ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-০১

0
522

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#Raiha_Zubair_Ripte
#সূচনা_পর্ব

বড় বোনের শশুর বাড়িতে এসে যে বড় বোনের দেবরের সাথে এভাবে নিজের বিয়ের কথা শুনবে তা কস্মিনকালেও ভাবতে পারে নি সুহাসিনী।
আজ বাবা মায়ের সাথে তার বোনের শশুর বাড়ি এসেছে সুহাসিনী। কাল সুখবর পেয়েছে তার বোন মা হতে চলছে। খালামনি হতে চলছে খবর টা পেয়েই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে সুহাসিনী। কিন্তু এসে যে এমন এক কথা শুনবে ঘুনাক্ষরে জানলে কখনোই আসতো না এ বাড়ি।

সোফার অপর পাশে বসে থাকা রুদ্রর দিকে একবার তাকায় সুহাসিনী। লোকটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে ফোনে কিছু একটা দেখছে। এখানে যে তার বিয়ের কথা চলছে সেটা যেনো তার কান অব্দি পৌঁছায় ই নি।

লুৎফর রহমানের ছোট ছেলের সাথে তার ছোট মেয়ের বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাবে রফিক সাহেব ও ভাবতে পারে নি, ড্রয়িং রুমে বসে আছে দুই পরিবার।

” রফিক সাহেব আপনার বড় মেয়ের পাশাপাশি আপনার ছোট মেয়েকেও আমি আমার ছোট ছেলের বউ করে নিতে চাইছি আপনার কি কোনো আপত্তি আছে?

রফিক উদ্দিন ভরকে যায় লুৎফর রহমানের কথা শুনে সেই সাথে রফিক সাহেবের ছোট মেয়ে সুহাসিনী ও। এসেছে বোনের বাচ্চা হবে সেই নিউজ শুনে আর এসে কি না নিজের বিয়ের নিউজ শুনতে হচ্ছে তার।

সুভাষিণী খুশি হয় শশুরের এমন প্রস্তাব শুনে। তার বোন এখন থেকে তার সাথেই থাকবে।

সুভাষিণী ও সুহাসিনী মেয়ে দুটো রফিক সাহেবের ভীষন আদরের। লুৎফর রহমানের প্রস্তাব টা তার বেশ ভালো লেগেছে। দু মেয়ে তার একই বাড়িতে থাকবে। নিঃসন্দেহে লুৎফর রহমানের ছেলে দুটো বেশ ভালো। কিন্তু রফিক সাহেব এখন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

রোমেলা রহমান রুদ্রর মা সুহাসিনীর পাশে বসে। মাথায় হাত রাখে। সুহাসিনী কে তার বেশ পছন্দ। মেয়েটা সবসময় চুপচাপ থাকে। এ বাড়িতে তার আসা যাওয়ার আনাগোনা খুবই কম। হঠাৎ করে হয়তো বছরে একবার বাবা মায়ের সাথে আসে এ বাড়িতে। কিন্তু কখনো রাত থাকে নি। কত বলে কইয়েও মেয়ের বাবা মাকে থাকতে রাজি করালেও মেয়ে কে রাজি করাতে পারে নি।

রফিক সাহেব কে কিছু বলতে না দেখে লুৎফর রহমান আবার বলে উঠে,,

” ভাই আপনি কি রাজি না এই প্রস্তাবে?

” না না ভাই তেমন টা না, আসলে মেয়ে আমার তো এখনো ছোট। উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি এখনো পার করে নি। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে!

