ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব-১৬+১৭

0
303

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_১৬
#লেখক_দিগন্ত
মিরার দিন আজকাল ভালো যাচ্ছে না। লাবণী এখনো সেইদিনের ঘটনার জন্য রাগ করে আছে। মিরা নিজেও এখন অনুতপ্ত। মিরা আজ ঠিক করে নিয়েছে লাবণীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে।

যেই ভাবা সেই কাজ। মিরা আজ ভার্সিটিতে এসেই সবার আগে লাবণীর খোঁজ করতে থাকে। লাবণীকে খুঁজতে গিয়ে এমন এক আপত্তিকর দৃশ্যের সাক্ষী হয় সে যা কখনো ধারণাই করতে পারেনি!

সাগর ও লাবণীকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলে মিরা। সে শুনতে পায় তাদের কিছু কথোপকথন। লাবণী বলছিল,
-“আমি কেমন দিলাম বলো? ঐ মিরাকে সেদিন সবার সামনে অপমানিত হতে দেখে এত শান্তি লেগেছিল যে কি বলব। আমি তো এই কারণেই নিহান স্যারকে নিয়ে গিয়েছিলাম। শেষপর্যন্ত দেখো আমার উদ্দ্যেশ্য কিভাবে পূরণ হলো।”

-“তোমার প্রশংসা যতই করি কম হয়ে যাবে। আমি ভেবেছিলাম এলিনা আমার কাজে লাগবে, এখন তো দেখছি এলিনার থেকে তুমি বেশি কাজের।”

মিরা স্তব্ধ হয়ে যায় এসব কথা শুনে। আজ আবার অনেক বেশি ধোকা খেয়ে গেল মেয়েটা। মিরা হাততালি দিতে দিতে এগিয়ে যায় ওদের দিকে। সাগর ও লাবণী মিরার উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাবড়ে যায়।

মিরা সরাসরি লাবণীর সামনে যায়। লাবণী কিছু বলতে যাবে তার আগেই লাবণীকে ঠা*স করে থা*প্পড় মা*রে। লাবণী হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

মিরা বলে,
-“আমি তোর কাছ থেকে এটা আশা করিনি লাবণী। তোকে নিজের বন্ধু ভেবেছিলাম আর তুই এমন পিছন থেকে ছু*রি মা/রলি। কেন করলি আমার সাথে এমন?”

লাবণী ক্ষেপে যায়। মিরার চু*লের মুঠি ধরে বলে,
-“যা করেছি একদম ঠিক করেছি৷ তুই কি ভেবেছিস তুই একা সাগরকে ভালোবাসিস? না শুধু তাই না আমিও সাগরকে পছন্দ করতাম। এই কারণে সাগরের জন্য তোর পাগলামি আমি সহ্য করতে পারতাম না। আমি সাগরকে নিজের করে পাওয়ার জন্য নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত বুঝলি?”

মিরা শুধু অবাক হয়ে কথাগুলো শুনতে থাকে। নিজের প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর কাছে এই ধোকা তার প্রত্যাশা ছিল না। মিরার চোখ বেয়ে নোনাজল পড়তে থাকে।

এরমধ্যে নিহান সেখানে চলে আসে। লাবণীকে মিরার চু*ল এভাবে ধরে রাখতে দেখে বলে,
-“কি করছ এসব? এটা ভার্সিটি, মা*রামারি করার যায়গা নয়। এসব করতে হলে বাইরে গিয়ে করো যাও।”

নিহানকে দেখে লাবণী মিরার চুলের মু*ঠি ছেড়ে দেয়। কিন্তু যাওয়ার আগে বলে যায়,
-“তুই ভাবিস না তোকে ছেড়ে দেব। আমি আর সাগর মিলে তোর সর্বনাশ করেই ছাড়ব। তোর জন্য আমার সাগরকে জেলে যেতে হয়েছিল। এবার দেখ আমরা তোর কি অবস্থা করি।”

লাবণী যাওয়ার পর নিহান এসে মিরার মুখোমুখি দাঁড়ায়। জিজ্ঞাসা করে,
-“তুমি এভাবে কাঁদছ কেন? কি সমস্যা হয়েছিল তোমাদের মাঝে?”

