ভালোবাসি তাই পর্ব-০৮

0
996

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৮
#Tanisha Sultana

আকাশের দিকে তাকিয়ে বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আবির। চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। তানহা এবাড়িতে থাকলে লাফালাফি করে বাড়ি মাথায় করপ নিতো। তানহা না থাকাতে পরিবেশটা কেমন নিশ্চুপ। আবিরের ভেতরে আগুন জ্বলছে। এ আগুন থেকে কি কখনোই মুক্তি মিলবে না?
এক ঝটকায় কেমন সবটা পাল্টে গেলো। একদিন হয়ত তানহাও আবিরকে ভুল যাবে।
এসব ভেবেই আবিরের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। আপনাআপনি হাতটা বুকের পা পাশে চলে যায়। ধপ করে বসে পড়ে। কাল ওবদি যে চোখে হাজারটা স্বপ্ন ছিলো আজ সেখানে শুধুই পানি।

কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আবির ভাবে তানহা। খুশি হয়ে পেছনে তাকায়। মায়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখটা মলিন করে আবার সামনে তাকায়। মায়া আবিরের পাশে ফ্লোরে বসে।

“এখানে কেনো এসেছেন?
কর্কশ গলায় বলে আবির। মায়া উঠে দাঁড়ায়।

” আপনি আমাকে একটু বলুন তো কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছি আমি? কেনো আমার সাথে এমনটা হলো? আমি আপনার বউ

আবির রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে
“অধিকার দেখাতে আসবেন না। আপনি সব সময় আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করলে আমি বাধ্য হবো এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে।

মায়া কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। আবির বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে সিগারেট ধরায়।

________

অভি গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আরচোখে তানহাকে দেখছে। অদ্ভুত তানহা আজ কোনো কথা বলছে না। মায়ার মুখটা চোখের সামনে ভাসছে। চোখে পানি জামা হচ্ছে। গড়িয়ে পড়ার আগেই আবার মুছে ফেলছে। অভিকে চোখের পানি দেখানো যাবে না। তাহলে অভি তানহাকে হেংলা ভাববে।

” কোনো কান্না কমপিটিশন আছে না কি?
তানহা ধপ করে অভির দিকে তাকায়।

“তুমি কান্না প্যাক্টিজ করছো তাই বললাম কমপিটিশন আছে কি? থাকলে অবশ্য দ্যা গ্রেট লেজ ছাড়া বাঁদর জিতবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিছুটা টিটকেরি মেরে বলে অভি।

” অবশ্যই জিতবো😎
দ্যা গ্রেট তানহা বলে কথা। বাই দ্যা ওয়ে আমি চুপচাপ আছি আপনি আমাকে খোঁচাচ্ছেন কেনো? আমার ভয়েস না শুনলে ভালো লাগে না বুঝি? নিশ্চয় আমার প্রতি দেওয়ানা হয়ে গেছেন। আমার অবশ্য সমস্যা নেই। সুপার সিঙ্গার বফ হলে আমার ফলোয়ার বাড়বে। তাছাড়াও আমি মেয়ে হিসেবে যেমন তেমন গার্লফ্রেন্ড হিসেবে খুব কেয়ারিং
দাঁত কেলিয়ে বলে তানহা। অভির নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কি দরকার ছিলো বাঁদরের দিকে কলা ছুঁড়ে দেওয়ার?

“আমি একটা স্টুপিট
নিজের কপালে থাপ্পড় দিয়ে বলে অভি। তানহা এক লাফে অভির দিকে অনেকটা এগিয়ে এসে কানের কাছে ফিকফিক করে বলে

” আজকে জানলেন?

অভি তানহার দিকে তাকাতেই তানহা ছিটে বসে পড়ে। আর গান শুরু করে দেয়
“প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই
তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চায়😘

” ইডিয়েট
বিরবির করে কানে হেডফোন গুঁজে নেয়। তানহা জোরে একটা শ্বাস নিয়ে জানালার বাইরে তাকায়। মনে মনে নিয়ত করে নেয় যতদিন না আবিরকে ভুলতে পারবে ততোদিন মানিকগন্জে পা রাখবে না। এই শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আবিরের স্মৃতি। প্রতিটা নিশ্বাস মনে করিয়ে নেয় আবির আর তানহার নেই। বিদায় ভালোবাসা।

অভি বিরক্তি নিয়ে লাগেজ গোছাচ্ছে। ভেবেছিলো আরও কিছু দিন এখানে থেকে যাবে কিন্তু তানহার জন্য এখনই যেতে হবে। কেনোনা তাহনা সেই কখন কাউকে কিছু না বলে ঢাকা চলে গেছে। সেই থেকে তানহার মা আর অভির মা অভিকে ছিঁড়ে খাচ্ছে।

“তুই কিন্তু তানহাকে তোর কাছেই রাখবি। অভির মা বলে

” আম্মু পাগল তুমি? আমি আমার দুইটা ফ্রেন্ডের সাথে থাকি। সেখানে তানহাকে রাখবো কি করে?