” আমরা না হয় ওদের আকদ টা করিয়ে রাখি সপ্তাহখানেকের মধ্যে। পরে না হয় এক সময় বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেলবো সুহাসিনীর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলে।

” তা অবশ্য করাই যায়।

সুহাসিনী বাবার সম্মতি দেওয়া দেখে অবাক হয়। তার মতামত তো কেউ নিচ্ছে না। সবাই শুধু নিজেদের মতো করে বলে যাচ্ছে। সুহাসিনীর মা সুমনা মেয়ের দিকে তাকায়। মেয়ের চোখে অসহায়ত্ব। চোখের ইশারায় স্বামিকে কিছু বলেন সুমনা। রফিক সাহেব স্ত্রীর ইশারা পেয়ে একবার মেয়ের দিকে তাকায়। সুভাষিণী কে চোখের ইশারায় সুহাসিনী কে উপরে নিয়ে যেতে বলে। এখন বড়দের মধ্যে তাদের থেকে লাভ নেই। সুভাষিণী বোন কে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসতে নিলে সহসা রুদ্র মাথা তুলে তাকায়। চোখাচোখি হয় সুহাসিনী আর রুদ্রের। সুহাসিনী রুদ্রর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। চোখ সরিয়ে নেয় সুহাসিনী। রুদ্র নড়েচড়ে বসে আবার মোবাইলে মুখ গুঁজে।

লুৎফর রহমান স্বস্তি পায়। ছেলের দিকে তাকাতেই দেখে ছেলে তার মোবাইলে মুখ গুঁজে রেখেই স্মিত হাসছে। অবশেষে ছেলের ইচ্ছে পূরণ করতে পারলো।

” তাহলে আর কি পরপর দুটো গুড নিউজ সেই খুশিতে ডাবল সেলিব্রেট তো বানতা হে তাই না বাবা।

বড় ছেলের মুখে এমন কথা শুনে সবাই হেসে উঠে।
সুভাষিণীর শাশুড়ী রোমেলা রহমান মিষ্টির প্লেট এগিয়ে দেয়। লুৎফর রহমান প্লেট থেকে মিষ্টি নিয়ে রফিক সাহেবের মুখে তুলে দেয়।

” নিন ভাই মিষ্টি মুখ করুন এক নানা হওয়ার খুশিতে আর দ্বিতীয় আবার বেয়াই হতে যাওয়ার খুশিতে।

রফিক সাহেব প্রশান্তি পায়।গলা ঝেড়ে বলে,,

” বলছিলাম লুৎফর সাহেব আমরা তো রাজিই কিন্তুু মেয়ে? তার তো সম্মতি প্রয়োজন।

” হুমম তা তো অবশ্যই।

.

সুহাসিনী তার বোনের রুমে বসে আছে। সে কিছুতেই রাজি না এই বিয়েতে। সুভাষিণী হাঁপিয়ে উঠেছে বোনকে রাজি করাতে করাতে। তার বোন নাছোড় বান্দা সে রাজি হবে না। অগ্যতা সুভাষিণী হাল ছেড়ে দেয়। দরজার ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে রুদ্রর আওয়াজ আসে।

” ভাবি দরজাটা খুলুন। সুহাসিনীর সাথে কথা আছে। আপনার বোন নাকি বিয়েতে রাজি না!

সহসা কেঁপে উঠে সুহাসিনী। সুভাষিণী তপ্ত শ্বাস ফেললো। রুদ্র কে প্রচুর ভয় পায় সুহাসিনী। সবাই আহত হয়েছে সুহাসিনীর এমন কথা শুনে। সবাই ভেবেছিল তাদের মতামত কে সুহাসিনী মেনে নিবে কিন্তু না সে অমত জানিয়েছে বিয়েছে। সুভাষিণী দরজা খুলার জন্য উদ্যত হলে সুহাসিনী সুভাষিণীর হাত ধরে ফেলে।

” আপু প্লিজ দরজা খুলে না।

সুভাষিণী হাত ছাড়িয়ে নেয়।

” কেনো খুলবো না। তুই রাজি না কেনো বিয়েতে, রুদ্র কি খারাপ ছেলে?

সুহাসিনী মাথা নাড়ায় যার অর্থ রুদ্র খারাপ ছেলে নয়।

” তাহলে?

” উনি খুব রাগী আপু।

” তাতে কি?