মিরা চোখের জল মুছে বলে,
-“যাদের আমরা খুব কাছের মনে করি তারা যখন আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন খুব খারাপ লাগে। যদিও আমি এসবই ডিজার্ভ করি। আমার মতো মানুষের সাথে এমনই হওয়া উচিৎ।”

মিরার এই অবস্থা দেখে নিহান বলে,
-“এভাবে কাঁদলে কোনকিছুরই সমাধান হবে না। তুমি যদি ভালো থাকতে চাও এসব বিশ্বাসঘাতকদের ভুলে যাও। নিজেকেও শোধরানোর চেষ্টা করো। একজন শিক্ষক হিসেবে এটা আমার পরামর্শ।”

বিপদের সময় প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় পাওয়া যায়। মিরার ক্ষেত্রেও তাই হলো। আজ বিপদেই সে তার প্রকৃত বন্ধুর দেখা পেল। নিজের আগের করা কৃতকর্মের জন্য লজ্জিতও মিরা। নিহান চলে যেতে নিলাম মিরা পেছন থেকে তার নাম ধরে ডাকে। নিহান তাকাতেই মাথা নিচু করে বলে,
-“সেদিনের ঘটনার জন্য আমি সত্যি খুব দুঃখিত স্যার। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন প্লিজ। আমি আসলে সেইসময় সবার এরকম কথা শুনে নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি তাই.. ”

-“রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে। আর একটা কথা মনে রাখবে। ব*ন্দুকের গু*লি আর মুখ থেকে বের হওয়া কথা একবার বেরিয়ে গেলে আর ফিরিয়ে নেওয়া যায়না। তুমি কথার মাধ্যমে যখন কাউকে খুব আঘাত করবে তখন সে মুখে ক্ষমা করে দিলাম বললেও তার মনের ক্ষত কিন্তু সহজে দূর হবে না। তাই কোন কথা বলার আগে ভালো করে ভাবনা চিন্তা করে তারপর বলবে।”

কথাগুলো বলে নিহান চলে যায়। মিরা নিহানের যাওয়ার পানেই তাকিয়ে থাকে। আজ নিহানের কথাগুলো শুনে খুব ভালো লাগল তার। এই প্রথম কারো ব্যক্তিত্ব মিরাকে আকর্ষিত করল।
______________
চৌধুরী বাড়িতে চাঁদের হাট বসেছে। আজ আব্দুল্লাহ চৌধুরী ও মিতালি চৌধুরীর ৩০ তম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে গোটা বাড়িতে সাজসাজ রব। পরিবারের সবাই এখানে উপস্থিত শুধুমাত্র মিরা ছাড়া।

মুখে না বললেও সবাই মিরার অনুপস্থিতিতে তাকে মিস করছিল। বিদিশা মাহিনকে বলে,
-“আজকের দিনটা আর মন খারাপ করে থেকো না। আজ দেখো আমাদের পরিবারের সবাই কত খুশি, কত আনন্দে আছে। শুধুমাত্র মিরাই এখানে নেই। মেয়েটা তো যথেষ্ট শাস্তি পেয়েছে এই কয়দিনে। এখন তুমি যাও ওকে নিয়ে এসো।”

-“কিন্তু বিদি…”

-“কোন কিন্তু নয়। আজকের দিনে যখন পরিবারের সবাই এত আনন্দ করছে তখন তোমার বোন কেন সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে? সেও তো এই পরিবারের সদস্য।”

-“ঠিক আছে আমি যাচ্ছি মিরাকে আনতে।”

মাহিন যাওয়ার আগেই মিরা বাড়িতে প্রবেশ করে। মিরাকে দেখে সবাই বেশ অবাক হয়। মিরা মুখে একরাশ হাসি টেনে বলে,
-“তোমরা আমাকে ছাড়াই এভাবে সেলিব্রেশন করবে? আমি কিন্তু আজকের দিনটা ভুলিনি।”

মিরা এগিয়ে গিয়ে নিজের মা-বাবার কাছে গিয়ে বলে,
-“শুভ বিবাহ বার্ষিকী আব্বু আম্মু। তোমরা যেভাবে সুখে দুঃখে একসাথে ৩০ বছর কা*টিয়ে দিলে আগামী ৫০ বছর এভাবেই সুখে শান্তিতে থাকো৷”

মিতালি চৌধুরী মিরাকে বুকে টেনে নেয়। কিন্তু আব্দুল্লাহ চৌধুরী তাকে দেখেও না দেখার ভান করে। মিরা তার বাবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“আমার উপর মন খারাপ করে থেকো না আব্বু। আমি জানি আমি ভুল করেছি। কিন্তু এখন আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছি। তুমি ঠিক বলো কোন মানুষকেই তার চেহারা দেখে জাজ করা উচিৎ নয়। আমি তো খুব বোকা ছিলাম তাই কিছু মানুষের কথায় নেচে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েছিলাম।”

