ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব-১৪

0
263

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_১৪
#লেখক_দিগন্ত
মাহিন এখনো অনেক কিছুই মেলাতে পারছিল না। রেবার এরকম ব্যবহারের পেছনে আসল কারণ কি সেটা তার অজানাই ছিল। তবে মাহিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার রেবার আসল কাহিনি যে করেই হোক জানবে।

মাহিন ফোন বের করে মিরাজকে ফোন করে। মিরাজ ফোনটা রিসিভ করতেই সে বলে,
-“ভাইয়া তুই তাড়াতাড়ি কুয়াকাটায় চলে আয়। এখানে তোর আসাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”

মিরাজ কাজে ব্যস্ত ছিল। মাহিনের কথা শুনে সে কিছু বুঝতে পারে না। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“আমি কুয়াকাটায় কেন যাব? তোরা তো ওখানে হানিমুনে গেছিস। আমার মতো দেবদাসের জন্য কুয়াকাটা নয়।”

-“ভাইয়া আমি খুব সিরিয়াস। যদি তোর জীবনে আনন্দ আবার ফিরে পেতে চাস তাহলে বেশি কিছু না ভেবে চলে আয়।”

বলেই কল কা*ট করে দেয় মাহিন। বিপরীত দিকে মিরাজ হিসাব মেলাতে ব্যস্ত। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল মাহিনের কথা অনুযায়ী কুয়াকাটাতেই যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মিরাজ বেরিয়ে পড়ে যায় কুয়াকাটার উদ্দ্যেশ্যে।
_________
রেবা তাড়াতাড়ি করে এখানে নিজের মামার বাড়িতে কাছে আসে। রেবার মামা রেবাকে এরকম করতে দেখে বলে,
-“কিরে রেবা! তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন কোন সমস্যা?”

রেবা প্রায় কেঁদেই ফেলে। অনেক কষ্টে বলে,
-“কেন আমার সাথে এমন হচ্ছে মামা? আমি তো নিজের অতীত ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি তো সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করার জন্য নিজের মতো চলে গিয়েছিলাম অনেকদূর। যেই মিরাজকে আমি এত ভালোবাসতাম তাকেও ছেড়ে দিয়েছিলাম। তাহলে এখন ভাগ্য কেন আবার আমাকে তার মুখোমুখি করছে?”

-“তুই শান্ত হও রেবা। বল আমায় কি হয়েছে।”

-“আমি আজ মাহিনকে দেখলাম কুয়াকাটার সৈকতে। মিরাজের ভাই মাহিন। আমায় দেখে ভাবি, ভাবি বলছিল। আমি কোনরকমে ওকে না চেনার ভান করে চলে এসেছি।”

-“তুই এমন কেন করছিস রেবা? আমি তো আজ অব্দি বুঝতে পারলান না মিরাজকে তুই কেন ছেড়ে চলে গিয়েছিলি। তোরা একে অপরকে কত ভালোবাসতি। ভালোবেসে কোনকিছুর তোয়াক্কা না করে বিয়ে করে ছিলি। তারপর হঠাৎ করেই একদিন শুনলাম তোকে নাকি কিডন্যাপ করা হয়েছে। মিরাজ আমাদের এখানেও এসেছিল তোর খোঁজ করতে, শুধু এখানে কেন তোর চেনা পরিচিত কোন যায়গা বাকি করেনি। সবখানে তোকে খুঁজেছে। কিন্তু পায়নি। তারপর হঠাৎ করে একদিন তুই এখানে চলে আসলি। দুদিন থেকেই বিদেশে চলে গেলি। তুই যে এসব কেন করলি আমি বুঝলাম না। আপু দুলাভাই কোথাও সেটাও আমাদের বললি না।”

-“আম্মু আব্বু আমেরিকায় আছে মামা। আর আমিও খুব শীঘ্রই আমেরিকা ফিরে যাব আবার। এখানে থাকা আমার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। আমি আর মিরাজের মুখোমুখি হতে চাই না। আমি জানি মাহিন যখন একবার আমাকে দেখেছে তখন সে মিরাজকে জানাবে। আর মিরাজ এখানে আসবে আমার খোঁজ করতে। কারণ ও আগেও এখানে এসেছিল। আমি সব গোছগাছ করে নেই।”

-“যা ভালো মনে করিস কর। আমি তোদের এসব কিছু বুঝি না। কেন যে তোরা এমন করিস।”
_____°°°°°°_____
মিরাজ কুয়াকাটায় এসে পৌঁছায়৷ এসেই দেখা করে মাহিনের সাথে। বিদিশা মাহিনের কাছ থেকে রেবা ও মিরাজের ব্যাপারে সব শুনেছে। এখন সেও চায় এই দুইজনকে মিলিয়ে দিতে। তার জন্য যা করা লাগে লাগুক।

মিরাজ আসতেই মাহিন তাকে সব ঘটনা বলে। সব শুনে মিরাজ তাজ্জব বনে যায়। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
-“তুই ঠিক বলছিস তো মাহিন? আমার রেবাকে দেখেছিস তুই? আমি ওকে কত খুজলাম কিন্তু…যাইহোক চল আমাদের যেতে হবে। আমি নিশ্চিত রেবা এখানে নিশ্চয়ই ওর মামাবাড়িতে আছে। এখানে পাশেই ওর মামাবাড়ি আমি যে কি করতে পারি এখন। যদি রেবা আবার দূরে চলে যায়! না রেবাকে একবার যখন ফিরে পেয়েছি আর দূরে যেতে দেবো না।”

