ভালোবাসি তাই পর্ব-০৫

0
1052

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana

তানহা এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। ফটাফট লাগেজ থেকে কালো জিন্স আর লং শার্ট বের করে। পাশেই জগ ছিলো তারাহুরোতে পুরো জগটা লাগেজের মধ্যে পড়ে যায়। সেদিকে তানহা খেয়াল করে না। ড্রেস চেঞ্জ করে খালামনির কাছে যায়। খালামনি রুটি বানাচ্ছে।

“খালামনি তারাতাড়ি পাঁচশ টাকা দাও
তারাহুরো করে বলে তানহা।

” তোর খালুর কাছ থেকে নে। আর এতো সকালে কই যাবি?

“গোয়েন্দা গিরি করতে
বলেই দৌড় খালুর কাছে চলে যায়। খালু এখনো ঘুমে। তানহা হাত ঝাঁকিয়ে বলে
” খালুআব্বু তাড়াতাড়ি পাঁচশো টাকা দাও
খালু একটু নরেচরে ওঠে।

“তারাতাড়ি
তারা দিয়ে বলে তানহা। উনি ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের ব্যাক কবার থেকে টাকা বের করে দেয়। কয় টাকা দিলো সেদিকে ওনার খেয়াল নেই। তানহা পাঁচশো টাকা নিয়ে বাকি গুলো ব্যাক কবারে রেখে দৌড়ে চলে যায়।

” আম্মু আমার ফিরতে লেট হবে
বলেই ফোন দেখতে দেখতে বেরিয়ে যায় অভি। তানহা ওর পেছনে চুপিচুপি বেরিয়ে যায়। অভি দৌড়াচ্ছে। তানহা একটা রিকশা দেখে রিকসা ওয়ালাকে বলে অভিকে ফলো করতে দুইশো টাকা দেবো। উনি রাজি হয়ে যায়। অভি দৌড়ে একটা কফিশপে আসে।
“ঠিক ধরেছিলাম উনি বউয়ের সাথে দেখা করতে এসেছে। এবার আমি হাতে নাতে প্রমাণ নিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেবো😎
তানহা মনে মনে বলে।
অভি কফিশপে ঢুকে যায়। তানহা ভাড়া মিটিয়ে নিজেও যায়। অভি এক কনারে বসে ফোন দেখছে। তানহা অভির থেকে কিছুটা দুরে বসে। একটু পরে অভির সামনে কেউ একজন বসে। তানহা শুধু তার চুল দেখতে পাচ্ছে। ইয়া বড়বড় চুল কোমর ওবদি। অভির লোকটার সাথে কথা বলছে। তানহা দেরি না করে ফটাফট কয়েকটা পিক তুলে নেয় যাতে অভির মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আর ওই লোকটার জাস্ট চুল। খুশিতে আটখানা হয়ে তানহা বেরিয়ে যেতে নেয়্ ওয়েটার আটকে দেয়

” আমাকে যেতে দিচ্ছেন না কেন?
কোমরে হাত দিয়ে রাগী কন্ঠে বলে তানহা।
“আমাদের এখানে আসলে কিছু না খেয়ে বেরোতে দেয় না আমরা। কিছু খেতে হবে।

” ইহহহহহহ আইছে। কিচ্ছু খাবো না আমি। টাকা নাই। যদি ফ্রীতে খাওয়ান তো খেতে পারি।
চুল ঠিক করতে করতে বলে তানহা।

“টাকা না থাকলে এখানে আসছেন কেনো?
ছেলেটা ভনিতা না করে বলে দেয়।
তানহা কটমট চোখে তাকায়।

” যত বড় মুখ নয় ততোবড় কথা। আমার টাকা আছে কিন্তু এখন নাই।
” আসলে আমি দেখতে আসছিলাম এটা কফিশপ না কি ছিনেমা হল। যেভাবে সারি সারি কাপল ঢুকতে দেখলাম। বাই দা ওয়ে আপনার কি আমাকে ছোটলোক মনে হয়? না কি কিপ্টা? আমি কিন্তু কিপটা না। টাকা থাকলে দুই টাকা বেশি দিয়ে কফি খেয়ে যেতাম। ঠিক আছে নেক্সট টাইম যখন আসবো দুকাপ খেয়ে যাবো। এখন যেতে দে না রে ভাই।

