিয়ে করেছে। দাঁত কেলিয়ে চায়ের ট্রে টা হাতে নেয় তানহা। তারপর আগে অনিকের রুমে যায়। অনিক তানহার চেয়ে বছর তিনের বড়। তবুও ওরা তুই তুই করে কথা বলে। অনিক গার্লফ্রেন্ডের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে উপুড় হয়ে শুয়ে। তানহা টেবিলের ওপর চায়ের কাপ রেখে বলে

“অনিক বাবু চা টা খেয়ে নাও
নেকা সুরে বলে তানহা। অনিকের গার্লফ্রেন্ড তো রেগে রনোচন্ডি।

” তানহা বাবু বলোস কেন? আসহায় ফেস করে বলে অনিক

তানহা অনিকের পাশে বসে গালে হাত বুলিয়ে বলে
“বাবু বফকে তো বাবুই বলে তাই না টিয়া পাখি। আমার জানটা। আমি নিজে হাতে তোমার জন্য চা করেছি

বলেই তানহা দৌড়। অনিক গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া শুরু করে দেয়। তানহার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে অনিকের।

অভির রুমের সামনে এসে জোরে জোরে দুই তিনটা শ্বাস নিয়ে রুমে ঢুকে যায় তানহা।
অভি জগিং সুট পরে জুতোর ফিতা লাগাচ্ছিলো আর ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো। তানহা ভাবে অভিও হয়ত ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে। তাই নেকা সরে বলে

” অভি জান তোমার জন্য চা এসেছি নিজে হাতে বানিয়ে প্লিজ খেয়ে বলো কেমন হয়েছে? আমার জানটা

অভি তানহার দিকে তাকিয়ে বলে
“খালামনি আপনার লেজ ছাড়া বাঁদর মেয়ে হাজির হয়েছে।

তানহার চোখ বড়বড় হয়ে যায়
এটা মা ছিলো এবার আমার মাদার ইন্ডিয়া এই করোলার সাথে আমার বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। কি করবো?

” পরে কথা বলছি
বলেই অভি ফোন রেখে দেয়। তানহা টেবিলে চায়ের কাপ নামিয়ে দৌড় দিতে যায়। অভি হাত ধরে ফেলে।

“কি বলছিলে? ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে অভি। তানহা এদিক ওদিকে তাকিয়ে বলে
” সরি রং নাম্বার

“তুমি কলে নাই লাইভে আছো।

” ইয়ে মানে হয়েছে কি ভাইয়া আপনি ভুল শুনেছেন।

অভি তানহাকে টান দিয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে বলে
“ওহহহ আচ্ছা আমি ভুল শুনেছি। ঠিক আছে ঠিকটা তুমি বলে দাও

তানহা এবার কেঁদে দেবে এমন অবস্থা।
” কিছুখনের মধ্যে তোমার ডিসকু মা চলে আসবে সাথে আবার উকিল নিয়ে। এতোখনে হয়ত আমার চোদ্দ গুষ্টিকেও জানিয়ে দিয়েছে। এবার বলে কি করবো? সব সময় স্টুপিটের মতো কাজ না করলে তোমার চলে না তাই না। সব সময় প্রুভ করতে চাও আমিই এক পিছ আছি লেজ ছাড়া বাঁদর।
এক নাগারে কথা গুলো বলে অভি। তানহা চুপ করে আছে।

“বাই দা ওয়ে তোমাকে না বলেছিলাম আমার রুমে আসবে না।

তানহা এবার মুখ খুলে
” আপনি তো কাজ করতেও বলেছিলেন

অভি ফোনটা পকেটে ভরে বলে
“তোমার সাথে ফালতু কথা বলার সময় আমার নাই

” কিন্তু আমি তো তোমার সাথেই যাবো করলা। তুমি নিশ্চয় বউয়ের সাথে দেখা করতে যাবে আর আমি তার ছবি তুলে সবাই কে দেখাবো।
দাঁত কেলিয়ে মনে মনে বলে তানহা।

“বাঁদরের মতো হাসছো কেনো?

তানহা ভালো করে দাঁত কেলিয়ে বলে
” ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করেছি। তাই কাছে আসো কাছে আসো কাছে আসো না গানটা মনে মনে গাইছি আর হাসছি। যদি কেউ কাছে এসে যায়
সুর টেনে বলে বেরিয়ে যায় তানহা।

“লেজ ছাড়া বাঁদর

চলবে।