মাহিন,মিরাজ ও বিদিশা একসাথে বেরিয়ে পড়ে রেবার মামারবাড়ির উদ্দ্যেশ্যে।

রেবার মামাবাড়িতে পৌঁছেই মিরাজ রেবার মামাকে দেখতে পায়। রেবার বাবা ভাবেন, রেবার কথাই তাহলে ঠিক হলো। মিরাজ নিশ্চয়ই এখানে রেবার খোঁজ করতেই এসেছে।

মিরাজ এগিয়ে এসে রেবার মামাকে সালাম দেয়। তারপর জিজ্ঞাসা করে,
-“আমার রেবা কোথায়? আমি জানি ও এখানেই আছে। প্লিজ ওকে একবার আমার সামনে আসতে বলুন। আমার যে ওর কাছে অনেক কিছু জানার আছে।”

-“কি বলছ এসব তুমি? রেবা এখানে কই থেকে আসবে? ও তো হারিয়ে গেছে। এখনো ওর খোঁজ মেলেনি।”

-“মিথ্যা বলছেন আপনি। আমার ভাই নিজের চোখে রেবাকে দেখেছে। আমি জানি রেবা ভেতরে আছে। আপনি শুধু একবার ওকে আমার সামনে আসতে বলুন। আমি শুধু কয়েকটা প্রশ্ন করেই চলে যাবো।”

বলেই ঘরে ঢুকতে নেয় মিরাজ। রেবার মামা বুঝতে পারে মিরাজকে আর কোনকিছু বলেই কোন লাভ হবে না। তাই তিনি এবার মিরাজকে সব সত্য বলে দেন,
-“হ্যাঁ মিরাজ তুমি ঠিকই ভেবেছ। রেবা এখানেই ছিল। যেদিন ওকে কিডন্যাপ করা হয় তার কিছুদিন পরেই হঠাৎ ও সপরিবারে এখানে এসে আশ্রয় নেয়। বলেছিল অনেক সমস্যায় আছে আর ওদের কথা যেন কাউকে না বলি তাই চুপ ছিলাম। এর কিছুদিন পর ওরা হঠাৎ বিদেশে চলে যায়। তারপর আর কারো কোন খোঁজ খবর ছিলনা। কয়েকদিন আগেই রেবা হঠাৎ এখানে আসে। তারপর কয়দিন এখানেই ছিল। কিন্তু আজ দুপুরে ও আবার আমেরিকার উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে গেছে। আর কিছুক্ষণ পরেই ওর ফ্লাইট। তোমরা যদি ওকে আটকাতে চাও যতদ্রুত সম্ভব চট্টগ্রামে যাও।”

রেবার মামার কথা শুনে কেউ আর এক মুহুর্ত কালক্ষেপণ করে না। চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়ে সবাই।
________
এয়ারপোর্টের গিয়ে ফ্লাইটের উদ্দ্যেশ্যে বসে ছিল রেবা। ফ্লাইটের উড়ান কয়েক ঘন্টা পোস্টপন্ড হওয়ায় চিন্তায় ছিল সে। মিরাজ খুব দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল। আজ যে করেই হোক রেবাকে আটকাতেই হবে।

ফ্লাইটের সময় হয়ে যায় রেবা উঠে যেতে ধরবে তখনই মিরাজ এসে তার হাত চেপে ধরে। বলে,
-“আমাকে ছেড়ে আর যেতে দিবোনা তোমায়।”

রেবা আবেগপ্রবণ হয়ে কেঁদে দেয়। বলতে থাকে,
-“বিশ্বাস করো আমি তোমার থেকে দূরে যেতে চাইনি। কিন্তু তোমাকে মুখ দেখানোর সাহস আমার ছিল না। সেদিন ঐ সামায়রা মেয়েটা আমাকে কিডন্যাপ করিয়ে নেয়। তারপর আমাকে বন্দি করে রাখে। সেইসময় আমার কিছু নোংরা ছবি তুলে আমাকে হুমকি দেয়। যে আমি যদি ওর কথা শুনে তোমাকে ছেড়ে না যাই তাহলে এই পিকগুলো ভাইরাল করে দেবে। তারপরেই আমার বিদেশে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় সামায়রা। আমি নিজের সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হই দূরে চলে যেতে।”

রাগে মিরাজের চোখমুখ লাল হয়ে যায়। সামায়রা হলো সেই মেয়ে যার সাথে তার বাবা তার বিয়ে ঠিক করছিল। কিন্তু মিরাজ তাকে রিজেক্ট করে দেয়। সেইসময়ই সামায়রা তাকে বলেছিল,
-“আজ যার জন্যে আমায় রিজেক্ট করলে একদিন সেই তোমার থেকে দূরে চলে যাবে দেখে নিও।”

তার মানে সামায়রাই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন করেছে। মিরাজ জানে সামায়রা এখন বিয়ে করে সুখী আছে। অথচ তার জীবনটা কিভাবে নষ্ট করে দিল। মিরাজ এবার প্রতিজ্ঞা করে,
-“সামায়রাকে তার কাজের উপযুক্ত শাস্তি আমি দেবো। আর তোমাকেও কোনদিন নিজের থেকে দূরে হতে দেবো না রেবা। আমি যে খুব ভালোবাসি তোমায়। #ভালোবাসি_তোমায়_বেশ”

দূর থেকে দাঁড়িয়ে চোখ জুড়িয়ে এই সুন্দর দৃশ্যের সাক্ষী হয় বিদিশা ও মাহিন। দুইজন ভালোবাসার মানুষের এই মিলনদৃশ্য তাদেরকে মুগ্ধ করে।
(চলবে)