” আমার ভীষন ভয় করে তাকে।

সুভাষিণীর রাগ হয় বোনের প্রতি সামান্য রাগী দেখে রুদ্র কে বিয়ে করবে না! সুভাষিণী সুহাসিনীর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলে দেয়। হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে রুদ্র। সুভাষিণী বাহিরে বেড়িয়ে আসে। দরজা আটকে দেয় রুদ্র। সামান্য বাহিরে গিয়েছিল একটু দরকারে তার বাবা ফোন দিয়ে জানায় সুহাসিনীর মত নেই বিয়েতে। রাগে রুদ্রর চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। নিজের রাগ সুহাসিনীকে দেখাতে চায় না। ধির পায়ে সুহাসিনীর সামনে দাঁড়ায়। সুহাসিনী ভয়ে সিঁটিয়ে আছে।

” আমাকে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায় তোমার সুহাসিনী?

সুহাসিনী আরো জড়োসড়ো হয়ে বসে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। সুহাসিনী কে কিছু বলতে না দেখে আবার জিজ্ঞেস করে,,

” বাড়ির সবাই কে মানা করেছো কেনো যে বিয়ে তুমি করবে না?

তবুও নিশ্চুপ সুহাসিনী কি বলবে যে সে রুদ্র কে ভয় পায় তাই বিয়ে করবে না! রুদ্র শত চেষ্টা করেও রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে না। এবার কিছুটা জোরেই বলে উঠে,,

” বোবার মতো চুপ হয়ে আছো কেনো? কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমায়। হয় কিছু বলবে আর তা না হলে এখন যেভাবে চুপ হয়ে আছে ঠিক সেভাবেই চুপচাপ বিয়ে করবে।

ভয়ে সুহাসিনী ছোট্ট দেহটি কেঁপে যায়।

” এতো কেঁপে উঠো কেনো? জাস্ট একটা রিজন বলো আমায় বিয়ে কেনো করতে চাইছো না? আমি দেখতে খারাপ?নাকি আমার মধ্যে কোনো পার্সোনালিটি নেই তোমায় বিয়ে করার? নাকি রুদ্র নিজ থেকে তোমায় বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে তাই এতো দ্বিমত।

এবার কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে সুহাসিনী কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,

” তেমন টা না আপনাকে ভয় লাগে আমার। আপনার সাথে যতোবার কথা হয়েছে ততোবারই আপনি রাগান্বিত হয়ে কথা বলেছেন যা আমার নরম হৃদয়ে অনেকটা প্রভাব ফেলেছে।

রুদ্র অবাক হয়। তার রাগকে ভয় পায় এর জন্য বিয়ে করবে না।

” শুধু এই ব্যাপার টার জন্য বিয়ে করতে চাইছো না?

সুহাসিনী মাথা নাড়ায়।

” আচ্ছা বেশ,এখন থেকে আমি এমন কোনো কথা বা এমন কোনো ব্যাবহার করবো না যাতে তোমার নরম হৃদয়ে কোনো প্রভাব ফেলে। চলবে?

সুহাসিনী নিশ্চুপ কি বলবে ভেবে পায় না। একটা মানুষ এতো নিশ্চুপ থাকতে পারে সুহাসিনী কে না দেখলে জানতেই পারতো না রুদ্র। তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।

” নিচে গিয়ে বলবে তোমার কোনো আপত্তি নেই বিয়ে তে বুঝছো? যাও।

সুহাসিনী নড়ে না। সুহাসিনী কে নড়তে না দেখে রুদ্র নিজেই রুম থেকে বেরিয়ে সুভাষিণী কে বলে,,

” ভাবি সবাইকে বলুন সুহাসিনী রাজি বিয়েতে। তার কোনো অমত নেই । আর আমি এখনই আকদ করতে চাই বাবা কে জানিয়ে দিবেন।

কথাটা বলে একবার পেছন ফেরে সুহাসিনী কে দেখে হনহন করে চলে যায়। সুহাসিনী অবাক হয়। বলেছিলো তো সপ্তাহ খানেক বাদে এনগেজমেন্ট হবে তাহলে এখন কেনো? সুহাসিনী টলমল চোখে তাকায় সুভাষিণীর দিকে।

#চলবে?