“তা তো দেখতেই পাচ্ছি
বিরবির করে বলে ছেলেটা।

” এই কি বললেন আপনি? আবার বলেন তো? আল্লাহ আপনি এতো কথা বলেন। কানের পোকা খেয়ে ফেললেন। এখন যেতে দিন টাকা হলে এসে একটু কফি চেখে দেখে যাবো। আমি কিন্তু আপনাদের নামে মামলা করবো। আপনি কিউট ইনোসেন্ট একটা মেয়েকে জোর করে কফি খাওয়াতে চাইছেন। যদি টাকা ছাড়া হতো তো চলতো কিন্তু টাকা দিতে হবে।
বলে তানহা যেতে নেয়। ছেলেটা পথ আটকে বলে
“সরি ম্যাম

” আচ্ছা মুসকিল তো। একটু জোরেই বলে তানহা। অভি শুনতে পায়। এগিয়ে আসে তানহার দিকে

“কি হচ্ছে এখানে?
অভির নজর তানহার দিকে পড়তেই অভি ভ্রু কুচকে ফেলে। তানহা হাত দিয়ে মুখ ঢাকার বৃথা চেষ্টা করছে।
” তুমি এখানে?
চোখ মুখ শক্ত করে বলে অভি

“না মানে জগিং করতে এসেছিলাম তো কফি টেষ্টা পেয়ে গেছিলো তাই আর কি? কিন্তু আপনি এখানে? কার সাথে এসেছেন? জগিংয়ের নাম করে বউয়ের সাথে মিট করতে
অবাক হওয়ার ভান করে বলে তানহা।

” স্যার ম্যাম মিথ্যা বলছে। উনি এখানে কফি খেতে আসে নি।
ওয়েটার বলে। তানহা কটমট চোখে ওয়েটারের দিকে তাকায়
“ততুমি কি জানো? বেশি কথা বলো কেনো? জানো না বেশি কথা বললে লোকে বাচাল বলেে। তখন থেকে বকবক করে আমার মাথা খেয়ে নিচ্ছে।
এক নাগারে কথা গুলো বলে ঢোক গিলে তানহা। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। না জানি এখন কি হবে? এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে। দৌড় দেওয়ার মতো জায়গা দেখছে না।

“হু ইজ হি অভি?
একটা পুরুষের কন্ঠ শুনে তানহা তাকায়। তাকাতেই মুখটা হা হয়ে যায়। সেই লম্বা চুলওয়ালি। কিন্তু এটা মেয়ে না ছেলে। তানহা লোকটার কাছে যায়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলায়। দেখতে বিদেশিদের মতো।

” ওয়াও কাকু আপনি এতো কিউট দেখেই গাল টেনে দিতে মন চায়। কিন্তু সরি হ্যাঁ আমি আপনাকে মেয়ে মনে করছিলাম। এতোগুলা সরি। এখন প্লিজ এই ছেলেটাকে বলুন আমাকে যেতে দিত।
লোকটার হাত ধরে বলে তানহা। অভি টান দিয়ে তানহাকে সরিয়ে আনে।
“বাসায় চলো তোমার লেজ লাগিয়ে দেবো
দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বলে অভি। তানহা শুকনো ঢোক গিলে।
লোকটা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। উনি আসলে বুঝতেই পারছে না তানহা কি বললো। অভির দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই অভি পাগল বলে সামাল দিলো। তানহার রাগ হলো কিন্তু কিছু বললো না।

অভি তানহাকে আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তানহা ওয়েটারকে ধাক্কা মেরে এক দৌড় দেয়। এখানে থাকলে নির্ঘাত পেসটিজের হালুয়া বানিয়ে দেবো। স্টুপিট ননসেন্স বলে। অভি ওনাদেরকে বলে তানহা পাগল।

তানহা দৌড়ে বাইরে এসে দেখে প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে। পেছনে তাকিয়ে দেখে অভি আসছে তাই বৃষ্টির মধ্যেই দৌড় দেয়। অভিও হাজার বার বারণ করছে তানহাকে না যেতে কিন্তু কে শোনে কার কথা। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ তানহা কারো সাথে ধাক্কা খায়। সামনে তাকিয়ে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। তানহার বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। আবির শক্ত করে তানহাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।