মিরা এবার চলে আসে বিদিশার সামনে। বিদিশার হাত ধরে বলে,
-“আমি তোমার কাছে সবথেকে বড় দোষী ভাবি। আমি তোমার কাছে আমার করা সব অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাইছি। প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

বিদিশা মিরাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। বলে,
-“তুমি যে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছ এটাই অনেক।”

-“আমি যথেষ্ট শিক্ষা পেয়েছি ভাবি। জানি তোমাকে যেই কষ্ট দিয়েছি আজীবন চাইলেও সেটা ফিরিয়ে নিতে পারব না। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি ভবিষ্যতে কখনো তোমার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করব না। ভাবির সম্মান আর ভালোবাসা দেব তোমায়।”

আব্দুল্লাহ চৌধুরী এগিয়ে এসে মেয়ের মাথায় হাত রাখেন। মাহিন প্রশ্ন করে,
-“আচ্ছা এত রাতে তুই একা এলি কিভাবে?”

মিরা মুচকি হেসে বলে,
-“একা আসিনি তো। উনি এসেছেন আমার সাথে। কথাটা বলেই নিহানের দিকে ইশারা করে।”

নিহানকে আজ মিরা বলেছিল এখানে নিয়ে আসতে। নিহানও মিরার কথা মতো তাকে নিয়ে আসে।

সবাই একসাথে কেক কে°টে সেলিব্রেশন করে। মিরা মিরাজ আর রেবাকে দেখে বলে,
-“তোমাদের জন্য আমি খুব হাসি৷ সবসময় এরকম হাসিখুশি থেকো।”
_____________
পরের দিন ভার্সিটিতে আসামাত্রই লাবণী এলিনা সহ আরো কয়েকজন মিরাকে ঘিরে ধরে। লাবণী আর এলিনা কোন কথা ছাড়াই মিরাকে অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকে। মিরা প্রশ্ন করে আমার সাথে এমন করছ কেন?

তখন লাবণী বলে,
-“তোর মতো খারাপ মেয়ের সাথে এরথেকে ভালো ব্যবহার করা যায়না। তুই স্যারেদের সাথে বি*ছানায় শু*য়ে পরীক্ষায় পাস করিস।”

নিজের সম্মন্ধে এত নিচু মানের কথা শুনে লজ্জায় অপমানে মিরা মাথা নামিয়ে ফেলে।

মিরা প্রতিবাদ করে কিছু বলার আগেই কয়েকজন মিলে তার মুখে কালি লেপে দেয়। তারপর গলায় জু*তার মালা পড়িয়ে দেয়। মিরা জীবনে এত অপমানিত হয়নি। আজ তার খুলে কান্না পাচ্ছে।

দূর থেকে দাঁড়িয়ে এসব দেখে হাসছে সাগর। বলছে,
-“আজ তোর বোনকে দিয়ে তোর উপর শোধ তুলব মাহিন।”
(চলবে)

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_১৭
#লেখক_দিগন্ত
মিরা যখন বিপদের মধ্যে ছিল তখন নিহান চলে আসে তার ত্রাণকর্তা হয়ে। নিহান এসে সেখানে উপস্থিত সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
-“এখানে তোমরা কি করছ এসব? একটা মেয়ের উপর এরকম অত্যাচারের কারণ কি?”

লাবণী বলে,
-“আপনি আর বেশি কথা বলবেন না। আপনার চরিত্র কেমন সেটা আমাদের জানা হয়ে গেছে। টিচার হয়ে স্টুডেন্টদের সাথে…ছি ভাবতেও লজ্জা করে।”

-“তোমরা মুখ সামলে কথা বলো।”(নিহান)

-“আপনি কেমন টিচার নিজেকে সামলাতে পারেন না।”(এলিনা)

সবকিছু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। নিহান এবার একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। সে ভার্সিটির উপাচার্যকে ফোন করে। ভার্সিটির উপাচার্য এসে সব ঘটনা শোনেন। এলিনা, লাবণী সহ বাকি সবাই মিরার বিপক্ষে কথা বলতে থাকে।

উপাচার্য বলেন,
-“আমি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেখছি কি হয়৷ ততদিন পর্যন্ত মিরাকে বহিষ্কার করা হলো। আর নিহান আপনিও আর ক্লাস নিতে পারবেন না। যেহেতু এরকম একটা বদনাম বেরিয়ে গেছে। যা আমাদের ভার্সিটির রেপুটেশনের জন্য ক্ষতিকর।”

উপাচার্যের কথা শুনে এলিনা, লাবণী সবাই আনন্দ পায়। দূরে দাঁড়িয়ে সাগরও এই ঘটনায় মজা নিতে থাকে।

