ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব-১৫

0
287

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_১৫
#লেখক_দিগন্ত
মাহিন ও বিদিশা বাড়ি ফিরে আসে। তবে তারা একা আসে না সাথে করে মিরাজ এবং রেবাকেও ফিরিয়ে আনে। আব্দুল্লাহ চৌধুরী,মিতালি চৌধুরী সবাই বেশ অবাক হয় রেবাকে দেখে।

আব্দুল্লাহ চৌধুরী রেবাকে দেখে মিরাজকে প্রশ্ন করে,
-“এই মেয়েটা কিভাবে ফিরে এলো। ও তো হারিয়ে গিয়েছিল।”

মিরাজ বলে,
-“ও হারিয়ে যায়নি আব্বু। ওকে হারিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। আর এই কাজ কে করেছে জানো? সামায়রা। তোমার বন্ধুর আদরের মেয়ে।”

-“এসব কি বলছিস তুই? সামায়রাকে শুধু শুধু কেন দোষারোপ করছিস। মেয়েটাকে তো যথেষ্ট কষ্ট দিয়েছিলি। সামায়রা তোকে কত ভালোবাসত। তোকে বিয়ে করার জন্য আমার পায়ে পর্যন্ত পড়েছিল। কিন্তু তুই এই মেয়ের নেশায় পড়ে সামায়রাকে ফিরিয়ে দিলি। তারপর এখন সামায়রা যখন বিয়ে করে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছে তখন তুই এরকম করছিস ছি!”

-“তোমাকে আমি কিছু বলবোনা আব্বু৷ তুমি কখনো আমাকে বুঝতে চাওনি। আম্মু তুমি তো আমায় বিশ্বাস করো তাইনা?”

মিতালি মাথা নাড়ায়। বলে,
-“আমি সবসময় তোর পাশে ছিলাম এবং থাকব মিরাজ। তুই আমার থেকে অনুমতি নিয়েই তো রেবাকে বিয়ে করেছিলি। আমি তো নিজের চোখে তোকে রেবার জন্য তড়পাতে দেখেছি। আমি তোর কষ্টটা বুঝি।”

আব্দুল্লাহ চৌধুরী খুব রেগে যান কথাটা শুনে। বলেন,
-“তারমানে তুমি সব জানতে। ইচ্ছে করে ঐ মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিয়েছিলে।”

সবাইকে এরকম কথা বলতে দেখে বিদিশা বুঝতে পারে এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের ঝামেলা হবে। তাই বিদিশা বলে,
-“আমাদের নিজেদের মধ্যে এরকম ঝামেলা করে তো লাভ নেই। বাবা আপনি একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আমি আপনাকে বুঝদার মানুষ বলেই জানতাম। আমি আর মাহিনও তো আপনাদের কিছু না জানিয়ে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু আপনি তো আমাদের বিয়েটা মেনে নিয়েছিলেন। এমনকি মিরা আমার রূপ নিয়ে খোটা দেওয়ায় আপনি বলেছিলেন প্রত্যেক মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি তাই আমাদের উচিৎ নয় কাউকে নিয়ে মজা করা। তাহলে সেই আপনি কেন আপনার বড় ছেলের বিয়েটা মেনে নিতে পারছেন না?”

আব্দুল্লাহ চৌধুরী কিছু বলার আগেই মিরাজ বলে ওঠে,
-“বুঝলে না আসল কারণ কি? তোমার বাবা তো অনেক বড়লোক। তার একমাত্র মেয়ে তুমি। এই বিয়ের ফলে তাই উনি লাভবান হয়েছেন। অন্যদিকে রেবার বাবা তো মধ্যবিত্ত। তাই রেবাকে উনি মেনে নিতে চান না। আসলে ওনার কাছে টাকাই সব।”

আব্দুল্লাহ চৌধুরী রেগে গিয়ে বলেন,
-“মুখ সামলে কথা বলো। ভুলে যেওনা আমি তোমার বাবা।”

-“সেটা ভুলে যাইনি জন্য এখনো অব্দি আপনাকে সম্মান করছি।”

মাহিন নিজের বাবা-ভাইয়ের এসব ঝগড়া দেখে বিরক্ত হয়ে যায়। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,
-“এসব ঝগড়া ঝামেলা করে তো কোন লাভ নেই। আজ তো আমাদের খুশির দিন। রেবা ভাবি ফিরে এসেছে। এই বাড়ির বউ উনি। আজকের দিনে এসব ঝগড়া করা ঠিক নয়। আব্বু তুমি তো দেখেছ রেবা ভাবি চলে যাওয়ার পর ভাইয়া কতটা ভেঙে পড়েছিল। তুমি কি চাও ভাইয়া আবার সেরকম হয়ে যাক? নিশ্চয়ই না। তাই তুমি রাজি হয়ে যাও।”

-“ঠিক আছে। তোমরা যা ভালো মনে করো।”
_____________
মিরাজ এসেছে সামায়রার শ্বশুরবাড়িতে তার মুখোমুখি হয়ে তাকে সবকিছু জিজ্ঞাসা করতে। তবে এখানে এসে মিরাজ যা দেখে সেটা ভাবতেও পারেনি। মিরাজ ভেবেছিল সামায়রা হয়তো অনেক সুখে আসে কিন্তু এখানে এসে দেখছে তার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

সামায়রার স্বামী ল*ম্পট। অনেক মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক। সামায়রাকে প্রতিদিন মা*রধর করে। সামায়রা শুধু নিজের ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করে আছে। সামায়রার এই অবস্থা দেখে মিরাজের খুবই খারাপ লাগে।

তবুও মিরাজ সামায়রার মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন করে,
-“কেন করেছিলে আমার সাথে এমন? আমার রেবাকে আমার থেকে আলাদা কেন করেছিলে?”