“তাহলে তুই তানহাকে নিয়ে অন্য বাসায় উঠবি।
সোজাসাপ্টা বলে দেয়।

” অবিবাহিত ছেলে মেয়েকে তারওপর প্রাপ্ত বয়স্ক তাদের এক সাথে থাকার জন্য কেউ বাসা ভাড়া দেবে না। বিয়ে ছাড়া
বিরক্তি নিয়ে বলে অভি।

“তাহলে বিয়ে করে নে।

” আম্মু যাবে তুমি এখান থেকে
প্রচন্ড রেগে বলে অভি।
এ কোন ঝামেলা। ওই মেয়ে যেখানে থাকবে সেখান দিয়ে ছোটমোট একটা টনেডো বয়ে যাবে। একেই এখন অভিকে সামলাতে হবে। কপাল

ঢাকা ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তানহা। একহাতে পার্স আরেক হাতে লাগেজ। আশিককে অভি ফোন করে বলেছে তানহার পিছু নিতে। তানহা আশেপাশে ভাড়া নেওয়ার জন্য বাড়ি খুঁজছে।

” তানহা

তানহা আশিককে দেখে খুশি হয়। এই অচেনা শহরে কাউকে তো পেলো চেনা।

“আশিকদা তুমি

” হ্যাঁ আমি ও ওই খানে থাকি।

“আমাকে একটা বাড়ি খুঁজে দাও না

” আমার কাছে একটা বাড়ি আছে যেটা ভাড়া দেওয়ার জন্য পোস্টার ছাপিয়েছে

“কোথায় নিয়ে চলেন

আশিক তানহাকে নিয়ে যায়। বাড়িওয়ালার সাথে আশিক কথা বলে মেনেজ করে নেয়। এক তালা একটা বিল্ডিং। ছোট একটা রুম। একটা খাট খুব ছোট, আর একটা কাঠের আলমারি, রান্না ঘরটা আরও ছোট, একটা ওয়াশরুম। ভালোই পরিষ্কার রুমটা। খাটে একটা তোষক একটা বালিশ আর পাতলা একটা কম্বল৷ তানহা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো

” তানহা পছন্দ হয়েছে?

“খুব

” তোমার জানালা দিয়ে আমার বাসাটা দেখা যাচ্ছে। ওখানেই আমরা থাকি কোনো দরকার হলে ডেকো

“আচ্ছা।

আশিক চলে যায়। তানহা জামাকাপড় আলমারিতে ভরে নেয়। হাড়ি পাতিল সব আছে। তানহার ভাড়া বাড়ির বেপারে কোনো আইডিয়া নেই। তাই বুঝতেই পারলে না কেউ একজন এগুলে সব দিয়েছে। তানহা ভাবে এসব হয়ত সব ভাড়া বাড়িতেই থাকে।

তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। গোছল সেরে খাওয়ার ব্যবস্থা করবে। ওয়াশরুমে সাওয়ার নেই টিউবওয়েল। সাথে বালতি আর মগ। কল চেপে পানি বের করে গোছল সেরে নেয়। জামাকাপড় ছেড়ে তোয়ালে পড়ে রুমে আসে। ওয়াশরুমে জামাকাপড় চেঞ্জ করার অবস্থা নেই। রুমে এসে দেখে অভি খাটে বসে হা করে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে। তানহা চোখ বড়বড় করে ফেলে। অভি তানহার জামাকাপড়ের ওপর বসে আছে।

” আপনি
কিছুটা জোরে বলে তানহা। অভি হা করে তাকিয়ে আছে। কেমন নেশা নেশা লাগছে। তানহার বুক টিপটিপ করছে। ওখান থেকে জামা নেবে কিভাবে ভাবছে। অভি এক পা একপা করে তানহার দিকে এগোচ্ছে।

“কাছে আসবেন না একদম
কাঁপাকাঁপা গলয় বলে তানহা। তানহার কথা অভির কান ওবদি পৌছায় না। অভি তানহার খুব কাছে চলে আসে। তানহার কোমর জড়িয়ে ধরে মুখটা এগিয়ে নেয় তানহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। অভি এক হাতে তানহার দুই হাত ধরে আছে।
” কেনো কাছে আসবো না
ফিসফিস করে বলে অভি।

চলবে।