নিহান অসহায়ভাবে মিরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
-“সরি তোমার হয়ে কিছু করতে পারলাম না।”

-“আপনি সরি বলবেন না স্যার৷ আপনার কিছু করার ছিল না। শুধু শুধু আমার জন্য আপনি ফেসে গেলেন।”

মিরা মন খারাপ করে চলে আসে। তার চোখের জল বাধ মানতে চাইছে না। দুফোটা জল নিরবে ফেলে মিরা।
___________
লাবণী প্রেগ্ন্যাসির কিট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকদিন থেকেই তার শরীর কেমন যেন করছে। বমি, মাথা ব্যাথা এসবের কারণ সে বুঝছিল না। আজ নিশ্চিত হলো কি কারণে এমন হচ্ছিল।

লাবণী প্রেগ্ন্যাসির কিটের মাধ্যমে বুঝতে পারল সে প্রেগন্যান্ট! আর এই বাচ্চা সাগরের। লাবণী সাগরকে কিভাবে ব্যাপারটা বলবে সেটা ভেবে পাচ্ছিল না। এছাড়া তার পরিবারও যে ব্যাপারটা মেনে নেবে না সেটা লাবণী জানে।

লাবণী হতাশ হয়ে বসে ছিল। সে ভেবে নিয়েছে আজ যে করেই হোক সাগরকে সবকিছু বলবে। সাগর তো তাকে ভালোবাসে। নিশ্চয়ই এত বড় একটা খুশির খবর পেয়ে সাগর লাবণীকে বিয়ে করে নেবে। এমনটাই ভাবছিল লাবণী।

অন্যদিকে, সাগর ও এলিনা একসাথে বসে আছে পার্কের মধ্যে। এলিনা কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করে,
-“কয়দিন থেকে দেখছি ঐ লাবণী মেয়েটার সাথে তুমি বেশ ঘনিষ্ঠ হচ্ছো। ব্যাপারটা কিন্তু আমার একদম ভালো লাগছে না।”

-“লাবণীর কথা বলছ। আরে ও তো শুধু আমার টাইম পাস ছিল। ওর কথা বাদ দাও। কাজ মিটে গেলে ওকে দূরে ছু°ড়ে দেব। যেমন করে মিরাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি।”

এলিনা ব্যাথাতুর কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,
-“কখনো আমাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিবে না তো?”

-“আরে কার সাথে কার তুলনা। আমি যদি প্রকৃতপক্ষে কাউকে ভালোবাসি সেটা তো তুমি। তোমাকে আমি ছাড়ব না। তোমাকেই বিয়ে করে নেব। আমি ভাবছি তোমার বাবার কাছে বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে যাবো। তোমার বাবা রাজি হবে তো?”

-“আমার ড্যাডি আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি বললে ঠিক রাজি হবে।”

হঠাৎ করে সাগরের ফোন বেজে ওঠে। এলিনা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“কে ফোন করল? উফ এত ঝামেলা।”

সাগর ফোন বের করে দেখে লাবণী ফোন করেছে। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“এই মেয়েটা কেন কল করেছে। বেকার বিরক্ত করে।”

ফোন রিসিভ করতেই লাবণী বলে,
-“সাগর কোথায় তুমি? আমার সাথে দেখা করো তোমাকে অনেক জরুরি কিছু জানানোর আছে।”

সাগর কিছু বলার আগেই লাবণী কে*টে দেয়। সাগর এলিনাকে বলে,
-“লাবণী আমার সাথে দেখা করতে চাইছে। দেখে আছি কি সমস্যা।”

এলিনা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“এই লাবণীকে এবার তুমি একটা উচিৎ জবাব দাও। ওকে ছেড়ে দাও তো।”

-“অবশ্যই। আজকেই আমি ওর সাথে সবকিছু শেষ করে দেব।”

বলেই সাগর চলে যায়। এলিনা তৃপ্তির হাসি হাসে।

সাগর লাবণীর সাথে এসে দেখা করে। লাবণী সাগরকে দেখে বলে,
-“তুমি এসেছো।”

-“হ্যাঁ এখন আমার সময় নষ্ট না করে বলো কি কারণে ডেকেছ।”

-“তোমাকে একটা খুশির খবর দিতে চাই। জানি তুমি বাবা হতে চলেছ।”

-“হোয়াট? আর ইউ ক্রেইজি?”