সামায়রা কেঁদেই দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-“ভুল করেছিলাম আমি, অন্যায় করেছিলাম। আমি প্রতিহিংসার বশে এমন করেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমি যখন তোমাকে পাবোনা তখন রেবাকেও তোমার কাছে থাকতে দেব না। আজ দেখ আমি আমার কাজের উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছি। দুইমাস আগে আমার বাবার কোম্পানির লস হয়ে তিনি দেওলিয়া হয়ে গেছেন। তারপর থেকে আমার স্বামীর আসল রূপ আমার সামনে আসে। সে আমার উপর অকথ্য অত্যাচার করতে শুরু করে। আমি বুঝতে পারছি এসব আমার করা অন্যায়ের ফল। মানুষ ঠিকই বলে কারো সাথে অন্যায় করলে কখনো নিজের সাথে ভালো হয়না। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। দেখো তুমি আজ আল্লাহ আমার কাজের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে। তোমাকে, রেবাকে দেওয়া কষ্টের ফল এখন আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।”

-“জানি তুমি আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছ তবুও আমি চাইব তোমার সব সমস্যা যেন দূর হয়ে যায়। আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা চাও, তিনি ক্ষমাশীল। নিশ্চয়ই তিনি তোমাকে ক্ষমা করে দেবেন। যদি তুমি অনুতপ্ত হয়ে থাকো তাহলে আমি আর তোমাকে কিছু বলব না। ভালো থেকো।”
__________
এক সপ্তাহ পেরিয়ে যায় রেবার বাড়িতে ফিরে আসার। এই দুদিনে রেবা ও বিদিশার অনেক ভাব হয়ে গেছে। বিদিশা রেবাকে বড়বোনের মতো দেখে। রেবাও বিদিশাকে ছোটবোনের মতোই স্নেহ করে।

মিতালি এখন অনেক আরামে আছে। দুই বউয়ের সেবা যত্নে তার দিন ভালোই যাচ্ছে। যদিও বাড়িতে রান্না করার জন্য লোক আছে তবে রেবা রান্না করতে পছন্দ করে তাই মাঝেমধ্যেই রান্না করে। বিদিশাও রেবার থেকে কিছু রান্না শিখে নেয়।

রেবা বিদিশা বসে গল্প করছিল। কথায় কথায় বিদিশা রেবাকে প্রশ্ন করে,
-“তুমি এত সুন্দর হলে কিভাবে বলোতো?”

রেবা হেসে ফেলে বিদিশার এমন কথা শুনে। বলে,
-“তুমিও তো অনেক সুন্দর বিদিশা।”

-“ধুর কি যে বলো না। আমি আর কোথায় সুন্দর। দেখছো না আমার চেহারা কেমন হাতির মতো।”

-“এমন কথা বলা কিন্তু ঠিক না বিদিশা। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকেই উত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছে। আমাদের উচিৎ তার সকল সৃষ্টিকে সম্মান করা।”

-“সেটা তো জানি আমি। কিন্তু আমিও চাই তোমাদের মতো স্লিম হতে। আমার কেন জানিনা মনে হয় আমাকে মাহিনের পাশে মানায় না। যদিও উনি কখনো মুখ ফুটে এমন কথা বলেলনি…”

-“আচ্ছা বুঝলাম। তুমি একটা কাজ করো। নিয়মিত এক্সারসাইজ করো, ডায়েট মেইনটেইন করো। তাহলে কাজ হবে ইনশাআল্লাহ।”

-“দেখি কি করা যায়।”
_______________
মাহিন রাতে বাড়িতে ফিরে বিদিশাকে রুমে না দেখে অবাক হয়ে যায়। চারপাশে খোঁজ করে। অবশেষে ছাঁদে গিয়ে দেখে বিদিশা ব্যায়াম করছে। বিদিশা হাত দিয়ে পা স্পর্শ করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। বিদিশাকে এমন করতে দেখে মাহিন তাকে সাহায্য করতে আসে। বলে,
-“শুনলাম বিকাল থেকে তুমি এমন করছ। হাফিয়ে গেছো তো। এত বেশি ব্যায়াম করা কিন্তু ভালো নয়।”

-“আমি তো…”

-“আমি জানি তুমি স্লিম হতে চাও। কেন স্লিম হতে চাও সেটাও জানি। কিন্তু বিশ্বাস করো তুমি যেমনই হোক আমার চোখে তুমিই সবথেকে বেশি সুন্দর। তুমি যদি স্লিমও হয়ে যাও তাহলেও আমি তোমাকে এতটাই ভালোবাসব যেমন এখন বাসি। তাই তুমি নিজেকে এত কষ্ট দিওনা। নিচে চলো। আমি তোমার জন্য তোমার ফেভারিট বিরিয়ানি এনেছি।”

-“কি বিরিয়ানি!!! আমার প্রি…না আমি খাবোনা। আমি এখন ডায়েটে আছি।”

-“ঠিক আছে তুমি ডায়েট করতে থাকো। আমি বিরিয়ানি খেয়ে শেষ করি। তারপর তুমি স্লিম হয়ো আর আমি নাহয় ফ্যাট হবো। তোমার মোটা বর পছন্দ হবে তো?”

-“কি যে বলোনা তুমি। চলো যাচ্ছি আমি।”
(চলবে)