“আমি পারছি না তানহা। কতো ফোন দিছি তোমায়। ফোন বন্ধ। খুব সকালে চলে এসেছি এখানে দেখলাম তুমি অভির পেছনে যাচ্ছো।

তানহা আবিরকে ছাড়িয়ে দেয়। তানহাও কাঁদছে।

” প্লিজ আবির চলে যাও। এসো না আমার সামনে।

“আমার কি দোষ
তানহার হাত ধরে করুন সুরে বলে আবির। তানহা আবিরের হাতের ওপর হাত দিয়ে বলে
” দোষ আমাদের কপালের। তুমি আর এখন আমার নেই। আমরা বিয়ে করবো সংসার হবে আমাদের এই স্বপ্নটা আর নেই। তোমাকে দেখলে তোমার স্মৃতি মনে পড়লে পাগল হয়ে যায় আমি। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। একটু বেশিই ভালোবাসি তোমায়। তাই সব সময় কথা বলি হাসি। প্লিজ আমাকে এভাবে থাকতে দাও। এসো না আমার সামনে। কষ্ট সয্য হয় না আমার।

কাঁদতে কাঁদতে তানহা আবিরকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। অভি রিকশা নিয়ে এসে তানহার সামনে দাঁড়ায়। তানহা কোনো কিছু না বলে রিকসায় উঠে পড়ে। আবির ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির মধ্যে তানহা আর অভি রিকসায়। দুজনই ভিজে গেছে। বাড়ির সামনে রিকশা থামতেই ভেতরে চলে যায় তানহা। কেউ বাড়িতে নেই। সবাই তানহাদের বাড়িতে গেছে বৌভাত খেতে। তানহা রুমে গিয়ে লাগেজ থেকে জামাকাপড় নিতে গিয়ে দেখে জগটা লাগেজের ওপরে পড়ে আছে। আর ওর সব জামাকাপড় ভিজে গেছে।
“হায় আল্লাহ এখন আমি পড়বো কি?
(তানিশা সুলতানা)
তানহা পা টিপে অভির রুমে চলে যায়। অভি রুমে নেই। রুমে থাকলেও তানহা কথা বলতো না। মন ভালো নেই তানহার। কান্না পাচ্ছে। তাছাড়া পড়বে কি? অভির কাবাড থেকে নীল একটা শার্ট আর টাওজার নিয়ে রুমে চলে আসে। নিজের জামা পাল্টে পড়ে ফেলে। এখন রুমের দরজা বন্ধ করে কাঁদবে। অভি দেখলে আবার রহ্মে নেই।
অভি বেলকনিতে বসে গিটারের টুংটাং শব্দ করছে। তানহা একটা টুল নিচে গিয়ে নিজের বেলকানিতে বসে। অভির গান শুনবে।

আমার আগুনের ছাই
জমে জমে
কতো পাহাড় হয়ে যায়,
আমার ফাগুনেরা দিন
গোনে গোনে
আর উধাও হয়ে যায়,

যতো পথেরি বাধা
সবি তো কালো সাদা
কবে ঠিকানা পেয়ে হবে রঙিন,

চেনা নামেরই ডাকে
আমি কি পাবো তাকে
কবে রে ফিরবে সে রোদেলা দিন,

তোরি তো কাছে চায়
পুরোনো কথা টাই
শুনতে নতুন করে,

এমনও যদি হয়
মনেরা নদী হয়
ভাসাবো অনেক দুরে
(বাকি টুকু পারি না😁)

তানহা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে গানটা মন দিয়ে শুনছিলো। গানটার প্রতিটি সুরে আবিরের হাসি মুখটা ভেসে ওঠে। তানহা এসব মনে করতে চায় না। তাই উঠে অভিকে জ্বালাতে যায়। এই লোকটার পিছনে লাগতে ভাললই লাগে তানহার।

অভি গিটার রেখে পেছনে তাকিয়ে তানহার গায়ে নিজের শার্ট দেখে চোখ বড়বড় করে তাকায়।

” তুমি আমার প্রিয় টিশার্ট পড়েছো।
দাঁত কটমট করে বলে অভি। তানহা কলার পেছনে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে
“কি কিউট লাগছে আমায় তাই না?

” তোমাকে তো আমি

চলবে।