-“আরে না। আমি আজ প্রেগ্ন্যাসির কিট দিয়ে সিউর হয়ে গেছি।”

-“এটা আমার বাচ্চা না। আমি এর দায়িত্ব নিতে পারব না। আমাদের মধ্যে তো কিছুই হয়নি।”

-“এরকম মিথ্যা কথা বলছ কেন? সেদিনই তো…”

-“আমাকে একদম মিথ্যা অপবাদ দেবে না। আমি তোমার সন্তানের বাবা নই। তোমার মতো ক্যারেক্টরলেস মেয়ের সাথে আমি আর কোন সম্পর্ক রাখতে চাইনা।”

সাগর যেতে নিলেই লাবণী তার পা ধরে। বলে,
-“প্লিজ আমাকে এভাবে ছেড়ে যেওনা। এটা তোমারই সন্তান। তুমি এভাবে অস্বীকার করতে পারো না।”

সাগর লাবণীকে রেখে চলে যায়। লাবণী কাঁদতে থাকে।
__________
সাগর ও এলিনা পার্টিতে এসেছে। লাবণীর ব্যাপারটা নিয়ে এমনিতেই সাগরের মন ভালো নেই। তাই সে অনেক বেশি নেশা করে ফেলে। এলিনা সাগরকে এত নেশা করতে বারণ করে কিন্তু কে শোনে কার কথা।

পার্টি থেকে বের হয়ে এলিনা বলে,
-“আমি তো আজ গাড়ি আনিনি। তোমার বাইকে করে যাই চলো।”

সাগর বলে,
-“আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি আনছি।”

সাগর বাইক নিয়ে আসে। এলিনা বাইরে উঠে যায়।

বাইক চলতে শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই সাগরের নেশা উঠে যায় অনেক বেশি। এলিনা বলে,
-“তুমি ঠিক আছো তো? ড্রাইভ করতে পারবে?”

-“হুম।”

কিন্তু হঠাৎ একটি ট্রাক চলে আসে। সাগর ড্রাংক থাকায় গাড়ি সামলাতে না পেরে ট্রাকের সাথে ধা*ক্কা খায়। মুহূর্তেই দূরে ছিটকে যায় দুজনে।

দূর্ঘটনার ফলে এলিনা ও সাগর খুব মারাত্মকভাবে আহত হয়। কিছু প্রত্যক্ষদর্শী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার এলিনাকে মৃত ঘোষণা করে। সাগরের অবস্থাও আশঙ্কাজনক ছিল। বিশেষ করে পায়ে খুব বেশি আঘাত পেয়েছে সাগর।
_____________
লাবণী মিরার কাছে এসে অনবরত কাঁদছে আর ক্ষমা চাইছে। একপর্যায়ে মিরার পায়ের কাছে পড়ে। মিরা লাবণীকে টেনে তুলে বলে,
-“আমি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি নিজেও তো সাগরের কথায় ভুলে ভাবির সাথে অনেক অন্যায় করেছিলাম। সেখানে তোকে দোষ দেই কিভাবে?”

লাবণী বলে,
-“কিন্তু আমি যে প্রেগন্যান্ট। এখন কি হবে আমার? আমার পরিবার জানলে আমাকে মে*রেই ফেলবে।”

-“এ ব্যাপারে আমি তোকে সাহায্য করতে পারব না। তুই এত বড় একটা অন্যায় করেছিস। বিয়ের আগেই…এটা করা তোর মোটেও উচিৎ হয়নি।”

-“আমি ভাবছি বাচ্চাটা ন*ষ্ট করে দেব।”

-“একটা পাপ তো করেছিস নতুন করে পাপ করার কি খুব দরকার? এই পৃথিবীতে তো কত দম্পত্তি আছে যাদের কোন সন্তান নেই তাদের কাউকে দিলেও তো হয়।”

লাবণী বলে,
-“তুই একদম ঠিক বলেছিস।”
__________
মিরা বাড়িতে ফিরেই এমন খবর পাবে ভাবতে পারেনি। নিহান বিয়ের কার্ড দিয়ে গেছে। কিছুদিন পরেই তার বিয়ে।

অথচ মিরা এই ক’দিনে তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। মিরার চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে। মিরার চোখের জল দেখে নেয় বিদিশা। সে এসে মিরাকে প্রশ্ন করে,
-“এভাবে কাঁদছ কেন মিরা?”

মিরা বিদিশাকে সবকিছু বলে। আরো বলে,
-“আমি নিহানকে অনেক অপমান করেছি। জানি ও কোনদিন আমাকে মানবে না। আমার সাথে বোধহয় এটাই ঠিক হচ্ছে।”

বিদিশা মিরাকে বলে,
-“দেখবে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
(চলবে)